শহর থেকে বেশ দূরের একটা কটেজ। ধরতে গেলে আশেপাশে প্রায় কিছুই নেই। নিরিবিলি এই জায়গাটা সাদেক সাহেবের খুবই পছন্দ। মাসে এক বা দুইবার এখানে আসার সময়ে সাথে করে নতুন কাউকে নিয়ে আসেন। আজকেও ডেকেছেন। গত পরশুদিন একটা পার্টিতে এই মেয়েটাকে দেখার সাথে সাথেই সাদেক সাহেবের বুকের ভিতর এক নিদারূণ শূণ্যতা হাহাকার করে উঠলো। ইচ্ছে থাকলেও সেই শূণ্যতা পূরণের জন্য মেয়েটার সাথে বেশি কথা বলতে পারেননি। পার্টির আলো আঁধারীর মাঝে মেয়েটাকে অসম্ভব কামনা মদির লাগছিল। সাদা শিফনের স্লিভলেস খোলামেলা ব্লাউজ; সামনে বড় গোল গলা, পিছে চারকোণা। সেমি ট্রান্সপারেন্ট শাড়িতে মেয়ের বক্ষ বিভাজিকা দূর থেকেও স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছিল। লোমবিহীন ফর্সা দুইটা হাত দেখে আর সহ্য করতে পারলেন না। যেচে যেয়েই কথা বললেন। এইসব মেয়েরা কখনই কারো একক সম্পত্তি হয় না। আজকে আরেকজন ক্লায়েন্টের সাথে এসেছে। সাদেক সাহেবের চোখে মাদকতার আগুন বহুগূন বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটা হুট করেই চলে গেল। পাক্কা একদিন লেগেছে এই মেয়ে’কে খুঁজে বের করে যোগাযোগ করতে। ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন উনি এই মেয়ের জন্য। একে উনার পেতেই হবে, যে করেই হোক।
.
অল্পবয়সী কিংবা এ্যামেচার মেয়ে না হলে উনি এই কটেজে ডাকেন না সাধারণত। তবে আজকে অবশ্যই এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। সারাবছর পোলাও কোর্মা খাওয়া মানুষও পহেলা বৈশাখে মাটির সানকিতে সাদাভাত আলুভর্তা দিয়ে চটকে খায়। দুইদিন ধরেই উনার পুরনো আলুর ভর্তা ঝাল মরিচ দিয়ে কষে ডলে ডলে খেতে ইচ্ছে করছে!
.
কটেজের ভিতরের এই ঘরটা বেশ বড়, আসবাবপত্র সহ ঘরের প্রায় সবকিছুই বিদেশ থেকে আমদানী করা। বিত্তশালী এবং সৌখিন সাদেক সাহেব এইসব ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। কটেজ উনার এক বন্ধুর হলেও এই ঘরটা উনি নিজের মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছেন উনি। ঘরের প্রতিটা কোণায় রাখা চারটা অদ্ভুত সুন্দর ল্যাম্পপোস্ট, সেখানে থেকে চার-রংয়ের মৃদু আলোর ঝাপটা এসে ঘরে আলো-আঁধারির অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছে। শীতাতপ যন্ত্রের তাপমাত্রা ইচ্ছে করেই বেশ কমিয়ে দিলেন সাদেক সাহেব। মেয়েটা ঘরে ঢুকার সাথে সাথেই উনি বেশ উষ্ণতা বোধ করছেন। হালকা লয়ে ঘরের ভিতরের বিদেশী উত্তেজক সঙ্গীত বেজে চলছে। মাতাল করা একটা বিদেশী সুগন্ধি ছড়িয়ে আছে সবখানেই। চেয়ারে বসে সামনে মৃদু লয়ে নাচতে থাকা মেয়েটার দিকে উনি তাকিয়ে আছেন। মেয়েটার দেহে পোষাক প্রায় নেই বললেই চলে। চাররঙা আলো আঁধারির খেলার মাঝে মেয়েটাকে দেখে উনার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুতই বেড়ে যাচ্ছে।
.
একটু পরেই লাস্যময়ী মেয়েটা হাসিমুখে সাদেক সাহেবের দিকে নৃত্যরত ভঙ্গিতে এগিয়ে এলো। হাতের নাগালে আসতে মুহূর্তেই মেয়েটাকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরতে চাইলেও মেয়েটা হালকা করে বাধা দিলো। এগিয়ে এসে উনার কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু বলতেই উনি নিজের দেহ রিলাক্স মোডে মেয়েটার হাতেই তুলে দিলেন। অবিরত চুমু চুমুতে সারা পুরুষদেহ ভরিয়ে তুলছে মেয়েটা। আবেশের উষ্ণ অনুভূতির আমেজে নিমিষেই চোখ বুঁজে আসলো সাদেক সাহেবের। লাস্যময়ী আলগোছে সাদেক সাহেবের দুইহাত চেয়ারের পিছনে নিয়ে নিজের অন্তর্বাস খুলে সেটা দিয়ে বেঁধে ফেললো। উমম, বন্ডেজ………। খুশিতে মন আন্দোলিত হয়ে উঠলো সাদেক সাহেবের। জৈবিক আনন্দের অনাস্বাদিত স্রোতে দ্বিগবিদিক হারিয়ে ভেসে যাচ্ছেন উনি, খুব দ্রুতই।
.
