somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতকালীন ঘটনাসমূহ (পর্ব তিন)

১৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম দীনের অনুসারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মত হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ ইব‌ন আব্দুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর, যিনি আমাদেরকে কল্যাণকর সকল পথ বাতলে দিয়েছেন ও সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সতর্ক করেছেন। আরও সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পরিবারবর্গ (আহলুল বাইয়াত) এবং উনার সাথীদের উপর, যারা তার আনীত দ্বীন ও আদর্শকে পরবর্তী উম্মতের নিকট যথাযথ ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার উপর।

ওফাতকালীন ঘটনার ধারাবাহিকতা বুঝার জন্য পড়ে আসুনঃ
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতকালীন ঘটনাসমূহ (প্রথম পর্ব)
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতকালীন ঘটনাসমূহ (পর্ব দুই)


উম্মুল মূমীনিনা হযরত উম্মু সালামাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, الصَّلاَةُ الصَّلاَةُ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘সালাত সালাত এবং তোমাদের দাস-দাসী’ অর্থাৎ সালাত ও স্ত্রীজাতির বিষয়ে তোমরা সর্বাধিক খেয়াল রেখো’। হযরত আইশাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, একথাটি তিনি বারবার পুনরাবৃত্তি করেন’। হযরত আনাস (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, এটিই ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সর্বশেষ উপদেশ’। [সূত্র ৬৫]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরপর বলছিলেন, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যুর রয়েছে কঠিন যন্ত্রণা সমূহ’। [সূত্র ৬৬]

তিনি ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি উঠিয়ে এবং হাত উঁচু করে বলতে থাকলেন,
مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيْقًا، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَأَلْحِقْنِىْ بِالرَّفِيْقِ الأَعْلَى-
‘হে আল্লাহ! নবীগণ, ছিদ্দীকগণ, শহীদগণ এবং নেককার ব্যক্তিগণ যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ, আমাকে তাদের সাথী করে নাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর এবং আমাকে আমার সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে মিলিত কর। হে আল্লাহ! আমার সর্বোচ্চ বন্ধু!’ আইশাহ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, শেষের কথাটি তিনি তিনবার বলেন। অতঃপর তাঁর হাত এলিয়ে পড়ল, দৃষ্টি নিথর হয়ে গেল। তিনি সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে মিলিত হ’লেন। [সূত্র ৬৭]

ইন্তিকালঃ
দিনটি ছিল ১১ হিজরী ১২ রবীউল আউয়াল সোমবার [সূত্র ৭০] মোতাবেক ৬৩২ খৃষ্টাব্দের ৬ জুন। সূর্য অধিক গরম হওয়ার সময় (حين اشتدت الضحي) অর্থাৎ ১০/১১ টার সময়। এ দিন তাঁর বয়স হয়েছিল চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৬৩ বছর [সূত্র ৭১] ৪ দিন [সূত্র ৭২]।

মৃত্যুতে শোকাবহ প্রতিক্রিয়া :
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মৃত্যুতে শোকাতুর কন্যা ফাতেমা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলে ওঠেন, يَا أَبَتَاهْ، أَجَابَ رَبًّا دَعَاهُ، يَا أَبَتَاهْ مَنْ جَنَّةُ الْفِرْدَوْسِ مَأْوَاهُ، يَا أَبَتَاهْ إِلَى جِبْرِيْلَ نَنْعَاهْ-
হায় আব্বা! যিনি প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। হায় আব্বা! জান্নাতুল ফেরদৌসে যার ঠিকানা। হায় আব্বা! জিবরাইলকে আমরা তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানাচ্ছি’। [সূত্র ৭৩]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিয়ে ভাগ বাটোয়ারাঃ
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মৃত্যুর আগে কোন অসিয়ত করে যাননি তার রেখে যাওয়া সম্পদের উপর। বেশি কিছু জায়গায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র রেখে যাওয়া সম্পদের বন্টন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই বন্টন নিয়ে খোলাফায়ে রাশেদিন দ্বারা অন্যায়পূর্বক আহলুল বায়াতের সম্পদ লুন্ঠন করেছে বলেও মিথ্যে অভিযোগও তোলা হয়েছে।

বিশেষ ব্যাখ্যাঃ
সিহা সিত্তা সহ একাধিক হাদিস গ্রন্থে এইব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও এই মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে না বলে থাকলেও এই বিষয়ে আগে থেকেই সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেয়া ছিল-

১। আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, (আমার মৃত্যুর পর) আমার ওয়ারিছগণ কোন দীনার ভাগ বণ্টন করবে না। আমি যা রেখে যাবো (অর্থাৎ বনু নাযীরের ফাই এবং খায়বরের ফিদক খেজুর বাগান) বিবিদের খোরপোষ এবং আমার আমেল (অর্থাৎ সরকারী দায়িত্বশীল) এর ব্যায় নির্বাহের পর তা সবই সাদাকা হবে। (বুখারী আধুনিক প্রকাশনী-৬২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬২৭৩, মুত্তাফাক্ব আলাইহি, মিশকাত হাদিস ৫৯৬৬, ৫৭২৩)।

২। আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন আমরা যা কিছু (সম্পদ) ছেড়ে যাই কেউ তার ওয়ারিশ হবে না, সবই সদাকাহ্। এ মাল থেকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র পরিবার ভোগ করবেন। আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’কে আমি এতে যেভাবে করতে দেখেছি, তা সেভাবেই করবো, কোন ব্যতিক্রম করবো না। (সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭০)

সা’দ (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ রাবী বলেন, আমি এ কথাটি আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র নিকটে উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন, আমার দু'টো কান তা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করে রেখেছে। (মুসলিম ১/২৭, হাদিস ৬৩, আহমাদ ১৫৫৩, বুখারী আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১০)

৩। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র সহধর্মিণী আইশাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীগণ আবূ বকর সিদ্দীক (রাদিআল্লাহু আনহু)’র কাছে নিজেদের প্রাপ্য উত্তরাধিকার চাওয়ার জন্য উসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে পাঠানোর ইচ্ছা করলেন। তখন আইশাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেননি যে, আমরা কাউকে ওয়ারিশ বানাই না, আমরা যা রেখে যাই সবই সাদাকাহ্। (মুসলিম ৩২/১৬, হাঃ ১৭৫৮, আহমাদ ২৫১৭৯, বুখারী আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬২৭৪)

হযরত আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র পর মুসলিম উম্মাহর খোলাফায়ে রাশেদিন পদে আসেন হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু)। উনার সময়ে কী হয়েছিল সেটাও দেখা যাক-

ইবন শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাহি) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মালিক ইব্নু আওস নাযরী (রহমাতুল্লাহি আলাহি) আমাকে এ হাদীসটি বর্ননা করেছেন। অবশ্য মুহাম্মাদ ইব্নু যুবায়র ইব্নু মুতঈম এ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন। পরে আমি মালিকের নিকট যাই এবং তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি বলেন, উমর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হয়ে তার কাছে হাজির হলাম। এমন সময় তার দ্বাররক্ষক ইয়ারফা এসে বলল, উসমান, আবদুর রহমান, যুবায়র এবং সা’দ (রাদিআল্লাহু আনহু) আসতে চাচ্ছেন। আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর তাঁরা প্রবেশ করলেন এবং সালাম দিয়ে আসনে বসলেন। দ্বাররক্ষক (আবার) বলল, আলী এবং আব্বাসের ব্যাপারে আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি তাদের দু’জনকে অনুমতি দিলেন। আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) এসে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আমার ও সীমাংঘনকারীর মাঝে ফায়সালা করে দিন। এবং তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। তখন দলটি বললেন, উসমান ও তাঁর সঙ্গীরা, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ দু’জনের মাঝে ফায়সালা করে দিয়ে একজনকে অন্যজন হতে শাস্তি দিন। উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধারন করুন। আমি আপনাদেরকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি যার হুকুমে আসমান ও যমীন নিজ স্থানে বিদ্যমান, আপনারা কি এ কথা জানেন যে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেনঃ আমাদের সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে বন্টিত হয় না, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবে গণ্য হয়? এই কথা দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেকেই বুঝিয়েছিলেন। দলের সবাই বললেন, হ্যাঁ, তিনি এ কথা বলেছিলেন। তারপর উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ও আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)’র দিকে ফিরে বললেন, আপনাদের দু’জনকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনারা কি জানেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথা বলেছিলেন? তাঁরা দু’জনেই আল্লাহর কসম দিয়ে বললেন, হ্যাঁ। উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা এ সম্পদের একাংশ তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, অপর কারো জন্য দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের নিকট হতে তার রসূলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি.....(সূরা ৫৯: ৬)। কাজেই এ সম্পদ একমাত্র রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তারপর আল্লাহর কসম! তিনি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে এককভাবে নিজের জন্য তা সঞ্চিত করে রাখেননি, কিংবা এককভাবে আপনাদেরকেও দিয়ে দেননি। বরং তিনি আপনাদের সকলকেই তা থেকে দিয়েছেন এবং সকলের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে তা থেকে এ পরিমান সস্পদ অবশিষ্ট রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই সম্পদ থেকে তার পরিবারের জন্য তাদের বছরের খরচ দিতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত তা আল্লাহর মাল যে পথে ব্যয় হয় সেই পথে খরচের জন্য রেখে দিতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জীবিত অবস্থায় এমন করতেন। আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি! আপনারা কি এ ব্যাপারে জ্ঞাত আছেন? সকলেই বললেন, হ্যাঁ। তারপর আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ও আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দু’জনকে জিজ্ঞেস করছি! আপনারা কি এ সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন? তারা দু’জনেই বললেন, হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’কে মৃত্যু দিলেন। তখন আবূ বাকর (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্থলাভিষিক্ত। কাজেই তিনি সে সম্পদ অধিগ্রহণ করলেন এবং রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে খাতে এ সম্পদ খরচ করতেন তিনিও ঠিক সেভাবেই ব্যয় করতেন। আপনারা তখন ছিলেন। তারপর আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ও আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)’র দিকে ফিরে বললেন, আপনারা দু’জন তখনও মনে করতেন যে আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) এ ব্যাপারে এইরূপ ছিলেন। আল্লাহ জানেন তিনি এই ব্যাপারে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ ও হক্কের অনুসারী ছিলেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’কেও মৃত্যু দিলেন। তখন আমি বললাম, এখন আমি আবূ বকর ও রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং দু’বছর আমি তা আমার তত্ত্বাবধানে রাখলাম এবং আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) ও রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা যে খাতে খরচ করতেন, আমিও তেমন করতে লাগলাম। তারপর আপনারা দু’জন আমার কাছে এলেন। আপনাদের দু’জনের একই কথা ছিল, দাবিও ছিল একই। আপনি এসেছিলেন নিজের ভাতিজার থেকে নিজের অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে, আর ইনি (‘আলী) এসেছিলেন তাঁর স্ত্রীর পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে। আমি বললাম যদি আপনারা চান তাহলে আমি আপনাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি, তবে এ শর্তে যে, আপনারা আল্লাহর নামে এই ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হবেন যে, এ সম্পদ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) যে ভাবে খরচ করতেন এবং আমি এর দায়িত্ব নেয়ার পর যেভাবে তা খরচ করেছি, আপনারাও তেমনিভাবে ব্যায় করবেন। তখন আপনারা দু’জনে বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের হাতে দিয়ে দিন। ফলে আমি তা আপনাদের কাছে দিয়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করছি! আমি কি সেই শর্তাধীনে এদের কাছে সে সম্পদ দিয়ে দেইনি? সকলেই বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) ও আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু)’র দিকে তাকিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দু’জনকে জিজ্ঞেস করছি! আমি কি ঐ শর্তাধীনে আপনাদেরকে সে সম্পদ দিয়ে দেইনি? তারা দু’জনে বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আপনারা কী আমার নিকট হতে এর ভিন্ন কোন ফয়সালা পেতে চান? সে সত্ত্বার কসম করে বলছি, যার হুকুমে আকাশ ও যমীন নিজস্থানে বিরাজমান, ক্বিয়ামতের পূর্বে আমি এই বিষয়ে নতুন কোন ফয়সালা করবো না। যদি আপনারা এর তত্ত্বাবধানে অক্ষম হন, তাহলে তা আমার নিকট সোর্পদ করুন। আপনাদের দু’জনের বদলে আমি একাই এর তত্ত্বাবধানের জন্য যথেষ্ট। (সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনী-৬৭৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০৭)

নিজের কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে আমি সরাসরি সহী হাদিস থেকেই এই মিথ্যাচারের ভুলগুলি বের করে দিলাম। না জেনে কিংবা অযথা মিথ্যা অপবাদ দেয়া গীবতের পর্যায়ে পরে যায়। সম্মানিত পাঠকদের এই বিষয়ে না জেনে কোন কিছু বলা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।

ইন্তিকালের পর সাহাবীদের অবস্থাঃ
সাধারণভাবে সাহাবীগণের অবস্থা ছিল এই যে, তাঁরা তাঁদের প্রাণপ্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হঠাৎ বিয়োগব্যথা সহ্য করতে পারছিলেন না। অনেকে দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। অনেকে বিভিন্নদিকে চলে যান। হযরত উমর ফারূক (রাদিআল্লাহু আনহু) হতবুদ্ধি হয়ে বলতে থাকেনঃ কিছু মুনাফিক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র মৃত্যুর কথা রটনা করছে। আল্লাহ’র কসম! তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। বরং স্বীয় প্রতিপালকের নিকটে গমন করেছেন। যেমন মূসা (আলাইহিস সালাম) নিজ সম্প্রদায় থেকে ৪০ দিন অনুপস্থিত থাকার পর পুনরায় ফিরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, وَاللهِ لَيَرْجِعَنّ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَمَا رَجَعَ مُوسَى، فَلَيَقْطَعَنّ أَيْدِي رِجَالٍ وَأَرْجُلَهُمْ زَعَمُوا أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ
‘আল্লাহ’র কসম! আল্লাহ’র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই ফিরে আসবেন এবং ঐসব লোকের হাত-পা কেটে দেবেন, যারা ধারণা করছে যে, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন’। [সূত্র ৭৪]

আবু বকর সিদ্দীক (রাদিআল্লাহু আনহু)’র ধৈর্যশীল ভূমিকাঃ
শোকাহত সাহাবায়ে কীরামের দিশাহারা এই অবস্থার মধ্যে ধৈর্য ও স্থৈর্যের মূর্তপ্রতীক হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রাদিআল্লাহু আনহু) শহরের ‘সালা‘ (السلع) পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত স্বীয় গৃহ থেকে বের হয়ে ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত আগমন করেন। ঘোড়া হ’তে অবতরণ করে তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেন। অতঃপর কাউকে কিছু না বলে সোজা কন্যা আইশাহ (রাদিআল্লাহু আনহা)’র গৃহে গমন করেন। এ সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মৃতদেহ একটি জরিদার ইয়ামনী চাদর (ثوب حبرة) দ্বারা আবৃত ছিল। তিনি গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুখের কাপড় সরিয়ে চুম্বন করলেন ও কেঁদে ফেললেন। অতঃপর বললেন, بِأَبِى أَنْتَ وَأُمِّىْ، وَاللهِ لاَ يَجْمَعُ اللهُ عَلَيْكَ مَوْتَتَيْنِ، أَمَّا الْمَوْتَةُ الَّتِىْ كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا ‘আপনার উপরে আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত হৌন! আল্লাহ আপনার উপরে দু’টি মৃত্যুকে একত্রিত করবেন না। অতঃপর যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল, তা সম্পন্ন হয়ে গেছে’। অতঃপর তিনি ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। এমন সময় উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) সম্ভবতঃ স্বীয় বক্তব্যের পক্ষে লোকদের কিছু বলছিলেন। আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘উমর বসো’। কিন্তু তিনি বসলেন না। অতঃপর তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। উপস্থিত লোকেরা উমর (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে ছেড়ে তাঁর সাথে সাথে মসজিদে এলো। তখন আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) লোকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণের শুরুতে হামদ ও সা’নার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করলেন। অতঃপর গুরুগম্ভীর স্বরে বললেনঃ
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَإِنَّ اللهَ حَىٌّ لاَ يَمُوْتُ، قَالَ اللهُ وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُوْلٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلَىَ عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئاً وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِيْنَ-
‘অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের পূজা করে, সে জেনে রাখুক যে, মুহাম্মাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে আল্লাহ’র পূজা করে, সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ চিরঞ্জীব ও অমর। আল্লাহ বলেছেন, ‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছু নন। তাঁর পূর্বে অনেক রাসূল গত হয়ে গেছেন। এক্ষণে যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তাহ’লে তোমরা কি পিছন পানে ফিরে যাবে? যে ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে ফিরে যাবে, সে ব্যক্তি আল্লাহ’র কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। সত্বর আল্লাহ তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন’ (সূরা আলে ইমরান ৩/১৪৪)। [সুত্র ৭৫]

হযরত আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র উক্ত ভাষণ শোনার পর সকলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলেন এবং ধৈর্য ধারণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ব্যাপৃত হ’লেন। হযরত উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র ভাষণ শুনে বসে পড়েন এবং বলেনঃ আমার মনে হচ্ছিল এই আয়াতগুলি এইমাত্র নাযিল হ’ল এবং আমি নিশ্চিত হ’লাম যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন’। [সূত্র ৭৬]

হযরত আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, مَا رَأَيْتُ يَوْماً قَطُّ كَانَ أَحْسَنَ وَلاَ أَضْوَأَ مِنْ يَوْمٍ دَخَلَ عَلَيْنَا فِيهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَمَا رَأَيْتُ يَوْماً كَانَ أَقْبَحَ وَلاَ أَظْلَمَ مِنْ يَوْمٍ مَاتَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم- ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেদিন আমাদের নিকটে আগমন করেছিলেন, সেদিনের চাইতে সুন্দর ও উজ্জ্বলতম দিন আমি দেখিনি। পক্ষান্তরে যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন, সেদিনের চাইতে মন্দ ও অন্ধকারতম দিন আমি আর দেখিনি’। [সূত্র ৭৭]

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আইশাহ (রাদিআল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতঃ আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র এ কথাগুলি শুনে সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রাবী বলেন, আনসারগণ সাকীফা বনূ সায়িদায়ে সা’দ ইবনু ‘উবাইদাহ (রাদিআল্লাহু আনহু)’র নিকট সমবেত হলেন এবং বলতে লাগলেন, আমাদের মধ্য হতে একজন আমীর হবেন এবং তোমাদের মধ্য হতে একজন আমীর হবেন। আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু), উমার ইবনু খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু), আবূ উবাইদাহ ইবনু জাররাহ (রাদিআল্লাহু আনহু) এই তিনজন আনসারদের নিকট গমন করলেন। উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) কথা বলতে চাইলে আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) তাকে থামিয়ে দিলেন। উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর কসম আমি বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলাম এই জন্য যে, আমি আনসারদের মাহফিলে বলার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে এমন কিছু যুক্তিযুক্ত কথা প্রস্তুত করেছিলাম যার প্রেক্ষিতে আমার ধারণা ছিল হয়তো আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র চিন্তা চেতনা এতটা গভীরে নাও যেতে পারে। কিন্তু আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) অত্যন্ত জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ ভাষণ রাখলেন। তিনি তার বক্তব্যে বললেন, আমীর আমাদের মধ্য হতে একজন হবেন এবং তোমাদের মধ্য হতে হবেন উযীর। তখন হুবাব ইবনু মুনযির (রাদআল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন করবো না বরং আমাদের মধ্যে একজন ও আপনাদের মধ্যে একজন আমীর হবেন। আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেনঃ না, তা হয় না। আমাদের মধ্য হতে খলীফা এবং তোমাদের মধ্য হতে উযীর হবেন। কেননা কুরাইশ গোত্র অবস্থানের দিক দিয়ে যেমন আরবের মধ্যস্থানে, বংশ ও রক্তের দিকে থেকেও তারা তেমনি শ্রেষ্ঠ। তাঁরা নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতায় সবার শীর্ষে। তোমরা উমার অথবা আবূ ‘উবাইদাহ ইবনু জাররাহ’র হাতে বাই’আত করে নাও। উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আমরা কিন্তু আপনার হাতেই বায়’আত করবো। আপনি আমাদের নেতা। আপনিই আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের মাঝে আপনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র প্রিয়তম ব্যক্তি। এই বলে উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর হাত ধরে বাই’আত করে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলেই বাই’আত করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলেন, আপনারা সা’দ ইব’নু ‘উবাইদাহ (রাদিআল্লাহু আনহু)'কে মেরে ফেললেন? ‘উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেছেন। (সূত্র ৭৮)

যারা বলেন যে, হযরত আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) নিজেই ক্ষমতা দখল করেছেন তাদের জন্য সহী সূত্র সহ পূর্ণাঙ্গ লেখাটাই তুলে দিলাম। উনি কিন্তু কখনই নিজের নাম প্রস্তাব করেন নি। এবং উনার নাম প্রস্তাব করার সাথে সাথেই উপস্থিত কেউ আর কোন দ্বিমত করেনি। উপস্থিত সকল সাহাবী কোনরকম দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই তার কাছে বাই’আত গ্রহণ করেন। এখানে একবারের জন্যও উল্লেখিত নামগুলি ছাড়া আর অন্যকারও নাম প্রস্তাবেও আসে নি।

বিশেষ ব্যাখ্যাঃ
এবার দেখা যাক কেন হযরত আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র নাম প্রস্তাব করা পর আর কেউ এটার বিরুদ্ধে অন্যকোন নাম প্রস্তাব করেন নি-

১। জুবায়র ইব্নু মুত্ঈম (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র নিকট হাযির হল এবং তাঁর সঙ্গে কোন ব্যাপারে কথাবার্তা বলল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলেন। এরপর স্ত্রীলোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল। আপনাকে যদি না পাই? তিনি বললেনঃ যখন আমাকে পাবে না, তখন আসবে আবূ বকর এর কাছে। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহ আলাইহি) বলেন, বর্ণনাকারী হুমায়দী (রাহমাতুল্লাহি আলাহি) ইবরাহীম ইব্নু সা‘দ (রাহমাতুল্লাহি আলাহি) থেকে আরো অতিরিক্ত বলেছেন, স্ত্রীলোকটি সম্ভবত তার কথা দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।] (সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫৮)

২। আমর ইব্নু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, আইশাহ্! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বকর)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, উমার ইব্ন খাত্তাব, অতঃপর আরও কয়েকজনের নাম করলেন। (সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৭)

ইচ্ছে করলে এর স্বপক্ষে পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা সহী হাদিস বর্ণনা করতে পারবো। যেটা সচারোচর করা হয় কিন্তু এক্ষেত্রে আমি একটা সর্ম্পূণ ভিন্ন বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করবোঃ

ইসলামের খিলাফত বলতে আসলে কী বুঝায়?
শিয়া আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গিতে খিলাফত একটি ইলাহী পদ যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে যোগ্য ও সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়। ‘ইমাম’ ও ‘নবী’র মধ্যকার স্পষ্ট পার্থক্যকারী সীমা-পরিসীমা হচ্ছে ‘নবী’ যিনি শরীয়তের প্রতিষ্ঠাতা, ওহীর অবতরণস্থল এবং ইলাহী গ্রন্থের ধারক বা আনয়নকারী। ‘ইমাম’ যদিও এ পদ মর্যাদাসমূহের একটিরও অধিকারী নন, তবে হুকুমত (প্রশাসন), তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করার পদাধিকারী হওয়া ছাড়াও তিনি (ইমাম) ধর্মের ঐ অংশের ব্যাখ্যাকারী, যা সুযোগ-সুবিধার অভাবে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ার কারণে ‘নবী’ ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করতে সক্ষম হননি এবং তা বর্ণনা করার দায়িত্ব তাঁর উত্তরাধিকারীদের (ওয়াসী) বা ইমামদের ওপর অর্পণ করেছেন।

অতএব, শিয়া মাযহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে খলীফা কেবল যুগের শাসনকর্তা এবং ইসলাম ধর্মের সার্বিক বিষয়ের কর্তৃত্বশীল, (শরীয়তের) বিধি-বিধান বাস্তবায়নকারী, অধিকারসমূহ সংরক্ষণকারী এবং ইসলামী রাষ্ট্রের অখণ্ডত্ব, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার রক্ষকই নন; বরং তিনি ধর্ম ও শরীয়তের জটিল ও দুরূহ বিষয়াদির স্পষ্ট ব্যাখ্যাকারী এবং বিধি-বিধানসমূহের ঐ অংশের পূর্ণতাদানকারী, যা বিভিন্ন কারণে ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করে যে পারেন নি।

কিন্তু আহলে আল সুন্নাতের দৃষ্টিতে ‘খিলাফত’ একটি সাধারণ বা লৌকিক পদ এবং এই পদ সৃষ্টির লক্ষ্য মুসলমানদের বাহ্যিক অস্তিত্ব/অবস্থা এবং তাদের জাগতিক বিষয়াদির সংরক্ষণ ব্যতীত আর কিছুই নয়। যুগের খলীফা সর্বসাধারণের (মুসলিম জনতার) রায় কিংবা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র অভিমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বিচারকাজ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত হন। আর অন্যান্য বিষয় এবং শরীয়তের ঐসব বিধান, যেসব রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র যুগে সংক্ষিপ্তসারে প্রণয়ন করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি তাঁর সময়কালে বিভিন্ন কারণবশত তা ব্যাখ্যা করে যেতে পারেন নি, সেইসব বিধানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংশ্লিষ্ট মুসলিম আলীমদের সাথে (যাঁরা এ ধরনের সমস্যা ও জটিল বিষয় ইজতিহাদ প্রক্রিয়ায় সমাধান করেন) তাদের সাথে প্রয়োজন হলে মিলে সমাধান করেন। তিনি অবশ্যই ইসলাম ধর্মে সর্ম্পূণ নতুন কিছু উদ্ভব করবেন না।

এ ধরনের অভিমত ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যের কারণে খিলাফতের স্বরূপকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মধ্যে দু’টি ধারার উদ্ভব হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ্ এই কারণে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর আজও এই মতের ভিন্নতা বিদ্যমান।

