যারা ছবি তোলা শিখে ফেলেছেন তাদের কাছে এই পোষ্টের কোন মুল্য থাকবে না বিধায় এটি পড়ে দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না।
লেখাটির কপিরাইট আমি নিজের কাছেই রাখছি!
© russel.mahmud
এই লেখাটি ধীরে ধীরে পুরোটা শেষ করার ইচ্ছে আমার আছে। এ লেকাটিকে আরো ভালো করতে কারো মন্তব্য কিংবা উপদেশ থাকলে জানাবেন। ধন্যবাদ।...
প্রথম লেখায় আমি এক্সপোজার শাটার স্পিড এবং আইএসও নিয়ে একটি ধারনা দিয়েছি। আশা করি ক্যামেরার অটো মোড থেকে বেরিয়ে আসতে সেটি আপনার কাজে দিয়েছে। যেখানে হয়তো আপনি চেষ্টা করেছেন ম্যানুয়ালী ছবির এক্সপোজার কিভাবে ঠিক রাখা যায় সেটি দেখতে।
সেখানে তিনটি বিষয় নিয়ে এসেছিলাম, যেখানে ছবি তোলার ক্ষেত্রে আপনি নিজেই কন্ট্রোল করতে পারেন। আইএসও, আপার্চার, শাটার স্পিড। এর আগের দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে আইএসও বিষয়ে মোটামুটি আলোচনা করেছি। এবারে আমরা নজর ফেরাবো শাটার স্পিডের দিকে।
শাটার স্পিড কি: আগের পোষ্টগুলো পড়ে থাকলে হয়তো দেখে থাকবেন শাটার স্পিড হলো মুলত – সেই সময়কে নির্দেশ করে যেটি দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন কতটা সময় ধরে ক্যামেরার শাটার খোলা রয়েছে।
ফিল্ম ফটোগ্রাফিতে এই ব্যাপারটি দিয়ে বোঝানো হয়, আপনার ক্যামেরায় ভরা ফিল্মটিতে কতটা সময় ধরে আলো পড়বে সে ব্যাপারটি। একইভাবে ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে শাটার স্পিড হলো আপনার ডিজিটাল ক্যামেরার সেন্সর কতটা সময় ধরে আলো গ্রহন করবে সেটি ঠিক করে দেওয়া।
এবারে শাটার স্পিডের কয়েকটি দিক নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
১. শাটার স্পিড সেকেন্ড মাপা হয় অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এখানে সংখ্যাটি আপাত দৃষ্টিতে যতটা বড় শাটার স্পিডও ততই বেশী। যেমন ১/১০০০ শাটার স্পিড অবশ্যই ১/৩০ এর চাইতে বেশী। প্যাচ না লাগলে আরো একটু বলে নেই, ১/৩০ শাটার স্পিডে ক্যামেরার লেন্স দিয়ে সেন্সর/ ফিল্মে বেশী সময় ধরে আলো পড়বে।
২. অধিকাংশ সময়েই আপনি জেনে কিংবা না জেনে ১/৬০ সেকেন্ড কিংবা তার চাইতে বেশী মাপের শাটার স্পিড ব্যবহার করেন। কারন মুলত,এর চাইতে কম শাটার স্পীড ব্যবহার করা হলে কাপা কাপা কিছু ছবি ছাড়া সাধারনত তোলা যায় না। যখন আপনার ক্যামেরা হাতের কারনে নড়ছে কিংবা আপনার সাবজেক্ট নড়ছে তখন এর কম স্পীডে ছবি তোলা হলে ছবিটি ব্লার হয়ে যাবে।
৩. আপনার হাত খুব স্টেডি না হলে, সাধারনত হয় না, ১/৬০ শাটার স্পীডের নিচে ছবি তুলতে হলে ট্রাইপড ব্যবহার করতে হবে অথবা ক্যামেরার যদি ইমেজ স্টাবিলাইজেশন থাকে সেটি ব্যবহার করতে হবে। সাধারনত অধিকাংশ আধুনিক ক্যামেরায় ব্যাপারটি থাকে।
৪. সাধারনত ছবি তোলার ক্ষেত্রে শাটার স্পিড সেটিংস একটি আরেকটির মোটামুটি দ্বিগুন হয়। যেমন ১/৩০ এর বেশি ১/৬০ থাকে সাধারনত। একই ভাবে সাধারনত দেখবেন আপনার ক্যামেরায় ১/৮, ১/১৫, ১/৩০, ১/৬০, ১/১২৫, ১/২৫০, ১/৫০০ এভাবে সেটিংস গুলো পাবেন।
৫. কিছু কিছু ক্যামেরা আপনাকে খুবই স্লো শাটার স্পিড ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। যেমন ১ সেকেন্ড, ১০ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড। কিছু ক্যামেরায় B নামের একটি মোড থাকে যাকে Bulb ও বলা হয়ে থাকে। সেখানে আপনি যতটা সময় শাটার চেপে ধরে রাখবেন ততটা সময়ই শাটার খোলা থাকবে।
