নিজের পরিচয় দিয়ে জনতাকে থামতে বললে জনতা সাময়িক পেটানো বন্ধ করলেন। হঠাৎ ওই ছিনতাইকারীর পক্ষ!!!! নেয়ায় আমাকে উদ্দেশ্য করে চারিদিক থেকেআসা উত্তেজিত জনতার বেশ কিছু আক্রমনাত্মক বাক্যবান হজম করতে থাকলাম ।
এক পর্যায়ে যখন জনতা আমাকে গুরূত্বহীন মনে করে জমানো আক্রোশ আবার ওই যুবকের ওপর ঢালার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আমিও উত্তেজিত (খাইয়ালামু) হয়ে এক নিঃশ্বা েস বলেই ফেললাম ঃ
- এই লোকটি যদি মারা যায় তাহলে কে নিবেন তার দায়ভার, প্লীজ উত্তর দেন নয়তো পেটানো বন্ধ করেন? উনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন। মরা (হেরোইনখোর বা ছিনতাইকারী খুব সহজে সৎ লাইনে আসে না) মেরে কেন খুনের দায় নিতে যাবেন আপনারা।
একেবারে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় লোকজন শান্ত হয়ে গেল। কি জানি বাপু ! উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গন আমাকে হয়তো ভেবেছেন , আমি কোন হোমড়া চোমরার সন্তান (আসলে ছাই
)!!!!!!! উটকো দায়ভার নিয়ে কি কেউ বোকা হতে চায়? আমি জানি বর্তমান দেশের শাসন ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস হারিয়েই সাধারণ জনতা আইনের শাসন নিজের হাতে তুলে নিতে উৎসাহীত হয়।
আমাদের আজকের শাসনের যে সমস্যা এর মূলেই রয়েছে একটি নৈতিক কতর্ৃত্বের অনুপস্থিতি।
দেশ শাসনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যতই গুরুত্ব থাকুক না কেন, এর জন্য মুখ্য উপাদানই হচ্ছে নৈতিক কতর্ৃত্ব, যে কতর্ৃত্ব দিয়ে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা তখনকার জ্ঞাত পৃথিবীর অর্ধেকই তার বশ্যতায় এনেছিলেন। যদিও রাষ্ট্রীয় শক্তি বলতে তার কিছুই ছিল না_ না অর্থবল, না সামরিক শক্তি। এ যুগেও স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনে তুলনাহীন নৈতিক কতর্ৃত্বের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। কোনো রাষ্ট্রীয় কতর্ৃত্ব ব্যতিরেকেই তার কণ্ঠনিঃসৃত বাণী অলঙ্ঘনীয় আদেশে পরিণত হয়েছিল। ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজির আছে।
আইন বা আদেশ মানার স্পৃহাটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। যিনি আদেশ দেন তার আচরণ থেকেই আসা দরকার আদেশ মানার প্রেরণা। আজকাল শাসকদের কাছ থেকে সেই প্রেরণা পাওয়া তো দূরের কথা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এদের বেশির ভাগই ভন্ড। শাসকের অবস্থান যদি একটি নৈতিক ভিতের ওপর সুদৃঢ় করা না হয় তবে তার আদেশ-নির্দেশও শোনায় ফাঁপা।
শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, দেশ শাসনেও নৈতিক অবক্ষয়ের এমন একটি সময় আজ সমাগত যখন ভদ্রলোকরাও আইন অগ্রাহ্য করে, ট্যাক্স দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের বক্তব্য_ কী লাভ? ট্যাক্সের টাকা তো অসৎ নেতারাই আত্মসাৎ করবে অথবা মন্ত্রী-আমলারা লুটেপুটে খাবে। তাই ট্যাক্স পরিশোধ না করে তারা ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে। শিক্ষিত সম্পন্নরাও আজকাল অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চান না, যখন তারা নিশ্চিত যে, পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীকে ছেড়ে দেবে এবং ওই অপরাধী দ্বিগুণ আক্রোশে তার অপরাধে পুনরায় লিপ্ত হবে। তাই কী হবে ওইসব ঝামেলায় গিয়ে_ এমনই একটা মনোভাব আজকাল বিরাজ করে। তাই এখন দেখা যায় যত্রতত্র জনতার আদালত, বিচারের ব্যবস্থা। এও এক প্রকারের নৈরাজ্য।
ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার আগ্রহ প্রায় কোনো ঋণগ্রহীতারই নেই। কেননা তারা দেখছে যে রাঘব বোয়ালরা কীভাবে তাদের '......সংযোগের' বদৌলতে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকেরই লক্ষ্য থাকে কী করে ঋণ শোধ না করে পারা যায়। অনেকের মনেই প্রশ্ন, সৎ থাকার প্রচেষ্টার মধ্যে আদৌ কি কোনো কৃতিত্ব আছে? ওই তো অমুক অমুক তাদের কুকীর্তির ফিরিস্তিসহ দিব্যি আছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা রাহাজানির কারণে কেউ তো সমাজচু্যত হয়নি। বরং সরকারি আচরণবিধি অনুযায়ী তাদের অনেকেই আজ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি।
আর তাই দেশের সাধারণ জনগনের আর্তি "হে শাসনকতর্াগন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সাহায্য করুন।"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


