১.
রাত চারটায় ঘুমটা বেরসিকের মতো ভেঙে গেলো। অবশ্য এটা এখন আর নতুন কিছু না, প্রায়ই হচ্ছে এমন। বাকি রাত আর দু'চোখের পাতা এক হবে না, অবশ্য সমস্যাও নেই তেমন, কাল ছুটি। একটু ক্ষিদেও পেয়েছে। শেলফে দেখি, কী পাওয়া যায়। বাহ, মুড়ি দেখা যাচ্ছে। একটা চানাচুরের প্যাকেট কয়েকদিন আগে কোথায় যেন উকিঝুকি মারতে দেখেছিলাম! এইতো পাওয়া গেছে! বেশ, বেশ, একটা অ্যাডভেঞ্চার হয়ে যাক!
"মুড়ি ছিলো, চানাচুরও, ব্যাকরণ মানি না
হয়ে গেল মুড়িমাখা, কেমনে তা জানি না"
পানি ফুটিয়ে চা করতে ইচ্ছা করছে না, একটা মগে পানি দুধ মিশিয়ে মাইক্রোওয়েভে মিনিট তিনেক গরম করে একটা টিব্যাগ আর দু'টা চিনির কিউব ছেড়ে দিলাম। যদিও অখাদ্য চা, তাও একটু দেশি দেশি গন্ধ আসছে, মন্দ কী?
২.
গামলা ভর্তি মুড়িমাখা আর চায়ের মগ পাশে নিয়ে কোলের উপরে আমার ব্ল্যাকবিউটিকে নিয়ে বসে পড়লাম। কী করা যায়? সারাদিন গান শুনেছি, আর এখন গান বাজালে পড়শিরা পরদিন আমাকে রাস্তায় বের করে দিবে। ঘুরতে ঘুরতে বাংলা নাটকের সাইটে গেলাম। "সাকিন সারিসুরি" নাটকটা দেখা হয় মাঝে মাঝে, নতুন পর্বদু'টা দেখলাম। ভালো খারাপ কিছুই লাগলো না। অনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে অর্থহীন যাত্রা, অনেকগুলো মেধাবী অভিনেতা ও একজন মেধাবী পরিচালকের সামর্থ্যের বিপুল অপচয়। সালাউদ্দিন লাভলু কি তবে বার্নড আউট হয়ে গেলেন?
ঈদে মোটামুটি বানের জলের মতো নাটক আসতে থাকে, দেখার মতো নাটক খুজে বের করাটা কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মতোই মনে হয়। অসংখ্য নাটক দু এক মিনিট করে দেখে বন্ধ করে পরেরটায় যাওয়া, এমন করতে করতে কপাল ভালো থাকলে একটা দু'টা দেখার মতো নাটক পাওয়া যায়। আগে অনেক উদ্যম ছিলো, খুজতাম, এখন আর ভালোও লাগে না। একটু ঘুরেই বের হয়ে আসি। এবারও তাই হলো। "মুখোশ" নামের একটা নাটক মনে ধরলো, ইটিভিতে দেখিয়েছে, ইটিভির নাটকগুলা মাঝে মধ্যে ভালোই হয়। কিন্তু কিসের কী, অবস্থা করুণ! ৫ মিনিটের বেশি দেখা গেলো না। আচ্ছা, এরা এই নাটকগুলা বানাতে কতো সময় নেয়? এক ঘন্টা? এক দিন? নাকি এক সপ্তাহ? একদিনের বেশি সময় নেয় বলে তো মনে হচ্ছে না।
৩.
বিবিসির নিউজে দেখলাম জিএম তাদের সুইডিশ ব্র্যান্ড "সাব" বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় ৪ হাজারের মতো লোক চাকরি হারাবে। এদিকে জার্মানীতে তাদের "ওপেল" নিয়েও চলছে বিরাট নাটক। দুইবার প্রায় বেচতে বেচতেও বেচলো না। কী হবে এর ভবিষ্যৎ কেউ জানে না, তবে খুব একটা আশাবাদী কাউকেই মনে হচ্ছে না। ভাবে মনে হচ্ছে সাবের ভাগ্যই অপেক্ষা করছে ওপেলের জন্য।
বিশাল এক সাম্রাজ্য আস্তে আস্তে ধ্বসে পড়ছে, খারাপই লাগছে। আমাদের পাট, চিনি শিল্পগুলোর ঘটনাও তো প্রায় একই। এক একটা শিল্পকে ঘিরে কতো হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা জড়িয়ে থাকে, এর পতন মানে সেই মানুষগুলোর জীবনে অনিবার্য বিপর্যয় নেমে আসা। লাভ ক্ষতির নিক্তিতে মাপলে হয়তো বন্ধ করে দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়, কিন্তু একটা ব্যর্থ শিল্পের ব্যর্থতার দায় তার সাধারণ শ্রমিকদের কতটুকু? এই যে ক্রেডিট ক্রাঞ্চের শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাব, তার চাকরি হারানো সেই লাইন কর্মচারী কতটুকু হারালো, আর ভুড়ি বাগিয়ে বসে থাকা ওপরওয়ালারা কতটুকু হারালো, তার তুলনামূলক বিচার কি কেউ কোনদিন করবে? মনে হয় না। পৃথিবীতে আমাদের মতো উলুখাগড়ারাই সবার আগে বলি হয়, এটাই আমাদের নিয়তি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




