somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদার্থবিজ্ঞানে ২০১৮ সালে নোবেলবিজয়ঃ কারা এবং কোন অবদানের জন্য পেয়েছেন?

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লেজার ফিজিক্সে অবদান রাখার জন্য এবার তিন ভিন্ন দেশের তিনজন পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন।
তবে সবার আগে শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক লেজার জিনিসটা কী।

লেজার (LASER) যার পূর্ণরূপ হল Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation. অর্থাৎ আক্ষরিক বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায়- উত্তেজিত বিকিরণের সাহায্যে আলোর বিবর্ধন। লেজার এমন একধরণের যন্ত্রবিশেষ যা আলোক বিবর্ধন প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের উদ্দীপিত বিকিরণ নিঃসরণ করে।
লেজার রশ্মি একপ্রকার আলো, তবে বিশেষ আলো। সাধারণ আলো থেকে এটি ভিন্ন, কারণ এর স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণ আলোতে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ থাকে। সাধারণ আলো যদি একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যেরও হয়, তবু এরা বিভিন্ন তলে চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে চলাচল করে। কিন্তু লেজার যন্ত্র থেকে নির্গত সকল আলোক তরঙ্গই একই তলে চলাচল করে কিংবা এরা সবগুলোই একই মাপের তরঙ্গ হয়। এরা মাত্র কয়েক মাইক্রন চওড়া হওয়ায় (১ মাইক্রন = ১০-৩ মিলিমিটার) এতে প্রচন্ড তাপশক্তি একত্রিত করা যায়। এজন্য বলা হয় লেজার সুসংগতভাবে আলো নিঃসরণ করে। সুসংগত উৎস হল, আলোর এমন দুটি যা থেকে নির্গত তরঙ্গদ্বয় এদের মধ্যকার বিদ্যমান দশা পার্থক্য বা নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে। এছাড়াও লেজার রশ্মি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একীভূত থাকতে পারে। সাধারণ আলোর মত ছড়িয়ে পড়েনা বলে বিশাল দূরত্বেও এটি সমান্তরাল ও সরূ থাকতে পারে। একটি বিন্দুতে একে প্রচন্ড শক্তি দিয়ে একীভূত করে প্রচন্ড শক্তিশালী করা যায় বলে এই রশ্মির সাহায্যে কোনও কিছু কেটেও ফেলা যায়।

লেজারের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলো হল- লেজার প্রিন্টার, লেজার সার্জারি, বারকোড স্ক্যানার, অপ্টিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ, ফাইবার অপটিক, ধাতব ঝালাই, শূন্যস্থানে আলোক যোগাযোগ, বিনোদনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লেজার রশ্মির আলোকীয় কারিশমা ইত্যাদি।

এখন কথা হল- আলোক পালস কী?
প্রায় এক পিকোসেকেন্ড (1 Pico= 1/〖10〗^(-12) ) বা তার চেয়ে কম সময়ে তড়িৎচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের স্পন্দনকে আলোক পালস বলা যায়। আর ডোনা ও মৌরৌ কর্তৃক আবিষ্কৃত লেজার পালস-এর স্পন্দনকাল হল- ১ ফেমোসেকেন্ড, অর্থাৎ ১ সেকেন্ডের ১ বিলিয়ন ভাগের ১ ভগ্নাংশ সেকেন্ডকে আরও ১ মিলিয়ন ভাগে ভাগ করলে যে ভগ্নাংশ সেকেন্ড পাওয়া যায়, সেই সময়!

এখন, ২০১৮ সালের লেজার ফিল্ডে পদার্থবিজ্ঞানে যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের নোবেলবিজয়ীগণ হলেন-
১। আর্থার অ্যাশকিন (মার্কিন বিজ্ঞানী) ২। জেরার্ড মৌরৌ (ফরাসী বিজ্ঞানী) ৩। ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড (কানাডিয়ান বিজ্ঞানী)।

শুরু করি মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী আর্থার আশকিনকে দিয়ে। তিনি লেজার ফিজিক্সে লেজার টুইজার্স নামক একধরনের প্রযুক্তি আবিষ্কার করে নোবেলের খাতায় নাম লিখাতে পেরেছিলেন। প্রশ্ন হল- এ প্রযুক্তিটি কি?

