রজব মাস পালন, তার ফযীলত, তাতে রোযা রাখা ইত্যাদি বিষয়ে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই, এই সময়ের একটি বহুল উচ্চারিত প্রশ্ন। বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, তাই আমি এ মাসের সাথে সম্পর্কিত কিছু আহকাম বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব, আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন।
রজব : হারাম মাসের একটি
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন : ‘‘আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও সূচনা লগ্ন হতেই আল্লাহর বিধান মতে মাসের নিশ্চিত সংখ্যা বারটি। তার মাঝে চারটি সম্মানিত। এ অমোঘ ও শাশ্বত বিধান ; সুতরাং এর মাঝে তোমরা (অত্যাচার-পাপাচারে লিপ্ত হয়ে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না। তোমরা সম্মিলিতভাবে মুশরিকদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হও, যেভাবে তারা সম্মিলিতভাবে তোমাদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।’’ (তওবা-৩৬)
চার হারাম মাস হচ্ছে : মুহাররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ্জ। আবু বকর (রা
রজবকে হারাম নামে নামকরণের কারণ
কারণ, তাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। তবে, শত্র“ প্রথমে আক্রমণ করলে প্রতিরোধ করা বৈধ। এ কারণেই তাকে বলা হত বোধির রজব তাতে হাঁক দেয়া হত না যোদ্ধাদের সমবেত হওয়ার জন্য কিংবা তাতে শোনা যেত না অস্ত্রের ঝঙ্কার। কিংবা তাকে হারাম বলা হয় এ কারণে যে, অন্যান্য মাসের নিষিদ্ধ কর্মের তুলনায় এ মাসের নিষিদ্ধ কর্ম অধিক দূষণীয়। রজব মাসকে রজব বলা হয়, কারণ তা সম্মানিত। তারহীব মানে সম্মান জ্ঞাপন করা। শব্দটি এখান থেকেই উদ্ভূত। (লাতাইফুল মাআরেফ ২২৫)
রজবে প্রবেশের দোয়া
আনাস (রা
রজবের দশ তারিখে উপাস্যের উদ্দেশ্যে পশু জবাই
কোন কোন আলেম রজব মাসে পশু জবাই মোস্তাহাব বর্ণনা করেছেন, প্রমাণ হিসেবে তারা উপস্থাপন করেন মাখনাফ বিন সালিম (রা
অধিকাংশ বিজ্ঞজনের মত এই যে, হাদীসটি মনসূখ (রহিত)। আবু হুরায়রা (রা
হাদীসটির ব্যাখ্যায় আবু দাউদ বলেন, কেউ কেউ বলেন ফারা’ বলা হয় উটের প্রথম ভূমিষ্ঠ বাচ্চাকে, প্রাচীন আমলে লোকেরা তাদের উপাস্য তাগুতের জন্য একে বলি দিত। অতঃপর তার মাংস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত, চামড়া ঝুলিয়ে রাখত গাছের ডালে। আতীরা বলা হয় রজবের দশ তারিখে উপাস্যের উদ্দেশ্যে যে পশু বলি দেওয়া হয়, তা। (আস সুনান ৩/১০৪)
ইবনে সীরীন, আবু উবাইদ ও ইসহাক বিন রাহওয়াই প্রমুখ আলেমের মত এই যে, হাদীসটিকে মানসূখ (রহিত) হিসেবে গ্রহণ করাই ওয়াজিব বা আবশ্যক।
রজবে উমরা পালন
মুসলমানদের কোন কোন উপদল রজব মাসকে বিশেষভাবে উমরা পালনের মাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে প্রভূত ফযীলত এবং পরকালীন পুরস্কার। প্রকৃত সত্য ও শুদ্ধ মত হল রজব অন্যান্য মাসের অবিকল, তার বিশেষত্ব নেই অন্য মাসের তুলনায়। তাতে উমরা পালনের বিশেষ কোন ফযীলত বর্ণনা করা হয়নি। উমরা পালনের ক্ষেত্রে সময় সংশ্লিষ্ট আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী রমযান মাস এবং হজ্জে তামাত্তুর জন্য হজ্জের মাসগুলো। এ মাসগুলোয় উমরা পালনের বিশেষ ফায়দা হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত। হাদীসের কোথাও এ স্বীকৃতি পাওয়া যায় না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে উমরা পালন করেছেন। তাছাড়া, বিষয়টিকে আয়েশা (রা
