প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে কিংবা একাকী উদাসী নয়নে নীল আকাশপানে চেয়ে সাগরের চিকচিক বালুময় তটে নগ্ন পায়ে ভোর সকালে হাঁটার অনুভূতি সত্যি অন্যরকম সুখের। জীবনের সব ক্লান্তি মুছে দিয়ে খানিকটা সুখের প্রয়াসে ভ্রমণপিপাসু মানুষ গুলো তাই বার বার চলে যায় সাগরের উচ্ছ্বল ঢেউয়ের সমধুর গর্জনের ডাকে।
পত্রিকার পাতায় সাগর কন্যার অর্পূব বর্ণনা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কখনো বা টিভির পর্দায় মনোরম ছবি দেখে সাগরকন্যার প্রেমে পড়েছিলাম বার বার। তখন থেকে কুয়াকাটার প্রতি একটা আলাদা আগ্রহ তৈরী হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত হয়েছি প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার একমাত্র স্থান কুয়াকাটা প্রশ্নটি বার বার পড়ার কারণে।
◊ কুয়াকাটা সৈকতে সূর্যাস্ত যাওয়ার অপূর্ব মুর্হূত ◊
গত ঈদুল আজহার ছুটিতে মনের ভিতর পুঞ্জিভূত অনেক দিনের অধরা আশাটি পূর্ন হল। সুযোগ হল কুয়াকাটা দেখতে যাওয়ার। ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু মাসুদ রানা কে যার আন্তরিক সহযোগিতায় আর অকৃত্রিম ভালবাসার কারনে চট্টগ্রাম থেকে সেই পটুয়াখালী কুয়াকাটা যাওয়ার পথ সুগম হল অত্যন্ত সহজ ভাবে।
ঈদের একদিন পর সকাল বেলা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যেহেতু ঈদের ছুটি ছিল রাস্তা সম্পূর্ন ফাঁকা থাকায় মাত্র ৪ ঘন্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। অন্য সময় যেতে লাগে ৬-৭ ঘন্টা। যাত্রাপথে কোন প্রকার যানজট যদি পড়ে তাহলে তো কত ঘন্টা লাগবে তা বলা মুশকিল! ঢাকার সদর ঘাট থেকে সন্ধ্যা ৭ টায় পটুয়াখালীর লঞ্চ এমভি-ঈগল এ উঠলাম। ভেবেছিলাম ঈদের পরে ঝক্কি-ঝামেলা কম হবে। আরাম-আয়েশ করে যেতে পারবো। এমন ধারনা ভুল প্রমানিত করে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে টাসকি খেলাম! এত এত মানুষের ভিড়।
◊ চাঁদনি রাতে কুয়াকাটা সৈকত ◊
এখনো এত ভিড় কেন তা নিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম অনেকে ঈদের ছুটিতে বেশি বিড়ম্বনা থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়িতে যেতে পারে না। তারা একদিন পর বাড়িতে যায় প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। তাদের সাথে থাকে পর্যটকদের বাড়তি চাপ। সব ঈদে নাকি এমন হয়। ঈদ পরর্বতী ২ দিন যাত্রীদের বাড়তি এই চাপ থাকে সদরঘাটে।
ঢাকার সদর ঘাট সন্ধ্যা বেলার ব্যস্তময় মুর্হূত
লঞ্চে চড়তে বরাবরই আমার ভাল লাগে। বাসে কিংবা ট্রেনে ভ্রমণ করলে শরীরে একটা ক্লান্তি চলে আসে। পানি পথে ভ্রমনে এই রকম অনুভুতি হয় না। নদীর হিমেল বাতাসে পানির ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের অর্পূন ধ্বনি খুব উপভোগ্য হয়। এর আগেও লঞ্চে চড়ার অভিজ্ঞতা হয়েয়ে আমার। প্রথমবার হয়েছে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার সময় তবে তা ছিল দিনের বেলায়। দ্বিতীয়বার হয়েছে বন্ধু ইমাম হোসেনের সাথে তার কর্মস্থল চাঁদপুর শহরে যাওয়ার সময়। সেই বারও ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যায় চাঁদপুরের লঞ্চে উঠেছিলাম। এখন তৃতীয়বারের মতো বড় লঞ্চে করে দীর্ঘ সময়ের (৭ ঘন্টা) নদী ভ্রমণে পটুয়াখালী যাচ্ছি।
◊ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় ◊
রাত প্রায় ৩টা ৩০ মিনিটে আমরা পটুয়াখালী নৌ-বন্দরে গিয়ে পৌঁছলাম। মাঝরাতেও বন্দরের পরিবেশ ছিল কোলাহলময়। ঐখান থেকে আমরা একটা অটোতে করে বাস টার্মিনালে আসলাম। সময় লাগলো প্রায় ২৫ মিনিট। বাস টার্মিনালে এসে পড়লাম বিপদে। যা কয়েকটা বাস আছে তা সব যাত্রীতে টাসা। কোথায়ও কোন সিট খালি নাই। অবশেষে কোন উপায় না দেখে পুরো ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটের পথ দাড়িঁয়ে আসতে হল। খুব সকাল সকাল আমরা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে পৌঁছলাম।
◊ মাঝরাতে পটুযাখালী বন্দর ◊
◊ সৈকতের পূর্ব প্রান্ত ◊
বাংলাদেশের দক্ষিন প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ এক জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্যনীয় সমুদ্র সৈকত। একই সৈকতে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার মতো জায়গা দ্বিতীয়টি বাংলাদেশে আর নেই। সৈকত ছাড়াও বেড়ানোর মতো রয়েছে আরও নানা রকম অপূর্ব জায়গা যা দেশে-বিদেশের সব পর্যটকদের মুগ্ধ করে। যার দৈঘ্র্য ১৮ কি.মি প্রস্থ ৩ কি.মি। কুয়াকাটার অপর নাম সাগর কন্যা।
◊ মধ্য দুপুর বেলায় সৈকতের পূর্ব প্রান্ত ◊
□ চলুন এক নজরে দেখেনি কুয়াকাটায় কি কি দেখার আছেঃ
● কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
● কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির
● কুয়াকাটা প্রাচীন কূপ
● কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ও ঝাউবন
● সৎসঙ্গ মন্দির
● গঙ্ঘামতীর চর ও সূর্য্যউদয়ের স্পট
● কাউয়ার চর
● লাল কাঁকড়ার চর
● মিশ্রিপাড়া (সীমা মন্দির) বৌদ্ধ মন্দির
● শুটকি পল্লী
● লেবুর বন[/sb
● পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্ব- ২
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্ব- ৩
কুয়াকাটা তুলাতলী খালের মনলোভা দৃশ্য পর্ব- ৪
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মুর্তি পর্ব- ৫
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৪৪