প্রথম দৃষ্টিভঙ্গির (শিয়াদের মতে) ভিত্তিতে ‘ইমাম’ কতিপয় দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে ‘নবী’র সাথে শরীক এবং একই রকম। আর যে সব শর্ত ও অবস্থা নবীর জন্য অপরিহার্য, সেসব ইমামের ক্ষেত্রেও অপরিহার্য। তারা ইমামদের ক্ষেত্রে যেইসব শর্ত মেনে চলে তাহলোঃ
১. নবী অবশ্যই মাসূম (নিষ্পাপ) হবেন অর্থাৎ তিনি তাঁর জীবনে কখনো পাপ করবেন না এবং শরীয়তের বিধি-বিধান এবং ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ ও বাস্তব তাৎপর্য ব্যাখ্যা এবং জনগণের ধর্ম সংক্রান্ত প্রশ্নাবলীর জবাব দানের ক্ষেত্রে ভুল-ভ্রান্তি ও স্খলনের শিকার হবেন না। আর ইমামও অবশ্যই এমনই হবেন এবং উভয় পক্ষের (অর্থাৎ নবী ও ইমামের নিষ্পাপ হবার) দলিল-প্রমাণ এক ও অভিন্ন।
২. নবী অবশ্যই শরীয়ত সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী হবেন এবং ধর্মের কোন বিষয়ই তাঁর কাছে গোপন থাকবে না। আর ইমামও যেহেতু শরীয়তের ঐ অংশের পূর্ণতাদানকারী ও ব্যাখ্যাকারী, যা নবীর ইহজীবনকালে বর্ণনা করা হয়নি, সেহেতু তিনি অবশ্যই ধর্মের যাবতীয় বিধান ও বিষয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী হবেন।

অথচ দ্বিতীয় অভিমতের (আহলে আল সুন্নাতের) ভিত্তিতে নবুওয়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলীর একটিও ইমামের ক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়। তাই না নিষ্পাপত্ব (ইসমাত), না ন্যায়পরায়ণতা (আদালত), আর না জ্ঞানে পরিপূর্ণতা (ইলম) অপরিহার্য, আর না শরীয়তের ওপর পরিপূর্ণ দখল, না খোদায়ী নিয়োগ ও মনোনয়ন (অপরিহার্য) শর্ত বলে বিবেচিত, আর না গায়েবী জগতের সাথে সম্পর্ক এই ক্ষেত্রে বিবেচনাযোগ্য। বরং এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি (ইমাম বা খলীফা) নিজের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার দ্বারা এবং মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করে ইসলাম ধর্মের সম্মান, মর্যাদা এবং বাহ্যিক অস্তিত্ব রক্ষা করবেন, শরীয়তের দণ্ডবিধি প্রয়োগ করে ইসলামী রাষ্ট্র ও দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করবেন এবং মুসলমানদের জিহাদ করার প্রতি আহবান জানানোর মাধ্যমে ইসলামের রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত করার প্রয়াস চালাবেন।

ইসলাম বিশ্বজনীন ও সর্বশেষ দ্বীন, এটা কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত ছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে নেতৃত্বদান ও পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল। আর তাঁর ওফাতের পর নেতৃত্বের পদ অবশ্যই মুসলিম উম্মাহর যোগ্যতম ব্যক্তিদের কাছে অর্পিত হবে। তারপর নেতৃত্বের পদ কি মনোনয়নভিত্তিক, না তা নির্বাচনভিত্তিক পদ এ ব্যাপারে দু’ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমত প্রচলিত আছে। শিয়ারা বিশ্বাস করে, নেতৃত্বের পদ আসলে মনোনয়নভিত্তিক এবং মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র স্থলবর্তীকে অবশ্যই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত হতে হবে।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র ওফাতের সময় তখনকার ইসলামী সমাজ এক ত্রিভুজীয় অক্ষশক্তির (রোম, পারস্য ও মুনাফিক চক্রের সমন্বয়ে গঠিত) পক্ষ থেকে সর্বদা যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, অশান্তি এবং অনৈক্যের মতো হুমকির সম্মুখীন ছিল। ঠিক সেইসময় উপস্থিত মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় একজন খলীফা দ্রুতই নির্বাচন করার, যিনি একাধারে-
১। ইমাম হিসেবে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ সংরক্ষণ করবেন
২। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে’ বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে এক কাতারে দাঁড়া করিয়ে বহিঃশত্রুর আধিপত্য খর্ব করবেন।
৩। মুসলিম উম্মাহর সকল অভ্যন্তরীণ অনৈক্য, মতের ভেদাভেদ দূর করবেন।

উপরে উল্লেখিত এই ত্রিভুজীয় অক্ষশক্তির একটি ছিল বিশাল রোমান সাম্রাজ্য। এ পরাশক্তি তখন আরব উপদ্বীপের উত্তরে অবস্থান করছিল এবং তা সবসময় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র চিন্তা-ভাবনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এমনকি তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত রোমীয়দের চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারছিলেন না। রোমের খ্রিষ্টীয় সেনাবাহিনীর সাথে মুসলমানদের প্রথম সামরিক সংঘাত হিজরতের অষ্টম বর্ষে ফিলিস্তিনে সংঘটিত হয়েছিল। এ সংঘর্ষে জাফর তাইয়্যার (রাদিআল্লাহু আনহু), যাইদ ইবনে হারিসাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা (রাদিআল্লাহু আনহু) নামক তিন সেনাপতি শাহাদাত বরণ করেন এবং মুসলিম সেনাবাহিনী পরাজিত হয়।

কুফরী সেনাশক্তির সামনে মুসলিম বাহিনীর এই পশ্চাদপসরণ কাইজার অর্থাৎ রোমান সম্রাটের সেনাবাহিনীর স্পর্ধার কারণ হয়েছিল এবং যে কোন সময় ইসলামের প্রাণকেন্দ্র (পবিত্র মদীনা নগরী) আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বিরাজ করছিল। আর ঠিক এই কারণেই মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) হিজরতের নবমবর্ষে এক বিশাল ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেনাবাহিনী নিয়ে শামের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দিকে যাত্রা করেন, যাতে তিনি নিজেই সেখানে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে পারেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কষ্টে পরিপূর্ণ এই অভিযানের মাধ্যমে ইসলামী বাহিনী তাদের পুরনো মর্যাদা এবং নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ফিরে পেয়েছিল।

