গতকাল আমাকে ‘নিরাপদ’ থেকে ‘জেনারেল’ করা হয়েছে। কেন? অন্য অনেকের ক্ষেত্রে কোনরকম নোটিশ ছাড়াই সামহোয়্যারইন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই কাজটি করার অনেক অভিযোগ থাকলেও তারা আমার ক্ষেত্রে দয়া করে একটি মেইল পাঠিয়ে কারণটি জানিয়েছেন। কী সেটি? তারা বলেছেন, আমার “শেখ মুজিব, জিয়া ও অন্যান্যরা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকজন নায়ক কিংবা খলনায়ক কিংবা কতিপয় ‘ধোয়া তুলসি পাতা’র কথা” পোস্টটি নাকি ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলীর ৩খ ধারা ভঙ্গ করেছে। ওয়েল, এটি তারা বলতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হল: গত ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত পোস্টটির বিরুদ্ধে কেন তারা এতদিন পর ব্যবস্থা নিলেন? এতদিন কি লেখাটি কিংবা এর বিরুদ্ধে কারও আপত্তি তাদের চোখে পড়ে নি? মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়! বরং আমি মনে করি, আমাকে ‘জেনারেল’ করার আসল কারণটি ভিন্ন।
তা হল, এর আগের দিন ‘নোটিশবোর্ডের’ তথা ব্লগ কর্তৃপক্ষের একটি ‘স্টিকি’ (?) পোস্টে আমার একটি মন্তব্যের কারণে মহামান্য মডারেটরগণ নাখোশ হয়ে এই কাজটি করেছেন। “আজ মাঠ কাঁপাবে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা” শিরোনামের সেই পোস্টে আমি নীচের মন্তব্যটি করেছিলাম:
এবং একদিনের মধ্যে ঠিক সেটাই ঘটল! তবে নিতান্ত তুচ্ছ একজন ব্লগার হয়েও ব্লগ কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখানোর ‘অপরাধে’ তো আর আমাকে ‘শাস্তি’ দেওয়াটা ভাল দেখায় না, তাই তারা মাত্র ১২ দিন আগের একটি ‘অপরাধ’ খুঁজে বের করেছেন! “তুই জল ঘোলা করিস নি তো কী হয়েছে, তোর বাপ করেছিল”–এই ব্যাপারটা প্রায় সেরকম আর কি!
ভুল অবশ্য আমারই। ব্লগের মালিক/কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের ব্যক্তি-মালিকানাধীন ব্লগে তারা যা খুশি করতে পারেন–এটি আমার বোঝা উচিত ছিল। তাদের কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখানোটা আমার ঠিক হয় নি। তারা যে দয়া করে আমাকে এখানে ব্লগিং করতে দিয়েছেন–আমার মত তুচ্ছ ব্লগারের জন্য এটিই তো অনেক বেশি!
এবার আসি আমার সেই পোস্টটির প্রসঙ্গে, যার কারণে তারা আমাকে ‘জেনারেল’ করেছেন বলে নোটিশ দিয়েছেন। বর্তমান বাংলাদেশে দলীয়, ব্যক্তিপূজামূলক, অতিমানবীয় অপ-ইতিহাস চর্চার যে ধারা চলছে–আমার পোস্টটি ছিল তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। পোস্টে আমি এদেশের ইতিহাসে কয়েকজন রাজনীতিবিদের অসামান্য অবদানের পাশাপাশি তাদের দোষ-গুণ নিয়ে যৌক্তিক, তথ্যভিত্তিক আলোচনা করেছি। আমার মূল বক্তব্য ছিল: তারা কেউই মহামানব ছিলেন না, বরং অনেক অনেক সাফল্য ও কৃতিত্বের পাশাপাশি তাদের কিছু কিছু ব্যর্থতা/প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাও ছিল। দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের বাইরে বাংলাদেশের সত্যিকার, নিরপেক্ষ ইতিহাস তাই বলে। পোস্টে ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলীর ৩খ ধারা ভঙ্গ করার মত কোন বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় নি। আর যদি তা করা হতই, তবে তখনই এটি নিয়ে অনেক বিতর্ক ও আপত্তি উঠত এবং তখনই ব্লগ কর্তৃপক্ষ এটি সরিয়ে ফেলতেন। অবশ্য যারা দলীয় রাজনৈতিক আদর্শে অন্ধবিশ্বাসী কিংবা রাজনৈতিক দলের অন্ধ আনুগত্য করেন–আমার সেই পোস্ট তাদের কাছে ভাল লাগার কথা নয়। এরকম কারো রিপোর্ট পেয়ে যদি ব্লগ কর্তৃপক্ষ ‘নেচে’ থাকেন, তবে তাতে আশ্চর্য হব না। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেটা এতদিন পরে কেন? কেন তারা দুই সপ্তাহ পরে ‘খোঁড়া’ অজুহাত দেখিয়ে ব্যবস্থা নিলেন–যেখানে ব্লগ মডারেশন একটি প্রাত্যহিক, চলমান প্রক্রিয়া।
সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হল, সেই পোস্টটির একটি রিপোস্টও দিয়েছিলাম, যা এখনো আছে (আপনারা চাইলে পড়ে আসতে পারেন)। আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগটি যদি সত্যই হত, তবে তারা সেটিও সরিয়ে ফেলতেন (অবশ্য এখন যে সরিয়ে ফেলবেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই)।
অথচ এই ব্লগে রাজনীতি, আস্তিকতা-নাস্তিকতা ও ধর্ম নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্দেশ্যমূলক, উস্কানিমূলক ও প্রতিক্রিয়াশীল লেখা ও মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি এখানে এসব বিষয়ের ওপর অনেক লেখাতেই চলছে নোংরা ব্যক্তি-আক্রমণ ও গালাগালির অসুস্থ প্রতিযোগিতা। বাক স্বাধীনতার নামে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। এই ব্লগে প্রতিনিয়ত ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ভংগ করা হচ্ছে। এখনো অসংখ্য লেখায় ব্লগের নীতিমালার পরিপন্থী মতামত, নোংরা ব্যক্তি-আক্রমনমূলক বক্তব্য, পারস্পরিক গালাগালি ও উস্কানিমূলক মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য ব্লগে শোভা পাচ্ছে। কই, তাদের ব্যাপারে তো যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সাধারণ ব্লগাররা খুব বেশি প্রতিবাদ জানালে হয়ত একজন-দুজনের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই ব্লগের চরম পক্ষপাতদুষ্ট মডারেশন নিয়ে সাধারন ব্লগারদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন, অনেক ক্ষোভ আছে। আমার এই বক্তব্যের সপক্ষে শর্তভঙ্গকারী মন্তব্যের মধ্যে নীচে কয়েকটি তুলে ধরছি (সংগত কারণেই মন্তব্যকারীর নাম ঢেকে দিলাম):
১। দেখুন নোংরা গালাগালি কত প্রকার ও কী কী:
২। এবার দেখুন কুত্সা রটনা কাকে বলে:
৩। ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সঃ)কে অবমাননাকারী কদর্য মন্তব্যের নমুনা দেখুন:
ব্লগের নীতিমালা, শিষ্টাচার ও নৈতিকতা পরিপন্থী হাজারো মন্তব্যের মধ্যে মাত্র কয়েকটা আমি এখানে তুলে ধরলাম। আমার প্রশ্ন হল, এসব লেখা ও মন্তব্য এখনো ব্লগে শোভা পায় কী করে? আমার লেখাটি কী এর চেয়েও খারাপ কিংবা নীতিমালা-পরিপন্থী ছিল? পাঠকদের ওপর রইল এর বিবেচনার ভার।
এরপর হয়ত আমার ওপর তাদের আরও বড় খড়্গ নেমে আসবে। অবশ্য এটি আমার জন্য নতুন নয়। এর আগেও এই ব্লগে ক্রমবর্ধমান উদ্দেশ্যমূলক, উস্কানিমূলক ও প্রতিক্রিয়াশীল লেখা প্রকাশ এবং নোংরা ব্যক্তি-আক্রমণ ও গালাগালির অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে “সামহোয়্যারইনের ভবিষ্যত কী? মডারেটরদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন” শিরোনামে একটি লেখা পোস্ট লেখার জন্য আমাকে ‘জেনারেল’ করা হয়েছিল। ব্লগ কর্তৃপক্ষের স্বরূপ উন্মোচনের জন্য এবার হয়ত আমাকে পুরোপুরি ব্যানই করা হবে। তাতে কি আমার খুব বেশি আসবে যাবে? বরং এভাবে চলতে থাকলে এই ব্লগের ভবিষ্যতই অন্ধকার হবে।। কারণ স্বেচ্ছাচারিতা আর বাক-স্বাধীনতা একসাথে চলতে পারে না।
প্রতিবাদী রিপোস্ট চলবেই।
ব্লগারদের বাক-স্বাধীনতা বনাম মডারেটরদের স্বেচ্ছাচারিতা: সামহোয়্যারইনের প্রশ্নবিদ্ধ মডারেশন এবং আমার ক্রমাগত প্রতিবাদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন