(ঙ) ভিসা সংক্রান্ত : বিগত ২ বৎসর যাবৎ বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ। একামা হাউলও বন্ধ। (হাউল বর্তমানে খোলা রয়েছে) আমরা যারা দীর্ঘদিন যাবৎ কুয়েতে আছি সবাই বেশ আর কম, ভিসা কিভাবে বের হয় কত খরচ যায় অন্তত সবাই জানি। প্রতিটি ভিসায় খরচ ১২ দিনার আনুসাঙ্গিক সহ সব মিলিয়ে ৪০ দিনার এর কম। অথচ আমাদেরই দালালী হালালী অথবা মাছরী মনদুব বা কুয়েতীর সাথে দর কষাকষি করে ভিসার মূল্য দাঁড়ায় ৫/৬শ দিনার। বাংলাদেশ থেকে একজন ক্লিনার ক্লিনিং কোম্পানীতে আসতে অন্ততঃ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ। অথচ এই ২ বৎসরে শুধু নেপালী, শ্রীলংকান, পাকিস্তানী, ভারতীয়রা ৪০/ ৫০ দিনার দিয়ে ভিসা নিয়ে তাদের টিকেটে, এ দেশে আসে। আনন্দের এ দূরাবস্থার জন্য কি আমরাই দায়ী নই? সবাই জানি মেডিকেলে ২টা, বুক এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা। দেশে তো হাজার রকমের খত দিয়ে ঘুষ দিয়ে মেডিকেল ফিটনেস করাতে হয়। দেশের এ সব দুর্নীতি বন্ধ করি। ট্রাভেলস এজেন্সীর টিকেট কমিশন বন্ধ করি। সবাই দুর্নীতি নির্মূলের চিন্তা চেষ্টা করি। গরীবরা বিদেশ করুক ব্যবস্থা করি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাস এর প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি। যখন আসার সময় কুয়েত এয়ারপোর্ট এ সীল ভিসা কপি জমা হয় তখনই দূতাবাস জানে কত বাংলাদেশী কুয়েতে এসেছে এর পূর্বে কত ভিসা ছাড়ল তা তারা কিছুই জানে না। অনেক ভারতীয়, শ্রীলংকান, নেপালীর সাথে আলাপ করে জানলাম। তারা ৫০/ ৬০ দিনার বেতনে আসবে না যদিও ভিসার মূল্য ৪০ দিনার হয়। দেখুন তারা দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি কত টান? আর আমরা? যারা ভিসার ব্যবসা করেন, কিছু করতে পারছেন কি? দয়া করে এবার ভাল হয়ে যান। সত্য কথা বলে হালাল ব্যবসা করুন। আল্লাহ সকল কে বুঝার তওফিক দান করুন। যারা কাজ কর্ম জানে না অন্তত তাদের জন্য হলেও ফ্রি ভিসা বন্ধ করার ব্যবস্থা করি।
(চ) আগামীর পথে শিক্ষিত জাতি উপহার : অন্তত নিুোক্ত পদ্ধতিতে আমরা শিক্ষিত বাংলাদেশী কুয়েতকে উপহার দিতে পারি।
কুরআনের কথায়: নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।। (সূরা রা'দ আয়াত ১১)
১. ধরুন আপনি একজন মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জেম। আপনার পরিচয় আছে, জানা আছে ধর্ম-মন্ত্রণালয় মসজিদ আওকাফ অর্থাৎ মসজিদ পরিচালনা পরিষদ। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। যখনই মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেওয়া হবে তৎপূর্বেই আপনি বাংলাদেশী আরবী মাষ্টার্স ইসলামী কুরআন, হাদীস, ফেকাহ, উসুল ইত্যাদি শাস্ত্রে ভাল অভিজ্ঞদের কপি জমা করুন। দেখুন না চেষ্টা করে এরূপ ২/১ জন অনর্গল আরবী ভাষায় বক্তৃতা দেওয়া ওয়ালা এখন দেশে ভুরি ভুরি। ২/১ জনকে আনতে পারলেই তো তাদের দক্ষতা অভিজ্ঞতা দেখেই হয়তো কুয়েতীরা একদিন বলবে যে, বাংলাদেশী মসজিদের ইমাম চাই। একটু কষ্ট করুন।
যারা কুয়েতে হাসাবিয়া বড় মসজিদ, মুরগাব বাসষ্ট্যাণ্ড মসজিদ (মসজিদে ফাদালা) , আমগাড়া কে পি টি সি ব্যারাক মসজিদসহ কয়েকটি মসজিদ ছাড়া কোথাও সরকারী বেতনভূক্ত মসজিদের ইমাম নাই। এ ছাড়া সব বাংলাদেশী ইমামরাই (মসজিদের বাক্স) চাঁদার উপর নির্ভরশীল। এছাড়া সকল কোম্পানীর তত্ত্বাবধানের মসজিদগুলি যে যারা কর্মরত আছেন তাদের শুধু কোম্পানীর মাসিক বেতন ৪০/৫০ দিনার এর বেশী নয়। আমি লেখক (প্রয়োজনে) থেকে নিজের হাতে গড়া ২/৪ জন ছাত্রের কপি আমি জমা দেব। এ ব্যাপারে আইপিসি সকলের সহযোগিতা কাম্য। দক্ষ ইমামের ভক্তের সংখ্যা বাড়বে। নামাজীর সংখ্যা বাড়বে,ঈমানদার, মুমিন বান্দা-বান্দীর সংখ্যাও বাড়বে। প্রত্যেকেই দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াব হাসিল করি। আল্লাহ সকলকে বুঝার এবং বাস্তবে পরিণত করার তওফিক দান করুন।
