
আইআরজিসির প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, ৪/৫ জন পরমাণু বিজ্ঞানী এত সহজেই শেষ! ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের এত আওয়াজ কই গেলো! ইরানের ওপর ইজরাইলের সামরিক আক্রমণ একটা জিনিসকে সুস্পষ্ট করে দেয়। ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোটেও যুগোপযোগী না। সম্ভবত আমেরিকা তৈরী এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম শনাক্ত করতে পারেনি। তবে এক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইরানের খুব ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া, ইরানকে এই ব্যাপারে কোন সতর্ক করেনি অর্থাৎ অগ্রিম সতর্ক করেনি।
অল্প কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের সাথে ভারতের যুদ্ধের সময় যখন ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো পাকিস্তানে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং টেক অফ করেছিল চায়না থেকে সরাসরি পাকিস্তানের এয়ার ফোর্স এর কাছে আর্লি ওয়ারনিং সিস্টেম এর মাধ্যমে এই যুদ্ধবিমানগুলোর সব ধরনের সামরিক তথ্যাবলী পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, যেন পাকিস্তান অতি দ্রুত পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারে।
জিপিএস, গ্লোনাস এবং বাইডু এই তিনটা হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর আকাশের উপরে চলমান তিনটা স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম বা যেটাকে আমরা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমও বলি। চায়না তার বাইডু স্যাটেলাইট সিস্টেম এর মাধ্যমে খুব সহজেই ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলো ডিটেক্ট করে এবং সাথে সাথে পাকিস্তানকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু রাশিয়া ইরানকে এই কাজটা করেনি কেন?
আমি যতটুক জানি রাশিয়ার গ্লোনাস আমেরিকার জিপিএস এর চাইতেও আধুনিক। সম্ভবত এই তথ্য ভুল আছে, কারণে অল্প কিছুদিন আগেই সম্ভবত জুনের এক তারিখে ইউক্রেন রাশিয়ার ভিতরে ঢুকে প্রায় গোটা বিশেক দামি দামি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে সামান্য ড্রোন দিয়ে, যেটা রাশিয়ার early ওয়ারনিং সিস্টেম ডিটেক্ট করতে পারেনি। ইরানের সময় একই ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে রাশিয়ার তৈরি এই সিস্টেম একেবারেই ফালতু, কোন কাজের না। আর যদি সত্যিই ডিটেক্ট করে থাকে কিন্তু ইরানকে তথ্য পৌঁছে না দেওয়া হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, ইজরাইল রাশিয়াকে আক্রমণে পূর্বেই এই হামলার কথা জানিয়ে অনুমতি নিয়েছিল এবং রাশিয়া এসে অনুমতি দেয়া সাপেক্ষে ইরানকে কোন কিছুই জানিয়ে দেয়নি আগেই। ইজরায়েলের সাথে রাশিয়া সুসম্পর্ক আছে। বাইরের বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেখে ভুল বোঝার কোন কারণ নেই। এগুলো আন্তর্জাতিক চালবাজি।
ইজরাইলের আক্রমণে পড়ে ইরানের সামরিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সত্যিকার অর্থে একটা দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধানকে যদি এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়, তাহলে সেই দেশের নিরাপত্তা বলে আসলে কিছুই থাকে না। কমপক্ষে ১০ জন ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক ও পারমাণবিক বিশেষজ্ঞকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। ইরানের সামরিক সক্ষমতা আসলে কতটুকু ভঙ্গুর ছিল ইজরাইল আঙ্গুল দিয়ে খুব সহজেই দেখিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই তারা আমেরিকার সাহায্য নিয়েছে, কোনরকম ভুল ছাড়া নিখুঁত অ্যাটাক করেছে। যে যুদ্ধে জিতবে না সেই যুদ্ধ করার কোন মানে হয় না। ইরানের অবশ্যই আমেরিকার প্রস্তাব মেনে নেওয়া উচিত ছিল। পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে আরো চার বা পাঁচ বছর অপেক্ষা করে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা দরকার ছিল।
মধ্যে প্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশগুলোকেই যেমন, এর আগে লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, ইরান, এসব দেশগুলোকে দেখা যায় কাজের চাইতে কথা বলে বেশি। যা না আছে তার চেয়ে বেশি কথা বলে। এর আগে ইরাক কিভাবে ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিল সাদ্দাম হোসেন সেটা সবাই জানে। ইরানের সামরিক সক্ষমতা সম্ভবত ৫০ বছরের মতো পিছিয়ে দিয়েছে ইজরাইল। পারমাণবিক সক্ষমতা অন্ততপক্ষে ১০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। তবে ইরানের জন্য একটা খুব বড় শিক্ষা হয়েছে এবার। যে রাশিয়াকে পার্টনার মনে করেছিল, তারা ইরানকে এবার বাঁচাতে পারেনি এবং সম্ভবত ভবিষ্যতেও আর পারবে না অথবা করবে না।
এই পৃথিবীতে ভূ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পার্টনার বেছে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইরান শুধুমাত্র তার পার্টনার বেছে নেওয়াতে ভুল করার জন্য আজকে এই ভয়ঙ্কর বিপদে পড়লো। অথচ ঠিক একই রকম ঘটনায়, সঠিক পার্টনার বেছে নেওয়ার জন্য ভারতকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। ভবিষ্যতে হিসরাইল আবার ইরানে আক্রমণ করবে এটা নিশ্চিত। অতি দ্রুত ইরানের রাশিয়ার পরিবর্তে চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার।
আমেরিকার তৈরী এফ ৩৫ স্টিলথ এয়ারক্রাফট। সত্যিকার অর্থে রাশিয়া তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের কোনো এয়ারক্রাফট নেই। কিন্তু চায়না ইতিমধ্যেই অন্তত তিন বা চারটা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে, যা ইরানকে নিশ্চিতভাবে আমেরিকা তৈরি থার্টি ফাইভ এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিতে সহায়তা করবে। চীনের তৈরী সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আছে যা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যেমন এফ ৩৫ বা এফ 22 কে সরাসরি সনাক্ত করতে পারে। নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্য চীন এগুলো তৈরি করেছিল, তাইওয়া কে ঘিরে নিজের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। ইজরায়েলের মতন তাইওয়ানেও এর থার্টি ফাইভ স্টিলথ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান আছে।
আশা করছি ইরান এবার সঠিক পার্টনার বেছে নিবে এবং সামরিক সক্ষমতা আরো বহুগুনে বৃদ্ধি করবে। যেন পরেরবার হিসরাইল এভাবে আক্রমণ করার আগে অন্তত ১০ বার চিন্তাভাবনা করে নেয়।
একটা মুসলিম রাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা এভাবে ধ্বংস হতে দেখে খুব খারাপ লেগেছে।
Mohiuddin Mohammad Zunaid
মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ যুনাইদ
১৪ জুন ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




