গতকালের ম্যাচ মাঠে গিয়ে দেখেছি, এটা আমার জীবনের প্রথম এবং জীবনের স্মরনীয় হয়ে থাকবে এই অভিঙ্গতা। তামিমের বীবত্ব, মুসফিকের লড়াই, রুবেলের মালিঙ্গার বল খেলা আউট এবং রিভিও.... সবই খুবই উপভোগ করেছি সবাই মিলে। তিনবার নয়ন জলে ভরে গিয়েছে। শেষ বার উপরের এই লোকটির হাতে লেখাটা দেখে।
আমাদের দল বাড়ীর পাশে খেলতে আসবে আর আমরা দেখতে যাবো না তা কি হয়? তাই ছুটি মন্জুর হবার আগেই টিকিট কেটে নিয়েছিলাম যদি পরে না পাই।
গতকাল যখন স্টেডিয়ামের কাছে পৌছালাম তখন ২টা বাজে, মানুষ এখানে ১১টা থেকেই আসতে শুরু করেছিলো। মনে হলো মিরপুর স্টেডিয়ামে ঢুকতে যাচ্ছি। দুর থেকেই লাল সবুজই দেখতে পারছিলাম।
প্রচন্ড গরমে লাইনে দাড়িয়ে থাকা অনেক কস্টকর ছিলো। ভেতরে গরম সহনীয় ছিলো।
প্রথমে সবাই মিলে জাতীয় সংগীত গাইবার সময় চোখ বেয়ে অশ্রু বইছিলো.... জানিনি জাতীয় সংগীত গাইবার সময় এমনটা হয়... দেশের বাইরে যারা কামলা/স্থায়ী ভাবে না থাকে তারা ছাড়া এটা বুঝতে পারবেনা।
খেলা শুরুর পরেই দুই ওভারে ২ উইকেট নাই.... শ্রীলংকান মাচারা নাগিন ডান্স শুরু করছে.... আমাদের মাঝেও হতাশা... সাকিব আসলো চলে গেলে...তামিমের ইনজুরি... সবাই চুপচাপ...
মুসফিক রহিম..মিথুন...আস্তে আস্তে চাপ কমিয়ে আনলো... তারপরে মিথুন মারা শুরু করলো... আর আমাদের বাঙ্গালীরা গজে` উঠা শুরু করলো।
২৫ হাজার ধারন ক্ষমতার স্টেডিয়াম ৯৫% পূন` ছিলো...তার সবটাই ছিলো বাঙ্গালীদের দখলে.... শুরু একটা শ্রীলংকান গ্রুপ কিছুটা আয়াজ করছিলো..... যখন মিথুনের সাথে মুসফিক রহিমও হাতখুলে খেলা শুরু করলো তখন থেকেই সবই ৩০০ এর কাছাকাছি রান হতে পারে।
মিথুন চলে যাবার পরে আবার সবাই আসতেছে আর যাইতেছে..... আমরা কিছুটা চুপ চাপ...
রুবেল আসার পরে আবার সবাই হ্যাপী হইয়া গেলো.... তবে সবাই অবাক কারন মুসফিক এক রান নিয়ে রুবেল কে পাঠালো মালিঙ্গাকে ফেস করতে.... রুবেল কিন্তু বেশ ভালো ভাবেই মালিঙ্গাকে মোকাবেলা করেছিলো। তারপরে রুবেলের এলবিডাব্লউ.... আমারও মনে হয়েছে বল ব্যাটে লেগেছে কিন্তু আম্পেয়ার আঙ্গুল তুলে দিলো.... সবাই চুপ...তখন রুবেলও হাটা দিয়েছে...মুসফিক মনে হয় জিঙ্গাসা করেছে এবং রুবেল বলেছে হা ব্যাটে লেগেছে...তখন মুসফিক রিভিওএর আবেদন করে....