২. ধরুন আপনি একজন হসপিটালের ক্লিনার, সুপারভাইজার বা ম্যানেজার। আপনার সাথে মিনিষ্ট্রি বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপরস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগাযোগ আছে আপনি তাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করুন কখন ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। আপনি ২/৪ জন এমবিবিএস এর কপি জমা করুন । শিক্ষিত নার্স এর কপি জমা করুন। এভাবে অভিজ্ঞ সম্পন্ন ২/৪ জন আনতে পারলেই এ বিভাগে অনেক বাংলাদেশী এসে যাবে। তারাও পরপর অভিজ্ঞ ডাক্তার নার্স নিয়ে আসবে। প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ! একটু চিন্তা করে দেখুন তো কোথাও ভাল দক্ষ এম. বি. বি. এস. বাংলাদেশী এ দেশে আছে কিনা? এভাবে ব্যাংক, বীমা, কলকারখানা, অফিস, আদালত, মাদ্রাসা স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ যে যেখানে যে অবস্থায় আছেন, সেখান থেকে সে অবস্থায় একটু চেষ্টা করলেই হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশী সুন্দর সুশৃঙ্খল জাতী এদেশকে উপহার দিতে পারবো। দায়া করে আর দুম্বা চড়ানোর ভিসা বা ক্লিনিং কোম্পানীর ভিসা নিতে চেষ্টা করবেন না। আপনার আগামী দিনের ভবিষ্যতকেও ইংরেজী কম্পিউটার আরবীসহ সব কিছুতেই পারদর্শী করে তুলুন। তাহলেই সোনার বাংলা সার্থক হবে।
(ছ) সংবাদ প্রচার/ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চাইতেও ওজনে ভারী হবে (হাদীসটি যঈফ ) জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যাও (হাদীস নয়) , শিক্ষিত ১ জন, অশিক্ষিত হাজারও কাম্য নয়, যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীরা শ্রম দিচ্ছে আর প্রতিটি দেশে কম বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, গ্রীস, ইতালী, মধ্যপ্রাচ্য বিভিন্ন দেশে চীনতো বাংলায় রেডিও টিভি সম্প্রচার করছে। কুয়েত বিশ্বের ধনী ও ছোট রাষ্ট্র। সম্ভবত ১৯৭৬ সাল থেকেই বাংলাদেশীরা এদেশে প্রথম শ্রম দানের জন্য আসে। কিন্তু অদ্যবদী বাংলাদেশী ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা এবতেদায়ী মাদ্রাসা এদেশে চালু হয়নি। গত ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর প্রধান হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার নিকট থেকে সনদ ও সম্মানী পুরস্কার পেয়েছেন তিনি কুয়েতের ব্যবসায়ী। এটা আমাদের গৌরব। এত দিন হওয়ার পরও কুয়েতে মাত্র মাসিক মরু লেখা, মাসিক আল-হুদা বাংলায় প্রকাশিত হচ্ছে। এ দুটো পত্রিকার সম্পাদক, পরিচালক সকল সদস্য সদস্যাদের আমি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। মনে করুন এরা না হলে আমার মনের এ ব্যথাগুলো কাকে বলতাম বা লিখতাম? ভারতীয়, পাকিস্তানীদের দেখুন আজ কয়টা স্কুল মাদ্রাসা আছে আর আমাদের....? উমুক সভাপতি অমুক সম্পাদক এসব চিন্তা না করে ব্যবসায়ী ও শিক্ষিত ভাইয়েরা এগিয়ে আসি অন্ততঃ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলে ২/১ টা বাংলাদেশী সিলেবাসে ও লেভেল থেকে শুরু করে আরবী ইংরেজিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। বাংলাদেশ দূতাবাসের দৃষ্টিসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সুজলা সুফলা শৈষ্য শ্যামলা বাংলাদেশীদের মনের ফুল এ দেশকে উপহার দিই। এদেশে কোন বাংলা দৈনিক নেই তার ব্যবস্থা করি। কুয়েত টাইমস এ ভিতরের ২টি পাতা