রজব মাসের বেদআত
রজব মাসে মানুষের আবিষ্কৃত এবাদতগুলো নিম্নরূপ :
প্রথমত: সালাতুর রাগায়েব। তা হচ্ছে প্রথম জুমায় বাদ মাগরিব সাতটি সালামের মাধ্যমে বার রাকাত সালাত আদায় করা। প্রতি রাকাতে সূরাহ ফাতেহা পাঠের পর সূরাহ কদর তিনবার পাঠ করবে এবং সূরাহ ইখলাস পাঠ করবে বারো বার। সালাত হতে ফারেগ হবার পর সত্তর বার দরূদ পাঠ করবে, এরপর দোয়া করবে ইচ্ছামত। সন্দেহ নেই এবাদতের এ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বেদআত, বর্জনীয়। এ সম্পর্কিত হাদীসটি সন্দেহাতীতভাবে মাওজু। ইবনে জাওজি তার এক রচনায় ইমাম নববীর বরাতে উল্লেখ করেন যে, আলেমগণ এর মাধ্যমে সালাতের কারাহাত প্রমাণ করেছেন আল্লাহ তা’আলা এর উদ্ভাবক ও উদ্পাদককে ধ্বংস করুন। এ নিশ্চয় বেদআত, সুতরাং, সর্বার্থে বর্জনীয়। তা নিশ্চয় পথভ্রষ্টতা, মূর্খতা তাতে পালন করা এমন কিছু, যা বর্জনীয়। আলেমদের একটি বৃহৎ শ্রেণী একে ভ্রান্ত প্রমাণ করে নানা গ্রন্থ সংকলন করেছেন, এ সালাত আদায়কারীকে পথভ্রষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। খাত্তাবী (রহ
দ্বিতীয়ত: মধ্য রজবের সালাত। এ সংক্রান্ত যাবতীয় হাদীস মওজু।
তৃতীয়ত: মেরাজের রাত্রির সালাত। তা রজবের সাতাশ তারিখে আদায় করা হয়। একে বলা হয় লাইলাতুল মেরাজের সালাত। এ এমন বেদআতী সালাত, যার কোন শরয়ি ভিত্তি নেই। রজব মাসেই মেরাজ সংগঠিত হয়েছে এ দাবিরও কোন জোড়ালো ভিত্তি পাওয়া যায় না। আবু শামাহ (রহ
রজবের রোযা
রজব মাসে রোযা পালনের ব্যাপারে স্বতন্ত্র কোন ফযীলত বর্ণনা করা হয়নি। বরং অন্যান্য মাসের মতই তাতে এবাদত করা হবে, রোযা রাখা হবে যেভাবে রাখা হয় অন্যান্য মাসে। পেশাদার ওয়ায়েজ ও গল্পকার ভণ্ড ধার্মিকরা এর ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে যে হাদীস বর্ণনা করেন রাসূল বলেছেন : রজবে রয়েছে একটি নহর, যার পানি বরফের তুলনায় সফেদ-শুভ্র, মধুর তুলনায় মিষ্ট, রজব মাসে যে একটি রোযা রাখবে, সে তা হতে পান করবে। উক্ত হাদীসটি বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। অন্য হাদীস , যা বর্ণিত হয়েছে এভাবে : অর্থ : রজব এক মহৎ ও মহান মাস। আল্লাহ তাতে পুণ্য দ্বিগুণ করে দেন। যে রজবের এক দিন রোযা রাখবে সে যেন পুরো বছরই রোযা পালন করল। আর যে সাত দিন রোযা রাখবে তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি পনেরো দিন রোযা পালন করবে, আকাশের একজন ঘোষক তাকে ডেকে বলবে: তোমার ইতোপূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং নতুনরূপে আমলের সূচনা কর। আর যে এরও অধিক করবে, আল্লাহ তাকে আরো অধিক পুরস্কারে ভূষিত করবেন। একে ইবনে হাজার আসকালানী বাতিল বলে সাব্যস্ত করেছেন।
আমি নিবন্ধটির সমাপ্তি করছি হাফেজ ইবনে কায়্যিম ও ইবনে হাজার রহ: মন্তব্য দ্বারা, ইবনে কায়্যিম বলেন : রজবের রোযা ও সালাতের ব্যাপারে যে হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়, তা- সবই মিথ্যা, অগ্রহণযোগ্য, সুতরাং বর্জনীয়। পক্ষান্তরে ইবনে হাজারের মন্তব্য ছিল রজব মাসের ফযীলত, তাতে রোযা পালন, কিংবা নির্দিষ্ট কোন অংশে ও রাতে রোযা ও সালাত আদায় ইত্যাদি বিষয়ে প্রামাণ্য কোন শুদ্ধ হাদীস পাওয়া যায় না, যার মাধ্যমে বিষয়টি প্রামাণ্যতার মানদণ্ডে উন্নীত হবে। আমরা যে কোন বিদ’আতি কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর তওফীক কামনা করি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করেন। আমীন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






