ফেসবুকে কোনও একটা গ্রুপে কোনও একজনকে আজ প্রশ্ন করতে দেখলাম- পৃথিবীতে দুজন মানুষ দেখতে হুবহু একইরকম হয় না কেন?
কিংবা হুবহু একইরকম চেহারার ও স্বভাবের দুজন মানুষ পাওয়া যায় না কেন?
দুঃখের ব্যাপার হল, সবাই ঘুরেফিরে একই উত্তর দিলেন, আর উত্তরটা হল- এটা স্রষ্টার কুদরত। কথা হল, স্রষ্টার কুদরত এটা সকলেই জানেন। প্রশ্নটার উদ্দেশ্য ছিল- কেন দুজন মানুষ একই চেহারার, একই বৈশিষ্ট্যের হয়না তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া। জিজ্ঞেস করা হয়নি কে এমনটা করে। যদি কে করে জিজ্ঞেস করা হত, তাহলে উত্তরটা স্রষ্টা বললে খাটে। কিন্তু প্রশ্নটা ছিল- কেন এমন ঘটে? অর্থাৎ ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।
আমি মনে করি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তরটি হওয়া উচিত ছিল এরকম-
একমুঠো বালি-কে আপনি মাটিতে একবার ছুড়ে মারলে যে প্যাটার্ন সৃষ্টি হবে, ওই একই প্যাটার্ন পুনরায় তৈরি করার জন্য আপনি লক্ষ কোটিবার বালি ছুড়ে মারলেও তৈরি করতে পারবেন না। কারণ, একমুঠো বালিতে বিলিয়ন বিলিয়ন বালিকণা থাকে। আর এই অসংখ্য কণা দিয়ে একটি প্যাটার্ন-এর হুবহু একই কপি তৈরি করার সম্ভাব্যতা বিলিয়ন বিলিয়ন ভাগের একভাগ! অর্থাৎ ভগাংশটাকে প্রায় শূন্যই বলা যায়। একই ব্যাপার ঘটে মানুষের ডিএনএ কনফিগারেশন-এর ক্ষেত্রে। মানুষের শরীরের যে ডিএনএ থাকে, তা চারটি নিউক্লিও এসিড বেস দিয়ে গঠিত। সেই বেসগুলোর আদ্যক্ষরগুলো হল A, G, C ও T অর্থাৎ এডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও থায়েমিন। এই চারটি বেস দিয়ে সজ্জিত হয় সন্তানের নতুন ডিএনএ। মা ও বাবার শরীর থেকে আসা ডিএনএর বেসগুলো দিয়ে যে নতুন ডিএনএ বিন্যাস তৈরি হবে, ওই একই বিন্যাস লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রজনন চালিয়ে লক্ষ সন্তান জন্ম দিলেও হুবহু ডিএনএ-ধারী একটি শিশু পুনরায় জন্মানো যাবেনা, অর্থাৎ সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। আর তাছাড়া প্রতিনিয়ত প্রতিটি জেনারেশনেই ডিএনএ আপডেট হচ্ছে, নতুন নতুন তথ্যে সমৃদ্ধ হচ্ছে, সুতরাং পুরাতন ভার্সন রিক্রিয়েট হওয়ার তো কোনও সম্ভাবনাই নেই। আর এজন্যই একজন মানুষের যেকোনো বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন (যেমনঃ ফিঙ্গারপ্রিন্ট) আরেকজনের সাথে ম্যাচ হয়না। এই সাধারণ ব্যাপারটা বেশীরভাগ ফেসবুক গ্রুপের ব্যবহারকারীদের ধারণার বাইরে। আমাদের উচিত ফেসবুকে বা অন্যকোথাও কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হলে যদি সদুত্তর জানা থাকে তা প্রদান করা কিংবা না জানলে নীরব ভূমিকা পালন করা।