বড় পদায় যখন ভিডিও রিভিও করছিলো তখন ব্যাটে লাগা দেখে উপস্হিত সবাই লাফিয়ে উঠে চিতকার করে উঠে.... তারপরে সবাই এক সাথে ভুয়া ভুয়া বলে চিতকার... আম্পেয়ার নিশ্চয় তার পরিচিত বাঙ্গালীকে জিঙ্গাসা করবে '' what is Voua in bangoli''
প্রতিটা ৪... প্রতিটা ৬ এর পরেই স্টেডিয়ামের সবার চিতকার..স্লোগান... সে এক অন্য রকমের অনুভুতি....
যখন মুসতাফিজুর আউট হয়ে গেলো তখন সবাই চুপচাপ.... কারন ততক্ষনে সবাই জানে তামিম রিটায়াট হাড`.. স্ক্রীনেও দেখাচ্ছিলো তামিম বসে আছে হাতে ব্যান্ডিজ।
আমরা সবাই হিসাব করছি কত রান হবে... এবং একটু আপসেট যে এতো কম রানে শ্রীলংকাদের আটকানো যাবেনা।
তখন হঠাত মাঠে গুন্জন... তখন দেখি একজন মাঠে নামছে... আমরা একে অপরের দিকে দেখছি জিঙ্গাসা করছি যে কে নামছে এখন.... তখন স্ক্রীনে লেখা তামিম...সবাই তখন তামিম, তামিম চিতকার করছে... সারা স্টেডিয়ামে তামিম তামিম ধ্বনীতে কাপছে....
শ্রীলংকানারো অবাক... কারন তারা ভাবেনাই যে তামিম আবার নামবে.... সে এক হাতে বল মোকাবেলা করতে দাড়ালো... বেশির ভাগ বাংলাদেশীরই চোখ ছল ছল করে উঠেছিলো তখন সেই দৃশ্য দেখে...
বল ঠেকানোর পরে আবার পুরো স্টেডিয়াম কেপে উঠেছিলো বাঙ্গালীদের গজ`নে..... সেটা একটা অবিশ্বরনিয় মূহত`...
তার পরে শুরু হলো মুসফিকের তান্ডব... ১৬ বলে ৩২ রান....
তামিমের ফি আশাটাই বাংলাদেশের ম্যাচ জয় হয়ে গিয়েছিলো। সবাই বলছিলো যে রেজাল্ট যাই হোক আমারা জিতে গেছি।
শ্রীলংকারা মাঠে নেমেই ৪ আর ৬ মারা শুরু করেছিলো... তখন আবারো লংকান মাচাদের নাচা নাচী.. আর নাগিন ডান্স ...কিন্তু সেটা স্হায়ী হয়ে ছিলো কয়েক ওভার... তারপরে যখন উইকেট পড়া শুরু করলো... তখন তারা চুপ... আমাদের গজ`ন শুরু...
৪ উইকেট পড়ার পরেই লংকানারা বাড়ীর পথে হাটা দিচ্ছিলো.... ৬ উইকেট পরে লংকানরা ৪ মারলেও মাঠে কোন আয়াজ আসছিলোনা... ততক্ষনে সব লংকানরাই মনে হয় বাড়ী পৌছে গিয়েছিলো....
পুরো আরব আমিরাত থেকেই যে ছুটি ম্যানেজ করতে পেরেছে, যে আশার ব্যবস্হা করতে পেরেছে সবাই এসেছিলো... মনে হয় নাই যে এটা বিদেশ আছি... চারিপাশের সবাই বাংলাদেশী... বাংলায় কথা বলছে... বাংলায় চিতকার করছে... সারা মাঠ কাপছিলো বাংলাদেশ বাংলাদেশ গজ`নে....
আমাদের দেশের সবাই যদি এই রকম এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করে তবে বিশ্বে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে....
দেশের বাইরে যারা কামলা খাটে তাদের দেশের জন্য, মায়ের জন্য কেমন লাগে সেটার একটা ছোট্ট উদাহরন এই ছবি....
বিদেশে যারা কামলা দেয় তারা নিজের মা কে কেমন মিস করে সেটার একটা উদাহরন। এই বোডে` লেখাটি লিখে নিয়ে এসেছ... ক্যামেরায় দেখানো জন্য দাড়িয়ে ছিলেন দীঘ` সময়...
মাঠের কিছু ছবি...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