একটু পরে উনার পা দুইটাও বেঁধে ফেললো। কী আশ্চর্য্য, পা বাঁধার দরকার কী? বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলেন লাস্যময়ী ক্ষিপ্র গতিতে উনার বাম বুকের ঠিক মাঝখানে একটা চকচকে ছুরি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সুতীব্র আতংকে চিৎকার করতে যেয়ে দেখেন উনার মুখ বড় এক কাপড়ের দলা দিয়ে আগেই বেঁধে ফেলা হয়েছে। লাস্যময়ী দুইচোখে এখন যেন নগ্ন আহবানের পরিবর্তে আগুনের হলকা নিয়ে ক্রমাগত সাদেক সাহেবের বুকের দুইপাশে ক্রমাগত ছুরি চালিয়ে যাচ্ছে। নগ্ন বুকের বিভিন্ন জায়গা থেকে গলগলিয়ে লালরক্ত গড়িয়ে পরছে। চেয়ারে বসা সাদেক সাহেব আপ্রাণ চেষ্টা করছেন নিজেকে মুক্ত করার। গোঁ গোঁ করে গোংরানির শব্দ ছাড়া উনি আর কিছুই করতে পারছেন না। দ্রুতই নিস্তেজ হয়ে আসা সাদেক সাহেব বুঝার চেষ্টা করছে কেন এমন হলো?
কে এই মেয়ে?
চোখে চরম বিষ্ময় নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন উনি।
.
কিছুক্ষণ পরে ছুরি ফেলে দিয়ে মেয়েটা হাতের তাজা লালরক্ত সামনে বসা পুরুষের অনাবৃত দেহে মুছে ফেলে শান্ত ভঙ্গীতে একটা সিগারেট ধরালো। দেহে এ্যাড্রোনিল হরমোনের তোড়জোড় কিছুটা কমে এসেছে। সামনে বসা পুরুষদেহটা ক্রমশই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। সাদেক সাহেবের ডানকানে আস্তে করে মেয়েটা বললোঃ
-আমি মিরু, বীরগাঁও থেকে নিয়ে এসেছিলেন। মনে আছে?
সাদেক সাহেব প্রায় শেষ সময় চলে এসেছে। এইসময়ে চোখে পুরাতন স্মৃতিগুলি এক এক করে চোখে সামনে এমনিতেই ভাসতে থাকে। মিরু নামটা শোনার সাথে সাথেই অনেক পুরাতন একটা স্মৃতি ঝট করেই ফিরে এলো...............
.
-প্লীজ আপনার পায়ে পড়ি এইকাজ করবেন না। দোহাই লাগে আপনার।
সত্য সত্যই মিরু উনার পায়ের দিকে এগিয়ে এলে সে সুযোগ না দিয়েই উনি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। পকেট পাঁচশ টাকা একটা বান্ডিল। মীরু’কে দেখা মাত্রই সাদেক সাহেবের বসের মারাত্মক পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। এত দারুন অফার দিয়েছিল যে, মীরুকে ভালোবাসার যে স্বপ্ন দেখিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে নিয়ে এসেছিলেন সেটা নিজেই ভুলে গেলেন। দরজা খুলে বের হবার সময় চোখের কোণে দেখলেন উনার বস জোর করে সেই মেয়েকে বিছানায় নিয়ে শোয়ালো যাকে উনি বিয়ে করবেন বলে নিয়ে পালিয়ে নিয়ে এসেছিলেন গ্রামের বাড়ি থেকে। বস অনেক বড় স্বপ্ন দেখিয়েছেন উনাকে। মিরুর মতো এইসব ছোটখাট স্যাক্রিফাইস করাই যায়। সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলেই আজকে উনি এত বড় বিত্তশালী ব্যবসায়ী হয়েছেন।
.
-এতটা বছর ধরে আমি অপেক্ষা করছিলাম শুধুই এই মুহূর্তের জন্য। দেনা অনেক বেশি। আমাকে যে শোধ দিতেই হবে।
হাতে ছুরিটা নিয়ে শান্ত ভঙ্গীতে মিরু সাদেক সাহেবের গলায় একের পর এক ক্রমাগত পোঁচ দিতে লাগলো। সাদেক সাহেবের মনে পড়ে গেল উনি যে এখানে এসেছেন সেটা আর কেউই জানে না, ঠিক যেভাবে মিরুকে উনি বাসা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন সেটা কেউই জানতো না।
.
মিরু বড় দুই লিটারের বোতল এনে চেয়ারে বসা রক্তাক্ত পুরুষদেহে বিশেষ এক তরল পদার্থ ঢেলে দিল। তরলের ঘ্রাণ সাদেক সাহেবের খুব পরিচিত। আজকেও নিজের গাড়িতে ভরে নিয়ে এসেছেন। প্রায় নিস্তেজ দেহটার উপর মুখের জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে দিয়ে মিরু বাথরুমে যেয়ে ঢুকলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবার জন্য।
.
গত দশবছর ধরে মিরুর বুকে দহনের যে তান্ডব চলছিল সেটা আজ অস্তমিত হয়ে আসছে। কটেজের সেই ঘর থেকে বের হবার আগে একদলা ঘৃণার থু থু পোড়া কাঠ কয়লার মতো দেহটার দিকে ছুড়ে দিল মিরু। এতটা বছর ধরে সব প্রস্তুতি নেয়া ওর প্রতিক্ষার প্রহর আজ শেষ হয়েছে।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, এপ্রিল ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২১