somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈধ কাগজ-পত্র থাকার পরও কেন সৌদী পুলিশ মানুষকে দেশে পাঠিয়ে দেয়?

১৫ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদশে সহ আরও কিছু দেশের অদক্ষ শ্রমিকদের অন্যতম প্রধান একটি গন্তব্য হচ্ছে সৌদী আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলি, বিশেষত সৌদী আরবে, আসা নতুন প্রবাসীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুন।



সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সমস্যাও বেড়েছে। নতুন প্রবাসীরা কাজ পাচ্ছেন না, কফিল খুঁজে পাচ্ছেন না, ইকামা হচ্ছে না আরও কত কি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আমাদের দেশের অনেক মানুষ বিস্মিত একটি কথা শুনে, বৈধ কাগজ-পত্র থাকার পরও "হুদাই" নাকি সৌদী পুলিশ মানুষ ধরে ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়।

অনেকেই আমার কাছে জানতে চান যে ঘটনা সত্য কি না। এর উত্তর একই সাথে না এবং হ্যাঁ। কিভাবে? বুঝতে হলে প্রথমে সৌদী লেবার সিষ্টেমটা আপনাকে বুঝতে হবে। তাই ধৈর্য্য থাকলে আগান। আর যদি ধৈর্য্য না থাকে, তাহলে সহজ উত্তর জানুন যে যারা বলছে যে বৈধ কাগজ-পত্র থাকা সত্বেও তাদের "হুদাই" পাঠিয়ে দিয়েছে, তারা ভুল!

সৌদীতে চাকরীর সিষ্টেম।
পৃথীবির যে দেশেই আপনি ওয়ার্ক ভিসায় যেতে চান না কেন, আপনার একটি কম্পানির সাথে চুক্তি থাকা লাগবে, সেখানে চাকরী থাকা লাগবে। সৌদী আরবে সেটাই, বরং কম্পানির সাথে সাথে ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট প্রতিষ্ঠান এবং বাসা-বাড়ির কাজের লোক ও ড্রাইভার হিসাবেও আসা যায়। এদেরকে আমরা কফিল বলি।

সৌদী সিষ্টেম হচ্ছে, আপনি নির্দিষ্ট একটি কাজের জন্য আসবেন এবং সেটাই করবেন। অন্য কিছু করবেন না। অর্থাৎ আপনাকে যদি ড্রাইভিং ভিসায় আনা হয়, আপনি শুধু ড্রাইভিংই করবেন, কফিলের কোন দোকান থাকলে সেটায় বসতে পারবেন না। এমনকি হাউজ ড্রাইভার হয়ে আপনি হাঙ্গারস্টেশন, উবার ইটস, মারসুল ইত্যাদি কোন ডেলিভারী কম্পানিতেও কাজ করতে পারবেন না। মজার বিষয় হচ্ছে, আপনি হাউজ ড্রাইভার তো আপনি লিগ্যালী ঐ কফিলেরই গাড়িও ধুইতে পারবেন না বা কফিল আপনাকে দিয়ে গাড়ি ধোয়াতে পারবে না; এর জন্য নির্দিষ্ট দোকান আছে, সেখানে গিয়ে ধুয়ে নিয়ে আসতে হবে। এটাই আইন!

আর সেখানে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বা নিজে নিজে কাজ করার তো কোন নিয়মই নাই!

আপনার মাসিক বেতন ও ইকামা (রেসিডেন্সি কার্ড) রিনিউয়ালের দ্বায়িত্ব কফিলের। এটার জন্য আপনার চিন্তা করার কথা না।

৯৯.৯৯% বাংলাদেশীদের ভুল
বাংলাদেশীদের মধ্যে "ফ্রী ভিসা" নামে একটা কথা চালু আছে। এখানে থাকা বেশীর ভাগ বাংলাদেশীই মনে করে তারা ফ্রি ভিসায় সৌদীতে আছে। আর ৯৯.৯৯% বাংরাদেশীই মনে করে যে ফ্রি ভিসা বলতে আসলেই কিছু আছে। অন্য দেশীরা এটা কতটা মানে তা বলতে পারবো না!

