এক
রাত প্রায় পোনে বারোটা। সুমি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে প্যারাসুট পারফিউমড নারিকেল তেলের বোতলটা হাতে নিল। তেল হাতে ঢেলে মাথায় ঘষার সময় প্রথম খেয়াল করল নতুন ব্লাউজটার মাপ ঠিক মতো হয়নি। বুকের খাঁজের জায়গাটা মনে হয় একটু বেশিই বড় হয়ে গেছে আর হাতা কাটা ব্লাউজ বানাতে যেয়ে হাতের জায়গাটা বেশি কেটে ফেলেছে। হারামজাদা করিম দর্জিরে একবার প্যাদানি দিতে হবে। ব্লাউজের মাপ নেবার সময় কয়বার টেপাটেপি করল আর বানানোর সময় করল ভুল! আসলেই জ্যাউরা বেটা! ব্লাউজ বানানোর সময় মন কোন দিকে ছিল কে জানে? ফ্যানের বাতাসে শাড়ির আচঁলটা খসে পড়তেই সুমি আয়নার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। আজকে বুড়ার খবর আছে! এমনতেই ওকে দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা তার উপরে আজকে এই ব্লাউজ! খুট করে একটা শব্দ হতেই সুমি ঘাড় বাঁকা করে সদর দরজার দিকে তাকাল। বরাবরের মতো আজকেও দরজা ওই খুলে রেখে এসেছিল, বারটার দিকে আসার কথা। বুড়া মনে হয় নিজেকে সামলাতে না পেরে আগেই চলে এসেছে। সুমি চিরুনী দিয়ে মাথার চুল আচড়ান শুরু করল। একটু পরে দুই বুকে হাতের চাপ পড়তেই মাথা তুলে দেখে বুড়া চলে এসেছে।
-দরজায় ছিটকিনি দিয়া আইছেন?
-হ। তোর ল্যাইগা বাজারের থন তোর জিনিসগুলিও নিয়া আসছি।
সুমি কাপড়ের ব্যাগ টা খুলে দেখে সব ঠিক মতো আনছে নাকি, দেখা শেষ হবার পর উঠে দাড়ানোর সময় শাড়ির আচঁল টা টেনে ফেলে দিল। বুড়া নতুন ব্লাউজের ফাকফোকর দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারলনা। ঝাপিয়ে পরল ওর বুকের উপর। সুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, পুরুষ মানুষদের মাঝে মাঝে একটু প্রশয় দিতেই হয়! এত কষ্ট করে যখন আসে? সুমির ব্লাউজ আর শাড়ি খুলে ফেলে বুড়া যখন ওকে বিছানায় ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, সুমি তখন ধাক্কা দিয়ে বুড়াকে সড়িয়ে দিয়ে বললঃ
-লাইট নিভাইয়া দিয়া আসেন। কেউ দেখলে আমার খবর আছে আর আওয়াজ একটু কম কইরেন। পাশের রুমে তিনটা বাচ্চারে কিছুক্ষন আগে ঘুম পাড়াইয়া আসছি। উইঠা গেলে কিন্তু আপনেরে সোজা ঘর থেকে বাইর কইরা দিমু কইলাম!
-দুর মাগি, তুই চুপ কর, কাম করার সময় তুই তো চিল্লাস বেশি!
