somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শবনম কাহিনী ৩ - ছেড়া পালে লাগে হাওয়া!

১০ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পড়ন্ত দুপুর বেলা। ডেস্কে বসে কাচ্চি বিরিয়ানি দিয়ে লাঞ্চ শেষ করে, কেবল ওয়াশরুম থেকে হাত ঢুয়ে এসে চেয়ারে বসেছি। আয়েশ করে একটা বেনসন সিগারেট ধরাব, ঠিক এমন সময় এসআই রাকিব এসে হাজির। ভালোই বিরক্ত হলাম। এই সময়টাতে আমি সাধারণত রেস্ট নেই। এদের বেশ ভাল করেই বারণ করা আছে, এই সময়ে আমাকে বিরক্ত না করতে। চোখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
-কি হয়েছে?
-স্যার, সান শাইন টিভি চ্যানেলের অফিসে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে! সাজিদ ঐখান থেকে বারবার জানতে চাচ্ছে, কি এ্যাকশনে যাবে ও?

সাজিদ আমার এই থানার আরেকজন এসআই। খাবার সময় কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান ভালো লাগে না দেখে, ওয়াকিটকির ভলিউম মিউট করে রেখেছিলাম। ভলিউম বাড়াতেই সাজিদের কন্ঠ শোনা গেল। ওকেই ডাইরেক্ট জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি? সাজিদের কাছে ঘটনা শুনার সাথে সাথেই হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি! সর্বনাশ, জল এতদূর গড়িয়েছে! এরপর তো আর থানায় বসে থাকা সম্ভব নয়। রাকিব আর কিছু ফোর্স নিয়ে তখনই রওনা দিলাম আমি.....................

এক
মগবাজার রেল ক্রসিংয়ের সামনে বারতলা বিল্ডিংটার আট তলায় সান শাইন টিভি’র অফিস। সদর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সাজিদের সাথে দেখা। ওকে সাথে নিয়েই সেই তুঘলকি কান্ড ঘটার জায়গাটায় গেলাম। রুমের একমাত্র টেবিলটার প্রায় ভগ্নপ্রায় অবস্থা! ঘরের এক কোনায় জড়সড় হয়ে একটা লোক প্যারামেডিক ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে। হেঁটে কাছে যেয়ে দেখলাম এর অবস্থা আসলেও করুণ! সমস্ত মুখ কেটেকুটে লাল হয়ে আছে। গায়ের কাপড় চোপড় প্রায় সব ছেঁড়া-ফাড়া। নিদারুণ গনঢোলাই কন্ডিশন!
-এটা কে?
-চ্যানেলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর রওনক হাসান।
-কয়জন মিলে ধরেছিল?
-প্রথমে তো ঐ মহিলা এসে ধরল, তারপর অফিসের সব মহিলা স্ট্যাফ একসাথে হয়ে রুমে ঢুকে....। ঐ মহিলা ছাড়াও অফিসের আরও বার জন মেয়ে স্ট্যাফ।
-মাইর তো ভালোই দিয়েছে দেখি! মেয়েদের সব কমপ্লেয়িং নোট করেছ?
-ঐ মহিলার সাথে আগে কথা বলেন স্যার। উনার সাথে তো কথাই বলা যাচ্ছে না। রেগে আগুন হয়ে আছেন। ছোটবোনকে সহ ওদিকের একটা রুমে আপাতত বসিয়ে রেখেছি আপনার কথা মতো। উনার ছোটবোনই আসল ভিক্টিম। ভিক্টিমই যদি কথা না বলে কি নোট করব?
-ঠিক আছে, চল ঐ মহিলার কাছেই আগে যাই।

ছোট রুমটার দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে তাজ্জব বনে গেলাম আমি! হতভম্ব হয়ে মহিলার দিকে আমি আর চরম বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে এই মহিলা তাকিয়ে আছেন। সাজিদকে রুমের বাইরে থাকতে বলে, দরজা লাগিয়ে দিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে এদের সামনে যেয়ে বসলাম। বসার প্রায় সাথে সাথেই বেশ রাগত একটা কন্ঠস্বর শুনলাম-
-এতক্ষন পর তাহলে আপনার সময় হলো? কোথায় ছিলেন আপনি? আমাকে রুমে আটকে রেখেছেন কেন?
কেস আসলেও খারাপ। তার সাথে আমার কপালটাও। লাঞ্চের পর কনর্ফাম আজকে আর শান্তিমতো রেস্ট নিতে পারব না! ধ্যাত!
-আপনাকে আটকে রাখা হয়েছে ভাবছেন কেন? আপনাদের সাথে কথা বলে কমপ্লেয়িং নোট করতে হবে, জিডি ফাইল করতে হবে! অনেক কাজ বাকি!
-আমি এখন কিছুই করতে পারব না। আমি আর আমার ছোট বোন দুইজনই খুব টায়ার্ড। আমরা বাসায় যাব এখন! আমাদের যেতে দিন!
দুইজনের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগলো। ছোট বোনটা কান্না করতে করতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে, এখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। পরিস্থিতি দেখে খুব দ্রুতই ডিছিশন চেঞ্জ করে ফেললাম আমি।
-ঠিক আছে চলুন, আগে আপনাদের বাসায় পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করি। আজকেই পরে আপনাদের সুবিধামতো সময়ে আবার বসা যাবে কথা বলার জন্য।
একরাশ কৃতজ্ঞতা চোখে নিয়ে এবার আমার দিকে তাকাল দুইবোন। একটু লজ্জা পেলাম!
-শবনম, আমি খুবই লজ্জিত! আমি সত্যই জানতাম না আপনি এখানে। জানলে বলুন, অন্ততঃ আমি কি কখনই এত দেরী করতাম! আসুন আমার সাথে, প্লীজ!

দুইজনকে সাথে নিয়েই রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। নিজেই সব দরজা খুলে লিফটে করে নীচে নিয়ে যাচ্ছি, সাজিদ আর রাকিব আমার কর্মকান্ড দেখে কিছুটা কনফিউজড হয়ে গেল! খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের দেখছে, আসলে মনে হলো সিচুয়েশন কি বুঝার চেষ্টা করছে! কোন কিছুই যেন পরে গুবলেট না পাকিয়ে ফেলে......

