somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ফ্লেক্সিলোডের দোকানে বিক্রি হয় মেয়েদের মোবাইল নাম্বার !

০১ লা মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা এক. সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস,পড়াশোনা,পার্ট-টাইম চাকুরীর ঝক্কি শেষে রুমে ফিরে ক্লান্ত বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে সুমী। চোখটা একটু বন্ধ হয়ে আসতেই অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো- ধরতেই- “তোরে আমি সিলিং ফ্যানের লগে ঝুলাইয়া...” । বিস্ময়ের ঘোর কেটে যাওয়ার পর ফোন কেটে দেয়ার আগেই এক গাদা অশ্লীল বাক্য সারারাতের ঘুম হারাম করে দিয়ে গেল। এমনটা আজকাল প্রায়ই হয়। নারী হয়ে জন্ম নেয়ার লজ্জায়,অপমানে,যন্ত্রনায় পৃথিবীটাকে আজকাল নরকের মতো মনে হয় সুমীর।

ঘটনা দুই. এভাবে ১০ টির বেশি নাম্বার সেইভ করা দিশা’র মোবাইলে। জিজ্ঞেস করার পর বললো “এই নাম্বার গুলো থেকে ফোন করে উত্তোক্ত করে তাই এগুলো থেকে ফোন এলে ধরি না।কিন্তু প্রতিদিনই নতুন নতুন নাম্বার থেকে ফোন আসে। দুবার নিজের নাম্বার পরিবর্তন করেছি,পরিচিত কয়েকজনকে ছাড়া নাম্বার দেই না কিন্তু কিভাবে জানি নাম্বার পেয়ে যায়।”
-“ফোন কোম্পানীতে অভিযোগ করো নি!”
-“করেছি কয়েকবার কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। ওরা কোনো ফোন কলের ট্রেস রাখে না বললো। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে পারবে না”

ঘটনা তিন. রাজশাহী থেকে মিমি’র বাবা মা প্রতিদিন ফোন করে খোঁজ খবর নেয়। মোবাইল বন্ধ করে রাখলে করে টেনশন, তাই মোবাইল বন্ধ রাখারও উপায় নেই। মাঝ রাত্তিরে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে। অশ্লীল গালি গালাজ করে। এখন আর অপরিচিত নাম্বারের ফোন ধরি না। ফোন রেখে দিলে বা না ধরলে পাঠায় অশ্লীল সব মেসেজ।
-“মোবাইল কোম্পানীতে জানাওনি?”
-“জানিয়েছি। ওরা প্রথমে বললো ফোন কলের জন্য ওরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবে না। বললো, মেসেজ রেকর্ড করে রাখতে,না মুছতে। এরপর বলে জিডি করতে। তাও করেছি। এরপর মোবাইল কোম্পানীর পরিচিত এক বড় ভাইকে বলার পর একটা নাম্বার বন্ধ করেছে কিন্তু প্রতিদিনই নতুন নতুন নাম্বার থেকে এই ঘটনা ঘটছে!”

আপনি যদি একজন মেয়ে হোন। আপনার যদি একটি মোবাইল ফোন থাকে। আপনার বয়স ১৩ কিম্বা ৬৩ যাই হোক না কেন, উপরের ঘটনাগুলো আপনার অপরিচিত নয়। অথবা আপনি যদি ছেলেও হোন, আপনার যদি বোন থেকে থাকে,বান্ধবী থেকে থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে জানতে পারবেন প্রতিদিন আরো কত নির্মমতার সম্মুক্ষীন হতে হয় তাদেরকে এই মোবাইল ফোনের কারণে।

মেয়েদের মোবাইল নাম্বারগুলো কি করে ছড়ায় উত্তোক্তকারীদের হাতে? পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের সহযোগীতায় শুরু করি খোঁজ নিতে। জানতে পারি আঁতকে ওঠার মতো খবর। যতবারই আপনি মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করুন না কেন, যতই অভিযোগ করুন না কেন। মোবাইল কোম্পানীর ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার হাত ধরে আপনার নাম্বার ঠিকই পৌছে যাবে উত্তোক্তকারীদের হাতে। ফ্লেক্সিলোডের দোকানে বিক্রি হয় মেয়েদের মোবাইল নাম্বার। অনেক দোকানে এখন আলাদা করে দুটো খাতা রাখে। মেয়েদের জন্য আছে আলাদা খাতা। আপনি মেয়ে হলে ফ্লেক্সিলোড করার সময়ই আপনার নাম্বারটি লেখা হচ্ছে সেই খাতায়। এরপর ঐ দোকানী উত্তোক্তকারীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে ফোন নাম্বার। মাঝরাতে আপনার কাছে আসছে উত্তোক্তকারীদের ফোন। নষ্ট হচ্ছে আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বিদেশে যে কারো একটি ফোন পেতে হলে তাঁর নাম, ধাম, সোস্যাল সিক্যুরিটি নাম্বার এমন অনেক কিছুই দিতে হয়। যার কারণে কেউ মোবাইল নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে না। আমাদের দেশে মোবাইলের সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো ঠিকভাবে মেনে চলে না মোবাইল কোম্পানীগুলো নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে। এরপর অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এর ভোগান্তীর শিকার হতে হয় ১৩ কিম্বা ৬৩’র সমস্ত মেয়েদের।

ইদানিং কালে শুরু হয়েছে আরেক ব্যবসা। এখন, মফস্বলে বিশেষ করে, বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের ফেসবুক ‘ফ্রেন্ড সাজেশন’। কম্পিউটারে কিছুটা পারদর্শী ছেলেরা প্রথমে ৪/৫টা করে নারী নিক খুলে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে মেয়েদের সাথে। এরপর অন্য ছেলেদের কাছে বিক্রি করে ফেসবুক ‘ফ্রেণ্ড সাজেশন’। মেয়েরা এরপর হয় ভোগান্তির শিকার।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:৪৭
৪৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×