(ক) বন্ধু, বন্ধুর কোন কাজে আসবে না: আল্লাহ তা’আলা বলেন; সেই দিন বন্ধু তার বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যও পাবে না। (সূরা দোখান: ৪১)
কুয়েতে আমরা যারা বসবাস করছি তার ৯৫% ভাগ বিভিন্ন ক্লিনিং কোম্পানীতে। এক কথায় সমগ্র কুয়েতের সব ময়লা আবর্জনা আমরা বাংলাদেশীরাই পরিস্কার করি। আপনি নিজেই চোখ বুঝে চিন্তা করুন সত্যি কি না? প্রতি রুমে ৮/১০/১২ জন করে থাকি। প্রতি রুমে ২/৩টি টিভি আছে। কেউ সাথী ভাই এর সাথে ঝগড়া করে এক একটি করে টিভি নিয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেক রয়েছে যারা হিন্দি ভাষা ২/১ শব্দও বুঝিনা তবুও হিন্দি চ্যানেল দেখা হয়। কারণ তাদের উলঙ্গপণা কোমর ঝুলানো বুকের বেশী অংশ খোলা রাখা এদের চিরাচরিত অভ্যাস। তাই এ সব দেখতে বেশী মজা লাগে, নতুবা ইংলিশ চ্যানেল। এসব দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে গিয়েছি, আমার প্রশ্ন কি পেলাম? কি শিখতে পারলাম? এ ছাড়া সোমবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার ডিস ওয়ালারা রাত ৯টার পর চালু করে দেয় উঠউ. ঈউ বু ফ্লিম বা নীল ছবি। এখন তো নীল ছবি একটু মধ্যম দামী মোবাইলে ও সেটিং করে দেওয়া আছে। বড় ডিস ও ইসরাইল চ্যানেল তো ২৪ ঘন্টায় নীল ছবির মতই। তারা ইহুদী, এছাড়া ফ্রি সেক্সের দেশ। আমাদের ঈমান হরণের জন্য শয়তান আরও কত কি বের করবে জানি না (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ পুরুষাঙ্গ যৌননালীকে পর্দার জন্য লোম দিয়ে ডেকে রেখেছেন। আমরা তা খোলাখুলি দেখছি। আমার মনে হয় না ১০/১৫ মিনিট দেখার পরই যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে কি না? হয়তে রাত্রে তার স্বপ্ন দোষ হয় নতুবা অন্য মহিলা খুঁজতে হয় নয়তো বা হাম্মাম টয়লেটে গিয়ে হস্তমৈথুন করে বীর্য ফেলে দেয়। এটা জঘন্যতম খারাপ অভ্যাস। কুরআন হাদীস ব্যতীত ডাক্তারী মতেও হস্তমৈথুন সীমাহীন খারাপ। উঠতি বয়সে না হলেও মধ্যম বয়স থেকে তার পুরুষাঙ্গে পাথর সৃষ্টি হয়। আল্লাহ যেন আমাদেরকে এসব থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেয়েরা কিভাবে যৌনক্ষুধা সমাধা করছে তা দেখানো হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আরব, ইন্ডিয়ান, চীন, জাপান আমেরিকা, লন্ডন ইত্যাদি দেশের। এ ছাড়া কুকুর, ঘোড়া, গাধা দিয়ে মহিলাকে ধর্ষণ অথবা কয়েকজন পুরুষ মিলে এক মহিলা অথবা কয়েকজন মহিলাকে এক পুরুষ অথবা সমকামিতা ইত্যাদি। বনী ইস্রাইল এর যুগে তাদের সমকামিতা ছিল বলে সেই বলবান জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন। এই বিষয় জানার জন্য সূরা নামলের ৫৪-৫৮ আয়াত দেখুন। যারা দেশে টিভি, ডিস, রেখে এসেছেন বা নিচ্ছেন আপনার অগোচরে আপনার উঠতি ছেলে-মেয়েরা কি এসব দেখছে না? তাদের চরিত্র কি নষ্ট হচ্ছে না। আমরা এসব থেকে