দুই
শবনম আর ওর বোনকে পার্কিং এরিয়াতে ওদের পারসোনাল গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে একটু সামনে আসতেই দেখি, লাইভ এ্যাকশন অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। চ্যানেলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টরকে নিয়ে রাকিব নীচে পুলিশের একটা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এদের সামনে যেয়ে দাড়াতেই রাকিব জানতে চাইল-
-বস, এইটারে কয় নাম্বারে ঢুকাব?
জটিল একটা প্রশ্ন! অতীব চিন্তার বিষয়। ডিরেক্টর সাহেবের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার খুব ভালো করে দেখলাম। এই সেই চীজ, যে আমার ‘নুর জেহান’ এর ছোট বোনের গায়ে হাত দিয়েছে! এসআই রবিউল কয়েক মাস আগেই ট্রান্সফার হয়ে গেছে। রবিউল চলে যাবার পর থেকেই বেশ ঝামেলায় আছি আমি, সব কিছুর ডিসিশন আমাকেই বলে দিতে হয়। কবে যে এরা সবকিছু দ্রুতই শিখে নিবে!
-এই ভদ্দর লোক আমার going to be শালীর গায়ে হাত দিয়েছে! তোমরাই বল এইটারে কয় নাম্বারে ঢুকান যায়!

আমার কথা শেষ করার পরপরই ভদ্দর লোকের চেহারায় আমূল একটা পরিবর্তন খুব দ্রুতই হতে দেখলাম! নিজের কানকেও মনে হয় বিশ্বাস করতে পারছে না বেচারা! কিছু কিছু সময় আসলেও কারো কারো কপাল খুবই খারাপ থাকে, যেমন এর এখন! আমার জায়গায় অন্য কোন পুলিশ অফিসারও তো থাকতে পারত? করজোড়ে মাপ চাইবার একটা বৃথা চেস্টা করতে দেখলাম, তবে সময় পেল না। উস্তাদের চেয়ে সাগরেদ দুইকাঠি বাড়া থাকে শুনেছিলাম এতদিন, আজকে হাতেনাতে সেটার প্রমান পেলাম। রাকিব মুহূর্তের মধ্যেই ঘাড় ধরে এটাকে গাড়িতে তুলে ফেলল। আর গাড়ির দরজা লাগানোর সাথে সাথেই অকৃত্রিম কিছু শব্দ শুনতে পেলাম! সব কিছু পাত্তা দিতে হয় না। আমি লিফটে করে আবার আট তলার অফিসে চলে আসলাম। অফিসের বাকি মেয়ে স্ট্যাফদের সাথে কথা বলতে হবে। পুরো ঘটনা প্রথম থেকে শুনতে হবে। তারপর গুরুত্ব বুঝে কেস দাঁড় করাতে হবে। আগে উপরে যেয়ে দেখি কি অবস্থা!

পরবর্তি পাক্কা দেড়ঘন্টা এই অফিসের সব মহিলা স্ট্যাফদের সাথে এক এক করে কথা বলার পর আমি সত্যই অবাক! এতটা দিন ধরে এরা চুপচাপ সহ্য করেছিল কিভাবে? কি আর্শ্চয! এখানকার সব মহিলা স্ট্যাফগুলি মেরুদন্ডহীন প্রাণী নাকি? পুলিশে সাহস করে একবার কমপ্লেইন করলেই তো হয়? পুরো ঘটনা সবার কাছ থেকে শুনার পর এর শানে নযুল যা দাড়াল-
এই ডিরেক্টর ভদ্দর লোক নাকি মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই মহিলা স্ট্যাফদের গায়ে হাত দিয়ে বসে, অশোভন আচরণ করে! প্রায় সবার সাথেই একই কাজ করত। লোকলজ্জা আর চাকরী হারানোর ভয়ে প্রায় সবাই চুপচাপ এতদিন সহ্য করেছিল। আজকে শবনমের ছোটবোন ইবনাত শামরীনের সাথে প্রায় একই কাজের চেস্টা করেছিল। কি একটা রিপোর্টে নাকি ভুল করেছে সেটা দেখানোর নামে রুমে ডেকে পাঠায় শামরীনকে। রিপোর্টে কোথায় ভুল হয়েছে সেটা দেখার জন্য পাশে যেয়ে দাঁড়াতেই জড়িয়ে ধরার চেস্টা করে ডাইরেক্টর ভদ্দর লোক। টেবিলের উপর একটা কাঁচের ফ্লাওয়ার ভাস ছিল, সেটা দিয়ে শামরীন রওনক সাহেবের হাতে বাড়ি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে কোনরকমে রুম থেকে দৌড়ে বের হয় আসে। ডেস্কে বসেই কাঁদতে কাঁদতে বড়বোন শবনমকে বাসা থেকে গাড়ি পাঠাতে বলে বাসায় চলে যাবার জন্য। ফোনে কিছুটা শুনেই শবনম সোজা এই অফিসে এসে হাজির। আসার পরই সব কিছু শুনে ছোট বোনকে নিয়ে সোজা ডিরেক্টরের রুমে এসে ঢোকে। এক দুই কথা বলতে বলতে রাগ আর কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি শবনম। পা থেকে জুতা খুলে নিয়ে বেশ কয়েকটা বাড়ি দিতেই রুমে হাউকাউ লেগে যায় আর তখনই বাকি মহিলা স্ট্যাফগুলি যেয়ে হাজির। রুমের দরজা নাকি শবনম ইচ্ছে করেই খুলে রেখেছিল! তারপর যা ঘটছে সেটা আজকের নব্য ইতিহাস! এতদিনের জমানো সব ক্ষোভ একবারে ইচ্ছেমতো ঢেলে দিয়েছে সবাই মিলে এর উপর! ঘটনা খারাপ দেখে টিভি অফিস থেকেই কেউ পুলিশে ফোন করেছিল। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে এটা আমার থানার এলাকা দেখে এই থানায় জানায়। কাছাকাছিই ঘুরাঘুরি করছিল সাজিদের পেট্রল টীম। সোজা এসে হাজির হয়। পুলিশ এসেই উদ্ধার করে এই যৌন নির্যাতনকারীকে মেয়েদের হাত থেকে, তবে তার আগেই ইচ্ছেমতো সব মেয়েরা মিলে সেই রকম গনধোলাই দিয়ে দিয়েছে......

