কর্মক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কলিগদের সাথে ভালো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা। ঢাকা শহরের মত ব্যস্ত শহরে এটা আমার কাছে আরও বেশী প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।

আমি ঢাকায় যে কয়টা জায়গায় থেকেছি (মেস বাদে) সবখানেই প্রায় পাশের ফ্লাটে কে থাকে, কি করে তা জানতাম না। তাদের সাথে তেমন সৌহাদ্য ছিলো না। কিন্তু আমি যে দু-চার জায়গায় কাজ করেছি, যে ফিল্ড গুলিতে কাজ করেছি, সেখানে আমার সাথে প্রচুর প্রচুর মানুষের সাথে সুসম্পর্ক ছিলো।
ভার্সিটিতে পড়ার সময় একবার আমার ক্লাসমেট প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লো। এর সাথে আমার শুধু হাই-হ্যালো সম্পর্ক। রাত ২টার দিকে ফোন দিলো, বললো ওর মেসের কেউ নাকি এত রাত্রে ওকে হসপিটালে নিবে না। আমি বের হলাম, তাকে হসপিটালে নিলাম। এরপর থেকে ওর সাথে সম্পর্ক হয়ে গেলো।
একটা পত্রিকা অফিসে একবার পাঁচমাসের মত প্রবেশনারী সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছি। ওখানে মুহিব নামে এক ভাই ছিলেন। উনি মটর সাইকেল চালাতে পারতেন না; কিন্তু সিনিয়র হিসাবে একটা মটরসাইকেল পেয়েছিলেন। ওখানে জয়েন করবার কয়েকদিনের মধ্যে উনার সাথে এত ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো যে উনি উনার জন্য বরাদ্দকৃত মটরসাইকেলটি আমাকে দিয়ে দিলেন। পত্রিকা অফিস ছাড়ার পর আরও ৭মাস (মোট প্রায় এক বছর) আমি ঐ মটরসাইকেল চালিয়েছি।
আমি যেদিন সৌদী আরব আসি, এয়ারপোর্টে বিদায় দেবার মত কেউ ছিলো না। ঈদের দুদিন আগে চলে আসি, একলা একলাই এয়ারপোর্ট গিয়ে সেখান থেকে বিদেশে। পরে যখন সবাই জেনেছে, সবাই বেশ অবাক হয়েছে; কাউকে কিছু না জানিয়েই হুট করে চলে এসেছি। এর ২বছর পর ৭দিনের জন্য যখন দেশে গেলাম, একজনকে জানিয়েছিলাম। সে রিকোয়েষ্ট করলো তার সাথে একদিন ডিনার করে যেতে। ধানমন্ডি কড়াই-গোস্তে হাজির হয়ে দেখি আরও ১২জন কলিগ সেখানে। সেদিন বুঝেছিলাম, আমার বন্ধুহীন জীবনে আমি কিছু বন্ধু তৈরী করেছিলাম!
বর্তমানে যেখানে চাকরি করি, এখানে কম্পিটিশন অনেক বেশী। অনেক মানে অনেক। আমি যে পজিশনে আছি, একই পজিশনে আরও ৪জন আছে। আমি এই চারজনের সাথে সর্বশেষ যোগ হয়েছি। আমি আগে থেকেই ম্যানেজারের সুনজর পাওয়া মানুষ। ফলাফল, অনেকেই আমাকে তাদের প্রতিদ্বন্দী ভাবা শুরু করে প্রথম থেকেই অসহোযগিতা শুরু করে। ধীরে ধীরে সবাইকে এটা বুঝিয়েছি যে আমি তাদের প্রতিদ্বন্দী নই। বরং যথা সম্ভব সাহায্যশীল একজন মানুষ।
তবে ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশী যে কজন আমাদের অফিসে চাকরি করে (এক একজন এক এক ডিপার্টমেন্টে), তাদের কারও সাথেই ভালো সম্পর্ক নাই! বরং তারা গত চার বছরে আমার তিনটা প্রমোশন দেখে জ্বলে ছারখার! গত বছরে লাষ্ট প্রমোশন পাওয়ার পর তারা আমার সাথে পারিবারিক ভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে! এমনকি তারা আমার লক্করঝক্কর গাড়িটা সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে চলতে দেখলেও রাগে গজগজ করে!
আমি সাধারণত অফিসের কাজ না থাকলে পারসোনাল ফোন থেকে ফোন করি, তারা প্রত্যেকেই আমার পারসোনাল ফোন নম্বর ব্লক করেছে! মাঝে মধ্যে তাদের সাথে অফিসিয়াল কাজে যোগাযোগ করতে হলে তাদের গড়িমসি দেখে অবাক হতে হয়।
এছাড়া আমার অন্যদের সাথে বেশ খাতির। যে কোন ডিপার্টমেন্টে খানাদানার আয়োজন হলে আমার ডাক পড়ে। বিশেষ করে আমি এই প্রতিষ্ঠানে সর্ব প্রথম যে ডিপার্টমেন্টে ছিলাম, সেখানে কেউ সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার আনলে সবার আগে আমার ডাক পড়ে।
আমি কলিগদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে খুব পছন্দ করি। এতে কাজ কাম করে শান্তি পাওয়া যায়।
Photo by Edge2Edge Media on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




