ছবি: ইন্টারনেট
আইসক্রিমওয়ালার ঘন্টিটা শুনে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে। ঘণ্টির শব্দ অনুসরণ করে এগোতে এগোতে হাঁফ ধরে এলো। কয়েকটা হোঁচটও খেলো। পায়ের আঙুলগুলো জ্বালা করছে খুব। নাহ, লোকটাকে ধরা গেলো না কিছুতেই। সূর্যটা ঠিক মাথার উপরে এখন। প্রচণ্ড গরমে মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো সে। অদূরে একটি ছেলে চেটেপুটে একটা সবুজ আইসক্রিম খেতে খেতে আসছে। দেখে লোভটা মাথা চাড়া দিলো। আহ! কতদিন আইসক্রিম খাওয়া হয় না। নিজের অজান্তেই ছেলেটির সাথে সাথে ঠোঁটটা চাটতে লাগলো সে। চাটতে চাটতে কাল্পনিক আইসক্রিম খেতে লাগলো। তৃষ্ণাটা যেন কিছুটা হলেও মিটলো। নাহ আর বেশি দূর যাওয়াটা ঠিক হবে না। পথ হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে। এই ভেবে পেছন ফিরলো। কিন্তু একি এ কোন রাস্তায় এসে পড়েছে সে! এদিক ওদিক দিশেহারার মত তাকাতেই কেউ তার একটা হাত শক্ত করে ধরলো। ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠলো সে।
জয়নাল প্রায় টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকলো তাকে। আবারো যেতে যেতে হোঁচট খেতে লাগলো সে। এবার আগের চেয়ে আরো জোরে। বুড়ো আঙুলের নখটা বোধ হয় উপড়েই গেলো। প্রচণ্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। হাতটাতেও ব্যথা লাগছে খুব। জয়নাল লোহার মত শক্ত হাত দিয়ে আঁট করে ধরেছে কনুইর ঠিক উপরে। মনে হচ্ছে হাতটা যেন নিস্তেজ হয়ে খসে পড়ে যাবে এখনই। হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকালো জয়নাল তাকে। ভয়ে আর যন্ত্রণায় বেগ সামলাতে না পেরে পরোনের কাপড়টা ভিজে গেলো। সে আরো কুঁকড়ে গেলো।
জয়নালের বউ লাইলি মুখটাকে বেঁকিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বললো, "মরণ! ওই তুই মরস না ক্যান? তুই মরলে তো আমরা বাঁচি। রোজ তুই একটা না একটা কাণ্ড ঘটাস"। বলে নিচের দিকে তাকাতেই রজব আলির ভেজা লুঙ্গিটা নজরে এলো। "হায় হায়! আবার লুঙ্গিটা ভিজাই ফেলসে। আইজ তোর খাওন নাই বুইড়া" বলে চিৎকার করে উঠলো লাইলি। এরপর জোরে জোরে কয়েকটা চিমটি দিলো রজব আলির হাতে। আবাও ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠলেন বৃদ্ধ। অপরাধির মত মাথাটা নিচু করে রাখলেন।
সত্যিই বড় জ্বালান তিনি এদের। আজকাল প্রস্রাবের বেগ সামলাতে পারেন না। যখন তখন কাপড়টা ভিজে যায়। তার উপর কী যে সব ছেলেমানুষী ইচ্ছে ভর করে মনে। আইসক্রীম, হাওয়াই মিঠাই, শনপাপড়ি খাওয়ার লোভ জাগে খুব। লোভগুলোকে আর সামলাতে পারেন না। নিজের অজান্তেই ছুটে চলে যান বাইরে। বাইরে গেলে পথঘাট সব গুলিয়ে যায় এখন। চোখেও ঝাপসা দেখেন।
ছেলে আর ছেলে বউ বকে চলেছে অবিরত। রজব আলী টু শব্দটি করছেন না। এই ছোট ছেলে আর ছেলের বউই যাহোক একটু দেখে তাকে। এরাই তার ভরসা। বাকি নয় ছেলেমেয়ে তো খোঁজও করে না বাপের।
আট বছরের নাতিটা দৌড়ে এসে পরম মমতায় দাদার হাতটা ধরে বলে "দাদাজান আসো আমি তুমারে ঘরে লইয়া যাই।" একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে রজব আলীর বুক থেকে। বড় মায়া হয়। আরো কটা দিন বেঁচে থাকতে বড় সাধ হয়।
©নিভৃতা
রচনাকাল: ২১-১২-২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৩