পাখির অনেক আকর্ষনীয় গুন রযেছে তার মধ্যে চমৎকার গুন হলো মানুষের মতো হুবহু নকল করে কথা বলা বা আচার আচরণ অনুসরন- অনুকরন করে তা খুব সহজে রপ্ত করতে পারে । আপনি জেনে অবাক হবেন যে পৃথিবীর মধ্যে মানুষের পর একমাত্র পাখিই আছে যারা কথা বলতে পারে । সব পাখির ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয় বা এমন দক্ষতা নেই । পৃথিবীর বিস্ময়কর এমন কিছু বু্দ্ধিমান পাখি আছে যাদের কে সৃষ্টিকর্তা এমন প্রতিভার অধিকারী করেছেন । বুদ্ধিমান প্রাণীদের তালিকায় ভাল একটা জায়গা দখল করে আছে এই পাখিরা । রঙ-বেরঙের এই সব পাখি গুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তাদের প্রতিভাও মনোমুগ্ধকর । চলুন দেখে নেই পৃথিবীর বিস্ময়কর এমন কিছু পাখি …
আফ্রিকান গ্রে প্যারট
পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীর লিস্টে ৩য় স্থানে রয়েছে আফ্রিকান গ্রে প্যারট। এদের পাখি জগতের আইনস্টাইন বলা হয়। এরা অত্যন্ত চালাক একটি পাখি। এরা মানুষের কন্ঠ নকল করতে পারে এবং মানুষের নির্দেশনা বুঝে বিভিন্ন কাজ করতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, এদের বুদ্ধিমত্তা ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী মানুষের বাচ্চার বুদ্ধির সমমান। আর এদের বুদ্ধিমত্তা, মানুষের মত কথা বলা ইত্যাদি কারনেই সমগ্র পৃথিবীতে এরা জনপ্রিয় পোষা পাখি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।
পাহাড়ি ময়না
পাহাড়ি ময়না বিশ্বব্যাপী সর্বশ্রেষ্ঠ কথা বলার পাখি হিসাবে পরিচিত। এদের প্রধানত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে পাওয়া যায়। মানুষ যেভাবে কথা বলে ঠিক একই ভাবে কথা বলতে পারে এই ময়না পাখি । পাহাড়ি ময়না বিভিন্ন ধরনের শব্দের ডাক ও ডাকতে পারে । এমনকি এরা কান্নাকাটি ও করতে পারে। এই ময়নার দুটি প্রজাতি আছে । পাহাড়ি ময়নার অন্যান্য প্রজাতিও রয়েছে।
বাজ্রিগার
বাজ্রিগার খুব পরিচিত একটি পোষা পাখি। বাজ্রিগার বাজি নামেই বেশ সুপরিচিত। ছোট প্রজাতির এই পাখিটি এর বুদ্ধিমত্তার জন্য জনপ্রিয় । শ্রবণ ক্ষমতা অনেক ভাল । খুব সহজে বড় শব্দ বা বাক্য মনে রাখতে পারে। পাখিগুলো অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায় । মালিকের থেকে কোন শব্দ শোনা মাত্র এরা মনে রাখতে পারে এবং বার বার তা বলতে থাকে। পুরুষ বাজ্রিগার মেয়ে বাজ্রিগারের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয় । শেখার ক্ষমতাও তাই পুরুষ বাজ্রিগারের বেশি । এদের গড় আয়ু ৪-৫ বছর এবং খাঁচায় ১০-১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে ।
সন্ন্যাসী টিয়া
সন্ন্যাসী টিয়া একটি রঙিন পাখির প্রজাতি যা আসলে একটি ছোট টিয়া । এটি কোয়েক টিয়া নামেও পরিচিত । এই পাখিগুলি সুপরিচিত তাদের কয়েকটি বড় শব্দভাণ্ডার তৈরির ব্যাপক গুণের জন্য । এদের প্রশিক্ষকদের বা মালিকদের থেকে শোনা শব্দ অনুকরণের একটি ক্ষমতা আছে । আশেপাশে যে সকল শব্দ এরা শুনতে পায় সব কিছু অনুকরণ করতে পারে সহজে । এই সন্ন্যাসী টিয়া ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে পাওয়া যায় ।
ব্লু ফ্রন্টেড অ্যামাজন
ব্লু ফ্রন্টেড অ্যামাজন সবচেয়ে জনপ্রিয় পাখিগুলির মধ্যে একটি। এদের নামকরণ এদের মাথার সুন্দর নীল রঙের উপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছে । পাখিগুলো যেমন সুন্দর করে কথা বলতে পারে তেমন দেখতেও অনেক বেশি সুন্দর । তারা সত্যিকারের মানুষের ভাষা নকল করতে পারে । তাদের মধ্যে এক ধরণের অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেটা হল তারা খুব রক্ষণশীল । তাই মানুষের প্রয়োজন তাদের সাথে একটি বন্ধন তৈরি করার । এরা বিভিন্ন রকম খেলনা দিয়ে খেলতে খুব ভালবাসে । এই পাখি দক্ষিণ আমেরিকাতে পাওয়া যায় ।
ইলেক্টাস
