এক ছিলো ছোট্ট নীলপরী। সে বাস করতো নীল পরীদের দেশে। নীলপরীদের দেশে সবকিছুই নীলনীল। তাদের ঘরবাড়ী , নদী-নালা, বন জঙ্গল, পাহাড় পর্বত সবই নীল রঙ দিয়ে তৈরী।
নীলপরীটার সারাদিন কাটে ফুলবাগানে নীলগোলাপ, নীলগাঁদা, নীলগন্ধরাজ ফুলের মধু খেয়ে আর নীল ভোমরাদের সাথে খেলা করে।
একদিন নীলপরীটা বাগানে খেলা করছিলো, হঠাৎ সেখানে উড়ে এলো একটা হলুদ প্রজাপতি। প্রজাপতিটার গায়ে হলুদ কালো আর লাল- সাদায় মিশেল এক অপূর্ব কারুকাজ। নীলপরী অবাক হয়ে তাকে জিগাসা করলো, "তুমি হলুদ প্রজাপতি, কি করে আমাদের এই নীলপরীর দেশে এলে?"
হলুদ প্রজাপতি বললো, "আমি হারিয়ে গিয়েছি। আমি দূর আকাশে উড়তে উড়তে পথ ভুলে চলে এসেছি তোমাদের এই দেশে। এখন কি করে ফিরে যাবো জানিনা আমি।"
এই না বলে হলুদ প্রজাপতি কাঁদতে শুরু করলো।
ছোট্ট নীলপরীর অনেক কষ্ট হলো তার জন্য। সে বললো, "আহা কাঁদেনা হলুদ প্রজাপতি, আমি তোমাকে তোমার দেশে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করে দেবো।"
হলুদ প্রজাপতি তখনকার মত কান্না থামালো। তারপর নীলপরীটার সাথেই থাকতে শুরু করলো। দিন যায়, মাস যায় নীলপরীকে প্রজাপতি শুধুই জিগাসা করে "আমাকে আমার দেশে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করো নীলপরী।" নীলপরী তাকে শুধুই আশ্বস্থ্য করে।
একদিন দুপুরবেলা চুপিচুপি নীলপরী প্রজাপতিকে নিয়ে চললো তাদের দেশের জ্ঞানী যাদুকরী দিদমার বাড়ী। দিদমা সব জানে ।দেশ বিদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান তার মাথায় ঠাসা।
নীলপরী হলুদ প্রজাপতিকে একটা ছোট্ট সোনার কৌটায় লুকিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো। বুড়িমা তাকে দেখেই জিগাসা করলেন। "ছোট্ট নীলপরী কি এনেছো তোমার সোনার কৌটা করে?"
নীলপরী বললো " এ এক দুখী প্রজাপতি দিদমা। পথ ভুলে এখানে চলে এসেছে। তুমি এর নিজের দেশে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করে দাও দয়া করে। পথ বাতলে দাও । কি করে ফিরে যাবে সে সেখানে?"
দিদমা গম্ভীর মুখে কিছুক্ষন কি যেন চিন্তা করলেন তারপর বললেন "সে এক দুরহ পথ বাছা। এই নীলপরীরাজ্যের অনেক অনেক নীচে সে এক দেশ বাংলাদেশ। সেখানেই এর বাড়ী। এই প্রজাপতির সাধ্য নেই এই এতটুকু পাখা ভর করে আবার সেখানে উড়ে যাওয়া।"
নীলপরী বললো , " আমি তাকে নিয়ে যাবো । আমার এই বিশাল দুই রুপোলী ডানায় ভর করে আমি উড়িয়ে নিয়ে যাবো তাকে সেখানে।"
বুড়িমা বললে " এমনটা করতে যেওনা বাছা । তোমার বিপদ হতে পারে। দুষ্টু লোকেরা তোমার ক্ষতি করতে পারে।"
নীলপরী তবুও জিদ করতে লাগলো। সে প্রজাপতিকে কথা দিয়েছিলো ।
অগত্যা বুড়িমা পথ বাতলে দিলো।
এক নিশুথী রাতে নীলপরী তার রুপো ঝিলমিল ডানায় করে , মেঘের পর মেঘ পাড়ি দিয়ে প্রজাপতিকে মর্ত্যে নামিয়ে নিয়ে এলো। এক ঘন বনের ধারে প্রজাপতিকে নামিয়ে আনলো সে। এতদূর উড়ে এসে নীলপরীটা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। প্রজাপতিকে বিদায় জানিয়ে একটু জিরিয়ে নিতে বসলো এক জলটলটল সরোবোরের পাশে।
কখন দুচোখ ঘুমে জড়িয়ে এসেছে খেয়াল নেই তার।
এদিকে এক কাঠুরে বালক খুব ভোরবেলা বনে কাঠ কাটতে এসে দেখে পরীর মত একটা সুন্দর মেয়ে ঘুমিয়ে রয়ছে সরোবোরের ধারে। কাছে এসে ভালো করে খেয়াল করে দেখতেই সে দেখতে পেলো মেয়েটার পিঠে দুটো ডানা। সাথে সাথে তার বুঝতে বাকী রইলোনা যে এটা একটা পরী। সে তার কাঠ ভরে বয়ে নিয়ে যাবার ঝুলিতে করে ভরে নিয়ে চললো পরীকে তার বাড়ী।
বাড়ী নিয়ে এসে সে পরীকে লুকিয়ে রাখলো একটা ছোট্ট ঘরের ভেতর। পরীর দিন কাটেনা , রাত কাটেনা, সারাক্ষন কাঁদে আর কাঁদে। কাঠুরে বালক বলে "আমাকে বিয়ে করো পরী, তোমাকে আর বন্দী রাখবোনা। মুক্তি দেবো। পরী বলে এ হয়না বালক। আকাশের পরীদের সাথে মর্ত্যের মানুষের বিয়ে হয়না।"
পরী অনেক কান্নাকাঁটি করতে লাগলো । কিন্তু তবুও নিষ্ঠুর বালকের মন গললোনা।সে রাগ করে পরীর ডানাদুটি কেড়ে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিলো।
আর আগুনে ডানা দুটি পুড়ে যাবার সাথে সাথে পরীর নিলাভ সুন্দর দেহটিও হাওয়ায় বিলীন হয়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১৫