সবকিছু দেখে আর শুনে আমার কাছে মনে হলো, এই ভদ্দর লোক যে জানে বেঁচে গেছে সেটাই তো বড়! আরেকটু এদিক ওদিক হলেই মার্ডার কেস হয়ে যেত! ডেস্কের পিছনেই ছিল গ্লাসের বড় স্লাইডিং উইন্ডো। শবনম যে সবাইকে নিয়ে একে ধরে এই জানালা দিয়ে নীচে ফেলে দেয়নি এটা এর চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্যই বলতে হবে! মেয়েরা ধরে ফেলে দেয়ার আগেই একে উদ্ধার করেছে পুলিশ, নাকি জানালাটা মেয়েদের চোখেই পড়েনি বুঝলাম না। পেলে সত্যই খবর ছিল! হাতঘড়িতে দেখলাম প্রায় পাঁচটা বাজে। এখানের কাজ মোটামুটি শেষ। সাজিদকে অফিসের নিয়ম মোতাবেক কেসের সব আলামতের ছবি তুলে আর বিস্তারিত ভাবে সবার কাছ থেকে আলাদা আলাদা কমপ্লেইন লিখে সাইন করে আনতে বললাম। আর সবকাজ শেষে এই রুমের দরজা সীলগালা করে বন্ধ করে দিয়ে আপাতত একজন হাবিলদারকে পাহারায় রেখে যেতে বললাম।

মাথাটা ঝিম ঝিম করছিল। অফিসে ফেরার আগে ভালো একটা কফিশপে বসে কড়া করে বানানো দুইকাপ কফি খেলাম। হাত বড়ই নিশপিশ করছে সেই তখন থেকে! আসল কাজই এখনও থানায় বাকি আছে, যেয়েই নিজের তদারকিতে শুরু করতে হবে......

তিন
যদিও না গেলেও চলত, তারপর একটা ব্যাপার হুট করে মনে পড়তেই রাত সাড়ে আটটার দিকে সাজিদের সাথে শামরীনদের বাসায় আমিও গেলাম। জিডিটা আজকেই ফাইল করতে পারলে খুব ভাল হত। সেজন্যই শামরীনের সাথে আগে কথা বলা দরকার। ওদের ড্রয়িং রুমেই একজন মেয়ে কন্সটেবল পাশে রেখে শবনম সহ দুই বোনের কাছে ঘটনার সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে শুনল সাজিদ বেশ ধৈর্য্য সহকারে । ও যেহেতু প্রথম থেকেই ছিল, ওই দায়িত্ব পেয়েছে এই কেসের। আমি একটু দূরে বসে সব শুনছি। সাজিদের ইন্টারোগেশন শেষে হবার পর শবনমকে ইশারায় ডাকলাম আমি। ওর সাথে আলাদা করে কথা বলা দরকার! কালকে আদালতে এটা কেস ফাইল করার আগে এদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিনিস জানতে হবে।
-কিছু লাগবে আপনার?
আমি আস্তে করে বললাম-
-হ্যা,শবনম। আমি একদম আলাদা করে একা আপনার সাথে শুধুমাত্র শামরীনের এই ঘটনা নিয়েই কথা বলতে চাই।
বুদ্ধিমতি মেয়ে, ইশারাই কাফি হ্যায়!
-ও আচ্ছা, আপনি আমার সাথে আসুন, ওয়াশ রুমটা এই দিকে!

আমাকে ভিতরের একটা রুমে নিয়ে গেল শবনম। ঘরের দরজা লাগানোর সাথে সাথেই কথা বলা শুরু করলাম আমি। সময় অনেক কম, কিন্তু কাজ বেশি।
-এই কেস আমি কালকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠাবো। কেস হবে বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধিত ২০১৩ অনুযায়ী। বাদী হবে পুলিশ। এই আইন মোতাবেক পুলিশ যদি ঘটনা জানে বা কেউ রিপোর্ট করে তাহলে এটা পুলিশের দায়িত্ব কেস ফাইল করার। আপনাদের কিছুই করতে হবে না। কোন সমস্যা বা আপত্তি আছে?
-না। আপনি যেটা ভাল মনে করেন!
-এটা খুব কমন যৌন হয়রানির কেস। রেগুলার এইসব কেস আসে আমাদের কাছে। আমরা কেস ফাইল করি, কিন্তু কিছুদুর এগুনোর পর বেশিরভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায় লোকলজ্জার কারণে। ভিক্টিমকে পরে ডাকলেও আর আসে না। আমি জানতে চাই, শেষ পর্যন্ত ফাইট করার সাহস আছে আপনাদের?
-আমাকে আপনি চিনেন না? কিভাবে এই প্রশ্ন করেন আমাকে?
-আপনাকে তো চিনি কিন্তু আপনার ছোটবোনকে তো চিনি না। তাছাড়া সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক চাপ সহ্য করার মতো সাহসও থাকতে হবে। পুলিশ এবং আমার সবরকম সহযোগিতা সবসময় পাশে পাবেন আপনারা। কিন্তু কোনভাবেই ভয় পাওয়া যাবে না, পিছু হটে আসা যাবে না। অনেক দিক দিয়ে প্রেসার আসবেই। এছাড়াও নিউজ পেপার, মিডিয়া, সোসাল মিডিয়া সবকিছুর চাপ সহ্য করার মত সাহস কি আপনার বোনের আছে? আগে আমাকে কনর্ফাম করুন।

শবনম আমার দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে চলে গেল। আমার মনে হলো শামরীনকে নিয়ে আসবে। সেটাই হলো। শামরীনকে আমার সামনেই বসিয়ে শবনম সবকিছু খুলে বলল এক এক করে, খুব দ্রুত। তারপর শামরীনের মতামত জানতে চাইলো আমার কথামত!
-আমি এর বিচার চাই। যত কষ্টই হোক আমি পিছু হটে আসবো না। এই হারামজাদাকে ছেড়ে দিলে আবার আরেকটা মেয়ের সাথে একই অপকর্ম করার সাহস পাবে। এর উচিৎ শিক্ষা হওয়া দরকার। তাহলে এই ধরনের বাকি বদমায়েশ গুলিও সাবধান হয়ে যাবে!
-সাব্বাস! একদম ঠিক বলেছেন। আপনার সাথে মেয়ে কলিগদের সাথে সম্পর্ক কেমন? এদেরকে যদি সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয় আদালতে, আসবে?
-কয়েকজনের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। মিনিমাম চার-পাঁচ জন সাক্ষী দেবে আমার জন্য।
-ভেরি গুড। ভয় পাবেন না। যতটুকু দেখলাম আর শুনলাম, এই কেস থেকে পার পেয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হবে এর। আপনি এখন যান, রেস্ট নিন। আপনার বড়বোনের সাথে আমি একা কিছু কথা বলতে চাই।

শামরীন চলে যেতেই আমি আবার শুরু করলাম।
-এই ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে বাদী বা ভিক্টিমের নিজস্ব কোনো আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজন নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯২ধারা অনুযায়ী তিনি সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী অবশ্যই পাবেন। তবে নিজে কোন আইনজীবী নিয়োগ দিতে চাইলে সেই আইনজীবী সরকারি আইনজীবীর অধীনেই কাজ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া আইনজীবীকে কোনো খরচ দিতে হবে না।
-সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী দেয়া হবে জেনেও আপনি ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগের কথা তুললেন কেন? ইস সাম্থিং রং হেয়ার?
-সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া আইনজীবী সরকারী চাকুরী করেন। তার উপর বিভিন্ন দিক থেকে চাপ আসতেই পারে। উনারা পলিটিক্যালি নিয়োগপ্রাপ্ত। এছাড়াও উনার কাছে এত এত কেস থাকে যে, এটা সেটেল করতে অনেক সময় লাগিয়ে ফেলবেন। আমার সাজেশন হলো একজন খুব ভালো এবং প্রভাবশালী উকিল নিযুক্ত করুন, সম্ভব হলে কালকেই।
-আপনার কাছে ভালো কোন সাজেশন আছে? প্লীজ শুভ, হেল্প মি!
-সেজন্যই তো আপনাকে এইখানে ডাকলাম। নিন, এই কার্ডটা রাখুন। টাকাপয়সা আপনাদের জন্য কোন ব্যাপারই না, এটা আমি আগে থেকেই জানি। কালকে সকাল দশটার সময় উনার সাথে উনার চেম্বারে যেয়ে দেখা করবেন। আমি অলরেডি এপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছি। আমার রেফারেন্সে যাবেন আপনি। উনি সব পিপিদের চেয়ে অনেক সিনিয়র। বতর্মানের কয়েকজন পিপি উনার আন্ডারেই প্র্যাকটিস করতো। উনি এই কেস হ্যান্ডেল করলে অযথা অনেক হয়রানী থেকে বেঁচে যাবেন আপনারা। সব কিছু ঠিক থাকলে, কালকে সাজিদ কেস ফাইল করতে গেলে আমি উনার কাছেই পাঠাবো। উনিই সবচেয়ে ভালো বুঝবেন কোন কোর্টে কেস দিলে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি রায় পাওয়া যাবে।

আমার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই শবনম জোরে শব্দ করে কেঁদে ফেলল। আমি বেশ অবাকই হয়ে গেলাম। আমি কখনোই ওকে এভাবে কাঁদতে দেখিনি। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
-ছোটটাকে আমি অসম্ভব আদর করি। ভাই বা বোন বলতে আমার এটাই সব কিছু। দুপুরবেলা ঐ রুমটাতে বসে মাথা কাজ করছিল না ঠিকমতো। না বুঝে আপনাকে উলটা পাল্টা কথা বলে ফেলেছি। প্লীজ শুভ, আপনি সেইগুলি মনে রাখবেন না।
শবনমের মানসিক অবস্থা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। এই মেয়ে অন্ততঃ কান্নাকাটি করার বান্দা না। কি বলব ওকে, আমিও নিজেই বুঝতে পারছি না। ওর এই মহাবিপদের সময় আমি যে ওকে সাহায্য করতে পারছি, সেটাই তো অনেক বড় ব্যাপার। এমনিতেই অনেক দেরী গেছে। তাই আর কিছু না বলে উঠে দাড়াতেই, শবনম দ্রুতই সামলে নিল নিজেকে। চোখ মুছে আমাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসল।

হাতঘড়িতে দেখলাম রাত দশটা বাজে। শবনমের বাসার সামনে দুইজন পুলিশ পাহারায় রেখে আমরা সবাই বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। এই কেসের নিয়ম মোতাবেক যদিও কালকে থেকেই পাবার কথা, আমি আজকে থেকেই পাহারা রেখে দিলাম। বাসায় যেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো অন্ততঃ ..............

চার
প্রবাদ আছে, কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ। অভিযুক্ত প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নিজের সর্বনাশ করে আমার পৌষ মাস হুট করেই ডেকে নিয়ে আসল। লম্পট প্রফেসরটাকে এর উপযুক্ত পাওনা সুদেআসলে ফিরত দেবার পর প্রায় চার মাস কেটে গেছে। শবনমকে ফোন করে কি বলব সেটা ভেবে ভেবেই এতটা দিন পার করে ফেললাম। শবনমের এক্স-হ্যাজবেন্ডের সাথে যা করেছি আমি, সেটা মনে আসলেই আমার সবকিছুই অফলাইনে চলে যেত। এত বেশি অস্বস্তিঃ কাজ করত যে ফোন করাই দুঃসাধ্য ব্যাপার। শবনমের বাসা থেকে চলে আসার পর, পরেরদিন দুপুরবেলা যখন হুট করেই শবনমের ফোন আসল আমার মোবাইলে, মুহূর্তেই আমি চলে গেলাম সেই ফেলা আসা পুরানো স্মৃতিগুলিতে! শুধুই একবার ওর কন্ঠস্বর শুনার জন্য আমি কি না করেছি! দূরদূর করে ম্যাসেন্জার থেকে মাঝে মাঝে আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে ফোনকল কেটে দিত! একবার ওর মোবাইল নাম্বার চেয়েছিলাম দেখে যেই ঝাড়ি দিয়েছিল, সারা রাত ঘুমাতে পারি নি, এতটাই মন খারাপ হয়েছিল! সময়ের সাথে সাথে সবকিছু কত দ্রুতই না বদলে যায়! কিন্তু শুধুই বদলায়নি আমার ওর জন্য বুক ভরা আবেগ। রাপা প্লাজার সামনে ওকে দেখে কেন যে নিজের এত বড় সাড়ে সর্বনাশ করেছিলাম? ফোনকলটা ধরতেই বাস্তবে ফিরে আসলাম, শবনম কেসের সবকিছুর আপডেট জানালো। ভালো একজন আইনজীবী ঠিক করে দেয়ার জন্য বারবার ধন্যবাদ দিল ও।

এই কেসে সাজিদ দুর্দান্ত একটা চার্জশীট জমা দিয়েছিল। তবে শুরুতেই আসল কাজটা করে দিয়েছেন আইনজীবী সাহেব। উনি বেছে বেছে এমন একজন মহিলা বিচারকের কোর্টে কেস ফেলেছেন, যিনি মোটামোটি কিংবদন্তী এইসব কেসে রায় দেবার ব্যাপারে। উনার নাম শুনার পর বড় করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি আমি। শামরীন ওর বড় বোনের মতোই সাহসী হয়েছে। এইরকম না হলে এই কেসগুলি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পরে। সাজিদকে প্রায় নিয়মিতই হাজিরা দিতে হয় শুনানি চলাকালীন সময়ে। সাজিদ আর শবনমের কাছ থেকে নিয়মিতই আপডেট পাওয়া যায়। মাঝামাঝি সময়ে একবার যেয়ে শবনমের আইনজীবীর সাথে দেখা করে আসলাম। ভদ্রলোকের বড়ই উপকার করে দিয়েছিলাম একবার। উনার বড়ছেলে কিছু ইল্লিগাল ড্র্যাগস সহ ধরা পড়েছিল রাকিবের প্যাট্রোল টীমের কাছে। উনি নিজেই চলে এসেছিলেন থানায় আমার কাছে। ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে মনে হলো, অসৎসঙ্গ এর জন্য দায়ী। বাবা নিজে এসে যেহেতু ছেলের দায়িত্ব নিচ্ছেন, একবার সুযোগ তো দেয়াই যায়। থানায় কোন রকম নাম এন্ট্রি ছাড়াই ছেড়ে দিয়েছিলাম। উনি যে কতটা কৃতজ্ঞ হয়েছেন, সেটা উনার সাথে কথা বলার সময়েই বুঝা যায়। উনি আমাকে কথা দিলেন ট্রাইব্যুনালের বেঁধে দেয়া ১৮০দিনের আগেই উনি রায় বের করে এনে দিবেন। উনার কথা শুনে বেশ আশাবাদী হলাম আমি!

এই কেসে পজিশন মতো সব খেলোয়ার নামিয়ে দিয়ে আয়েশ করে আমি এখন দূর থেকে খেলা দেখছি। কিন্তু যেদিন আমার সেরা স্ট্রাইকারকে পেনাল্টিতে শুট নিতে ডাকল, সেদিন আর লোভ সামলাতে পারলাম না। একদিন দুপুরে শবনম ফোনে জানালো সাক্ষী হিসেবে ওকে জেরা করা হবে পরশুদিন। আমি ডিছিশন নিলাম সাথে সাথেই, ঐদিন আদালতে থাকব। শবনম আদালতে কি বলবে সেটা আমি নিজ কানেই শুনতে চাই! আমি নিশ্চিত ঐসময়ে একটা দুর্দান্ত দৃশ্য দেখতে পাবো! আমি শবনমকে খুব ভালো করেই চিনি, এটা মিস করা একদমই ঠিক হবে না। লাইফ টাইম এক্সপেরিয়েন্স হবে এটা...

পাঁচ
-আপনি তাহলে স্বীকার করছেন, উনাকে আপনি পায়ের জুতা খুলে, সেটা দিয়ে মেরেছেন, পিটিয়েছেন?
-জী, একদম ঠিক বলেছেন। তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে চলে এসেছিলাম তো, সেজন্য বাসা থেকে ঝাড়ু নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছিলাম। কথা দিচ্ছি নেক্সট বার আর এই ভুল হবে না।

আমি মনে মনে প্রমাদ গুনা শুরু করলাম। খেলা কেবল শুরু! আজকে সারা আদালত পাড়ায় খবর হয়ে যাবে....

-কিন্তু এটা তো অন্যায়। আপনি তো উনার গায়ে হাত তুলতে পারেন না!
-আপনার কাছে এটা অন্যায় মনে হতে পারে, আমার কাছে না। উনি আমার বোনের সাথে কিংবা ঐ অফিসের অন্য মেয়েদের সাথে ক্রমাগত যেইরকম অসভ্য আর পশুর মতো আচরন করেছেন, এটা সেজন্য উনার উপযুক্ত পাওনা। সব মেয়েদেরকেই উনার কাছে উর্বশী কিংবা রম্ভা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এটা যে কত বড় ভুল, সেটা আমি উনাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, বেশ ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছি। আশা করি উনি সেটা আর কখনোই ভুলবেন না।
-কিন্তু এটাতো আপনি করতে পারেন না? আইন কেন নিজের হাতে তুলে নিবেন?
-কেন পারব না? উনি যদি সব মেয়েকে শুধুই ভোগ্যপন্য মনে করেন, তবে আমি অবশ্যই এটা করতে পারি। আমি একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চেয়েছি, যেন এইসব অসহায় মেয়েরা ঠিক ঠিক বুঝে নেয়, নিজের কাজ নিজেকেই করে নিতে হয়! অন্যের আশায় সবসময় বসে থাকলে চলবে না।

মহিলা বিচারকের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। খুবই মনোযোগ দিয়ে উনি শবনমের কথাগুলি শুনছেন। উনার দুইচোখে কি গভীর আগ্রহ!

-একা আমাকে দোষ দিচ্ছেন কেন? এটা তো আপনাদের সবার দোষ। কেন আপনারা মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে পারেন না? কেন এইসব লম্পটরা এত বড় সাহস পায়? নিশ্চয়ই আপনাদের কাছ থেকেই প্রশ্রয় পায়? আজকে এত বড় বড় ডায়ালগ দিয়ে আমাকে দায়ী করতে চাচ্ছেন, কিন্তু আমার ছোট বোনের জায়গায় যদি আপনার মেয়ে, বোন বা কোন মহিলা আত্মীয় থাকত, তাহলে কি এই কথাগুলি এইভাবে বলতে পারতেন?
-এই ঘটনার সাথে আমাকে বা আমার পরিবারের কাউকে জড়াচ্ছেন কেন?
-কারন এটাই হচ্ছে আমাদের সবার আসল চেহারা। যতক্ষন পর্যন্ত নিজেদের কেউ ভিক্টিম না হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত আমরা সবাই চোখে বড় বড় কালো ঠুলি পড়ে থাকি। আর এই জন্যই এইসব লম্পটরা এত বড় সাহস পায়! মেয়ে দেখলেই সুযোগ খুঁজতে থাকে, গায়ে অযাচিত ভাবে হাত দেয়ার চেস্টা করে, আর সুযোগ পেলেই সভ্রম কেড়ে নিতেও কোন দ্বিধা করে না।
-এইসব লম্পটদের উপযুক্ত আর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। আমার মতো আর কোন মেয়েকে এই ধরনের কাজ আর করতে হবে না।