এই পাখিটি টিয়া প্রজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তারা নিউ গিনি দ্বীপপুঞ্জে থাকে। এরা এদের স্বচ্ছ বক্তৃতার জন্য সুপরিচিত। তারা বিশাল পরিসরের শব্দভান্ডার বুঝতে পারে । এই টিয়া পাখিগুলো বেশিরভাগ শব্দের অনুকরণ করে যা তারা শুনতে পায়। তারা গানও পছন্দ করে। মালিকদের কখনও বোকা বানানো তাদের একটি অনন্য ক্ষমতা। এখানে উভয় পুরুষ এবং মহিলা কিছু মধুর কণ্ঠস্বর বের করতে পারে।
ব্লু গোল্ড ম্যাকাও
নজরকাড়া রঙের ভিন্নতা, কথা বলায় দক্ষতা অর্জন, বাজারে সহজেই প্রাপ্যতা এবং মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলায় এ পাখিটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্লু গোল্ড ম্যাকাওরা অন্যতম জনপ্রিয় পোষা পাখির মর্যাদায় অভিষিক্ত। বুনো অবস্থায় এ ধরনের ম্যাকাও বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গী প্রদর্শন করে। কিন্তু ছোট বাচ্চা ম্যাকাও বেশ ক্রীড়ামোদী। সঙ্গীকে নিয়ে সারাজীবন একত্রে থাকে এই পাখিটি। মৃত গাছে এদের বাসা থাকে। স্ত্রী পাখিটি সচরাচর দুই থেকে তিনটি ডিম পেড়ে থাকে। প্রায় আটাশ দিন স্ত্রী পাখিটি ডিমে তা দেয়।
ব্লু গোল্ড ম্যাকাও তোতা পরিবারভূক্ত সর্ববৃহৎ ম্যাকাও গোত্রের অন্যতম সদস্য। অন্যান্য ম্যাকাও পাখির ন্যায় এটিও পোষ মানে। তবে পাখিটি বনাঞ্চল থেকে উল্লেখযোগ্য হারে শিকার হচ্ছে; ফলে এটি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এদের বংশবিস্তার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে গ্রহণ করায় এটি এখনো প্রকৃতিতে বিদ্যমান।
কাকাতুয়া
মানুষের কথা নকল করতে এরা খুব ভালবাসে। কাকাতুয়া খুব সামাজিক একটি পাখি। মালিককে খুব ভালবাসে এরা। ঠিক মত লালন পালন করলে এবং সেখালে এরা সব কিছুই আয়ত্তে আনতে পারে। সকল কাকাতুয়ারই আকর্ষণীয় পালক এবং শক্তিশালী বাঁকানো ঠোঁট রয়েছে। অধিকাংশ প্রজাতিই সাদা রংয়ের। কিন্তু কিছু প্রজাতির গায়ের রঙ ধূসর, খয়েরী, উজ্জল কালো বর্ণের। কাকাতুয়া মাঝারি থেকে বড় বড় তোতা পাখির চেয়েও বড় হতে পারে।
উদ্ভিদজাত খাবার গ্রহণ করে এরা জীবনধারন করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের উঁচু বৃক্ষের গর্তে থাকতে পছন্দ করে এবং সেখানেই তারা বাসা বাঁধে। মূলত প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাখির গর্ত কিংবা পাহাড়ের গুহায় এরা বাসা তৈরী করে। স্ত্রীজাতীয় কাকাতুয়া দুইটি থেকে চারটি সাদা ডিম পারে। শাবকগুলো চোখ বোজা অবস্থায় থাকে এবং প্রায় তিন মাস শাবকদের বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্ত্রী-পুরুষ উভয় কাকাতুয়াই পালাক্রমে দেখাশোনা ও লালন-পালন করে। বাবা মা দুজনে মিলেই তাদের ছানার দেখা শোনা করে।
ককাটিয়েল
ককাটিয়েল হল কাকাতুয়া পরিবারের একটি পাখি। ককাটিয়েলকে ক্যারিওন এবং উইরো নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশে এটি ককাটেল বা ককাটেল পাখি নামেই বেশি পরিচিত। এরা খুব দ্রুত একসাথে অনেকগুলো শব্দ মনে রাখতে পারে। মানুষের কণ্ঠ হুবহু নকল করে কথা বলতে পারে। ককাটিয়েল মূলত অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের এন্ডেমিক প্রাণী। বন্য প্রজাতি হিসেবে একে অস্ট্রেলিয়া ছাড়া কোথাও পাওয়া না, গেলেও বিশ্বব্যাপি এটি খাঁচায় পোষা গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালিত হয়।
সহজে বাচ্চা উৎপাদন, সৌন্দর্য ও আরও কিছু কারণে এটি বাজ্রিগারের পরে খাঁচায় পোষা দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতি। খাঁচাবন্দি ককাটিয়েল সাধারণত ১৬ থেকে ২৫ বছর বাঁচে। রেকর্ড অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে ককাটিয়েল ১০ থেকে ১৫ বাঁচে; ককাটিয়েলের ৩২ বছর বেঁচে থাকারও রেকর্ড আছে। একটি ককাটিয়েল পাখি অবশ্য ৩৬ বছর বেঁচে ছিল। এগুলো সাধারণত নির্ভর করে খাবার, পরিবেশ আর উড়ার জায়গার উপর।
তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৩৮