কথা শেষ করে লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে এসে বুড়া সুমির উপরে ঝাপিয়ে পড়ল। আধা ঘন্টা পর কাজ শেষে সুমি উঠে পেটিকোট আর শাড়ি খুঁজে বের করে পড়ল। বুড়া উত্তেজনায় ব্লাউজ খুলে কই যে ফেলছে অন্ধকার পাওয়া যাচ্ছে না। এত রাতে লাইট জ্বালান যাবে না। ব্লাউজ ছাড়াই বুড়ার সাথে এখন ঘুমাতে হবে আর সারা রাত ধরে ঘাটাঘাটি করবে…………
দুই
সুমি জোরে জোরে পা ফেলে বাজারের বড় রাস্তা দিয়ে হাটছে। বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে। রাতের রান্না শেষ করার পর তিন বাচ্চাকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে নিজে খেয়ে নিতে হয়েছে । মোখলেছের ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই ওর শরীরে গরমের বান ডেকেছে। মোখলেছ আজকে রাতে দোকানেই থাকবে বলেছে, দেরি হলেও অসুবিধা হবে না। বড় ভাইয়ের মেয়ে তৌহিদারে ডেকে বাসায় এনে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে রেখে বের হতেই দেরি হয়ে গেল। হাত ঘড়িতে বাজে রাত প্রায় এগারটা। এত রাতে এরকম একটা যুবতী মেয়েকে সদর রাস্তায় কেউ দেখে চিনে ফেললে বিরাট বিপদ। সারা জায়গায় জানাজানি হয়ে যাবে। গায়ের চাদর টা খুলে ভালো করে মাথা ঢেকে নিয়ে সামনে তাকাল সুমি। আর পাঁচ সাত মিনিট হাটতে হবে, এত রাতে গ্রাম গঞ্জে রিকশা পাওয়া যায় না। মোখলেছের দোকানে এর পরের বার দেখা করার কথা ঠিক হলে এই ভুল আর করা যাবে না। রিকশা আগেই ঠিক করে রাখতে হবে। আর কিছুক্ষণ হাটার পরই একটু দূরে মোখলেছের ঔষধের দোকানটা দেখা গেল। দোকানের সামনের সাটার আর লাইট বন্ধ। মোখলেছ পিছনের দরজাটা খুলে একটু ফাঁক করে রাখে। রাস্তার লাইটের আলোতে সুমি দোকানের পিছনে চলে গেল। যা ভেবেছিল তাই। পিছনের দরজা দিয়ে লাইটের হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। দরজা ঠেলে সুমি ভিতরে ঢুকে দেখে মোখলেছ একটা ছোট টেবিলে কাগজ, কলম আর ক্যালকুলেটর নিয়ে টাকা পয়সার হিসাব করছে। সুমির দরজার ছিটকিনি লাগানো দেখে দাঁত বের করে হাসি দিল।
-অ্যাইতো রাতে একা একা আইতে আমার ডর লাগে না? রাস্তায় একটা কাক পক্ষীও নাই। যে ডর পাইছি আমি, আমার কিছু একটা হইয়া গেলে? এখনও বুকটা ধরফর করত্যাছে, দেইখ্যা যাও।
সুমি ডান হাত বুকের উপর রেখে মোখলেছের দিকে প্রশয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মোখলেছ হাতের কাগজ পত্র সব দ্রুত গুছিয়ে ফেলে উঠে দাড়াল।
-কও কি, চিন্তা কইরো না। আমি তোমার শুধু বুকের না সারা শইল্যের ধরফর একক্ষন কমাইয়া দিতাছি।
কথা শেষ করে মোখলেছ সুমিকে জড়িয়ে ধরে ব্লাউজের ভিতরে এক হাত ঢুকিয়ে দিল আর আরেক হাত দিয়ে ব্লাউজের হুক গুলি খোলা শুরু করল। সুমি পিছনের জানালার পর্দার ফাক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বাইরে ঘুপঘুপা অন্ধকার। দোকানের ছোট লাইটের আলোতে ভিতরে সব কিছু ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে না। ও মোখলেছের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে মোখলেছ ওকে কোন জায়গায় নিয়ে শোয়াবে? গতবার একটা ছোট চৌকি দেখছিল ঐ কোনায়, এইবার তো ঐটাও দেখা যাচ্ছে না। সুমির আর তর সইছে না, নিজেই শাড়ি খোলা শুরু করল………
তিন
জসিম একটা বড় বাঁশের কঞ্চি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকল। মাথায় আগুন ধরে গেছে। নিজের বাপ, মা, ছোট ভাই, ছোট ভাইয়ের বউ আর কাছের আত্মীয় স্বজনরা যেভাবে ওকে একটু আগে ওর বৌ সুমির চরিত্র নিয়ে ওকে অপমান করছে তাতে ওর শরীর রাগে কাপছে। ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখে সুমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে লাল রঙ এর লিপস্টিক লাগাচ্ছে। সেটা দেখে মাথায় আগুন ধরে গেল।
-নটী মাগি, তোর এত সাজগোজের কি দরকার? আমি কইছি তোরে এইসব লাগাইতে? কারে দেখানোর জন্য এই সব লাগাস? কার জন্যে এত রং ধং করস?