বেঁচে থাকি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করি। প্রবাসে বাংলাদেশী হিসেবে সম্মানের স্থান করে নিই। রুমের বন্ধুদের নামাজের দিকে ঈমানের দিকে, সৎ চরিত্রের দিকে তথা মসজিদের দিকে আহবান করি। বাংলায়ও প্রবাদ আছে (কুরআনে তো আছেই) সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। ভাল, সৎ বন্ধুর সাথে চলা-ফেরা করলে সে বন্ধু আপনাকে সৎ পথে ডাকবে। ভাল উপদেশ দেবে। অবসরে মসজিদে বাংলা অর্থসহ কুরআন-হাদীস পড়ি, ইসলামী সাহিত্য পড়ি, এখন বাজারে আমাদের মাতৃভাষায় সব ধরনের বই পুস্তক পাওয়া যায়। কুয়েতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মসজিদ গুলোতে বাংলা ভাষায় ইসলামী আলোচনা হয়, সুতরাং আমাদের উচিত সময়কে কাজে লাগানো। অবসরে চাকুরী বা কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করি। আমাদের ঈমানকে মজবুত করি। খারাপ বন্ধু উক্ত বিষয় ছাড়াও নিয়ে যাবে দেহ পেশায় নিয়োজিতদের কাছে, একদিন চিনে এসে পর প্রত্যেক দিন আপনি যেতে থাকলেন। আল্লাহ এসব কবীরা গুনাহ থেকে প্রত্যেককে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন, আমীন। এসব প্রতিকারের জন্য সকল মুমিন ভাই-বোনগণ এগিয়ে আসুন। সমগ্র কুয়েত যেভাবে পরিস্কার করি তদ্রƒপ মনকে এভাবে পরিস্কার করি।
(খ) পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।
(১) জামা-কাপড় : এই প্রবাদটি আমরা অনেকে জানি। কিন্তু কয়জনে আমল করি। কিছুক্ষণ আগের ধোয়া জামাটি অথবা নতুন জামাটি পরলে আপনার শরীর হালকা বোধ হয়, মনে আনন্দ লাগে। এভাবে অন্তত আমরা আমাদের জামা কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। চুল ছোট রাখি সপ্তাহে অন্তত একবার গুপ্তাঙ্গের পশম পরিষ্কার করি, নখ কাটি, দাঁত পরিষ্কার করি, সাধ্যমত ভাল জামা কাপড় পরি, জুতা পালিশ করি, সব সাজিয়ে রাখি। গাড়ীতে উঠা বসায় অন্যের সাথে সুন্দর ব্যবহার করি।
(২) টয়লেট-হাম্মাম: পায়খানা প্রস্রাবের পর টয়লেটে বেশী করে পানি ঢালি। বেচিং, হাম্মাম, রুম কিচেনে কারো সাথে ঠেলাঠেলি না করে নিজে একটু কাজ বেশী করে করি, হলরোমও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। পানির নলের ছিপি বন্ধ করে রাখি।
(৩) পান খাওয়া: বেশীর ভাগ বাংলাদেশীরা বিশেষ করে ড্রাইভার মৌলভী সাহেব আবার অনেকে সখের বসে বা সাথীর মন রক্ষার্থে পান খায়। আমি পান খাইতে না করি না। এদেশে যেহেতু নিষেধ সেহেতু একটু হিসাব নিকাশ করেই খান। দেখা যায় পানের রশ গড়িয়ে মুখের ২ পাশে পড়ছে। অনেকে মুখে পানের দরুন কথাও বলতে পারছে না। পানের দোকানের এখানে সেখানে দেয়ালে খুঁটিতে ময়লার বাক্সের বাহিরে পুরোটা পানের রসের রং এ ভরে যায়। পান বিক্রেতার পানের খুটি দেয়ালে শুধু চুন আর চুন। কেন এসব? ইচ্ছা করলে কি আমরা এসব বন্ধ করতে পারি না? নির্দিষ্ট স্থানে কি ময়লা