somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়দারাবাদের ডায়েরী....

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হায়দারাবাদের ডায়েরী….
লাইফ ইন এনআইআরডি ক্যাম্পাস (০৬/০৫/২০১৫)
প্রচন্ড গরম পড়েছে। হাসফাস অবস্থা। হায়দারাবাদে আজ দিনের বেলা তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রী। এখন অবশ্য একটু কম। মোবাইল অন করে দেখলাম ৩৭ ড্রিগ্রী। রাত ১টার মতো বাজে। কিন্তু ঘুম আসছে না। একবার ভাবলাম ল্যাপটপে সিনেমা দেখব। আগ্রহ পাচ্ছি না। দুইরুমের কোয়ার্টারে এরুম-ওরুম হাটছি। ভালো লাগছে না। কেন যেন অস্থির লাগছে…
দরজা খুলে বের হলাম। কোয়ার্টারের সামনে লাগোয়া রাস্তা। রাস্তা ঘেসে দাড়িয়ে আছে একটি ল্যাম্পপোষ্ট। ল্যাম্পপোস্টের একটু দূর দিয়ে নিম গাছের সাড়ি। এনআইআরডি ক্যাম্পাস জুড়েই অসংখ্য নিম গাছ। আমি রাস্তায় এসে দাড়ালাম। সরলরেখা রাস্তার দু’পাশে সমান দূরত্ব রেখে ডুপ্লেক্স স্টাফ কোয়ার্টার। আমার কোয়ার্টার নম্বর এ-১০। রাস্তার একদম শেষ প্রান্তে। তারপরই ক্যাম্পাসের বাউন্ডারি। অন্যপাশে আরএকটি প্রতিষ্ঠান। টাটা ইনসটিটিউট অফ সোসাল সাইন্স এর ক্যাম্পাস। হায়দারাবাদ হচ্ছে ডেভলপমেন্ট রিলেটেড বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস নগরি। ছোট-বড় প্রায় ৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস রয়েছে হায়দারাবাদে…
এখনও অনেক কোয়ার্টারে লাইট জ্বলছে। গরমের কারনে হয়তো আমার মতো তারাও ঘুমোতে পারছে না। জেগে আছে। আমার কোয়ার্টারের পাশেই আমার ক্লাসমেট শ্রীলংকার রোকসান তিলাকারত্নের কোয়ার্টার। রোকসানের রুমের ঠিক ওপরে থাকে ঘানার জন। দু’জনের রুমেই লাইট জ্বলছে। তারমানে ওরাও ঘুমায়নি।
রাস্তার ওপাড়ে একপাশে ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে লুকি ও অন্যপাশে ফিজির মেলে। ওপরে ভিয়েতনামের কুয়ান। লুকি ও মেলে ছুটি নিয়ে ঘুড়তে গেছে গোয়ায়। ওদের রুমের লাইট অফ। কুয়ানের রুমের লাইট তখনও জ্বলছে…
আমি আস্তে-আস্তে হাটছিলাম। বাইরে ঘরের থেকে তুলনামূলক গরম একটু কম। হাটতে ভালই লাগছিল। হঠাৎ একটা পাখি ডাকার শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি নিমগাছের একটি ডালে দুটি প্যাঁচা বসে আছে। অনেক-অনেক দিন পর প্যাঁচা দেখার সৌভাগ্য হলো। কিন্তু প্যাঁচার ডাক যে এরকম ভয়ন্কর তাতো ভুলেই গিয়েছিলাম। দাড়িয়ে-দাড়িয়ে প্যাঁচার কান্ড দেখছিলাম।
দেখলাম রোকসান বেরিয়ে এসেছে। তার একটু পরে আমাদের শব্দ পেয়ে ঘানার জনও বেড়িয়ে এল। সবার বক্তব্য একটায়- ইট ইজ ভেরি মাচ ডিফিকাল্ট টু স্লিপ… জন ডাকলো কুয়ানকে। কুয়ানও বেড়িয়ে এল। রাস্তায় দাড়িয়ে আমরা গল্প করছিলাম। শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম,ঘানা ও বাংলাদেশ। গল্প চলছে। আমরা সবাই বিবাহিত। সবারই সন্তান আছে। ঘুরেফিরে শুধু পরিবারের কথা চলে আসছে। সবাই অপেক্ষা করছে কবে দেশে ফিরবে।
ভিয়েতনামের কুয়ান আসার পর থেকেই ভাষাগত সমস্যাই ভুগছে। একদমই ইংরেজী বলতে পারে না। তবে আস্তে-আস্তে জড়তা কাটছে। নিজের কথা, তার দেশের কথা আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। জনের বয়স ৪৩। সেও তার পরিবারকে খুব মিস করছে। আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতা হযেছে শ্রীলংকার রোকসানের সাথে। অসাধারন একটি ছেলে। রোকসানও ফেডআপ। সবাই-সবাইকে সান্তনা দিলাম এই বলে যে, আর মাত্র আড়াই মাস। কাউন্ট-ডাউন্ট শুরু…
গল্প করতে-করতে কখন দুইটা বেজে গেছে আমরা বুঝতেই পারিনি। সবাই যে যার মতো গুড নাইট জানিয়ে রুমে ফিরে এলাম। কিন্তু তখনও ঘুম আসছে না। ছেলে ও আব্বার কথা খুব মনে পড়ছে..।
স্কাই পিতে যখনই ছেলের সাথে কথা বলি। তার বক্তব্য একটাই তার জন্য খেলনা গাড়ি,ট্রেন,বিমান কিনে নিয়ে কেন তাড়াতাড়ি আসছি না। কবে আসব? তুমি ওখানে কি কর? যদি বলি লেখাপড়া করতে এসেছি। তখন বলে এত লেখাপড়া কর কেন? অসংখ্য প্রশ্ন। বুঝতে পারি আমার ছেলে আমাকে খুব মিস করছে। যেমনটি করছি আমি…।
লাইট বন্ধ করে একরকম জোড় করেই বিছানায় আসলাম। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় মগ্ন হলাম….ঘুম আসছে না… ভাবছিলাম, পরিবার-পরিজন ছেড়ে লাখ-লাখ মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার মতোই প্রবাস জীবন যাপন করছে…সবার কষ্ট এরকমই… আমি তাদের কষ্ট অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম……


৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×