সাব্বাস! সারা কক্ষে সজোরে হাততালি দিতে শুনলাম। শবনমের আইনজীবী বেশ ভালো করেই ওকে ট্রেইন আপ করেছে! অবশ্য এমনিতেই শবনমের মুখের ধার এরচেয়ে কোন অংশেই কম নয়! এই বিষয়ে আমার চেয়ে বড় ভুক্তভোগী এই নশ্বর দুনিয়ায় আর কেই বা আছে! আরও প্রায় আধা ঘন্টা শবনমের সাথে নিদারুন এই রোমাঞ্চকর কাহিনী চলল। শবনমের জেরা শেষে লাঞ্চ ব্রেক দেয়ার পর আমি উঠে চলে আসলাম। আসার আগে মহিলা বিচারকের চোখে যেই দৃষ্টি আমি দেখেছি, তাতে এই কেস নিয়ে খুব একটা চিন্তা না করলেও চলবে........................

ছয়
বিশদিন পরে...
-এএসপি শুভ সাহেব, আমার সাথে কি একটু দেখা করতে পারবেন, পারলে আজকেই!
সন্ধ্যা সাতটার সময়ে মোবাইলে হঠাৎ এই কলটা রিসিভ করার পরে মনে কেন যেন কু ডাক দিল। থানা থেকে বের হয়ে সাথে সাথেই রওনা দিলাম আমি!

আধা ঘন্টা পরে শবনমের আইনজীবী সাহেবের চেম্বারে উনার কথা শুনে আমি প্রায় হতভম্ব!
-এরা প্রথমে এই কাজ করেনি কেন?
-আগের লইয়ার এতটা হ্যান্ডেল করতে পারত না। সেজন্যই তো উনাকে চেঞ্জ করেছে এরা। এখন যিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, উনি পলিটিক্যাল লোক। সরকারী দলের খুবই উচু পর্যায়ে আছেন। উনাকে আমি বেশ ভাল করেই চিনি। কন্ট্যাক্টে কাজটা নিয়ে উনি এইসব কিছু করাচ্ছেন। আইন মন্ত্রণালয়ে উনার অসম্ভব ক্ষমতা। যা ইচ্ছা এখানে উনি করতে পারবেন। উনাকে এই মুহূর্তে ঠেকানো কোন ভাবেই সম্ভব না।
-বর্তমান কোর্টের বিরুদ্ধে না রাজী পিটিশন করলেই কি উচ্চ আদালতে সেটা গ্রহন করবে?
-জ্বী উনারটা করবেই। কালকে উচ্চ আদালতে জমা দেয়ার সাথে সাথেই করবে। এছাড়া এই কোর্টে এই কেসে জামিন আমি আটকে রেখেছিলাম, উচ্চ আদালতে সেটা পারব না। উনি প্রায় সাথে সাথেই আসামীকে বের করে আনবেন।
-বলেন কি আপনি! কেস তো হালকা হয়ে যাবে তাহলে?
-এখানেই শেষ নয়! যতটুকু শুনেছি, উচ্চ আদালতে একই সাথে উনারা রিভার্স দুইটা কেস ফাইল করবেন। এক হলো শামরীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য মানহানির মামলা, অভিযোগ একটা ধারাবাহিক নাটকে বার বার সুযোগ চাইবার পর নাকি উপযুক্ত নয় দেখে ডাইরেক্টর সাহেব নেন নি, সেজন্য উনাকে অপদস্থ করার জন্যই এই মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই হলো, বিনা কারনে এবং সম্পুর্ন বিনা প্ররোচনায় শবনম উনার গায়ে হাত তুলেছেন এবং বাকি সবাইকে উৎসাহিত করেছেন উনার গায়ে হাত তোলার জন্য।
-কিন্তু অভিযোগগুলি তো ডাহা মিথ্যা কথা। সাক্ষীদের জেরা করার সময় আসল সত্য বের হয়ে আসবেই। দুইটাই তো চরম মিথ্যা কেস। আদালতে কখনোই টিকবে না!
-শুভ সাহেব, আপনি আসল আইনি প্যাঁচটা ধরতে পারেন নি। এই নতুন আইনজীবীর উদ্দেশ্য একেবারেই অসৎ। উনি খুব ভাল করেই জানেন এই কেস উনি হারবেনই। তাই উনি এই কেস যতদুর সম্ভব দীর্ঘায়িত করবেন। যত ভাবে পারবেন, যত অবস্টাকলস দেয়া যায়। এটাই হবে উনার একমাত্র লক্ষ্য! এই জন্যই তো রিভার্স দুইটা কেস দিচ্ছেন। রিভার্স কেস দুইটার জন্য আমার মক্কেলরা হাজিরা দিতে দিতে আর দৌড়াদৌড়ি করতে করতে একসময় ক্লান্ত, হতাশ আর বিরক্ত হয়ে.....
উনি চুপ হয়ে গেলেও আমি ঘটনা বুঝে ফেললাম। কিন্তু এই মুহুর্তে শবনমদের কিছুই করার নেই!
-আমি সত্যই স্যরি শুভ সাহেব। আপনাকে কথা দিয়েছিলাম ১৮০ দিনের মধ্যেই রায় এনে দিব। এটা না হলে নিশ্চিত দিতাম। আপনার সাথে একটা শোধবোধ করার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল আমার। কতদিনে এই কেসের রায় বের করতে পারব আমি নিজেও এখন জানি না!

আইনজীবী সাহেবের সাথে অনেকক্ষন শলা পরামর্শ করে শবনমদের এখনই কেসের গতি পরিবর্তনটা না জানানোরই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা। প্র্যাক্টিক্যালি কি কি এ্যাকশন নেয় আসামীপক্ষ সেটা দেখার পরে, সিচুয়েশন বুঝেই আপডেট করা হবে। এতগুলি মানুষকে এত আগে থেকেই টেনশনে রাখার কোন মানে হয় না....

