একনজরে বাংলার(অধিকাংশ) প্রাচীন বংশধারাঃ
নৃতাত্ত্বিক গবেষনা জানা যায়, গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের প্রাচীনতম মানুষের পরিচয় হল নিগ্রোয়েড (৬০০০০-৩০০০০ বছর আগে)। এদের সাথে পরবর্তীতে মিশ্রণ ঘটে আদি অষ্ট্রিক (অষ্ট্রেলিয়া ও ওশানিয়া থেকে আগত) ও দ্রাবিড়দের (ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল হতে দক্ষিনভারত হয়ে আগত)। এর ফলে উদ্ভূতদের অষ্ট্রো-দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী বলা হয়।
প্রায় ১৬০০০ হাজার বছর আগে শেষ বরফ যুগে যখন মহাসগরের জলের উপরিতল বর্তমানের চেয়ে ৪২৬ ফুট বা ১৩০ মিটার কম ছিল তখন অষ্ট্রেলিয়া-ওশানিয়ার সাথে এশিয়ার মূল ভূখন্ডের একটি ল্যান্ড ব্রীজ ছিল। সেই ল্যান্ড ব্রীজ ধরেই আদি অষ্ট্রিক জাতিগোষ্ঠী দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া হয়ে ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এদেরই একটি অংশ সমূদ্রপথে ভেলায় চেপে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হয়ে সিংহল ও দক্ষিন ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
যাই হোক আমাদের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষরা আদি অষ্ট্রিক ও দ্রাবীড় জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণ ছিল এটা নৃতত্ত্বে এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। প্রায় ২০০০০ বছর পূর্বের আবিস্কৃত এদেশীয় মানুষদের প্রস্তর যুগের অস্ত্রশস্ত্র এই প্রাচীন মানুষদের প্রামাণ্য হয়ে আছে। যতদিন না কৃষি ও মৎস্য শিকার জীবন ধারণের মূল ধারা হিসাবে প্রচলিত না হয়েছে ততদিন পর্যন্ত যাযাবর ও দেশান্তরী এই আদি অষ্ট্রো-এশিয়াটিক মানুষেরা গাংগেয় অববাহিকার বন-জঙ্গলে শিকারী-টোকাই (Hunter-gatherer) জীবন যাপন করত বহু হাজার বছর ধরে। এদের সাথে স্থানীয় দ্রাবিড় মানুষদের মিশ্রনের ফলে অষ্ট্রো-দ্রাবিড়ীয় মানুষদের বিস্তার হয় গাংগেয় উপত্যকায়। আরো পরে উত্তর-পুর্ব ভারত হতে আসে ভোটচীনিয় জাতিরা (মংগলয়েড)। এরপর আসে ইউরোপীয় আল্পস পার্বত্য এলাকার কিছু যাযাবর ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষি আল্পপাইন উপজাতির রক্তধারা। সংঘাত, রক্তপাত আর প্রজননের ফলে এই সকল রক্তধারার মিশেল দিয়ে গড়ে উঠেছিল আর্য আগমণ পূর্বকালের গাঙ্গেয় উপত্যকার মানব সমাজ। এরপর এদেশে আসে আর্যরা।
মধ্যযুগে আমাদের প্রাচীন মিশ্র রক্তধারায় এসে মেশে, তুর্কী, আফগান, আরব, ইরানীয় এবং মোঙ্গলদের রক্তধারা। ষোড়শ শতাব্দীতে আমাদের জিনপুলে এসে মেশে আরাকানী, মারাঠী ও পর্তুগীজ রক্তধারা। সপ্তদশ শতাব্দীতে সামান্য কিছু মাত্রায় ইংরেজ রক্তও আমাদের সাথে মিশেছে।(১)
চলবে...
তথ্যসূত্রঃ
(১) গুগল/ Quora.com
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৯