somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় ঢাবি ভিসি আরেফিন সিদ্দিকীর কাছে খোলা চিঠি

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হায়রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা!!!!
গত ২৩ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এল্যামনাই এসোসিয়শন কর্তৃক ঢাবির ছাত্রদের বৃত্তি প্রদাণ অনুষ্ঠানে ভিসি জনাব আরেফিন সিদ্দিকী আপনি আপনার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছেন, আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনার এই কথার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করছি। কিন্তু আমার আপত্তিটা হচ্ছে অন্য জায়গায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, বাণিজ্য, উন্নয়নমূলক কাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের সৃষ্ট যাবতীয় বৈষম্য নীতি পরিহার করে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করা।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন হলেও কেন জানি এদেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারছেনা।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তান শিক্ষাব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানি তথা আমাদের জনগোষ্ঠীর শিক্ষারসুযোগ সুবিধা ছিল যতসামান্য। থাকলেও উচ্চ শিক্ষা নিতে পারতো খুব সামান্য লোক।
বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও কিছুটা তার আদলে এবং ছায়া প্রতিষ্ঠিত বলে আমি মনে করি। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি ধারায় বিভক্ত করে রেখেছে। আবার এই দুই ধরার শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষা সিলেবাসও ভিন্ন। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠ্যপুস্তুক ইত্যাদির ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও দুইধরার শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদেরকে দেওয়া হয়েছে সমমান। এই সকল পক্রিয়ার না আছে সাধারণ ছাত্রদের কোন ভূমিকা, না আছে এদেশের অভিভাবকদের ভূমিকা। না আছে শিক্ষাব্যবস্থার সাথে জড়িত শিক্ষদের কোন ভূমিকা।
সমমান দেওয়ার পর ছাত্ররা পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফলাফল করে নিজেদেরকে যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তখন দেখা যায় বৈষম্য আর দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটির অপরটি প্রাধান্য।
(দুটি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। আর সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা।)