এ আংশিক বিজয় মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)’কে সন্তুষ্ট করতে পারেনি এবং তাঁর অসুস্থ হবার কয়েক দিন আগেও তিনি উসামা ইবন যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু)’র নেতৃত্বে মুসলিম সেনাবাহিনীকে শাম সীমান্তে গমন করে রণাঙ্গনে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ত্রিভুজীয় শত্রুশক্তির দ্বিতীয়টা ছিল পারস্য সাম্রাজ্য (ইরান)। কারণ পারস্য-সম্রাট খসরু প্রচণ্ড আক্রোশ সহকারে মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস সালাম) এর প্রেরিত পত্র ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছিল এবং মহানবীর দূতকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে। সে মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)’কে বন্দী কিংবা প্রতিরোধ করলে হত্যার নির্দেশ দিয়ে ইয়েমেনের গভর্নরের কাছে চিঠি লিখেছিল। খসরু পারভেজ মহানবীর ইহজীবনকালেই মৃত্যুবরণ করে। তবে ইয়েমেন অঞ্চল, যা দীর্ঘকাল পারস্য সাম্রাজ্যের উপনিবেশ ছিল, সেই ইয়েমেনের স্বাধীনতার বিষয়টি পারস্যের সম্রাটদের চিন্তা-ভাবনার বাইরে ছিল না। আর তীব্র অহংকারের কারণে পারস্য সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শাসকশ্রেণী আরব উপদ্বীপে নতুন এই মুসলিম পরাশক্তির আর্বিভাব কোনভাবেই মানতে পারছিলো না।

তৃতীয় বিপদ ছিল মক্কা এবং মদিনাতে উপস্থিত মুনাফিকচক্রের পক্ষ থেকে, যারা সর্বদা ‘পঞ্চম বাহিনী’ হিসেবে মুসলমানদের ভিতরে থেকেও বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম ও অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। এমনকি তারা মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)’র প্রাণনাশেরও চেষ্টা করেছিল অর্থাৎ তারা তাঁকে তাবুক ও মদীনার সড়কে হত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। মুনাফিকদের মধ্যকার একটি দল নিজেদের মধ্যে গোপনে বলাবলি করতো, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)’র মৃত্যুর সাথে সাথে ইসলামী আন্দোলনেরও পরিসমাপ্তি হবে আর তখন এরা প্রশান্তি লাভ করবে।

মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতের পর আবু সুফিয়ান এক অশুভ পাঁয়তারা করেছিল এবং হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)’র হাতে বাই’আত গ্রহণ করার মাধ্যমে মুসলমানদের দু’দলে বিভক্ত করে পরস্পর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত করাতে চেয়েছিল, যেন সে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। কিন্তু হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর বিচক্ষণতার কারণে আবু সুফিয়ানের জঘন্য নোংরা অভিপ্রায়ের কথা জেনে যান, এবং তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন: “মহান আল্লাহর শপথ! ফিতনা ছাড়া তোমার আর কোন উদ্দেশ্য নেই। কেবল আজকেই (প্রথম বারের মতো) তুমি এই ফিতনার অগ্নি প্রজ্বলিত করতে চাচ্ছ না; বরং তুমি (এর আগেও) বারবার অনিষ্ট সাধন করতে চেয়েছ। তুমি জেনে রাখ, তোমার প্রতি আমার কোন প্রয়োজন নেই।” (সূত্রঃ ৭৯)

মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ওৎ পেতে থাকা এতসব ক্ষমতাবান শত্রুর উপস্থিতির বিরুদ্ধে মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী উম্মাহর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে তাঁর কোন স্থলবর্তী নিযুক্ত করবেন না সেটা কী আসলেও সম্ভব? মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই নেতা, প্রধান ও দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তি’কে নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন, যিনি তাঁর (ওফাতের) পর সবধরনের মতবিরোধের পথ রুদ্ধ করে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে ইসলামী ঐক্যের সর্ম্পূণ নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন, যিনি ইসলামের এবং মহানবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)’র প্রতিষ্ঠিত মতামত থেকে বিন্দুমাত্রও কখনও ছাড় দেন নি।

কাকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মনোনয়ন দিয়ে গিয়েছিলেন?
রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় অনুপস্থিতিতে হযরত আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন। (বুখারী হাদিস/৭১৩, মুসলিম হাদিস/৪১৮; মিশকাত হাদিস/১১৪০)।
পরবর্তীতে সাকীফা বনূ সায়িদায়ে মিলিত হয়ে আলোচনার একপর্যায়ে হযরত আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর হাতে উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর বাই‘আত গ্রহণের মাধ্যমে তা কার্যকর হয়। অতঃপর সকলে তাঁকে খলীফা হিসাবে মেনে নেন (বুখারী হাদিস/৬৮৩০; আল-আহকাম, পৃঃ ৭; ইবনু জারীর তাবারী, তারীখুর রুসুল ওয়াল মুলূক ৩/২৪১-২৪৩)।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র ওফাতের পর কতটা সুনিপুনভাবে আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন, তার নমুনা দিলাম একটা নীচেঃ-