৬. ছবি তোলার সময় ঠিক কতটা শাটার স্পিড আপনি ব্যবহার করবেন এটি নির্দিষ্ট করতে প্রথমেই দেখুন আপনার ফ্রেমে কোন মুভিং অবজেক্ট আছে কি না? আপনি কিভাবে সেই মুভিং অবজেক্ট/সাবজেক্ট টি ছবিতে চান। মানে আপনি হয়তো চাইলেন যে মুভমেন্ট টা স্থির করে ছবি তুলতে, কিংবা চাইতে পারেন মোশন ব্লারনেস থাকুক একটু। ধরুন একটি চলন্ত ট্রেনের সামনে কারো ছবি তুলতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে আপনি চাইতে পারেন, ট্রেনটির ছবিতে আপনি মোশন ব্লারনেস চাইছেন কিন্তু মানুষটিকে আপনি চান ফ্রিজ অবস্থায়। যাতে করেত ট্রেনটি চলছে সেই অনুভুতি দেওয়া যায়। এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই শাটার স্পিড কমের দিকেই থাকতে হবে।
যদি কোন ক্ষেত্রে মোশন ব্লারনেস না চান, যেমন আপনি হয়তোবা খেলার ছবি তুলছেন, ক্রিকেটের বল ব্যাটসম্যানের সামনে স্থির থাকুক এমনটা চাইছেন আপনি। যাই হোক না কেন, কতটুকু মোশন ব্লারনেস চাইছেন আপনি সে অনুযায় আপনাকে শাটার স্পিড ঠিক করতে হবে। এখানে বলা সম্ভব না যে ওই খেলায় এই শাটার স্পিড ব্যবহার করলেই হবে। এটি আপনাকেই ছবি তুলে আন্দাজ করে নিতে হবে।
তবে সব সময়টি যে ঝক ঝকে ছবি পেতে হবে, ছবিতে সবকিছু স্থির থাকেতেই হবে এমন নয়। কখনো কখনো মোশন ব্লারনেসও ছবিকে সুন্দর করতে পারে। যেমন ঝরনার ছবি তুলতে হলে মোশন ব্লারই ভরসা। নাহলে ছবি ভালো নাও লাগতে পারে।
৭. শাটার স্পিড কত হবে সেটি ঠিক করতে আরেকটি ব্যাপার দরকারী, সেটি হলো আপনি লেন্সের ফোকাল লেন্থ কতটা ব্যবহার করছেন। কারন ফোকাল লেন্থ বেশি হলে সেটির একটি প্রভাব পড়বেই। এজন্য ত্রিকোনমিতি জানলে ভালো বুঝতে পারবেন। একটু সহজ করে বললে, আপনার ক্যামেরার পুরো জুম করে দেখুন হাত স্থির রাখতে কি পরিমান কষ্ট। ছবি দেখবেন ফ্রেমে থাকেই চাইছে না। আবার পুরো জুম আউট করুন, দেখুন ওই একই ফ্রেমে আপনার হাত কত স্থির। যাই হোক, বেশী জুমে হাত স্থির রাখতে আপনাকে বেশি শাটার স্পিড ব্যবহার করতেই হবে। যেমন আপনি যদি ৫০ মিমি ফোকাল লেন্থ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনার হয়তো ১/৬০ শাটার স্পিডেই হয়ে যাবে। কিন্তু একই জায়গায় আপনি ২০০ মিমি ফোকাল লেন্থ ব্যবহার করে ছবি তুলতে চাইলে হয়তো ১/২৫০ শাটার স্পিড ব্যবহার করতে হবে।
আর আপনার ক্যামেরায় যদি ইমেজ স্টাবিলাইজেশন থাকে তাহলে একটু কম শাটার স্পিডেই আপনি একই রেজাল্ট পাবেন।
শাটার স্পিডের সাথে আইএসও এবং এপার্চারের কিন্তু যোগসুত্র আছে। বাকি দুটোকে ছাড়া কিন্তু আপনি ঠিক ছবি তুলতে পারবেন না। ভালো ছবি তুলতে হলে, তিনটি বিষয়কেই একসাথে ভাবতে হবে আপনাকে। একটি পরিবর্তন করলে এক্সপোজার ঠিক রাখতে অন্য একটি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দুটিকেই পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে।
একটি উদাহরন দেই: আপনি যদি শাটার স্পিড বাড়িয়ে ছবি তুলতে চান, ধরুন ১/১২৫ থেকে বাড়িয়ে ১/২৫০ করেন, তাহলে আপনি আসলে ক্যামেরায় আলো প্রবেশের সময় অর্ধেক করে দিলেন, মানে গিয়ে দাঁড়ালো আপনার ক্যামেরায় অর্ধেক আলো পৌছালো। এখন সেই সময়ে কাংখিত এক্সপোজার পেতে হলে ক্যামেরার এপার্চার বাড়িয়ে নিতে হবে, জানালা একটু বেশি খোলা হলে একটু বেশি আলো প্রবেশ করতে পারবে। সময় কমিয়ে কম আলো ঢোকার যে ব্যবস্থা আপনি করেছেন সেটিকেই কমপেনসেট করতে জানালা একটু বেশি খুলে নিচ্ছেন আপনি। একই কাজ আপনি করতে পারেন একটু বেশি আইএসও সেট করে। যেমন ১০০ র জায়গায় ২০০ আইএসও। সবগুলোই একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কিত।
এপার্চার নিয়ে আগামী পর্বের লেখায় এই সম্পর্কটি খতিয়ে দেখবো আশা করি।
এই লেখাটি ফেইসবুক গ্রুপ 'Amateur Photography' তে আগেই পোষ্ট করেছিলাম। এখানে কপি করলাম। আগামীতে আস্তে আস্তে আরো লিখতে চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।