somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হে শাসনকতর্াগন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সাহায্য করুন

২৫ শে জুন, ২০০৬ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ দুপুরের দিকে কাওরান বাজারে অবস্থিত একুশে টিভি ভবনের (জাহাঙ্গীর টাওয়ার) সামনে দেখি লোক জনের বিরাট জটলা। মাগো, বাবাগো, গেছিগো.... বলে গগন বিদারি চিৎকার(বাঁচাওওও) আর কান্নার (আম্মাআআ) শব্দে উৎসুক হলাম সামনে এগিয়ে কি হচ্ছে তা দেখতে। গিয়ে দেখি ঢাকা শহরের এটি নতুন কোন ঘটনা না। ওই হেরোইনখোর, পকেট মার, ছিনতাইকারী হয়তোবা অভাবী কেউও হতে পারে। চিৎকার আর কান্নার শব্দগুলো তারই করা। জনতার আদালতে লোকজন অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছে আর ইচ্ছেমত পেটাচ্ছে আনুমানিক 20 ঊর্ধ এক যুবককে।

নিজের পরিচয় দিয়ে জনতাকে থামতে বললে জনতা সাময়িক পেটানো বন্ধ করলেন। হঠাৎ ওই ছিনতাইকারীর পক্ষ!!!! নেয়ায় আমাকে উদ্দেশ্য করে চারিদিক থেকেআসা উত্তেজিত জনতার বেশ কিছু আক্রমনাত্মক বাক্যবান হজম করতে থাকলাম ।

এক পর্যায়ে যখন জনতা আমাকে গুরূত্বহীন মনে করে জমানো আক্রোশ আবার ওই যুবকের ওপর ঢালার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আমিও উত্তেজিত (খাইয়ালামু) হয়ে এক নিঃশ্বা েস বলেই ফেললাম ঃ
- এই লোকটি যদি মারা যায় তাহলে কে নিবেন তার দায়ভার, প্লীজ উত্তর দেন নয়তো পেটানো বন্ধ করেন? উনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন। মরা (হেরোইনখোর বা ছিনতাইকারী খুব সহজে সৎ লাইনে আসে না) মেরে কেন খুনের দায় নিতে যাবেন আপনারা।

একেবারে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় লোকজন শান্ত হয়ে গেল। কি জানি বাপু ! উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গন আমাকে হয়তো ভেবেছেন , আমি কোন হোমড়া চোমরার সন্তান (আসলে ছাই )!!!!!!! উটকো দায়ভার নিয়ে কি কেউ বোকা হতে চায়? আমি জানি বর্তমান দেশের শাসন ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস হারিয়েই সাধারণ জনতা আইনের শাসন নিজের হাতে তুলে নিতে উৎসাহীত হয়।

আমাদের আজকের শাসনের যে সমস্যা এর মূলেই রয়েছে একটি নৈতিক কতর্ৃত্বের অনুপস্থিতি।
দেশ শাসনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যতই গুরুত্ব থাকুক না কেন, এর জন্য মুখ্য উপাদানই হচ্ছে নৈতিক কতর্ৃত্ব, যে কতর্ৃত্ব দিয়ে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা তখনকার জ্ঞাত পৃথিবীর অর্ধেকই তার বশ্যতায় এনেছিলেন। যদিও রাষ্ট্রীয় শক্তি বলতে তার কিছুই ছিল না_ না অর্থবল, না সামরিক শক্তি। এ যুগেও স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনে তুলনাহীন নৈতিক কতর্ৃত্বের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। কোনো রাষ্ট্রীয় কতর্ৃত্ব ব্যতিরেকেই তার কণ্ঠনিঃসৃত বাণী অলঙ্ঘনীয় আদেশে পরিণত হয়েছিল। ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজির আছে।

আইন বা আদেশ মানার স্পৃহাটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। যিনি আদেশ দেন তার আচরণ থেকেই আসা দরকার আদেশ মানার প্রেরণা। আজকাল শাসকদের কাছ থেকে সেই প্রেরণা পাওয়া তো দূরের কথা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এদের বেশির ভাগই ভন্ড। শাসকের অবস্থান যদি একটি নৈতিক ভিতের ওপর সুদৃঢ় করা না হয় তবে তার আদেশ-নির্দেশও শোনায় ফাঁপা।

শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, দেশ শাসনেও নৈতিক অবক্ষয়ের এমন একটি সময় আজ সমাগত যখন ভদ্রলোকরাও আইন অগ্রাহ্য করে, ট্যাক্স দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের বক্তব্য_ কী লাভ? ট্যাক্সের টাকা তো অসৎ নেতারাই আত্মসাৎ করবে অথবা মন্ত্রী-আমলারা লুটেপুটে খাবে। তাই ট্যাক্স পরিশোধ না করে তারা ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে। শিক্ষিত সম্পন্নরাও আজকাল অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চান না, যখন তারা নিশ্চিত যে, পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীকে ছেড়ে দেবে এবং ওই অপরাধী দ্বিগুণ আক্রোশে তার অপরাধে পুনরায় লিপ্ত হবে। তাই কী হবে ওইসব ঝামেলায় গিয়ে_ এমনই একটা মনোভাব আজকাল বিরাজ করে। তাই এখন দেখা যায় যত্রতত্র জনতার আদালত, বিচারের ব্যবস্থা। এও এক প্রকারের নৈরাজ্য।

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার আগ্রহ প্রায় কোনো ঋণগ্রহীতারই নেই। কেননা তারা দেখছে যে রাঘব বোয়ালরা কীভাবে তাদের '......সংযোগের' বদৌলতে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকেরই লক্ষ্য থাকে কী করে ঋণ শোধ না করে পারা যায়। অনেকের মনেই প্রশ্ন, সৎ থাকার প্রচেষ্টার মধ্যে আদৌ কি কোনো কৃতিত্ব আছে? ওই তো অমুক অমুক তাদের কুকীর্তির ফিরিস্তিসহ দিব্যি আছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা রাহাজানির কারণে কেউ তো সমাজচু্যত হয়নি। বরং সরকারি আচরণবিধি অনুযায়ী তাদের অনেকেই আজ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি।

আর তাই দেশের সাধারণ জনগনের আর্তি "হে শাসনকতর্াগন আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সাহায্য করুন।"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×