থুথু ফেলতে পারি না। যখন শুনি বা দেখি অমুককে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। ২দিন উত্তম মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে, অথবা পুলিশে ২ গালে ২টা চড় মেরেছে, যা আরবী দৈনিক বা কুয়েত টাইমস অথবা আরব টাইমস পত্রিকা উল্টোলেই দেখা যায়। বিশেষ করে “বাংলাদেশী” কথা টা যখন, লেখা হয় তখন খুব খারাপ লাগে। তাই বলি, ভাই বাংলাদেশ আমাদের গর্ব, চোখ কানা হউক তবুও দেশ কানা করবেন না। আপনার একার জন্য পুরো জাতি কেন বকা শুনবে।
(গ) হালাল-হারাম: আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা আল বাকারা: ২৭৫)
আমরা সবাই কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম জানি। মসজিদের ইমাম সাহেব থেকে শুনি, কিন্তু বাস্তবে আমরা তা কি আমল করি? প্রবাসী ভাই-বোনদের নিম্নোক্ত হারাম থেকে বেঁচে থাকার আহবান করি।
১. এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পূর্বেই আপনার পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন বা তাদের ছেলে-মেয়ে বা মা-বাবার জন্য মাংস, আচার, ঔষধপত্র বা কিছু না কিছু দিয়ে থাকে। আপনি একজন প্রবাসী, ভাল আরবী জানেন না অথবা বুঝায়ে বলতে পারেন না। কিন্তু যে লোকটি পুরাতন সে হয়ত একজন ক্লিনার বা সুপার ভাইজার। ওনি কুয়েতীকে বুঝিয়ে বললে মালসমূহ ফেরত দেয়। কিন্তু না সে ব্যক্তি লোভে অর্থাৎ কুয়েতী বলল তোরা নিয়ে যা বা ডাস্টবিনে ফেলে দে । এসব মাংস আচার এনে নিজেও খেলেন। রুমের সবাইকে খাওয়ালেন এটা কি হারাম নয়? কেন এত টাকা খরচ করে এসে হালালের সাথে হারাম মিশ্রিত করলেন মনে রাখবেন আল্লাহ প্রত্যেক কিছুর (জাররা) অনু পরিমাণ সব কিছুর হিসাব নিবেন। কোটি কোটি বাংলাদেশী ও বিমানে উঠতে পারে নাই, শোকর করুন ধৈর্য্য ধারণ করুন। কারণ আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের ভাল বাসেন।
২. মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অফিস আদালতে যারা ক্লিনার, তারা করেন এমন কি মসজিদের খাদেমগণও। তা হল উক্ত সব স্থানে ছোট সাবান, তরল সাবান, ক্লিনিক্স টিসু দেয়া হয়। আবার যারা চা কফির কাজ করেন, তারা চিনি, চা পাতা (লিপটন) ইত্যাদি চুরি করে বাসায় নিয়ে আসেন। মসজিদের খাদেমগণ বাড়ি যাওয়ার সময় ১০০/২০০ সাবান বাড়ি নিয়ে যায়, আবার ১০০ পয়সার সাবান ৫০ পয়সায় বাকালায় (মুদি দোকান) বিক্রি করে দেয়। তরল সাবান বাসায় ব্যবহার করে আবার বন্ধু-বান্ধবকে দেয়। টিসু দিয়ে নিজে হাত মোছেন আবার সকলকে ব্যবহার করতেও দেন। পবিত্রতার জন্য টয়লেট টিসু ব্যবহার করেন। চা পাতা বেশী না পারলে ও পকেটে করে হলেও ৫/১০টা নিয়ে আসেন। নামাজও পড়েন টুপি, দাঁড়িও রাখছেন লম্বা জুব্বাও পরেন, কিন্তু যা করছেন ঠিক করেছেন? এ সবই কি হারাম নয়? ১ পেকেট চা পাতা কত পয়সা? টিসুর মূল্য কত? ১ কেজি চিনি ২০০ পয়সা ১ কিলো নিলে ১ মাস চলবে। নিম্নমানের এসবের প্রতিও নজর যায় কেন? আপনি আপনার সুপার ভাইজার, ম্যানেজার বা মুদিরকে বলে নিন তা হলে তো হালাল হলো।