উর্দ্দু ও হিন্দিতে প্রকাশিত হয়। আমরা অন্তত ১টি পৃষ্ঠা হলেও বের করার ব্যবস্থা করি। অনেকে বলে চাকুরী করি ব্যবসা করি সকালে বের হই রাত ১০/১১টায় ফিরি। যিনি দোকান ১টি করছেন আর একটি কখন করবেন এই চিন্তায় ব্যস্ত অথবা এসব ব্যাপারে সময় দেওয়ার সময় নাই। একজন ব্যবসায়ী একজন ড্রাইভার বা অফিস চাকুরী করেন, এমন বা হয়তো পরিবার পরিজন নিয়ে আছেন। ইন্ডিয়ান স্কুলে দিয়ে অতিরিক্ত হিন্দিও তাদের সিলেবাস মত পড়া হচ্ছে আবার গল্প ও জুড়ে দেন ছেলে মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছি। ছেলে-মেয়ে কি পড়ছে দেখছেন? বলতে একটু লজ্জা করা উচিৎ? ব্যবসায়ী ব্যতীত সকল ক্লিনিং কোম্পানী প্রত্যেকের নিকট থেকে এককালীন কিছু অংশ নেয়া হউক। রেডিও টিভিতে অন্ততই আধা ঘন্টার জন্য হলেও বাংলা প্রচারের ব্যবস্থার দাবী করা হউক।
রিপোর্টার / সাংবাদিক : বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা উল্টালেই দেখা যায় প্রবাসীর পাতায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ / জিয়া পরিষদ বা সিরাতুন্নবী সম্মেলন (সাঃ) একটা বেনার সভাপতি / সম্পাদক এর ছবিসহ দেওয়া থাকে ছবি গুলো বড় করে ছাপানো হয়। এসব আমি না করতে বলি না। বলি কি সত্যিকারের উল্লেখিত বিষয়সমূহ সমগ্র জাতির কাছে তুলে ধরুন, তা হলে দেশের মা-বোনেরা কোন কাজের জন্য বিদেশ আসবে কোন কাজের জন্য আসবে না বুঝতে জানতে পারবে। সত্যি তারা জানবে যে, আসলে কুয়েতে ভিসার মূল্য কত? ফ্রি ভিসা কি? ইত্যাদি এবার এসব বিষয়ে নজর দিন। আশা করি এ লেখাগুলো দেশের দৈনন্দিন পত্রিকায় এগুলো বা এর অংশ বিশেষ ছাপালে সমগ্র জাতি উপকৃত হবে।
(জ) উশৃঙ্খলার - যে জাতি বেশী উশৃঙ্খল সে জাতির অধঃপতন অতি নিকটে নিম্নে আমি ২/১টি উদাহরণ তুলে ধরলাম :
(১) ড্রাইভারদের উশৃঙ্খলতা: ড্রাইভার ভাইয়েরা মাহবুলাহ মাহবুলাহ, হাসাবিয়া হাসাবিয়াহ বিভিন্ন এলাকায় নাম উল্লেখ করে চিল্লাচিল্লি করে দেয়, যার কোন শেষ নেই। অনেকে আবার যাত্রীকে নিয়ে হাতাহাতি টানাটানি শুরু করে দেয়। বিশ্বের কোন জাতি এরূপ করে কিনা একটু দেখুন তো? এখানে ভারতীয়, পাকিস্তানী, শ্রীলংকান বা ভিন্ন দেশী ড্রাইভার নাই? তারা কি এরূপ আচরণ করে আপনাদের চোখে পড়ে? বলতে হয় আস্তে আস্তে বলুন ভদ্রতার সহিত বুলন। এখন সব যাত্রীরা জানে যে, যার হাতে চাবি আছে, তিনি ড্রাইভার, যাত্রী আনা নেওয়া করেন। যারা শিশুকাল থেকে গাড়ীর চাকা ধুয়েছেন হেলপারী করেছেন পরে ওস্তাদের সাথে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন পরে ড্রাইভারী করেছেন এসব তাদেরই কাজ। আশা করি এসব উশৃঙ্খলা-বেহায়াপনা থেকে আমরা প্রত্যেকে বেঁচে থাকবো। এ লিখা যে ড্রাইভার পড়বেন তিনি যেন অন্য অশিক্ষিত অভদ্র ড্রাইভারকে এ সব বুঝিয়ে বলে বাংলাদেশী জাতির গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন- আমীন।
(২) বাজারে উশৃঙ্খলতা : ঐ.... মাছ ০.২৫০ দিনার, ইজি, ওয়াতানিয়া হাউল দিনার দিনার এরূপ বিভিন্ন রকমের চেচামেছি করে ঐ বাসা থেকে আরও পাঁচ কাটুন নিয়ে আয়। মাছ বা তরকারী বা সবজী রোবা দিনার বললে চিল্লাচিল্লি করেন কেন? এতে কি আপনার বিক্রি বেশি হয়? মোটেই না। আপনার মালামাল সামনে বিছানো আছে। যার পছন্দ হবে ঐ মূল্য দিয়েই নিয়ে যাবে। এটা বড় উশৃঙ্খল নয় কি? ভদ্রতা বজায় রাখুন। এটা কি বাংলাদেশ পেয়েছেন আপনার যা ইচ্ছা তাই করবেন। যিনি কার্ড বিক্রি করেন আপনার হাতে কার্ড দেখলেই ক্রেতা বুঝতে পারে যে, ইনি কার্ড বিক্রেতা। এ সবই অযথা উশৃঙ্খলতা। (চলবে........)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ রাত ২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






