somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরম আলসেমীর মজার ফল!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসলেমীর ফল মজার হতে পারে এটা আমার ছাত্র জীবনে জানা ছিলো না। কয়েকবার এমন হয়েছে যে পরীক্ষার পড়ার জন্য যথেষ্ট সময় থাকার পরও ঠিক ভাবে পড়ি নাই। পরীক্ষার হলে গিয়ে মনে হয়েছে, ইস আর একটু কেন পড়লাম না।



যাই হোক, ছাত্র জীবনে এর তেমন একটা প্রভাব পড়ে তো নাই, উল্টা একসময় গা সওয়া হয়ে গিয়েছিলো। পরীক্ষার আগে যখন সময় থাকতো, তখন বুঝতাম যে পরীক্ষার দিন এই ফিলিংস আসবে; তবুও ঠিক ভাবে পড়তাম না। আর পরীক্ষার হলে গিয়ে মনে হতো, এইটাতো আমার প্রাপ্য, আমি আগেই জানতাম। সো হুদাই মন খারাপ করে কি লাভ?

-----------------------

২০১১ এর দিকে আমি পুরাদস্তুর ওয়েব ডেভলপার (আসলে ডিজাইনার) হিসাবে নাম লিখিয়ে ফেলি। দুইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট সহ বহু দেশী বিদেশী কম্পানির ওয়েব সাইট করেছি। আমার প্রথম কাজটি ছিলো বাংলাদেশ ভিত্তিক একটা কানাডিয়ান ওয়েব সাইটের। দ্বিতীয় কাজ ছিলো আমেরিকান একটা প্রতিষ্ঠানের, যাদের অপারেশনস বাংলাদেশেও আছে।

-----------------------

যখন ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ শুরু করি, তখন আমার একটা টার্গেট ছিলো যে আমি কোন কাষ্টমারকে ঘুরাবো না। আলহামদুলিল্লাহ এটা আমি শেষ পর্যন্ত রাখতে পেরেছি (শুধু তাদের ছাড়া, যারা আমাকে ঘুরিয়েছে)।

এক ভাই শুরুতে বলেছিলেন এটা ধরে রাখতে পারবা না। আলসেমী ঢুকে যাবে। আমি তোয়াক্কাই করি নাই। তবে ভাইয়ের কথা আংশিক খেটেছিলো। আলসেমী ঢুকে গিয়েছিলো।

আমার অফিস ছিলো আল্পনা প্লাজার ৫ম তলায়। প্রায় প্রতিদিন অফিসে যেতাম। কিন্তু আলসেমীর ঝোকে এক সময় অফিসই বাদ দিতে হলো। এমন হয়েছে যে অফিসের ফার্নিচার পর্যন্ত একজনকে গিফট করে দিয়েছি শুধুমাত্র ওগুলি গিয়ে নিয়ে আসতে হবে এই ভয়ে!

তবে কাষ্টমার ঘুরানো লাগে নাই আমার। আমি সময় মতই কাজের ডেলিভারী দিতাম। কিছু কাষ্টমার থাকতো, যারা প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিষ নিয়ে হাজির হতো, তাদের প্রয়োজনের থেকে বেশী সময় নিয়ে কাজ করে দিতে হতো।

---------------------

আলসেমীর ফলে বেশ কয়েকবারই আমি মজার ফল পেয়েছি। একবারের ঘটনা বলি।

একটা কাজ করতে আমার কম-বেশী ২-৩ দিন লাগবে। ২-৩দিন মানে প্রতিদিনে ১২-১৮ ঘন্টা এর পিছে দিতে হবে। আমি কাষ্টমারের সাথে ২৫ দিনের এগ্রিমেন্ট করলাম। কারণ আমি জানি যে প্রথম ৮-১০দিন আমার আলসেমীতেই চলে যাবে। এরপর হঠাৎ একদিন কাজ ধরে ২/৩দিনে শেষ করে ফেলবো। তারপর রিভাইস ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু এই কাজটি নেওয়ার পর কেন যেন ১৫দিন পার হয়ে গেলেও আমি কাজটা ধরতে পারি নি। ১৬তম দিন সকাল বেলা কাজ শুরু করলাম। দুপুর ১২টা নাগাদ ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে জরুরী ভিত্তিতে আমাকে ঐদিনই তাদের অফিসে যেতে রিকোয়েষ্ট করলো। বলল কাজ যতটুকু হয়েছে সেখানে স্টপ করেন।