-আপনের কি? দেখতে ইচ্ছা করলে দেখেন না হইলে চক্ষু বন্ধ কইরা রাইখেন।
-কি কইলি তুই? এত্ত বড়া সাহস হইসে তোর?
জসিম বাম হাতে চুলের খোপা ধরে সুমিকে টেনে মাটিতে ফেলে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ইচ্ছেমতো মারা শুরু করল। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন!
-বিয়্যাত্তা মাগি, তিন তিনটা বাচ্চা হইছে, তাও শইল্যের জ্বালা কমে না। যেইখানে ইচ্ছা খানকি গিরি কইরা বেরাস? এত শ্যইলে জ্বালা কেন তর?
-ঐ বেডা সাবধানে কথা ক? গায়ে হাত তুলছোস কোন সাহসে? লজ্জা করেনা আমারে খানকি কইতে? আমারে একলা ফাল্যাইয়া বিদেশে গেছস ক্যা? আমি কইছিলাম তরে বিদেশ যাইতে? গেলিই যখন আমারে তর সাথে রাখস নাই কেন? আমার শইল্যের জ্বালা কমানোর তো কথা তোর? তুই কইয়া দে তুই না থাকলে কারে দিয়ে কমামু? সেইটা কইতে পারস না? তুই বাইরে যাইয়া কি করস সেইটা কি আমি দেইখা বেড়াই?
-বেলজ্জ মাগি, আবার কথা কস তুই? কোন মুখে তুই কথা কস? লজ্জা করেনা কইতে? তোর আকাম কুকামের জ্বালায় আমারে সৌদি আরব থ্যাইকা চইলা আসতে হইছে। আমার বাপ মা আত্মীয় স্বজন কেউ মুখ দেখ্যাইতে পারে না। তোর বাপ মা'রে ডাকছিলাম। তারাও তোর আকাম কুকামের কথা শুইন্যা ভাগছে। তারা আইলে তো তোর ঘাড় ধইরা পাছায় এক লাত্থি দিয়ে ঘর থেইক্যা বাইর কইরা দিতাম।
-আমার গায়ে হাত দিবি না কইলাম? দিলে কিন্তু তোর খবর আছে? আগের বার অনেক মারছোস কিছু কই নাই, সাত দিন সারা শ্যইলে ব্যথা ছিল, উইঠা বাথরুমে যাইতেও কষ্ট হইছে। এইবার কিন্তু তোরে আমি ছারুম না।
-কি করবি তুই, তোর ঐ মদনা গুলি রে বলবি তো, যা বল? ঐ সব কয়টারে আমি এখন ধইরা আনতে কইছি।
-পুরুষ হইছোস, যা পারলে আমার ঐ মদনা গুলিরে কিছু কর দেখি? দেখি তোর হ্যাডম আছেনি?
মারের চোটে বাঁশের কঞ্চি টা ভেঙে গেলে জসিম চড় থাপ্পড় কোন কিছুই আর বাদ দিল না। এত খারাপ কিভাবে একটা মেয়ের চরিত্র হয়! শেষ দিকে কয়েকটা লাথি দেবার পর সুমি যখন আর নড়াচড়া করছে না তখন থামল। আরো কয়েকটা লাথি দেবার ইচ্ছা ছিল কিন্তু থামল দরজায় ধাম ধাম আওয়াজ শুনে। ওর ছোট ভাই আর বাবা'র ডাকে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসল।
এলাকার রাজনৈতিক পোলাপানদের কিছু টাকা পয়সা দিয়েছিল জসিম ওর ভাইদের সাথে যেয়ে এই দুই মদনা কে ধরে এনে শায়েস্তা করার জন্য। টাকাপয়সা যা লাগে লাগুক কিন্তু বুড়া ওরফে দোহা কে ধরতে ওর ভাইদের একা পাঠাতে সাহস পায়নি। এলাকার নামকরা চোরাকারবারি, আসল কাজই হলো স্মাগলিং করা। বাইরে বের হয়ে দেখে দোহা কে পিছনে হাত বেধে পোলাপান ধরে নিয়ে আসছে। মোখলেছ কে দেখা গেল না।
-মোখলেছ কই? ঐটারেও না কইছিলাম ধইরা আনতে?
-আমাগো কথা শুইনা গঞ্জ ছাইড়া ভাগছে। ঔষধের দোকানে যাইয়া দেখি বন্ধ আর বাসায়েও নাই। ভালো মতো খোজখবর লইছি, হালারপুত এই এলাকায় নাই। চরম ডর পাইছে, ওরে পরে ধইরা আচ্ছামতন সাইজ কইরা দিমু।
জসিম দোহার দিকে এগিয়ে যেয়ে দেখে দোহা মাথা নীচু করে দাড়ায়ে আছে। এইটার সাথেই সুমির দহরম মহরম সব চেয়ে বেশি। আগের বার মারের চোটে সুমি সব কিছু স্বীকার করে বলেছিল, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই দোহার সঙ্গে আমার প্রেম হয়। আমি ওকে আদর করে বুড়া বলে ডাকি। আমার বিয়ে হওয়ার পর ‘ও’ পাগল হয়ে যায়। বিয়ের দুই মাস পরই আমার স্বামী বিদেশে চলে যায়। আমি তখন পিত্রালয়েই থাকতাম। তখন তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাতের সময় আদর সোহাগ হতো। স্বামী দুই বছর পর পর দেশে আসত। মাস দুয়েক থেকে আবার চলে যেত। স্বামী যখন থাকত তখন এইসব আকাম কুকাম বন্ধ থাকত। এর মধ্যে বছর দেড়েক আগে স্বামীরে দিয়ে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে গঞ্জে আলাদা বাসা ভাড়া করি। সে ওখানে ফোনে যোগাযোগ করে নিয়মিত আসত। জসিম বিদেশ থেকে এই পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পেয়ে তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসে। দেশে ফিরে এই জঘন্য কাহিনী শুনে মাথায় হাত। ততদিনে তিন তিনটা বাচ্চা হয়ে গেছে। মাথা খারাপের মতো অবস্থা! কোন দিকে যাবে জসিম? বউ ছেড়ে দিলে বাচ্চাদের রাখবে কে? সুমিকে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দেয়াও যাচ্ছে না, আবার কাছে রাখতেও সাহস হচ্ছে না। শেষমেষ, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাই এর সামনে দুই জনকেই নাকে কানে খত দিয়ে ওয়াদা করায় যে, এই ধরনের আকাম কুকাম আর করবে না। ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে সুমি কে আবার নিজের বাবা আর ভাইয়ের পাশের বাসায় নিয়ে আসে। এখানে এসেও সুমির এইসব আকাম তো কমেই নি বরং মোখলেছ নামে আরেকটার সাথে সম্পর্ক হয়েছে। গত পরশু দিন ওর বাবা'র ফোন পেয়ে একদিনের নোটিশে দেশে চলে আসে। এসে আর দেরি করেনি। দোহা কে দেখে গতবারের দোহার কসম আর ওয়াদার কথা মনে পরল।
-তুই না গতবার সবার সামনে কসম কাইটা কইয়া গেছিলি যে, তুই আমার বউয়ের দিকে আর নজর দিবি না? এখন থ্যাইকা ভালোমানুষের মতো থাকবি। কুত্তার লেজ কোন দিনও সোজা হয় না।
-ওই জসিইম্যা, আমার লগে সাবধানে কথা কইবি! সুমি তোর বউ না, ওয় আমার বউ। তুই ওরে ছ্যাইড়া দে, তরে আগেও কইছি, ওরে তুই রাখবার পারবি না। ওরে আমি ডাকলে আমার কাছে অ্যাইবো, অ্যাইবোই।
নিজের বউর চরিত্র যে এতই খারাপ এটা শুনে জসিম আর মাথা ঠিক রাখতে পারল না। ইচ্ছা মতো দোহাকে ধরে মার দিল, ওর দেখি দেখি বাকি সবাই ওর সাথে হাত পা কাজে লাগালো। কিছুক্ষণ পর সবাই দেখে রক্তারক্তি অবস্থা। আর না মেরে দোহা কে ছেড়ে দেয়া হলো তবে ভালোমতো বলে দেয়া হলো যে এর পরের বার আর মাপ করা হবে না, একে বারে লাশ ফেলে দেয়া হবে....।
চার
সাত দিন পরের কথা, জসিম সদরে গেল একটা জমি রেজিস্ট্রেশনের কাজে। চার মাস আগে জসিম ভাইয়ের মাধ্যমে বায়নার টাকা পাঠিয়েছিল। আজকে বাকি টাকা দিয়ে আসল কাজ করে ফেলতে হবে। সকাল থেকেই সুমির মাথা খারাপ অবস্থা! সুমি গত কালকে রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছে জসিম নিজের মাকে বলেছে যে এবার সৌদি যাবার আগে সুমি কে ঢাকায় জসিমের ফুফাত বোনের বাসায় রেখে যাবে, ফ্লাট বাড়ি, নীচে দারোয়ান আছে, সৌদি ভিসা না পাওয়া পর্যন্ত সুমি ওখানেই থাকবে। জসিম বাসায় নাই দেখে সুমি বুড়াকে ফোন করে প্রাইমারী স্কুলের পিছনে আসতে বলে। শ্বাশুড়িকে নিজের বাচ্চা আনার কথা বলে আগেই হাজির হয়ে বড় আম গাছটার পিছনে বুড়ার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। বুড়া অবশ্যই আসবে। ও যাই বলে তাই করে, কোন দিনও কোন কিছুতেই না করে না। ওর যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে…………
পাঁচ
রাত প্রায় সোয়া এগারটা। তিন বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে সুমি এসে দেখে জসিম ওর জন্য বিছানায় অপেক্ষা করছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের স্বামীকে মানা করতে পারলো না সুমি। কাজ শেষ করে জসিম শুয়ে পড়লে বাথরুমে যাবার নাম করে সুমি বিছানা থেকে নেমে গেল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে প্রায় পোনে বারটা বাজে। পা টিপে টিপে যেয়ে খুব সাবধানে সদর দরজা খুলে হালকা করে ভিড়িয়ে দিল, সব সময় বুড়ার জন্য যেভাবে খোলা রাখে। সব জানলা ভালো করে লাগিয়ে আর লাইট নিভিয়ে দিয়ে এসে বিছানায় জসিমের পাশে আবার শুয়ে পড়ল। চোখ আর কান খোলা রেখে সুমি অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরে কানের কাছে ফিস ফিস শুনলঃ
-কি আছে দে? আইজকা কোন ভালোবাসা নাই। কিছুই দিমু না, শুধুই নিয়া যামু। দে, যা আছে তাড়াতাড়ি দে।