৩. যারা কুয়েতী গ্রাম গুলোর ময়লা পরিষ্কার করেন, তাদের ডিউটি রাত ২টা থেকে। দেখা গেলো ময়লার ড্রামের পার্শ্বে কুয়েতী ছেলের ছোট সাইকেলটি ভুলে রয়ে গেল অথবা রাস্তার পাশে বিছানো কার্পেটটি উঠিয়ে নিলো না। আপনি এসব গাড়ীতে করে (বলদিয়ার) এসে পুরানো মালামাল কিনে (ছিকরাব) তাদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে দিলেন। অনেক কুয়েতীর অভিযোগে ধরাও পড়েন। ফরাশ ও ক্লিনার কুয়েতীর টেবিল থেকে দামী মোবাইলটি চুরি করলেন ধরাও পড়লেন শুধু ১টি কারণে দেশে পাঠিয়ে দিলো। এসব লজ্জা রাখি কোথায়? বলে বাঙালী চোর, চুরি করলেন আপনি একজন আর গালি শুনলো সমগ্র বাংলাদেশী জাতি। আল্লাহ এসব থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দিন।
৪. ফোনের দোকানে আপনাকে কর্মচারী হিসাবে রাখলো। আপনি মানুষকে ঠকিয়ে ১০ মিনিট কথা বললে ১২ মিনিটের পয়সা রাখলেন ২মিঃ অতিরিক্ত নিলেন, এভাবে ২৪ ঘন্টায় ২/৩ দিনার অতিরিক্ত কামায় করলেন এটা কি হারাম নয়?
৫. দোকানে কর্মচারী হিসাবে বেতনও দিচ্ছে খাওয়ার থাকার ব্যবস্থাও করছে সেখান থেকে তো চুরি করছেনই আবার দোকানের পুঁজিতে খোলা মাল কম দামে কিনে দোকানের মূল্যে বিক্রি করে অতিরিক্ত টা আপনি পকেটে ঢুকালেন এটা কি হারাম নয়? এ টাকা দোকান মালিকের প্রাপ্য নয় কি?
৬. ড্রাইভার সাহেবের চুরি: তেল চুরি, মিথ্যা বলা বা মিথ্যা ড্রাইভার দেওয়া কোম্পানী বা বাসায়, অথবা কুয়েতী স্বপরিবারে ১০/১৫ দিনের সফরে গেল, আপনি তাদের গাড়ী ভাড়ায় চালিত করলেন! এসব কি হারাম নয়?
৭. বখশিস চুরি: হাসপাতালের ট্রলি (রোগী আনা নেওয়া) বা জামইয়ার (সুপার মার্কেট) ট্রলি যারা চালায় তাদের বখশিস বেশী হয়। অন্যদের সামান্য হয় বা অন্য সাইডে মোটেই হয় না। সুপার ভাইজার ঘুষ নিয়ে আপনাকে ঐ দায়িত্ব দিল। অথবা বিশ্বাস করে দিল যে সব পয়সা সমভাগ করে নিবেন। দেখা গেল মিথ্যা বলে ৬ দিনার পেয়ে বললেন ২ দিনার পেয়েছি। এ টাকা কি হারাম নয়? সারা দিন ট্রলি ঠেলে ১০ দিনার পেলেন বললেন ৫ দিনার! পেট্রোল পাম্পে ও অনুরূপ। মিথ্যা, চুরি করে আপনার হালাল রুজীকে হারাম করলেন। আর যারা কাজ করেন সমভাগ করে নেন তাদের গুলো হালাল হবে। অবৈধ যে ভাবেই আপনি যতই রোজগার করুন না কেন তা বিফলে যাবে? চিন্তা করুন এ টাকা আপনি মা, বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্রকে খাওয়াচ্ছেন জিজ্ঞাসা করুন আমার এ আয় অবৈধ বা হারাম তোমরা এসবের গুনাহের ভাগী হবে? কেউই হবে না। আমার বাড়িতে অমুকের অসুক, চিকিৎসা না দুর্ঘটনা সবাই ব্যয় করে শেষ। মনে রাখবেন হালাল রুজীতে বরকত হয়। (চলবে....)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