বিশেষ করে গত কয়েকবছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির মধ্যে একধরনের বৈষম্য আর এদেশের জনগনের স্বাধীকার হরণ করার এক মহড়া চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিগত কয়েক বছর ধরে মাদরাসার ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মাদরাসা ছাত্রদের নানা বৈষম্য মূলক ও পশ্চিম পাকিস্তানী কায়দায় কিছু শর্ত যুক্ত করে দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে তাদেরকে ভর্তির অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
তাদের যুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো SSC ও HSC তে মাদরাসারা ছাত্ররা ইংরেজি এবং বাংলায় ১০০ নাম্বার করে পরীক্ষা দিয়েছে আর কলেজ ছাত্ররা দিয়েছে ২০০ নাম্বার করে পরীক্ষা দিয়েছে। সুতরাং যারা ইংরেজি বাংলায় দ্বিগুন নাম্বার নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদের সাথে মাদরাসার ছাত্ররা কি সমান হতে পারে? তাই তাদেরকে গুটি কয়েক বিভাগে ভর্তির সুযোগ রেখে প্রথম সারির অধিকাংশ বিভাগই তাদের জন্য না যায়েজ করে দেওয়া হয়েছে। যা একটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্ছ বৈষম্য। এর ছেড়ে বেশি বৈষম্য আর কি হতে পারে তা আমার জানা নেই।
এই সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কানা কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা যদি একমতও হই তাহলে হলেও আমার মনে কয়েকটি প্রশ্ন সবসময় উকি মেরেই যায়। প্রশ্নগুলো হলো-
১. যাদের মধ্যে পুরো দ্বিগুন পার্থক্য তা হলে কেন এক ও অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়?
২. প্রশ্ন যখন এক ও অভিন্ন তখন ফলাফলে সমপরিমান নাম্বার পাওয়ার পরও কেন তাদেরকে বিভাগ নির্বাচনে বৈষর্মের শিকার হতে হবে?
৩. যারা দ্বিগুন ইংরেজি পড়ে এবং দ্বিগুন নাম্বার নিয়ে পাশ করে তারা ভর্তি পরীক্ষায় কেন মাদরাসা ছাত্রদের সমান পরিমান নাম্বার পেয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে কম পেয়েও সকল বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবে?
৪. মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কি এই ছাত্রদের নিজেদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাকি তাদের অভিভাবকদের অভিমতের ভিত্তিতে, যদি তা হয়ে থাকে তাহলে কোন কথাই ছিল না কিন্তু যেখানে তাদের নুন্যতম কোন সম্পৃক্ততা নেই সেখানে কেন সরকার কর্তৃক প্রনীত এই শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার ফাঁকফোঁকড়ে পড়ে পৃষ্ঠ হতে হবে এই সকল ছাত্র ও অভিভাবকদের?
৫. যে সকল ছাত্ররা নিজেদেরকে স্কুল কলেজের ছাত্র বলে কর্তৃপক্ষের এই সকল দাবির সাথে একমত থাকেন এবং সকল বিভাগে ভর্তির সুযোগ নিয়ে মাদরাসা ছাত্রদের সমালোচনা করেন আপনারা যে স্কুল বা কলেজে পড়েছেন তাতে কি আপনার কোন কৃতিত্ব রয়েছে? কৃতিত্বও শিক্ষা বোর্ডের সেখানে ইংরেজি বাংলা যদি ১০০ নাম্বারের থাকতো তা হলে আপনাকেতো তাই পড়তে হতো। সুতরাং আপনি এখনো কি এই বৈষম্য মূলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে যথার্থ বলবেন?
৬. যে সকল ছাত্ররা মাদরাসায় মাত্র ১০০ নাম্বারের ইংরেজি পড়েছে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় কিভাবে তারা ১ম স্থান অধিকারী হয়? কেন তারা ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৮/২৬/২৭/ ইত্যাদি নাম্বার পেয়ে থাকে?
৭. যে সকল ছাত্ররা স্কুল ও কলেজ লেবেলে ৪০০ নাম্বারের ইংরেজি পড়েছে অভিন্ন প্রশ্নে কেন তারা ১ম স্থান অধিকারী হতে পারলেনা? যেখানে মাদরাসা ছাত্ররা মাত্র ২০০ নাম্বার নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে সেখানে তাদের কোনরকম পাস করার কথা সেখানে কিভাবে প্রথম হলো?
৮. সকল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই কেন এই বছর ঢাবির ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যোগ্য দুইজন ছাড়া অন্য কাউকে খুজে পাওয়া যাচ্চে না?

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকার কর্তৃক প্রণীত ও পৃষ্ঠপোষক এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাও একদিকে সমান তালে চলবে আবার এখান থেকে উত্তীর্ণ ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এইধরণের বৈষম্যের শিকার হতে থাকবে এটা কোন ধরনের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? মাননীয় ভিসি মহোদয় আপনার প্রতি সম্মন রেখে জানতে চাই এই ধরনের বৈষম্যের ক্ষেত্রে আপনার নিকট কোন ধরনের যথার্থ যুক্তি থাকলে জানাবেন আমরা নিজেদের সন্তুষ্ঠ করতে পারবো।
আর যদি অতীতের মতো খোঁড়া ও গোঁজামিলির মতো দেওয়া উত্তরের ছাড়া আপনার কাছে অন্য কিছু না থাকে তাহলে আপনার একজন ছাত্র হিসেবে, স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, এদেশের একজন ছাত্র হিসেবে আপনাকে বিনীত চিত্তে বলছি দয়া করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে খর্ব করবেন না?
প্লিজ এদেশের স্বাধীন মানুষের মধ্যে নানাবিধ বৈষম্য সৃষ্টি করবেন না।
আর যদি তা না পারেন তাহলে বলবো দয়া করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুস্পষ্ট সংজ্ঞায়ন করবেন। যার মধ্যে থাকবে আপনাদেরেই সৃষ্ট এই ধরনের বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা। আর তখন আমরা হয়তো আরো একটি স্বাধীনতা জন্য মুখিয়ে থাকবো হয়তো কোন একদিন ছাত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ফিরে পাবে আমাদের ন্যায্য অধিকার। সেদিন হয়তো আপনার মুক্তিযুদ্ধের চেতানার সংজ্ঞায়ন বিফলে গেলেও যেতে পারে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×