আমি একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলাম; ডিল ক্যান্সেল না করে দেয়। ভয়ে ভরা মনে তাদের অফিসে হাজির হলাম।

তারা আমাকে জানালো যে তারা তাদের প্লান ক্যান্সেল করছে। আমি প্রথমে যে প্লান দিয়েছিলাম, তারা তাদের ওয়েবসাইট সেভাবে সাজাতে চায়। আমি কিছু বলার আগেই তারা বললো যে আমরা বুঝতেছি যে আপনি আমাদের প্লান মাফিক অনেকদুর কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। আমরা এর জন্য আপনাকে ৩০% টাকা বাড়িয়ে দিবো!

আমি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কথা বলতে পারছিলাম না। কাজ না করেই ৩০% টাকা? আমি আমতা আমতা করে বললাম, আপনারা আমার প্লান পছন্দ করেছেন, এতেই আমি খুশি, আমাকে বাড়তি কিছু দেওয়া লাগবে না! তারা না না বলে আমার কথা উড়িয়ে দিলো। আর বললো কতদিন লাগবে? মাথা চুলকে বললাম আমাকে ১৫দিন সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। তারাও রাজি।

---------------------

এমন বেশ কয়েকবার হয়েছে। কোনবারই আমি জোর করে কারও কাছ থেকে দাবী করি নাই বা বেশী নেই নাই।

--------------------

কয়েকদিন আগে "চরম কার্যকর একটি মার্কেটিং পদ্ধতি!" শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেখানে লিখেছিলাম, "বহুদিন থেকে ভাবছিলাম যে একটা কিন্ডেল কিনবো। বই পড়বার জন্য। দাম ২৬৯ এ ঠেকে ছিলো। গত এপ্রিলের শুরুতে দাম হঠাৎই ৩৯৯ এ গিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। আজকে এবং আগামীকাল এমাজন প্রাইম ডে। আজকে দেখি দাম ১৯৯ করে দিয়েছে। কিনবো কিনা ভাবছি। আগামীকালের পর দাম আবার ২৬৯ হবার কথা। হয়ত কিছুদিন ৩৯৯ এ থেকে আবার ২৬৯ এ নেমে আসবে, বা কিঞ্চিত কমবে।"

হয়েছেও তাই। আমি কিনবো কি কিনবো না করে করে আর কিনিনি। দাম ৩৯৯ এ ঠেকেছে। আমি প্রতিদিনই একবার এমাজনে ঢুকে দাম দেখি। ৩৯৯ রিয়াল দেখে টুপ করে বেরিয়ে পড়ি। এমন না যে ১৯৯ এ কেনার আমার সামর্থ্য নাই। বরং ৩৯৯এও আমি সহজেই কিনে ফেলতে পারি। কিন্তু কেন যেন কেনা হয়নি ছাড়ের সময়।

আজকে সকালে ম্যাসেজ পেলাম এমাজন ডেলিভারীর! আমিতো কিছু অর্ডার করি নি। তাহলে কি ফ্রড? তবুও লোকেশন দিয়ে দিলাম। প্যাকেট খুলে দেখি কিন্ডেল! কে পাঠাতে পারে? সৌদী আরবে তো আমার এমন কেউ নাই, একমাত্র বড় ভাই ছাড়া। ভাইকে ফোন করে জানলাম তিনিই পাঠিয়েছেন। তিনি জানতেন আমি এইটা কেনার জন্য কতটা ব্যাকুল হয়ে ছিলাম!

আগামী সপ্তাহ অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার প্লান করতেছি। বই পড়তে হবে!

ছবিঃ Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×