ধরুন, চিমটিজাতীয় কোনও বস্তু দিয়ে আপনি ছোটখাটো কোনও বস্তু, যেমন- পরে থাকা গ্লাসের টুকরো, হাতঘড়ির ছোট ব্যাটারি, সূচ, বা সহজে হাত দিয়ে ধরা যায়না এমন ক্ষুদ্র কিছু ধরতে পারেন। কিন্তু ধরুন আণবিক জগতে যখন আমরা কোনও ভাইরাস, কোনও ধরণের জীবাণু, কণা, এমনকি জীবন্ত কোষ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে যাব, সেক্ষেত্রে এমন আণবিক ‘চিমটি’ কোথায় পাব?
এই অসাধ্য কাজটিই সাধন করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানী আর্থার আশকিন। ১৯৮৭ সালে সর্বপ্রথম তিনি লেজার টুইজার্স পদ্ধতিতে একটি ব্যাকটেরিয়াকে চিমটি দিয়ে যেভাবে ধরে রাখা যায়, সেভাবে আটকে রাখতে সক্ষম হোন ব্যাকটেরিয়াটির কোনোরূপ ক্ষতিসাধন ছাড়াই। অনেকটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে বর্ণিত কাল্পনিক প্রযুক্তির মতো! তাঁর এ আবিষ্কার এখন জৈব গবেষণা যেমন- ভাইরাস বা অণুজীব বিষয়ক গবেষণায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।

এদিকে ফরাসী বিজ্ঞানী মৌরৌ এবং কানাডিয়ান বিজ্ঞানী ডোনা যৌথভাবে আরও সামনে এগুতে শুরু করেন লেজার প্রযুক্তি নিয়ে। তাঁরা এক্ষেত্রে আল্ট্রা-শর্ট অপটিক্যাল পালস আবিষ্কারে সক্ষম হোন।
সাধারণত আলোক সঞ্চালনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গকে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চালন করা দুঃসাধ্য ছিল। কারণ, অতি উচ্চতীব্রতার পালস তৈরি করায় যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতা ছিল। আর এই দুঃসাধ্য কাজটিকেই সাধ্য করেছেন ডোনা ও মৌরৌ।
প্রথমে তাঁরা লেজার পালসকে বিবর্ধিত করেন পালসের তীব্রতা কমানোর জন্য। এরপরে একে হঠাৎ সংকুচিত করেন। যদি লেজার পালসকে সময়মতো বিবর্ধিত করে হঠাৎ সংকুচিত করা হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণ আলোক শক্তি অতি ক্ষুদ্র স্থানে বা বিন্দুতে একীভূত হয়ে পড়ে, আর এতেই নাটকীয়ভাবে পালসের তীব্রতা বেড়ে যায়। এই পালস বিবর্ধন প্রযুক্তি এখন চক্ষু সার্জারিতে ব্যবহৃত হবে, যেখানে শুধু উচ্চ তীব্রতার লেজার রশ্মি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ক্যান্সার নিরাময়েও সক্ষম হবে।

উচ্চ তীব্রতার লেজার প্রযুক্তি এখন আরও তীব্র হয়েছে এবং এর পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়েছে। এই প্রযুক্তি কোষ কিংবা ধাতুর কোনোরূপ ক্ষতিসাধন ছাড়াই কার্যসিদ্ধি করতে সক্ষম। একে বলা হয় পালস বিবর্ধন প্রযুক্তি বা সিপিএ। সার্জারি ছাড়াও এ-প্রযুক্তি বিজ্ঞানের আরও অসংখ্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে, যা দেখার জন্য গোটা দুনিয়াবাসী অধীর আগ্রহ নিয়ে এখন অপেক্ষা করছে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×