ঘড়ির প্রতি আমার অন্যরকম একটা আকর্ষণ কাজ করে। দামী ঘড়ি না, কম দামী ঘড়িই সই। দামী ঘড়ি কেনার কোন কারণ আমি কখনও খুঁজে পাইনি। সব থেকে বেশী দাম দিয়ে যে ঘড়িটা আমি নিজে কিনেছি, সেটা ৪,৫০০ টাকার মত হবে, স্মার্ট ওয়াচ।
আর সব থেকে দামী ঘড়ি যেটা আমি ব্যবহার করেছি, সেটা হচ্ছে ১২,০০০ টাকা দামের ঘড়ি। এক ভাইকে তার আইবিএ তে চান্স পেতে সহযোগীতা করেছিলাম, তার উপহার।
মূলত আমি ঘড়ি গিফট পেয়েছি তিনজন থেকে, ঐ ভাই, আমার বউ, এবং আমার ভাইয়ার বন্ধুর বাবা।
ঐ ভাই খুব লক্ষ্য করে চলা মানুষ। আমি কখনও তাকে বলিনি যে আমার ঘড়ি খুব পছন্দের। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে আমার সাথে ঘোরাঘুরির সময় দেখেছেন যে ঘড়ির দোকান পাস করতে গেলে আমি সেদিকে তাকাই। আর সেটার থেকেই তিনি বুঝেছেন যে আমি ঘড়ি পছন্দ করি। উনার যেদিন আইবিএ ভর্তি পরিক্ষার রেজাল্ট দিলো, তিনি কল করে জানালেন যে আমার মেসে আসছেন, একটু জরুরী দরকার। হাতে করে ঘড়ি নিয়ে ঢুকলেন। এই ঘড়িটা আমি মাত্র কয়েকদিন আগেই রাইফেলসে (বর্তমানে সীমান্ত স্কয়ার) দেখেছিলাম। তাই দামটা জানা।
বউয়ের কিনে দেওয়া ঘড়িটার ডায়ালের থেকে স্ট্রাপটা আমার বেশী পছন্দের ছিলো। ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে তার দেওয়া ঘড়ির স্ট্রাপ আর আমার স্মার্ট ওয়াচের স্ট্রাপ একই সাইজের। তাই আমি তার দেওয়া ঘড়ির স্ট্রাপটি এখন স্মার্টওয়াচের জন্য কনভার্ট করে ব্যবহার করছি।
একবার টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে একটা ঘড়ি কিনেছিলাম। ঠিক বিকাল চারটায়। এক বছর পর দুপুর ৩:৫৫ মিনিটে ঘড়ি হাতে বসে (বেল্ট ভেংগে গেছিলো) আছি, কখন চারটা বাজবে। একজন এসে হাতে থাবা দিতেই ঘড়িটা ছুটে ড্রেনে পড়লো, আর খুঁজে পেলাম না। এখনও কষ্ট লাগে মনে, এক বছর পার করতে পারলাম না কয়েক মিনিটের জন্য। সেটা ক্লাস ৬ এর ঘটনা।
আমি যখন ক্লাস ৪ এ পড়ি, নুরুল ভাই (বড় ভাইয়ের বন্ধু) আমাকে একটা লম্বা কাগজের বক্স দিলেন। বক্সে শুধু Casio লেখা খুলে দেখি ঘড়ি। সাদা একটা ঘড়ি (বেল্টের কালার মনে নেই)। ঘড়িটা ডিজিটাল। সময় চেঞ্জ করবার বাটন ঘড়ির উপরের পাশে, লাল দুইটা দাগ, এখানে টাচ করলেই সময় পরিবর্তন করা যায়। নুরুল ভাইয়ের বাবা তখন জাপানে থাকতেন, জাপান থেকে এনেছিলেন ঘড়িটা। আমাকে কেন দিয়েছিলেন সেটা কখনও জানা হয়নি। আমি তাকে চিনতাম, তবে এখন মুখটাও মনে করতে পারি না।
ঘড়ি আমার জীবনে এটাই প্রথম। প্রচন্ড ভালোবাসতাম ঘড়িটাকে। কেউ একজন চুরি করে নিয়ে যায়। ঘড়িটা আমার মনে এমন ভাবে দাগ কেটে গিয়েছিলো যে এরপর প্রায় ২৭ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও আমি অনলাইনে, আর ঘড়ির দোকানে ঐ ডিজাইনের ঘড়িটা খুঁজে বেড়াই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫১