somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বানী চিরন্তনী ২ঃ ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা!!!

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভালোবাসা হচ্ছে একটি আকাংখা, জীবনের একটা স্বপ্ন। ভালোবাসা মনের সুপ্ত বাসনা, হৃদয়ের অনুভূতি। পৃথিবী রহস্যময়, রহস্যময় মানুষের জীবন, তার চেয়েও রহস্যময় এই প্রকৃতি। প্রকৃতি মানুষের সঙ্গে অনেক ধরনের খেলা খেলে, প্রকৃতি আনন্দ পায় এই সব খেলায় আমাদের সঙ্গি করে আর আমরাও কারো না কারো প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে বেড়াই! যত বড় সাধুই হোক না, তার ধ্যান ভাঙাতে একজন গোপিনি যথেষ্ট। ঐ গোপিনির কাছেই সকাম প্রেম পেরিয়ে নিষ্কাম প্রেমের দীক্ষা নিতে হয়। প্রেম ভালবাসার পিপাসায় সবাই সব সময় অতৃপ্তই থাকে। সব পেয়েও যেন কিছুই পেলাম না, এমন একটা অনুভূতি সব সময় প্রেমিক প্রেমিকাদের হৃদয়কে তাড়া করে ফিরে। বয়সের পার্থক্য সেখানে কোনদিনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

ভালোবাসা মানে পরস্পরকে বুঝতে পারা। যে মানুষটিকে ভালোবাসবেন, তাকে যদি বুঝতেই না পারেন তাহলে প্রেম ভালোবাসার কোনো অর্থ আছে বলে মনে হয় না। মুখে মুখে সবসময় ভালোবাসি ভালোবাসি বলার চেয়ে, মনে হয় ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে পারা অনেক বড় ব্যাপার। ভালোবাসা বেঁচে বা টিকে থাকে পরস্পরের বিশ্বাসে। যে প্রেমে বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয়, সেখানে হয়ত প্রেম থাকে না, থাকে সামাজিকতাকে রক্ষা। বিশ্বাস ভালবাসার মূলভিত্তি! যে ভালবাসায় বিশ্বাস নেই, সেই ভালবাসা কখনোই চিরস্হায়ী হবে না। ভালোবাসা অনেক পবিত্র একটি অনুভূতি। স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাউকে ভালোবাসা উচিৎ নয়। এটা হচ্ছে পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্ক যেখানে থাকবে না কোনো চাওয়া-পাওয়া, থাকবে না কোনো স্বার্থ, থাকবে শুধুই মনের গভীরতম সূক্ষ্ম অনুভূতি……….

আমাদের অনেকেই ভালোবাসা, প্রেম আর ভালোলাগার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলি। চলুন তবে দেখে আসি এদের মধ্যে আসলে পার্থক্যটা কোথায়-

প্রেম করা কাকে বলে?
প্রেম যখন তখন যার তার সাথে করা যায়। কারো প্রেমে পড়লে ঘণ্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলা, একটু অবসর পেলেই দুজনে ঘুরতে চলে যাওয়া, দামী রেস্টুরেন্টে বসে ফেসবুকে চেক ইন দেয়া, দিনে দশ বিশ বার আই লাভ ইয়্যু বলা, একসাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেয়া। সবাইকে জানিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে যেটা করা হয় সেটা হল প্রেম|

ভালোবাসা কাকে বলে?
ভালবাসা একটা সূক্ষ্ম অনুভূতি। হৃদয়ের খুব গোপন একটা অনুভূতি। কাউকে ভালবাসলে শুধুমাত্র তাকে ঘিরেই আলাদা একটা জগৎ তৈরি করা, একটা স্বপ্নের জন্ম দেওয়া, স্বপ্নটা ভবিষ্যতের, একসাথে পথচলার। ভালবাসা মানে শুধু দুজনে মিলে ভাল কিছু সময় উপভোগ করা নয়, বরং জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে দুজন দুজনের পাশে থাকা। জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ে ভালবাসার মানুষটার হাত ছেড়ে দেয়া নয়, বরং হাত দুটো আরো শক্ত করে ধরে থাকার নামই ভালবাসা।

ভালোলাগা কাকে বলে?
কাউকে বা কোন কিছুকে চোখের দেখায়, কানে শোনায় কিংবা অনুভবে তৃপ্ত হওয়াটাই হচ্ছে ভালো লাগা। এই ভালোলাগা থেকেই এখনো শিখছি, লিখছি। সেদিন থেকে আর হয়ত এই ব্লগে আর লিখবো না, যেদিন এই ভালোলাগাটা আর থাকবে না!



আপনি কি কারো প্রেমে পড়েছেন?
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছেন, প্রেমে পড়া মস্তিষ্ক শুধু লালসাগ্রস্ত মস্তিষ্কের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। এমনকি যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রতিশ্রুতিশীল সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন তাদেরও চেয়েও আলাদা তাদের মস্তিষ্ক। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশার, ভালোবাসার জৈবিক ভিত্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, প্রেমে পড়ার সময়টুকু একটি অনন্য বৈশিষ্টসুচক সময়কাল। আর এই ১৩টি লক্ষণে বুঝা যাবে আপনি প্রেমে পড়েছেন:

১. সে অনন্যঃ আপনি যখন প্রেমে পড়বেন তখন আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনার কাছে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে মনে হবে। মূলত মস্তিষ্কে ব্যাপকহারে ডোপামিন নিঃসরণের ফলে এই একক মানসিকতার সৃষ্টি হয়। এই রাসায়নিক পদার্থটি মনোযোগ বাড়ানো এবং কেন্দ্রীভুত করার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে। আর একারণেই ভালোবাসার মানুষটির প্রতি এমন একক মানসিকতা বা অনুভূতি তৈরি হয়।

২. সে নিখুঁতঃ যারা সত্যিকার অর্থেই প্রেমে পড়েন তারা তাদের ভালোবাসার মানুষটির ইতিবাচক গুনাবলীর ওপরই বেশি মনোযোগ দেন। নেতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করেন এবং তাকে যথাযথ বা নিখুঁত ভাবতে থাকেন। এছাড়া ভালোবাসার মানুষটির তুচ্ছাতিতু্চ্ছ বিষয়গুলোও মনে রাখেন। ডোপামিনের পাশাপাশি নরপিনারফ্রিন নামের রাসায়নিক নিঃসরণের ফলে এই স্মৃতি স্থায়ী হওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে!

৩. আমি একটা সর্বনাশাঃ প্রেমে পড়লে অনেক সময় আবেগগত এবং শারীরবৃত্তীয় অস্থিরতা তৈরি হয়। এর ফলে আপনার মধ্যে উল্লাস, প্রাণচাঞ্চল্য, অতি উদ্যম, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, কম্পন, হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া এবং সামান্যতম বিপত্তিতে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও হতাশার অনুভূতি দেখা দিবে। অনেকটা মাদকাসক্তদের মতো অবস্থা তৈরি হবে। মাদক সেবন করলে মস্তিষ্কের যে অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রেমে পড়ার পর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখলেও ঠিক একই অংশ উত্তেজিত হয়। গবেষকদের মতে প্রেমে পড়াটাও এক ধরনের আসক্তির মতো!

৪. কারো সঙ্গে বিদ্বেষের ফলে আপনারা আরো ঘনিষ্ঠ হনঃ অন্য কারো সঙ্গে বিদ্বেষের ফলে যদি আপনার ভালোলাগার মানুষটির সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাহলে আপনি নিশ্চিত তার প্রেমে পড়েছেন।

৫. আপনি তার চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকেনঃ যারা প্রেমে পড়েছেন তারা জানিয়েছেন, তারা তাদের জেগে থাকার ৮৫% সময় ভালোবাসার মানুষটির চিন্তায় কাটিয়ে দিয়েছেন। এর জন্য দায়ী মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামের রাসায়নিক নিঃসরণ।

৬. সব সময় একসঙ্গে থাকার ইচ্ছা হয় যার প্রেমে পড়েনঃ তারা আবেগগতভাবে তাদের ভালোবাসার মানুষটির ওপর নির্ভরশীলও হয়ে পড়েন। এর মধ্যে থাকে সব সময় আগলে রাখার প্রবণতা, ঈর্ষা, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় এবং বিচ্ছেদের ভয়।

৭. চিরদিন একসঙ্গে থাকার ইচ্ছা হয় প্রেমে পড়লেঃ ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে আমৃত্যু একত্রে থাকার ইচ্ছা জাগে। সারাক্ষণ শুধু ভালোবাসার মানুষটির আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার এবং তার সঙ্গে ভবিষ্যত কল্পনা কাজ করে। এমনকি তাকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব বলে মনে হয়।

৮. আমি তার জন্য যে কোনো কিছু করতে পারবঃ যারা প্রেমে পড়েন তারা তাদের ভালোবাসার মানুষের প্রতি শক্তিশালী সহানুভূতি অনুভব করেন। ভালোবাসার মানুষটির বেদনাকে নিজের বেদনা বলে মনে করে এবং তার জন্য যে কোনো কিছু উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে।

৯. সে কি এই পোশাকটি পছন্দ করবেঃ প্রেমে পড়লে আপনি পোশাক-আশাক, আচার-ব্যবহার এবং দৈনন্দিন অভ্যাসগুলোর ক্ষেত্রে আপনার ভালোবাসার মানুষটির পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে শুরু করবেন।

১০. আমরা কি স্বতন্ত্র হতে পারিঃ যারা গভীরভাবে প্রেমে পড়েন তারা ভালোবাসার মানুষটির প্রতি যৌন কামনা বোধ করেন। এক্ষেত্রে কিছু আবেগগত উৎকণ্ঠাও কাজ করে। এর সঙ্গে থাকে অধিকারপ্রবণতা, একচেটিয়া যৌন অধিকার স্থাপন এবং যৌন অবিশ্বস্তার সন্দেহ সৃষ্টি হলে চরম ঈর্ষাকাতরতাও কাজ করে। মানুষের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতাগুলো কাজ করে যাতে করে তার সন্তান গর্ভধারণ করা পর্যন্ত তার সঙ্গিনী অন্য পাণিপ্রার্থীদের দূরে সরিয়ে রাখে।

১১. যৌনমিলনের চেয়ে আবেগগত মিলনের আকাঙ্খা বেশিঃ প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে যৌন মিলনের আকাঙ্খার চেয়ে বরং আবেগগত মিলনের আকাঙ্খা বেশি কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রেমে পড়লে ৬৪% মানুষই যৌনতার চেয়ে বরং আবেগগত মিলনকে বেশি প্রাধান্য দেন।

১২. নিয়ন্ত্রণহীনতাঃ প্রেমে পড়লে আপনি অনেকসময় আবেগগতভাবে স্বেচ্ছাচারী বা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বেন।

১৩. স্ফুলিঙ্গ দূর হয়ে গেছে দুর্ভাগ্যক্রমেঃ প্রেমে পড়ার অবস্থাটি চিরস্থায়ী হয় না। এটি একটি ক্ষণস্থায়ী দশা যা থেকে পরে দীর্ঘমেয়াদি, পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি হয়। অথবা কোনো সম্পর্কই আর হয় না। তবে দুজনের মাঝখানে সামাজিক বাধা বা স্থানিক দূরত্ব থাকলে প্রেমে পড়ার সময়কালটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।




ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি বলে?
বিজ্ঞানের ভাষায়, ভালোবাসা হলো আমাদের মস্তিষ্কের থ্যালামাসের একধরনের রাসায়নিক অবস্থা। যার জন্য একাধারে দায়ী আমাদের জিন। প্রেমের প্রথমদিকে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, গাল বা কান লাল হয়ে যাওয়া, হাতের তালু ঘেমে যাওয়ার উপসর্গ গুলো দেখা যায়; বিজ্ঞানীদের মতে সেসবের পেছনে দায়ী হলো ডোপামিন, নরেপিনেফ্রিন হরমোন। মাঝে মাঝে দেখা যায় কারো কারো প্রেমের আবেগ কমে যায়। তার কারণ মস্তিষ্ক থেকে ওই হরমোনগুলো নিঃসৃত হয় না। আবার এও দেখা গেছে যে কোনো মানুষের শরীরে কৃত্রিমভাবে এই হরমোন রসায়ন প্রয়োগ করা হলে তাদের মাঝে সেই প্রেমের অনুভূতি হয়।

দুই প্রেমিক প্রেমিকার সদা ঘোর লাগা অবস্থার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি, এ নিয়ে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশার এবং স্নায়ুচিকিৎসক লুসি ব্রাউন, আর্থার অ্যারোন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ জন প্রেমে পড়া ছাত্রছাত্রীদের উপর এক গবেষণা চালান। তাদের গবেষণার ধরনটি ছিলো এরকমের। প্রেমিক-প্রেমিকাদের সামনে তাদের ভালবাসার মানুষটির ছবি রাখা হল এবং তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) করা হলো। দেখা গেলো, এ সময় তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দিপ্ত হচ্ছে, আর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটছে। অবশ্য কারো দেহে ডোপামিন বেশি পাওয়া গেলেই যে সে প্রেমে পড়েছে তা নাও হতে পারে। আসলে নন-রোমান্টিক অন্যান্য কারণেও কিন্তু ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়তে পারে। যেমন, গাঁজা কিংবা কোকেইন সেবন করলে। সেজন্যই আমরা অনেক সময়ই দেখি ভালবাসায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণও অনেকটা কোকেইনসেবী ঘোরলাগা অবস্থার মতোই টালমাটাল হয় অনেক সময়ই।

তবে ভালবাসার এই রসায়নে কেবল ডোপামিনই নয় সেই সাথে জড়িত থাকে অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিনসহ নানা ধরনের বিতিকিচ্ছিরি নামের কিছু হরমোন। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই হরমোনগুলো নাকি ‘ভালবাসা টিকিয়ে রাখতে’ মানে প্রেমিক প্রেমিকার বন্ধন দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা এও বলেন কেউ মনোগামী হবে না বহুগামী হবে – তা অনেকটাই কিন্তু নির্ভর করছে এই হরমোনগুলোর তারতম্যের উপর। দেখা গেছে রিসেপটর বা গ্রাহক জিনে ভেসোপ্রেসিন হরমোনের আধিক্য থাকলে তা পুরুষের একগামী মনোবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করে। কেউ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার ব্রেইনে প্রচুর পরিমাণে 'ডোপামিন' এবং 'নর-ইপিনেফ্রিন' তৈরি হয়, যে কারণে এমন নেশাগ্রস্তের অনুভূতি হয়।

তাই প্রেমে পড়ার মধ্যে দিয়ে অনেকেরই দুশ্চিন্তা জনিত সমস্যা, যেমন- জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, প্যানিক ডিসওর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের সূচনা ঘটতে পারে। আবার সম্পর্ক না হলে ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কেউ কেউ অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারেও ভুগেন।



ভালোবাসা নিয়ে মজার কিছু তথ্য
সবার জীবনেই কিছু আবেগময় ভালোবাসার গল্প থাকে। ভালোবাসা মানুষকে প্রাণবন্ত এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। ভালোবাসা একজন মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। এই ভালবাসা সম্পর্কে কিছু বৈজ্ঞানিক মজার তথ্য তুলে ধরা হল:
* ভালবাসা হার্টরেট বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষের ভিতরের ভয় দূর করে।
* যখন মানুষ প্রিয়জনক ঠোট চুম্বন করে তখন সে মাথা বাম দিকে না নুইয়ে ডান দিকে বাকিয়ে নিয়ে যায় (৬০% ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এরকম হয়)
* যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে তার স্ত্রীকে চুমু দেয় তারা ৫ বছর বেশি বেঁচে থাকে যারা চুমু দেয় না তাদের চেয়ে।
* ৫ ভাগের ১ ভাগ ভালবাসা একতরফা হয় যা পরবর্তীতে পরস্পরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
* প্রেমে পড়লে মানুষের মন ও দেহ শান্ত থাকে। তাদের নার্ভস লেভেলের উন্নয়ন হয় এবং স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
* নতুন প্রেমিক-প্রেমিকাদের হরমোন ডিসঅর্ডার সমাধানে প্রেমের ভূমিকা অত্যধিক।
* পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, প্রত্যেক ছেলে মানুষ বিয়ের আগে ৭ বার প্রেমে পড়ে।
* বিয়ের আংটি সব সময় অনামিকা আঙ্গুলে পড়ানো হয়। কারণ সেই আঙ্গুলের সাথে হার্ট এর সংযোগ আছে বলে ধরা হয়।
* গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক এবং এর বিভিন্ন কালার ভালোবাসার বিভিন্ন অর্থ বহন করে।
- লাল গোলাপ-প্রকৃত ভালোবাসা
- লাইট পিংক গোলাপ-ইচ্ছা, আকাঙ্খা
- হলুদ গোলাপ-বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য
* যারা নতুন নতুন প্রেমে পড়ে তাদের দেহে সেরেটোনিন নামক এক প্রকার হরমোন উৎপন্ন হওয়া কমে যায়। যার ফলে এদের মন কিছুটা উদাস থাকে বা বিষণ্ণতায় ভুগে।



ভালোবাসা নিয়ে শ্রেষ্ঠ বাণীর সংগ্রহঃ
পৃথিবীর আদিমতম যে সম্পর্ক তার নাম ভালোবাসা। ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভালোবাসার জন্য জীবন বিসর্জন, সিংহাসন ত্যাগ, অর্থ প্রাচুর্য ত্যাগসহ আরো কত না ঘটনা রয়েছে। ভালোবাসা অমর ও অক্ষয়। ভালোবাসার মৃত্যু নেই। আনন্দ আর বিরহ নিয়েই ভালোবাসা। এই ভালোবাসা নিয়ে রচিত হয়েছে কত গল্প,কবিতা, উপন্যাস,গান আর সিনেমা। আর এই ভালোবাসা বিষয়ক বিখ্যাত কিছু উক্তি নীচে দেয়া হলো। অনেক দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বানীগুলি সংগ্রহ করেছিলাম।

১। ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। আর মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা। - সমরেশ মজুমদার ।

২। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসি নি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চির দিনের জন্য বিদায় নিলাম। - কাজী নজরুল ইসলাম।

৪। প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

৫। এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষগুলোকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, জীবন তার মতই প্রবাহিত হবে। - হুমায়ূন আহমেদ।

৬। প্রেম মানুষকে শান্তি দেয় কিন্তু স্বস্তি দেয় না। - বায়রন।

৭। কাউকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসার মধ্যে এক ধরনের দুর্বলতা আছে। নিজেকে তখন তুচ্ছ এবং সামান্য মনে হয়। এই ব্যাপারটা নিজেকে ছোট করে দেয়। - হুমায়ূন আহমেদ।

৮। প্রেমে পড়লে বোকা বুদ্ধিমান হয়ে উঠে, বুদ্ধিমান বোকা হয়ে যায়। - স্কুট হাসসুন।

৯। মেয়েদের তৃতীয় একটা নয়ন থাকে। এই নয়নে সে প্রেমে পড়া বিষয়টি চট করে বুঝে ফেলে। - হুমায়ূন আহমেদ।

১০। প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকিলে রস নিবিড় হয় না। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১১। ছেলে এবং মেয়ে বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তারা অবশ্যই একে অপরের প্রেমে পড়বে। হয়ত খুবই অল্প সময়ের জন্য, অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য। তবে প্রেমে তারা পড়বেই। - হুমায়ূন আহমেদ।

১২। বিচ্ছেদের দুঃখে প্রেমের বেগ বাড়িয়া উঠে। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১৩। যে ভালোবাসা না চাইতে পাওয়া যায়, তার প্রতি কোনো মোহ থাকে না। - হুমায়ূন আহমেদ।

১৪। নারীর প্রেমে মিলিনের গান বাজে, পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদনা। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১৫। ছেলেদের জন্য পৃথিবীতে সব চাইতে মূল্যবান হল মেয়েদের হাসি। - হুমায়ূন আহমেদ।

১৬। প্রেমের ক্ষেত্রে জয়ী হয়ে কেউ শিল্পী হতে পারে না, বড় জোর বিয়ে করতে পারে। - ওয়াশিংটন অলসটন।

১৭. মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে, তাকে ঘৃনা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন তা শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ রেখে যায়। - সমরেশ মজুমদার।

১৮। একই ব্যাক্তির সাথে বহুবার প্রেমে পড়াই হল সার্থক প্রেমের নির্দশন। - ব্রাটন।

১৯। যে ভালবাসা যত গোপন, সেই ভালবাসা তত গভীর। - হুমায়ূন আহমেদ।

২০। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম। - হুমায়ূন আজাদ।

২১। ভালোবাসার জন্য যার পতন হয় সে বিধাতার কাছে আকাশের তারার মত উজ্জ্বল। - জনসন।

২২। প্রেম হল সিগারেটের মতো, যার আরম্ভ হল অগ্নি দিয়ে, আর শেষ পরিণতি ছাই দিয়ে। - জর্জ বার্নার্ড শ।

২৩। ধোয়া, টাকা আর প্রেম কিছুতেই চেপে রাখা যায় না ঠিক ফুটে বেরুবেই। - শংকর।

২৪। ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ - জর্জ চ্যাপম্যান।

২৫। প্রেম হচ্ছে স্বার্থ সিদ্ধির চরম অভিব্যক্তি। - হল রুক জ্যাকসন।

২৬। প্রেম নারীর লজ্জাশীলতাকে গ্রাস করে, পুরুষের বাড়ায়। - জ্যা পল বিশার।

২৭। যে ভালোবাসা পেলো না, যে কাউকে ভালোবাসতে পারলো না, এই সংসারে তার মতো হতভাগা কেউ নেই। - কীটস্।

২৮। ভালোবাসা হচ্ছে একধরনের মায়া যেখানে, পুরুষ এক নারীকে অন্য নারী থেকে আলাদা করে দেখে আর নারী এক পুরুষকে অন্য পুরুষ থেকে আলাদা করে দেখে। - লুইস ম্যাকেন।

২৯। ভালোবাসা হচ্ছে একটা আদর্শ ব্যাপার আর বিয়ে হচ্ছে বাস্তবতা। আদর্শ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব তাই কখনই নিষ্পত্তি হবে না। - গ্যেটে।

৩০। আমরা কোনো ভাবেই ভালোবাসার ওপর মূল্য নির্ধারণ করতে পারি না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য দরকারি সব উপকরণের ওপর মূল্য নির্ধারণ করতেই হবে। - ম্যালানি ক্লার্ক।

৩১। সোনায় যেমন একটু পানি মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয় না, সেইরকম ভালবাসার সঙ্গে একটু শ্রদ্ধা, ভক্তি না মিশালে সে ভালবাসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। - নিমাই ভট্টাচার্য ক্রোধ।

৩২। তুমি যদি কাউকে ভালোবাস, তবে তাকে ছেড়ে দাও। যদি সে তোমার কাছে ফিরে আসে, তবে সে তোমারই ছিল। আর যদি ফিরে নাআসে, তবে সে কখনই তোমার ছিল না। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

৩৩। দুটো জিনিস খুবই কষ্টদায়ক। একটি হচ্ছে, যখন তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু তা তোমাকে বলে না। আর অপরটি হচ্ছে, যখন তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ভালোবাসে না এবং সেটা তোমাকে সরাসরি বলে দেয়। - শেক্সপিয়ার।

৩৪। যখন কোন পুরুষ কোন নারীকে ভালবাসে, তখন সে তার জন্য সব কিছু করতে পারে। কেবল তাকে ভালবেসে ছেড়ে যেতে পারেনা। - অস্কার ওয়াইল্ড।

৩৫। ভালবাসা যা দেয় তার চেয়ে বেশী কেড়ে নেয়। - টেনিসন।

৩৬। সত্যিকারের ভালোবাসা হল অনেকটা প্রেতাত্মার মতো। এ নিয়ে সবাই কথা বলে, কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকজনই এর দেখা পায়। - লা'র চেফউকোল্ড।

৩৭। প্রেমের নিরব স্বপ্ন যতই মধুর, তার অর্ধেক মধুরতাও জীবনে আর কিছুতেই নেই। – টমাস মুর।

৩৮. কোন কাছি বা দড়ি অত জোরে আকর্ষণ করতে বা অত শক্ত করে বাঁধতে পারে না, প্রেম যা একটি মাত্র সুতো দিয়ে পারে। – বার্টন

৩৯. প্রেম হচ্ছে সব কিছুর শুরু, মধ্য এবং অন্ত। – লাকর্ডেয়ার।

৪০. ছোট ছোট বিচ্ছেদ প্রেমকে গভীর করে আর দীর্ঘবিচ্ছেদ প্রেমকে হত্যা করে। –মিরবো।

৪১. যৌবনে যার প্রেম এলোনা তার জীবন বৃথা। - শংকর

৪২. অন্ধভাবে কাউকে ভালবাসলে তার ফল শুভ হতে পারেনা। - কারলাইন

৪৩. যে ভালবাসে কিন্তু প্রকাশ করে কম, সে ভালবাসার ক্ষেত্রে প্রকৃত। - জর্জ ডেবিটসন

৪৪. গভীর ভালবাসার কোন গোপন ছিদ্রপথ নেই। - জর্জ হেইড

৪৫. ভালবাসার নদীতে জোয়ার ভাটা আছে। - জন হে

৪৬. ভালবাসা হৃদয়ের দরজা মুহুর্তেই খুলে দেয়। - টমাস মিল্টন

৪৭. ভালবাসা দিয়ে মরুভুমিতেও ফুল ফোটানো যায়। - ডেভিসবস

৪৮. যখন আপনি কাউকে ভালোবাসেন তখন আপনার জমিয়ে রাখা সব ইচ্ছেগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। - এলিজাবেথ বাওয়েন।

৪৯. বন্ধুত্ব অনেক সময় ভালোবাসায় পর্যবসিত হয়, কিন্তু বন্ধুত্বের মধ্যে কখনো ভালোবাসা থাকে না। - চার্লস কনটন।

৫০. শুকনো হৃদয়ের খাঁ খাঁ শূন্যতা প্রণয়ের বৃষ্টিভেজা বাতাস দিয়ে ভরিয়ে তোলার নামই ভালোবাসা। - ব্লগার রূপক বিধৌত সাধু।

৫১. ভালোবাসা যদি কাউকে উদার হতে শেখায়, তবে সেটাই সত্যিকার ভালবাসা। - ব্লগার উম্মু আবদুল্লাহ।


আমার কাছে ভালোবাসা:
ভালোবাসা অনবদ্যতা আমি প্রায়ই তুলে ধরি আমার গল্পগুলিতে। সেখান থেকে বেছে বেছে অন্যতম সেরা দুইটা অংশ নীচে তুলে দিলাম আমার পাঠকদের জন্য।

একঃ কুসুম কুসুম প্রেম কাহিনী
হাত রুমালে মুছে উঠে দাড়াবো, সেই সময় দেখি শবনম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওহ মাই গড, শবনম আজকে শাড়ি পড়ে এসেছে! লাল শাড়ি। কি যে সুন্দর লাগছে! আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছি। চোখ সরানো যাচ্ছে না। আমার ছোট্ট এই জীবনে শবনম ছাড়া কি বা চাইবার আছে? পাঞ্জাবীর পকেটে হাত দিলাম। বড় একটা রক্ত লাল গোলাপ নিয়ে এসেছি শবনমকে দিব বলে।
শবনম মনে হয় টের পেয়ে গেল আমি করব। এক স্টেপ পিছিয়ে যেয়ে বললঃ
-হাঁদারাম কোথাকার? আপনার কি ধারনা আপনার জন্য আমি শাড়ি পরে এসেছি? তাও আবার লাল শাড়ি? এক ঘন্টা রাস্তায় বসিয়ে রেখেছি, তাও লজ্জা করে না। মানুষ এত বেহায়া হয় কিভাবে?

শবনমের লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, লাল টিপ, লাল লিপষ্টিক আর হাতে কাঁচের লাল চুড়ি দেখে আমি আশেপাশের সমস্ত পৃথিবীর কথা ভূলে গেলাম। শবনমের সব কথা যেন আমার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে গেল। ও আজকে আমাকে যা ইচ্ছা বলুক, কিচ্ছু যায় আসে না আমার।
-আপনার জন্য আমার কোন লজ্জা করে না। কেউ কি আপনাকে কখনো বলেছে আপনি আসলে কতটা সুন্দর? শবনম আমি আপনাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। আপনি আমাকে যা ইচ্ছা বলতে পারেন, যা ইচ্ছা করতে পারেন, আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। আমার এই ছোট্ট জীবনে আপনাকে ছাড়া আমি আর কিছুই চাই না। আপনি যদি চান এই মুহূর্তে, আমি আমার হৃদপিন্ড ছিড়ে এনে আপনার হাতে হাসি মুখে তুলে দিব। দেখতে চান?

এক নিশ্বাসে কথা গুলি বলে আমি নিজেই অবাক! কত কথা গুছিয়ে এনেছি ওকে বলব বলে, আর কি আবোল তাবোল বলে ফেললাম। কতটা দিন ধরে যে আবেগ বুকে চেপে রেখেছিলাম সেটা শবনমকে দেখে সাথে সাথে যেন বের হয়ে আসল।

দুইঃ পরিণয়
নাবিলা ওর হাতের ব্যাগটা নাহিদের হাতে দিয়ে খোঁপায় গোলাপ ফুল গুলি গুঁজে নিল আর ওর ব্যাগটা ফেরত নিয়ে খুব সুন্দর একটা হাসি গিফট করল নাহিদকে। খোঁপায় গোলাপ ফুল সহ নাবিলাকে দেখে হঠাৎই নাহিদের মনে হল স্বর্গের সবচেয়ে সুন্দরী অপ্সরীটাই ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নাবিলার হাসিটা যেন ওর মাথা সাথে সাথেই নষ্ট করে দিল। মুহূর্তের মধ্যেই ও নাবিলার হাত দুটি নিজের দুই হাতের মাঝে নিয়ে অস্ফুটে স্বরে বলল-
-নাবিলা, আমি আপনাকে ভালোবাসি, অসম্ভব ভালোবাসি। আমার বুকে ঢুক ঢুক করা এই হৃদপিন্ডটা যদি বের করে এনে আপনাকে দেখাতে পারতাম, তাহলে দেখতেন সেটার সারা জায়গায় শুধু আপনারই নাম লেখা। এই হাত দুটি ধরে সারা জীবন শুধু আমি আপনাকেই ভালোবেসে যেতে চাই, আর কিচ্ছু চাইনা। আপনি আমাকে ভালোবাসার যেই পরীক্ষাই নিতে চান আমি সেটাতেই রাজী, তাও আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।

লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেলল নাবিলা। হুট করে নাহিদ এমন সব কথা বলে বসে যে ওর লজ্জায় মরি মরি অবস্থা! নাহিদ এখনও নাবিলার হাত দুটি ছেড়ে দেয় নি, কেন জানি ওর মনে হচ্ছে নাবিলা ছাড়াতেও চাচ্ছে না। এক বুক ভরা ভালোবাসা চোখে নিয়ে ও নাবিলার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল-
-নাবিলা, আমি খুব একা। জীবনের এই নিঃসঙ্গ অথৈ সাগরের মাঝে আমি এক বুক ভরা হাহাকার নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছি। এক মুঠো স্বস্তির নিশ্বাসও কি আমি আপনার কাছে চাইলে দেবেন না?

অতর্কিত এই প্রেমের আহবানে নাবিলার বুকটা অপ্রত্যাশিত আবেগের শিহরণে তোলপাড় হয়ে গেল। ভালোবাসা আহবান হঠাৎই মানুষকে বিহবল করে তুলতে পারে, হৃদয়ের অন্ত:করনে প্রশান্তির পসরা সাজাতে পারে, আকর্ষণের তীব্র ছায়ায় আচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে, ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে কল্পলোকের অথৈ অতলে। নাহিদের যে সাত সমুদ্র ভালোবাসা ওকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনুরাগে, সেটা কি এড়িয়ে যাওয়া সত্যই ওর পক্ষে সম্ভব?

নিজের মনের উপর নাবিলার অসম্ভব বিশ্বাস ছিল যে, হুট করে কেউ এসে ওর মনের দখল নিয়ে যেতে পারবে না। একজন সত্যিকারের রাজকুমারই পারবে এসে ওর মনের ঘরের চাবি ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে। কিন্তু সেই কল্পনাকেও যেন হার মানাল নাহিদের প্রেমের আকুতি! এভাবে সত্যি সত্যিই ওর আসল রাজকুমার না চাইতেই চলে আসবে আর ওর মনের বদ্ধ দুয়ার চাবি কেড়ে নিয়ে খুলে দেবে, তা নাবিলা কল্পনাও করেনি। নাহিদের প্রেমময় ভালোবাসার আহবান যেন নাবিলাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ওর অধর ছুঁয়ে গেল আর সাথে সাথেই নাবিলা প্রণয়ের শিহরনে কেঁপে উঠল। ভালবাসার এই হাতছানি থামিয়ে দেবার শক্তি নাবিলার নেই। ওর শীতলতায় তপ্ত হৃদয়ে হঠাৎ করেই স্পর্শ করল প্রণয়ের অনল, সেই অনলে কিছু বুঝার আগেই দগ্ধ হয়ে যায় নাবিলার হৃদয়। সেই দগ্ধ হৃদয়ে অসহ্য শিহরনের মাঝেই নাবিলা কান পেতে শুনতে পেল অনাগত ভবিষ্যতে অসম্ভব ভালোবাসায় ঘেরা জীবনের হাতছানি…….


ভালোবাসা নিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই ব্লগের কবিতা সম্রাজ্ঞী আমার প্রিয় কবি মনিরা সুলতানা আপুর পছন্দ করা আমার একটা প্রেমের কবিতার স্তবক দিয়ে-

তোমাকে নিয়ে লিখতে চাই একটা মসলিন প্রেমের কবিতা-
যেই কবিতার প্রতিটি তন্তু আর আঁশে,
ভাঁজে ভাঁজে গাঁথা থাকবে আমার লুন্ঠিত হৃদয়ের অগুনিত সংখ্যাতথ্য।
উদ্ধত আর বেপরোয়া এই হৃদয় তোমার মাঝেই পেয়েছে স্নিগ্ধতা।
কিংবা তোমার শান্ত বুকে আমার পাগলপরা প্রেম
আঁকবে রঙধনুর সাত রঙ দিয়ে ভালোবাসার এক জলজ্যান্ত পোট্রেইট।


উৎর্সগঃ আমার খুব প্রিয় মুক্তা নীল আপুকে। যিনি এই ব্লগে, আমাকে ব্লগের আপন ভাই হিসেবে বরন করে নিয়েছেন। আজকের এই লেখাটা ভাই হিসেবে আপুকে উপহার দিলাম!

আগের পর্ব পড়ে আসুন এখান থেকে বাণী চিরন্তনী: বিয়ে করেছেন! আসুন এটাকে নিয়ে সেলিব্রেট করি!

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০১
২৯টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×