একটা কাজে ইয়েমেন বর্ডারের কাছে গিয়েছিলাম, নজরান শহরে। সেখানে এক ভাইয়ের আতিথেয়তার কারণে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেলো। গাড়িতে আমরা ৬জন। সবাই ভালোই ড্রাইভিং পারি, তাই চিন্তা করলাম না।
আমি সবার থেকে বয়সে ছোট হওয়ায় এক্কেবারে পিছনের সীটে গিয়ে জায়গা হলো। আমাকে ঘুমাতে নির্দেশ দেওয়া হলো, যাতে মূল চালকের ক্লান্তি আসলে আমি কাভার করতে পারি।
ঘুমের ভিতরেই চাকার ঘরঘর শব্দ আর চাকার নিচে থেকে শক্ত মাটির দলা সরে যাওয়ার শব্দ, আর অফ রোডের ঝাকুনিতে ঘুম ভাঙ্গলো। তাকিয়ে দেখি একটা চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি দাড় করানো।
এক ভাই জানালেন এখান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার ভিতরে গেলেই আব্রাহার হস্তি বাহিনির যাওয়ার রাস্তা পাওয়া যায়। অন্য একদিন আমরা আসবো এমন প্লান করা হলো।
সবাই এক এক রকম চা অর্ডার করছিলেন। আমি দেখলাম কয়েকজন ইয়েমেনী গোলাপী কালারের একটা চা খাচ্ছেন। আগ্রহ জাগলো। বিক্রেতাকে ওদের চা দেখাতেই বিক্রেতা বললেন ওটা কারকাদিয়া চা।
ইন্টারনেট ঘেটে জেনেছি কারকাদিয়া হচ্ছে মূলত জবা ফুলের শুটকি! আবার এক ধরণের গোলাপের থেকেও আসে।
এই চা বাানো এক্কেবারে সহজ। প্রথমে জবা ফুলকে শুকানো হয়। এরপর বানানো হয় চা। তাতে বেশ ভালো পরিমানেই লেবুর রস দেওয়া হয়।
প্রথমবার চুমুক দিতেই আমার উপরের দাঁতগুলি টকে গেলো। টক মানে চরম টক। কিন্তু অদ্ভুত একটা স্বাদ। গাড়ির ভিতরে নিয়ে আসতেই গাড়িও সুন্দর একটা ঘ্রাণে ভরে গেলো, টক মিশ্রিত ঘ্রাণ।
সবার কাছ থেকে জানলাম আমি যেখানে থাকি, ঐ এলাকাতেই একটা দোকানে এই চা বিক্রি হয়, স্বাদ নাকি আরও মজার।
সৌদীর অন্য সব চা থেকে এটা একটু আলাদা একটা কারণে, মিষ্টি! সৌদীতে মূলত প্রায় সব ধরণের চায়ে প্রচুর মিষ্টি দেওয়া হয়। কিন্তু এই চায়ে মিষ্টির পরিমান তুলনামূলক কম, টকের পরিমান বেশী।
এই চায়ের উৎস ইজিপ্ট। ইজিপশিয়ানদের বাড়িতে এই চায়ের মজাই যেন অন্য রকম।
একবার ট্রাই করেছিলাম চিনি ছাড়া, মধু দিয়ে। আমার কাছে এক্কেবারে মধু দিয়ে খেতেই বেশী মজা লেগেছে। এর পর থেকে আমি চিনি ছাড়া মধু দিয়েই খাই।
এই চায়ের সম্পর্কে আরও আগ্রহ বাড়ে একবার কোলেষ্টোরেল বেশী ধরা পড়ার পর। জানতে পারি এটার বেশ কিছু গুন।
১. ব্লাড প্রেসার কমায় বেশ দ্রুত
২. ব্লাড সুগার কমায়
৩. LDL বা খারাপ কোলেষ্টোরেল কমায়
৪. HDL বা ভালো কোলেষ্টোরেল বাড়ায়
৫. ওজন কমাতে কার্যকরী
৬. শোনা যায় হার্টের জন্যও নাকি ভালো
তবে, আপনাকে চিনি ছাড়া খেতে হবে, কারণ চিনি হচ্ছে ডিরেক্ট বিষ!
সর্তকতাঃ প্রতিটি ভালো জিনিষের যেমন একটা খারাপ দিক থাকে, তেমন এটারও আছে।
১. যদি আপনার সুগার লেভেল বা ব্লাড প্রেসার লেভেল কম হয়, তাহলে সাবধানে খাবেন। এটা হঠাৎ একটানে সুগার ও প্রেসার কমায় ফেলতে পারে। দেখা গেলো ধপাস করে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন।
২. অতিরিক্ত এই চা খেলে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। এই চা খাওয়ার পর একটু বেশী বেশী পানি খেতে বলে ডাক্তারেরা।
৩. গর্ভবতী মহিলাদের ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ডাক্তাররা এটি খেতে মানা করেন।
৪. যাদের ম্যালেরিয়ার জন্য ঔষধ খাওয়া দরকার হচ্ছে, তাদের জন্য এটি একদম বড় রকমের "না"।
সৌদীতে প্রচুর পরিমানে ডাক্তার ইজিপশিয়ান। এদের কাছে যদি এই চা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, এরা বেশ আগ্রহ সহকারই বলে।
এই চা ইচ্ছা করলে ঠান্ডাও খাওয়া যায়, যদিও আমি এখনও সেটা করিনি!
আরব চায়ের সমাহার (১) - হাবাক চা!
আরব চায়ের সমাহার (২) - সাই আদানি
ছবি ক্রেডিটঃ alphafoodie এবং medicalnewstoday
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