আবূ হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তিকাল করলেন আর তাঁর পরে আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে খলীফা করা হলো এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল, তখন উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে বললেন, আপনি কী করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মানুষের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বললো, সে তার জান ও মাল’কে আমার থেকে নিরাপদ করে নিলো। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হবে। আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র নিকট যা আদায় করতো, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো। উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’র সিনা খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্ত সঠিক। (সহী বুখারী ১৩৯৯, ১৪০০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৮৭)

এবার আসা যাক শিয়া মাযহাব/ফিরকাদের ইমাম বা খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ নেয়া নিয়ে। এদের মতে ইমাম হতে হবে তাকেই যিনি ধর্ম ও শরীয়তের জটিল ও দুরূহ বিষয়াদির স্পষ্ট ব্যাখ্যাকারী এবং বিধি-বিধানসমূহের অস্পষ্ট অংশের পূর্ণতাদানকারী, যিনি জ্ঞানের দিক থেকে সবার চেয়ে অনেক অনেক উঁচু মর্যাদার। তিনিই হবেন উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে যোগ্য ও সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। এইদিক থেকে তারা হযরত আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর জায়গায় হযরত আলী ইবন আবূ তালিব (রাদিআল্লাহু আনহু) এর নাম বিশ্বাস করে। অথচ দেখুন-

মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রহমাতুল্লাহি আলাহি) থেকে বর্ণিতঃ আমি আমার পিতা আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)। আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, উমার (রাদিআল্লাহু আনহু)। আমার আশংকা হল যে, অতঃপর তিনি উসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)’র নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, অতঃপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমি তো মুসলিমদের একজন। (সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৩)

মহানবী (সাল্লালাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) উনার জীবনের শেষসময়ে এসে হযরত আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে মসজিদে নববী’তে উনার অনুপস্থিতিতে জামাতে ইমামতী করতে পাঠিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে শায়খ আবুল হাসান আশআরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক তাঁকে [হযরত আবূ বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)] ইমাম নিযুক্ত করা দ্বীন-ইসলামের একটি সর্বজন-স্বীকৃত ব্যাপার। তিনি আরও বলেছেন, তাকে অগ্রবর্তী করে দেয়া এইকথাই প্রমাণ করে যে, তিনি সাহাবায়ে কিরামের মাঝে সর্বাধিক প্রাজ্ঞ ও শ্রেষ্ঠ কুরআনবিদ ছিলেন। কেননা সকল আলিমদের কাছে সর্বসম্মত বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃত হাদীসে বলা আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহিস সালাম) বলেছেনঃ “কওমের ইমামতী করবে আল্লাহর কিতাব সর্ম্পকে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি। কুরআনের ইলমের জ্ঞানে তারা সমপর্যায়ের হলে তাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ, সুন্নাহ ইলমে সমপর্যায়ের হলে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং বয়সে সমান হলে তাদের মাঝে ইসলাম গ্রহনে প্রবীন এবং অগ্রবর্তী ব্যক্তি”। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ৩৯১)

সুতরাং উনার মহানবী (সাল্লালাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতের আগেই ইমামতী এটাই প্রমাণ করে তিনি ছিলেন জীবিত সকল মুসলিম উম্মাহর মাঝে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তি। এই ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশই থাকে না।

ঠিক এই সমসাময়িক পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহ সর্বপ্রথম একজন খলীফা নির্বাচন করলো যিনি খিলাফত রক্ষার পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) এর জানাযার ইমামতীও করবেন। এরপর পরই সাহাবীরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) এর গোসল দেয়ার জন্য কাজে নেমে পরেন।


* এই পর্ব এখানেই শেষ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতের ঘটনাগুলি নিয়ে অনেক অজানা অনেক বিষয় আছে দেখে বেশ বিস্তারিত ভাবেই লিখেছি। যেখানে কিছু ব্যাখ্যা দরকার সহী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেটার ব্যাখ্যা দেবার সর্বোচ্চ চেষ্টাও করেছি। এই লেখার যেখানে যেখানে দরকার সেখানেই সূত্র উল্লেখ করেছি। বাদ বাকি অংশগুলি মূলত নীচের বই থেকেই বঙ্গানুবাদ করে লেখা হয়েছেঃ
১) Sirat Ibn Hisham: Biography of the Prophet (SAW) by
২) The Life of Muhammad (SAW) by Ibn Ishaq (Author), A. Guillaume (Translator)
৩) The Life of The Prophet Muhammad (Al-Sira Al-Nabawiyya) by Ibn Kathir
৪) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – আবুল ফিদা হাফিস ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)

লেখার সূত্র সমূহঃ-

৬৫ - ইবনু মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ১৬২৫; আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৩৩৫৬।
৬৬ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ৪৪৪৯; মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৫৯।
৬৭ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ৪৫৮৬, ৫৬৭৪, মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৫৯-৬০, হাদিস নাম্বারঃ ৫৭০৭-০৮।
৭০ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ১৩৮৭।
৭১ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ৩৫৩৬।
৭২ - সুলায়মান মানছূরপুরীর হিসাব মতে; রহমাতুল্লিল আলামীন ১/২৫১।
৭৩ - বুখারী, মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৬১।
৭৪ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ৩৬৬৭, ইবনে হিশাম, ২/৬৫৫ পৃষ্ঠা, আর-রাহীক্ব ৪৬৮।
৭৫ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ১২৪২
৭৬ - বুখারী হাদিস নাম্বারঃ ৩৬৬৮; ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ১৬২৭।
৭৭ - দারেমী, মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৬২, সনদ ছহীহ।
৭৮ - সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ৩৩৯৫ প্রথমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০২ প্রথমাংশ
৭৯ - Click This Link

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, মার্চ ২০২০

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×