সাত
চ্যানেলের ডিরেক্টর সাহেব যেদিন উচ্চ আদালতে জামিন পেলেন, সাথে সাথেই খবর পেলাম আমি। তীব্র অস্বস্তি:তে মনটা একদমই অন্যরকম হয়ে গেল! একেই সম্ভবত বলে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। শবনম এটা শোনার পর কি প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটা আসলেও গভির চিন্তার বিষয়! কি করা যায় আর কি করা উচিৎ ভাবতে ভাবতেই আমার অফিস রুমের দরজা যেভাবে খোলা হলো, তখনই প্রমাদ গুনা শুরু করলাম আমি। আমার কপালে আজকে বড় ধরনের খারাপি আছে! কে এখন বাঁচাবে আমাকে....
-এই হারামজাদা লম্পটটা জামিন পায় কিভাবে? কি কেস দিয়েছেন? কি ঘোড়ার ডিম কাজ করেন থানায় বসে আপনারা?

চরম উদ্ধত শবনমকে দেখে আমি রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। মাই গড! কি যে কান্ড ঘটাবে আজকে আমার এই থানায়!
-শবনম, প্লীজ শান্ত হন! জামিন কিভাবে পেল এটাতো আমি বলতে পারব না। আপনার আইনজীবীই বলতে পারবেন!
-উনি তো ফোনই ধরছেন না! চেম্বারে গেলাম, নেই। চেম্বার সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম। কেউ কিছু জানে না কোথায় উনি?

আইনজীবীরা সদাই বুদ্ধিমান হন, সেটার থিওরিটিক্যাল ডায়ালগ শুনেছিলাম এতদিন, আজকে এটার প্রাক্টিক্যাল প্রমাণ পেলাম। কিন্তু শবনমের কাছ থেকে পালিয়ে কোথায় যাব আমি? আমার তো কোন নিস্তার নেই! পরবর্তী দশ মিনিট যেন সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে দিল আমাকে শবনম। একে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েও মনে হয় এত বড় বড় ঝাড়ি খাইনি আমি! বোবার কোন শত্রু নেই, তাই নিশ্চুপ হয়ে শুধুই শুনে গেলাম। দরজা খোলাই ছিল, চোখের সামনে বসকে এভাবে এত এত ঝাড়ি খেতে দেখে সাজিদও এসে ঠান্ডা করার চেস্টা করল। ওর কথা শুনে যেই দৃষ্টিতে শবনম সাজিদের ফিরে দিকে তাকাল, আমি তৎক্ষনাৎ সাজিদকে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলাম। বাইচান্সের কোনই চান্সই রাখা যাবে না! ঝড় ঝাপ্টা যাই যাক, এটা আমার উপর দিয়েই যাক, বেচারা সাজিদ কি দোষ করেছে! আসলেই কতটুকু ঠান্ডা করতে পারলাম জানি না, তবে প্রায় পনের মিনিট পরে কথা থামিয়ে দিয়ে একটা চেয়ারে চুপ করে বসে, একটু পর পর চোখের পানি মুছতে লাগলো শবনম। শবনমের আর দোষ দিয়ে লাভ কি? সব কিছুরই একটা সহ্য করার সীমা থাকে, ট্রীপিং পয়েন্ট থাকে.....

আট
জামিনের পর কারাগার থেকে ডিরেক্টর সাহেব মুক্তি পাবার প্রায় বারদিন পরে, থানায় সকালবেলা আয়েশ করে গরম গরম ক্যাপুচিনো কফি খাচ্ছি। রুমে সাজিদ এসে হাজির।
-স্যার, রিকমেন্ডেশনটা কি সাইন করে দিয়েছেন?
-হ্যাঁ, আমি জায়গা মতো এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোমাকে এই নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না। যাও, লাগেজ গুছানো শুরু করো। পারলে ছুটি নিয়ে বৌ বাচ্চা সহ গ্রামের বাড়ি ঘুরে আস।
-থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। ছুটি স্যার সামনের সপ্তাহে নিব।
-ঠিক আছে। আর শোন, তোমার খালুশ্বশুরকে আমার সালাম পৌছে দিয়ে বলবে, যখন তুমি থাকবে না, উনি যেকোন প্রয়োজনে আমার সাথেই যেন সরাসরি যোগাযোগ করেন।
-জী স্যার। অবশ্যই বলব স্যার, এখনই যেয়ে ফোন করে বলে দিচ্ছি উনাকে!

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় দুইবছরের জন্য একজন এসআই র‌্যাংকের রিকমেন্ডেশন চেয়েছিল। কোটায় এবার আমার থানা থেকে একজন চান্স অবশ্যই পাবে। সাজিদের সাইনড রিকমেন্ডেশন লেটার অফিশিয়াল খামে ভরে সীল গালা করে পাঠিয়ে দিলাম। ওর খালুশ্বশুর লোকটা একেবারে মন্দ নয়! উনি সারা বাংলাদেশের ট্রাক মালিক এসোশিয়েশনের ঢাকা বিভাগের সাংঘঠনিক সম্পাদক। সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিতেই আজকের মানবজমিন পত্রিকার প্রথম পাতায় দাগ দেয়া একটা নিউজে আবার দৃষ্টি পড়ে গেল-
সান-সাইন টিভি চ্যানেলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর রওনক হাসান সাহেব গতকালকে ঢাকা মাওয়া সড়কে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংর্ঘশে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। উনি মাওয়া থেকে নিজেই ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন। উলটো দিক থেকে আসা একটা ট্রাকের সাথে উনার গাড়ির মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়। দুর্ঘটনা ঘটার কিছুক্ষন পর পুলিশ যেয়ে ট্রাককে আটক করলেও ট্রাকের ড্রাইভার কিংবা হেল্পার কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংর্ঘষে ক্ষতিগ্রস্থ ট্রাক এবং প্রাইভেট গাড়িকে থানায় নিয়ে এসে রাস্তা সাথে সাথেই পরিষ্কার করে চলাচলের উপযুক্ত করে দেয়া হয়। পুলিশের তদন্তে রির্পোট করা হয়, দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন ও বেশ কিছু আশেপাশের দোকানদারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় যে রওনক সাহেব রং রুট দিয়ে ওভারস্পীডে সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে যেয়ে উলটো দিক থেকে আসা ট্রাকের সাথে লাগিয়ে দেন, এতে ট্রাকের ড্রাইভারের কোন দোষ খুঁজে পাওয়া যায় নি...

নয়
বাংলামোটরের ঠিক মাথায় রূপায়ন টাওয়ারের ১৭ তলায় একটা রুফটপ ভাল রেস্টুরেন্ট আছে। আজকে এখানেই আমার ডিনারের দাওয়াত। ঠিক রাত আটটার সময় জায়গা মতো এসে, রিসিপ্শনে জিজ্ঞেস করে দেখি, একদম শেষ মাথায় একটা টেবিল বুক করা আছে আমার জন্য। যেয়ে দেখি উনি আগেই এসে বসে আছেন। যাক বাবা বাঁচলাম, গতবার পাক্কা একঘন্টা বসিয়ে রেখেছিল, তাও আবার রাস্তার ফুটপাথের উপর! উল্টো দিকের চেয়ারে বসে হাতের গোলাপ ফুলের তোড়াটা এগিয়ে দিলাম। একটু অবাক হলেন উনি!
-এতগুলি ফুল কেন? তাও আবার গুনেগুনে পাঁচটা!
মিষ্টি মধুর একটা হাসি উপহার দিলাম আমি। সবসময়, সবজায়গায়, সবকিছু খুলে বলতে হয় না! সংখ্যার মধ্যে বিরাট কিন্তু আছে!
-এটা আগের বারের শাস্তিস্বরূপ। আগেরবার একটাই নেন নি। এবার পাঁচটাই নিতে হবে।
শবনম রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলল-
-তাই! চোর পালালেই নাকি বুদ্ধি বাড়ে! আপনারও কি একই অবস্থা নাকি?
নাহ, এই মেয়ের সাথে আমি কোনদিনও পারবো না। হাল ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে একটা ছোট চারকোনা বাক্স বের করে শবনমের সামনে ঢাকনা খুলে রাখলাম।
-সাহস তো দেখি দিন দিন ভালোই বেড়ে যাচ্ছে আপনার!
-সাহসের আমার কোনদিনও কমতি ছিল না। সেই পয়লা বৈশাখের দিন ঐ চীজটাকে না আনলে দেখতেন!
শবনম ঐদিনের কথা মনে পড়ে গেলে, কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল-
-Do you really forgive me, Shuvo?
-Yes! I do! The horrible wrong time in our life have already passed away!

শবনম এবার এক রাশ দুষ্টামি চোখে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
-আপনার পারফোরমেন্স এবার যথেস্টই ভালো! আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছি!
-জী, এবার সময় হয়েছে আপনারটার দেখার! খুব কাছ থেকে আপনার পারফোরমেন্স দেখে সারাজীবন ধরেই মুগ্ধ চাই আমি!

আমার কথা শুনার সাথে সাথেই শবনমের ফর্সা দুই গালে রক্তিম আভা এসে ভিড় জমাল। লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেলল! আমার এখন আর এত ধৈর্য্য নেই। এতটা বছর ধরে কতটা কষ্ট, কতটা বিরহ, কতটা নাপাওয়ার বেদনা বুকে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলাম, এটা শুধুই আমি আর আমার উপর সৃষ্টিকর্তাই জানেন! বাক্স থেকে আসল জিনিসটা বের করে আনলাম। আংগুলে পড়িয়ে দেবার জন্য টেবিলের উপর দিয়ে শবনমের দিকে কিছুটা এগিয়ে আসতেই-
-Shuvo, wait, we have one unfinished business to settle. Why not we finish that first!

হুম! বুদ্ধিটা একেবারে মন্দ নয়! ছ্যাকা খাবার লিস্টটা থেকে তো অন্ততঃ আমার নামটা কেটে ফেলা যাবে! নশ্বর এই দুনিয়ায় সেটাই বা কম কিসের!
বেশ আগ্রহ নিয়ে শবনমের দিকে তাকিয়ে বললাম-
-Then you have to accept my first proposal! Do you?

রাপা প্লাজার সামনে ওকে প্রস্তাব দেয়ার ঠিক ছয়বছর সাতমাস বাইশদিন পরে, আজও কি অধীর আগ্রহ নিয়ে আমি অপেক্ষা করে আছি ওর জন্য! এটা যদি Love at first sight না হয় তবে ভালবাসা কি আমি জানতে চাই! সত্যই জানতে চাই!
সবই মিছে এই কুহেলিকাময় নশ্বর পৃথিবীতে,
তবুও মন চায় কাউকে খুব করে কাছে পেতে,
ভালোবাসতে কিংবা ভালোবাসা পেতে........

লজ্জারাঙ্গা মুখে আমার দিকে তাকিয়ে শবনম সাথে সাথেই বলল-
-Yes! I Do! You win!
-No, we both win!
নিজের সাথে কসম কেটেছিলাম! শবনম আমার, শুধুই আমার। ঠিকই এতটা দীর্ঘসময় পর ভালোবাসার প্রস্তাবে ওকে রাজী করিয়ে সম্ভবত বিশ্বরেকর্ড করলাম আমি! গ্রিনিজ বুকে এবার নাম উঠবে না এএসপি শুভ’র? না উঠলে, নেই! Who cares! আমার ‘নুর জেহান’ কেই তো পেয়ে গেছি আর কিছু লাগে নাকি এই জীবনে.......


এই সিরিজের আগের পর্বগুলি যারা পড়তে চান, তাদের জন্য-
১। গল্পঃ শবনম কাহিনী ১ - কুসুম কুসুম প্রেম (প্রথম পর্ব)
২। গল্পঃ শবনম কাহিনী ১ - কুসুম কুসুম প্রেম (শেষ পর্ব)
৩। গল্পঃ শবনম কাহিনী ২ - প্রায়শ্চিত্ত!

উৎর্সগঃ শবনম সিরিজের একদম প্রথম পর্ব থেকে যিনি এর সাথে মিলেমিশে আছেন, যার বারবার শবনমকে নিয়ে উৎসাহ আর অনুরোধের প্রেক্ষিতেই শবনমের তৃতীয় পর্ব লেখা হলো, ব্লগের কবিতা সম্রাজ্ঞী আর আমার প্রিয় কবি মনিরা সুলতানা আপুকে। এতটা দিন পরে হুট করে শবনম নিয়ে লিখতে বসে বড় ভয় ভয় লাগছিল, পুরানো সেই চরিত্রগুলিকে কি ঠিক আগের মতো করেই ফুটিয়ে তুলতে পারবো! মূল্যায়নের দায়ভার যথারীতি আমার সম্মানিত পাঠকদের কাছেই রেখে গেলাম................


সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীলআকাশ, মার্চ, ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৮
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×