- স্যরি, আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম। আপনার কাছে একটা মেসেজ ভুলে চলে গেছে। প্লীজ এখনই ডিলিট করে দিন।
- আচ্ছা দেবো।
- না, এখনই দিন। খবরদার স্ক্রীনশট রাখবেন না। ডিলিট করেছেন কিনা দেখেই আবার ফোন দিচ্ছি।
এখন প্রায় মধ্যরাত। ঘুম চোখে স্ক্রীণ শট নিয়েই জসিম মেসেজ ডিলিট করে দিলো। ডিলিট করা দেখে একটা লাভ চিহ্ন পাঠিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। একটু পরেই আবার ফোন এলোঃ
- ভাইয়া আপনি না সো কিউট! অনেক লক্ষী। আমার কথা শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সবাই যদি আপনার মতো এতো কিউট হতো?
- না, না, কী যে বলেন? এটা কোন ব্যাপার হলো?
অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা উচ্ছ্বল হাসির শব্দ যেন জসিমের কানে জলতরঙ্গের মতো শোনালো। সেদিন একটু আধটু কথা বলার পর হুট করেই মা আসছে বলে লাইন কেটে দিলো মেয়েটা।
সেই থেকে শুরু…
ফেসবুক সুন্দরী এই কোকিলাকন্ঠী মেয়ের সাথে একদিন পরে আবার কথা হলো জসিমের। তারপর মোবাইল নম্বর আদান প্রদান। ক্রমাগত ম্যাসেঞ্জারে টেক্সটিং। নিজেকে অবিবাহিত ছেলে দাবী করলো জসিম। মেয়েটা ওর নাম রেখেছে ‘কিউটি কিউটি বয়’ আর জসিম রেখেছে ‘সুন্দরী’। মধ্যরাতে কথা বলার প্রস্তাব জসিমই দিলো মেয়েটাকে। কী মনে করে যেন মেয়েটা রাজি হয়ে গেল। টানা প্রতিরাতে কথা বলতে বলতে কখন যে সামাজিক বন্ধুত্ব কয়েকদিনের মধ্যেই প্রেমের সর্ম্পকে মোড় নিয়েছে জসিম টেরই পেলো না। আলাপ আলোচনা দ্রুতই বেশ অন্তরঙ্গ হতে লাগলো, সর্ম্পক গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো।
বেশ কয়েকবার চাইবার পর মেয়েটা তিনটা ছবি দিয়েছে। প্রোফাইলের ছবিটার মতোই এই ছবিগুলিও মারাত্মক সুন্দর। দেখলেই জসিমের মাথা নষ্ট হয়ে যাবার উপক্রম হয়।
মেয়ের নাম ‘মায়া’। নামটাই কেমন যেন মায়া মায়া। সামনা সামনি এই মেয়েকে দেখার জন্য জসিম মনে মনে খুব অস্থির হয়ে উঠে। মায়া কিছুতেই রাজি হয় না। বাইরে ডেটিং করার কয়েকবার প্রস্তাব দিয়েছিল জসিম। মেয়ে’কে নাকি ওর মা একা বাসা থেকে বের হতেই দেয় না। মা সাথে নিয়ে বের হলেও বোরকা আর হিজাব পরে মুখ চোখ ঢেকে বের হতে হবে। শুনেই জসিমের মাথা ঘুরে গেছে। ধ্যাত! যেই অবস্থা, দেখেও তো চেনা যাবে না।
পরিচয় হবার প্রায় পঁচিশদিন পরে হুট করে মেয়ে রাজি হলো জসিমের সাথে দেখা করার।
- বাসার সামনে এসে দাঁড়াবে। আমি লুকিয়ে বারান্দায় চলে আসবো। আমাকে কিছুক্ষণ দেখেই চলে যাবে। ঠিক আছে? ভুলেও ফোন দেবে না।
জসিমের এখন বুকের ভিতর আবেগের ছলাৎছলাৎ অবস্থা। মায়াকে দেখার জন্য জসিমকে যদি হিমালয় থেকেও লাফ দিতে বলে, তাতেও ও রাজি। ভর দুপুরবেলা সেজেগুজে ফিটফাট হয়ে মায়ার বাসার সামনে এসে হাজির হয়ে মেসেজ পাঠালো জসিমঃ
- সুন্দরী তুমি কোথায়?’
রিপ্লাই এলো অল্প কিছুক্ষণ পরেইঃ
- বাসায় আছি। একটু অপেক্ষা করো। আম্মু এখনই বাইরে যাচ্ছেন।
বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার মেসেজ এলোঃ
- কিউটি বাবু, আধাঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখার পুরষ্কার দেবো তোমাকে। দরজা আমি খুলেই রাখবো। চুপ করে বাসার ভিতরে ঢুকে পরবে। আমার সাজুগুজু এখনো শেষ হয়নি, মহাব্যস্ত আমি, রাখি।
জসিমের হৃদপিন্ড ধরাম ধরাম করে বাড়ি খেতে শুরু করলো, শরীরে এ্যন্ড্রোনিল হরমোন দ্রুতই বেড়ে যাওয়া শুরু করলো। মায়াকে নিভৃতে দেখার পর একলা বাসায় ও কী নিজেকে সামলাতে পারবে? গভীর চিন্তায় পরে গেলো জসিম।
প্রায় একদৌড়েই পাঁচতলায় উঠে আসলো জসিম। খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই তাড়াতাড়ি লাগিয়ে দিলো। স্নায়বিক উত্তেজনায় বলে উঠলোঃ
- মায়া, ডার্লিং, তুমি কোথায়?
- ওমা, তুমি চলে এসেছো? পাশের রুমেই সাঁজছি, এখানেই চলে আসো।
জসিম দ্রুতই পাশের রুমে চলে গেলো। সেখানে একটা মেয়ে আছে ঠিকই কিন্তু….
আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে বিকাশে নগদ চার লাখ এবং বাসায় ফিরে আরো দুই লাখ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবশেষে ছাড়া পেলো জসিম। বাকী টাকা জসিমেকে দিতেই হবে। কোনভাবেই মাফ পাবে না ও।
জসিমের ‘মায়া’ ডার্লিংয়ের সাথেই পুরো নগ্ন অবস্থায় দশমিনিটের একটা ‘মায়া মায়া’ ভিডিও বানিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে বাকি টাকার জন্য, সাথে জসিমের ফেসবুক একাউন্টের পাসওর্য়াড এবং মোবাইল।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই গল্পটা আমি ফেসবুকে একটা সাহিত্য গ্রুপে প্রতিযোগিতার জন্য দিয়েছিলাম। ৩০ দিনের প্রতিযোগিতার ২৮ দিন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ লাইকড এবং কমেন্টেড গল্প ছিল। ২৯ দিনের মাথায় হূট করে প্রথমদিকে পোস্ট করা অপরিচিত দুইটা গল্প ভৌতিকভাবে আমার ডাবলের চেয়েও বেশি লাইক পেয়ে নির্বাচিত হয়। শুনেছি গ্রুপের মডারেশন টিমের পক্ষ থেকে এটা করা হয়েছে কারণ আমি সেখানকার নিয়মিত সদস্য না। আমি সেই গ্রুপ ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। গুষ্ঠী মারি এই সাহিত্য গ্রুপের। ফেসবুকের বেশিরভাগ সাহিত্য গ্রুপেরই এই একই অবস্থা।
ছবির সূত্রঃ অন্তর্জাল
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, সেপ্টেম্বর ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১১