সুমি মাথা উচু করে দেখে বুড়া আর মধু ওর মাথার কাছে দাড়িয়ে আছে। মধুকে দেখে সুমি অবাক হলো না। মাঝে মাঝে রাতের বেলা এই দুইজনই ওর বাসায় একসাথে আসে। একজন ওর সাথে থাকে আর আরেকজন পাহারা দেয়। মধুর হাতে একটা বড় ভোজালি, অন্ধকারেও চকচক করছে। সুমি খুব সাবধানে বিছানা থেকে নেমে জসিমের দিকে তাকাল। জসিম গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। সুমি বিছানার নীচে থেকে আগেই লুকিয়ে রাখা দুইটা বড় ওড়না বের করে বুড়ার হাতে দিল। সুমি মাথা একবার উপর নীচ করতেই বুড়া আর মধু ওড়না দুইটা নিয়ে জশিমের পা আর মাথার কাছে গেল। সুমি ওর মাথার বালিশ জসিমের মুখের উপর শক্ত করে চেপে ধরতেই বাকি দুই জন জসিমের হাত আর পা বেধে ফেলল। বাধা শেষ হতেই বুড়া বিছানার উপরে রাখা ভোজালিটা হাতে নিয়ে এক মুহূর্তের মধ্যে জসিমের গলায় চালিয়ে দিল। ঘরের মধ্যে জসিমের গলা থেকে বের হওয়া ঘড় ঘড় শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনা যাচ্ছে না। অন্ধকারে বুড়ার দুটা চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। অনেক দিনের জিদ ওর! পাঁচ ছয় বার পোচ দেবার পর মধু যখন দেখে জসিম আর নড়াচড়া করছে না, তখন বুড়াকে হাত দিয়ে থামাল। জসিমের গলা থেকে বের হওয়া তাজা ফিনকি দেয়া উঠা রক্তে বিছানার চাদর লাল হয়ে গেছে। ছিটকে পড়া রক্তে সুমি আর বুড়ার গায়ের কাপড় মাখামাখি। মধু খুব সাবধানে মোবাইল বের করে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে উচু করে বিছানার পাশের টেবিলে রাখল। পুরানো একটা চাদর বের করল সুমি, তারপর বুড়া আর সুমি গায়ের সব রক্ত মাখা কাপড় চোপড় খুলে এটার মধ্য ফেলে দিল, জসিমের হাতে আর পায়ে বাধা ওড়না দুটা খুলেও এর মধ্যে দিল। মধু গিট্টু মেরে এটা হাতে নিল। আলমারি খুলে কিছু সোনার গয়না আর ড্রয়ারে রাখা সব টাকা পয়সা বের করে বুড়ার হাতে দিল। সব কাজ শেষ হলে সুমি বুড়াকে একবার জড়িয়ে ধরল তারপর হাত তুলে সদর দরজা দেখিয়ে দিল। বুড়া আর মধু চলে যাবার পর দরজা ভালো করে লাগিয়ে বিছানার কাছের একটা বড় জানালা খুলে দিয়ে সুমি বাচ্চাদের রুমে যেয়ে বাচ্চাদের বিছানায় যেয়ে গভীর ঘুমিয়ে গেল।
সকালে সবার ঘুম ভাঙল সুমির বড় ছেলের চিৎকারে…………..
ছয়
চাঞ্চল্যকর এই সৌদি প্রবাসী জসিম হত্যা মামলার রায় গতকালকে বের হয়েছে। এতে স্ত্রী সুমি সহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। স্ত্রী সুমি ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন - দোহা মিয়া ওরফে বুড়া এবং মধু মিয়া ওরফে মধু। তবে এ মামলায় মোখলেছুর রহমান নামে এক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
এই সিরিজের পরের পর্ব পড়ে আসুন এখান থেকে গল্প - আমার সোনা জান পাখি!
কিছু কথাঃ এটা একটা গল্প, শুধুই গল্প! জানি না কেমন হয়েছে! যথারীতি মূল্যায়নের দায়ভার আমার পাঠকদের কাছেই দিয়ে গেলাম। লেখার ভাষায় কিছুটা অসংলগ্ন আচরন করেছি। আমার মনে হয়েছে যারা এই ধরনের অশ্লীল কাজে যুক্ত থাকে তাদের কর্মকান্ড আর ভাষাতো আর শান্তি নিকেতনি হবে না। সুতরাং…
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, অক্টোবর, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৯