কিন্তু আদতে ফ্রি ভিসা বলতে কিচ্ছুই নাই!

ফ্রী ভিসা কাকে বলে?
যদিও এটার আসলে কোন অস্তিত্ব নেই, তবুও যেহেতু আমরা বাংলাদেশীরা মনে করি এটা আছে, তাই এটার একটা সংজ্ঞাতো আছেই।

ফ্রী ভিসা হইলো সেই ভিসা, কফিল আমাকে একটা ভিসা দিয়ে নিয়ে আসবে, এরপর আমি কফিলকে মাসে মাসে একটা টাকা দিবো, কফিলকে বছরে ইকামা রিনিউয়ালের টাকা দিবো, আর আমার মন খুশি মত যা কাজ করার করবো!

সমস্যা কোথায়?
যদি স্কিপ না করে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি সমস্যা ধরে ফেলেছেন।

সমস্যা হচ্ছে, আমরা আসছি এক ভিসায় একজনের আন্ডারে, কিন্তু কাজ করছি নিজে নিজে। শুনতে অবাক লাগবে হয়ত, বেশীরভাগ দেশী ভাই হয়ত কখনও তাদের নিজেদের কফিলকে চেনা জানা দূরে থাক, দেখেও নি!

আমি যখন সৌদী আসি, আমার কফিল থাকতো রিয়াদের কোন এক গ্রামে, আর আমি থাকতাম অন্য শহরে। পুরা আড়াই বছর তার কম্পানিতে ছিলাম, কিন্তু তার নামটুকু পর্যন্ত জানি না, দেখে হওয়াতো দূরের বিষয়।

সোজা কথায় এটা অবৈধ পন্থা এবং প্রায়সই এদেরকে পুলিশ ধরে। ধরেই দেশে পাঠায় না। এদের সুযোগ দেয় কফিলকে ডাকার। কফিল এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু যদি প্রমানিত হয় যে আমি অন্য কোথাও কাজ করছিলাম, তাহলে কফিল ও আমার উভয়েরই বড় অংকের জরিমানা দিতে হয়।

যেহেতু কফিলদের সাথে কোন কানেকশন নাই, এবং কফিলের খেয়ে কাজ নেই যে গাঠের টাকা দিয়ে ফাইন দিবে, তাই অধিকাংশ সময়ই কফিল আসে না।

নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গেলে এদের ধরে ডিপোর্ট করে দেওয়া হয়।

==========================

সৌদী আরবে কতজন বাংলাদেশী আছে? শুনেছি প্রায় লাখ ২৫ লোক থাকেন। আদতে সংখ্যা হয়ত তার থেকে অনেক বেশী। এদের অনেক বড় একটা অংশই বেশ কষ্টে আছেন। অধিকাংশই কাজ করছেন নিজের মত, কিন্তু ইকামায় কাজের বর্ণনা অন্য রকম। বেশীর ভাগেরই কফিলের সাথে যোগাযোগ নেই, যাগাযোগ থাকলেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না!

লেবার শ্রেণীর যারা আসে, তাদের অধিকাংশই আসলে নিয়মকানুন জানে না। তার উপর আমাদের মনে হয় নিয়মকানুন ভাঙ্গার একটা প্রবণতা আছে, যা আমাদের বিপদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

সৌদী আরবে ওয়ার্কার ভিসা যা দেওয়া হয়, তার চার ভাগের এক ভাগ যায় বাংলাদেশীদের ভাগে। দুবাইতে যেখানে বেশী বেশী ভারতীয়রা আসবার কারণে পুরা দুবাই কার্যত ভারতীয়রা চালায়, তেমন অবস্থান বাংলাদেশীরা সৌদীতে করতে পারেনি। পারার সম্ভাবনাও দেখি না।

এদের কাছে সঠিক তথ্য পৌছেও খুব একটা লাভ নেই, এরা সঠিক তথ্য গ্রহণ করতে নারাজ!

Photo by Safaa Almohandis on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:১৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×