আমরা আমাদের দেশকে ডিজিটালাইজেশনের ঘোষণা বহু আগেই দিয়েছি। এটা সরকারের একটা প্রশংসনীয় এবং সাহসী ঘোষণা। এটা নিয়ে কিছু "অবুঝ" জনতা হাস্য-রস তৈরী করলেও আমরা ধীরে ধীরে সুফল পাচ্ছি। তবে গতি যতটা হওয়া উচিৎ ছিলো তার কাছাকাছিও আমরা যেতে পারছি না। কেন?
ছোট্ট কয়েকটা উদাহরণ দেই যেগুলি আমি সৌদী আরবে এসে দেখেছি এবং পুরাপুরি অবাক হয়েছি।
১. পুলিশ ভেরিফিকেশন (২মিনিটে ডান!): নতুন চাকরীতে জয়েন করতে হবে, তাই ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মেইল পেলাম পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে। প্রতিষ্ঠান থেকে একটা চিঠি দিয়েছে, চিঠি হাতে করে পুলিশ স্টেশনে গেলাম, কোন রকম কোন বাক্য বিনিময় ছাড়াই শুধু আমার রেসিডেন্স আইডি (ইকামা) এর নম্বর ও একটা ফিঙ্গার স্ক্যান করে আমার নামে কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড নাই তার প্রমান পত্র নিয়ে বের হয়ে আসলাম।
২. বাসের টিকিট: বাসের টিকিট কাটার জন্য বাসের ওয়েব সাইট থেকে ইকামা নম্বর দিয়ে টিকিট কেটে ফেললাম। পরেরদিন হঠাৎ একটা এ্যাসাইনমেন্ট এর কথা জেনে টিকিট ক্যান্সেল করলাম, ৩০ মিনিটের মধ্যে মানি ব্যাক। এই আইডি দিয়ে আমি চাইলেও ঐ সময়ে অন্য টিকিট কাটতে পারবো না।
৩. পরিবারের অন্য সদস্যদের ইকামা: আমার পরিবারের সদস্যরা যখন এখানে রেসিডেন্স ভিসায় আসলো, অনলাইনে আবেদন করে টাকা পে করতেই ৬মিনিটের মধ্যে ইকামা নম্বর ইস্যু হয়ে গেলো। পাসপোর্ট অফিসে রিজারভেশন দিয়ে ৪মিনিটের মধ্যে সবার ইকামা প্রিন্ট করে নিয়ে আসলাম। না কোন লাইনে দাড়ানো, না কোন ঝক্কি ঝামেলা।
৪. ফাইনরে বাবা ফাইন!: গাড়ি দ্রুত চালাতে গিয়ে ক্যামেরায় ধরা, রেড লাইট সিগন্যাল ক্রস করা, গাড়ির লাইসেন্স রিনিউ.... সব মোবাইলে বসেই ঝেড়ে ফেলা যায়। ফাইন আসলে ভালো করে চেক করেন, ছবি ভিডিও দেওয়া থাকে, আপনার যদি মনে হয় অন্যায় হয়েছে, অনলাইনেই আপিল করেন। ফাইন দেওয়া লাগলে মোবাইলেই দেন। গাড়ির লাইসেন্স রিনিউ, ইন্সুরেন্স কেনাও মোবাইলেই। কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। গাড়ির ফিটনেস চেক অবশ্য গাড়ি নিয়ে আপনাকে যেতেই হবে।
৫. বিল পরিশোধ: মোবাইল, ইন্টারনেট, পানি, বিদ্যুত, ঘর ভাড়া সব কিছুই অনলাইনে হচ্ছে। বিদ্যুৎ কানেকশন বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথে বিল পে করে দিলে ১০-৩০ মিনিটের মধ্যে কানেকশন আবার লেগে যাচ্ছে।
৬. ব্যাংক একাউন্ট: মোবাইল এ্যাপে ছাড়া এখন আর এখানে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায় না! সাধারণ ব্যাংক রিলেটেড কাজের ৯৯% কাজই এখন মোবাইলে, বেশী হলে কল সেন্টারে কল করে কাজ শেষ!
একটা মজার ঘটনা বলি। কোন একটা ঝামেলার জন্য আমি ব্যাংকে গিয়েছিলাম। আমার ফোনে কল সেন্টারের লোকের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না। বিশাল বড় ব্যাংক, ঢুকে দেখি আমিই একমাত্র কাষ্টমার! ডেক্সে গিয়ে কথা বলতেই ভদ্রলোক বললো কল সেন্টারে কল করো, ৫মিনিটে সমাধান হয়ে যাবে। আমার এখানে রিপোর্ট করলে আমি সেটা দিন শেষে রিপোর্ট করবো, ওটা এপ্রুভ হয়ে কাজ হতে হতে ২দিন লাগবে।
আমি মজা করে জিজ্ঞাসা করলাম যে তাহলে তোমাকে বসায় রাখছে কেন? সে উত্তর দিলো, তোমাকে কল সেন্টারে কল করতে বলার জন্য আমাকে বসায় রাখছে!
-----------------------------------
আমাদের দেশেও এমনটা করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। প্রথম যখন ন্যাশনাল আইডির কাজ করা হলো, তখনই আমরা অনেকটা এই পথে এগিয়ে এসেছি। এখন দরকার সদিচ্ছা।
বাসের টিকিট কালোবাজারি হওয়ার চান্স খুবই কমে যাবে। আমার আইডি দিয়ে যদি আজকে রাত ৯টার বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের টিকিট কাটা হয় আর যাত্রা সময় যদি ৮ঘন্টা হয়, আমার ঐ আইডি দিয়ে এই সময়ে কনফ্লিক্ট করে এমন সময়ের টিকিট কাটা যাবে না। আবার যে কেউ চাইলেই একটা আইডি নম্বর বসায় টিকিট কাটতে পারবে না; কারণ ঐ আইডির ওটিপি পাওয়া লাগবে।
দেশে পাসপোর্ট করতে এখনও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগে; এর জন্য সময় লাগে ৭-১৫ দিন! যেটা ২-৩ মিনিটে করা সম্ভব।
ব্যাংক একাউন্ট করতে আমাকে কেন রেফার করার লোক লাগবে? আমার ন্যাশনাল আইডি দিয়েই ব্যাংক জানবে যে আমি আসলেই দেশের নাগরিক কি না। আমার চাকুরীদাতা আমার ঐ নম্বর ব্যবহার করে আমাকে বেতন দিবে, সরকার জানবে আমার ইনকাম সোর্স কি।
আরও বহু বহু জিনিষ সহজ করা সম্ভব। আমার বিশ্বাস বর্তমান সরকারই ধীরে ধীরে নয়, বরং দ্রুত গতিতে এগুলি করতে পারবে। কাউকে না কাউকে করতেই হবে এগুলি। নচেৎ ডিজিটালাইজেশনের সুফল আমরা পুরোপুরি পাবো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৪৭