চাকরিরত এক শিক্ষককে মৃত দেখিয়ে তার স্থলে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন যে শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে তার নিবন্ধন পরীক্ষার সনদও জাল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির এমন ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর তানোর
উপজেলার তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে দীর্ঘদিন চাকরিরত সহকারী শিক্ষক কলিম উদ্দিনকে মৃত দেখিয়ে তিন মাস আগে ওই পদে জুলেখা খাতুন নামের একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। অথচ প্রায় ২৫ বছর ধরে ওই স্কুলে চাকরি করে আসছেন শিক্ষক কলিম উদ্দিন। তিন লাখ টাকা ডোনেশন নিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি যোগসাজশ করে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। ফলে জীবিত শিক্ষককে মৃত দেখানোর কারণে গত দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই শিক্ষক এখন মানবেতর জীবন যাপন করলেও নিবন্ধনের জাল সনদে চাকরি পেয়ে রীতিমত বেতন তুলছেন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জুলেখা খাতুন।
জানা গেছে, প্রায় ৪ মাস আগে অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শাখার জন্য সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে জুলেখা নামের ওই মহিলাসহ কয়েকজন আবেদন করলেও নিবন্ধন সনদ যাচাই না করে ৩ লাখ টাকা ডোনেশন নিয়ে জুলেখাকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
এদিকে দ্বিতীয় শাখা অনুমোদন না পেয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষিকাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আশ্রয় নেয়া হয় জালিয়াতির। তার বেতন বিল করতে গিয়ে একই বিভাগের সহকারী শিক্ষক কলিম উদ্দিনকে মৃত দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র দাখিল করা হয়। ফলে কলিম উদ্দিনের নামের বেতন বিল পরিবর্তন হয়ে জুলেখার নামে চালু হয়ে যায়। আর জীবিত হয়েও সহকারী শিক্ষক কলিম উদ্দিনের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে হঠাৎ বিল বেতন বন্ধ হওয়ায় কলিম উদ্দিন শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিতে শুরু করেন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি জানতে পারেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমির উদ্দিন ও সভাপতি মোজাম্মেল হক তাকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করায় তার বেতন বন্ধ হয়েছে। তিনি আরো জানতে পারেন, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জুলেখা খাতুনকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে তার পদ শূন্য দেখিয়ে।
জুলেখা খাতুন বলেন, টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি এতো কিছু বলা যাবে না। যারা টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছে তাদের ধরুন। এ ব্যাপারে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, বিষয়টি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার। এ বিষয়ে মাথা ঘামাবেন না।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমির উদ্দিন বলেন, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকার পীড়াপীড়িতে এটা করা হয়েছে, পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নাজমুল হক বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। যদি কেউ জাল সনদ দিয়ে চাকরি করেন তাহলে প্রথমে তার চাকরি যাবে, পরে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি মামলা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




