somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন জীবনি ও আমার চোখে আরশী নগর

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাড়ির কাছে আরশী নগর
(একঘর) সেথা পড়শী বসত করে-
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।।
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে,
বাঞ্ছা করি দেখব তারে
(আমি) কেমনে সেথা যাই রে।।
কি বলব পড়শীর কথা,
হস্ত পদ স্কন্ধ মাথা নাই-রে
ক্ষণেক থাকে শূণ্যের উপর
(ওসে) ক্ষণেক ভাসে নীরে।।
পড়শী যদি আমায় ছুঁতো,
যম যাতনা সকল যেতো দূরে।
সে আর লালন একখানে রয়-
(তবু) লক্ষ যোজন ফাঁক রে।।

উপরে উল্লেখিত লালন শাহের এই বিখ্যাত গানটির অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করতে গিয়ে ও লালন গীতির নানা রুপক শব্দের মূল অর্থ সম্পর্কে আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কে কিছু জ্ঞানার্জন করতে গিয়ে আমার ভেতরে জন্ম নেওয়া এক একান্ত অনুভুতির কথা শেয়ার করার ইচ্ছা হলো।

লালন ফকিরের জীবন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় না। তার সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসুত্র তার নিজের রচিত অসংখ্য গান। লালনের কোন গানে তার জীবন সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়া নেই বলে জানা যায়। তিনি একজন বাঙালী যার জন্মস্থান বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার হারিশপুর গ্রামে।[৬] লালন শাহের জাতি বা সম্প্রদায় নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। এই প্রশ্ন তাঁর জীবদ্দশায়ও বিদ্যমান ছিল। পারিপার্শ্বিক প্রচলিত থেকে অনুমিত হয়েছে যে কথিত আছে যে, তিনি হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন, কিন্তু ছেলেবেলায় জলবসন্ত রোগে অসুস্থ অবস্থায় তাঁর পরিবার তাঁকে ভেলায় ভাসিয়ে দেয়। তখন মলম শাহ এবং তার স্ত্রী মতিজান নামের এক মুসলমান দম্পতি তাঁকে আশ্রয় দেন এবং সুস্থ করে তোলেন। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে গেলে তার পরিবার তাকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান। লালন ফিরে আসে মলম শাহের কাছে । মলম সাহ তাকে কুর'আন ও হাদিস শিক্ষা দেন এবং ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ফকির সিরাজ সাঁই নামের একজন ফকিরের কাছে পাঠান।


বাড়ির কাছে আরশী নগর
(একঘর) সেথা পড়শী বসত করে-
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।।

লালনের এই গানটির মহা আধাত্নিক দিকের বহু বর্ণনা ও আত্ম উপলদ্ধ কথন বহু গুণীজন দিতে পারবেন তাদের মত করে , নানা দিক, নানা তত্ব বিশ্লেষন করে। কিন্তু আমার চোখে যখন ভেসে ওঠে লালন সুস্থ হয়ে যখন তার বাড়ি হারিসপুরে ফিরে যান তখন তার পরিবার পরিজন তাকে পরিত্যাগ করে। লালন ফিরে আসে মলম শাহের কাছে। সেখান থেকে তার বাড়ির দূরত্ব বেশী ছিলোনা বলতে গেলে কাছকাছি।আমার চোখে ভাসে অভিমানী লালন তার বাড়ির কাছে আরশীনগর বলতে বুঝি হারিসপুরের কথায় বলেছিলেন তার গানে। আর তার বাড়ি বলতে ছেউড়িয়ার আখড়া বা মলম শাহের বাড়ি যেখানে তার আশ্রয় জুটেছিলো। এক ঘর পড়শী বুঝি তারই প্রিয়জনেররা , একদিনও না দেখতে পাওয়া বুঝি তাদের সাথে লালনের বিচ্ছদের দুঃখ বা আক্ষেপ।

বুঝতে পারছি আমার এই আজগুবি বোধন বা নিজের মত করে বুঝে নেওয়ার কাহিনী শুনে জেন ভাই মুখ টিপে আর শতদ্রু ভাই হো হো করে হাসছে তবুও মনের কথা আমি বলবোই।

গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে,
বাঞ্ছা করি দেখব তারে
(আমি) কেমনে সেথা যাই রে।।

আমার মন বলে এই পানি বুঝি গড়াই নদীর পানি। তরণী, কিনারা সবই ছিলো তার শুধু সেখানে যাবার পথ খোলা ছিলোনা লালনের তাই এই হাহাকার।

কি বলব পড়শীর কথা,
হস্ত পদ স্কন্ধ মাথা নাই-রে
ক্ষণেক থাকে শূণ্যের উপর
(ওসে) ক্ষণেক ভাসে নীরে।।

এইখানে এসে আমি অবশ্য একটু তালগোল হারাই। পড়শী মানে আমার ভাষায় যারা তার আপনজন যদি হয় তাদের হস্ত পদ কর্ন মাথা নাই কেনো? তবে কি ইনি সেই পরমেশ্বর যার কোনো আকার নেই , যিনি নিরাকার। কিন্তু লালন তো কোনো ইশ্বরে বিশ্বাস করতেন না তাহলে কে সে? শূন্যের উপর থাকে আবার নীরে ভাসে? আমার এখানে মনে হয় এটা লালন নিজেই। শুন্যে ভাসে ভাবনায় আর চোখের জলে ভাসে তিনি নিজেই।

পড়শী যদি আমায় ছুঁতো,
যম যাতনা সকল যেতো দূরে।
সে আর লালন একখানে রয়-
(তবু) লক্ষ যোজন ফাঁক রে।।

এখানে এসে আমি আমার মত করে আবার নিশ্চিৎ হয়ে যাই এই পড়শী তার আপন জনেরা যাদের বিহনে লালনের মনে এখ অপার যাতনা যাকে লালন বলেছেন যম যাতনা।
সে আর লালন এক ঘরে রয় , লক্ষ্য যোজন ফাক রে...... এখানে পড়শি লালনের মনেই রয়েছে, একই মনের ঘরে দুজনে তবুও তাদের দৃশ্যমান দেখা নেই, তাদের মাঝে লক্ষ্য যোজন ফাঁক।


আমার কাছে লালনের এই গান কেনো যেন তার একান্ত মনের হাহাকার আর দুঃখকেই মনে হয় যা তার পরিবার পরিজনের সাথে চিরবিচ্ছেদের এক গীতিরূপ। আমার নিজের মত করে এই গান নিয়ে ভাবনা দেখে সবাই হাসবে জানি। আমি নিজেও জানি এই সব ভাবনা নিজের মত করে ভেবে নেওয়াটা খুবই হাস্যকর তবুও কেনো যেন খুব ছোটবেলায় যখন লালনের জীবনি পড়ে কেদে বুক ভাসিয়েছি। ভেবেছি আহা লালন আর কখনও তার নিজের পরিজনদের কাছে ফিরে যেতে পারলোনা এটা ভেবে তখনই এই গানটা নিয়ে এমন উপলদ্ধি হয়েছে আমার।

এই গানের প্রভাব আমার জীবনেও আছে, আছে তার ছায়া কিংবা ছোঁয়া।

সে যাই হোক, মহাসাধক জেনভাই, সর্ববিদ্যা পারদর্শী শতদ্রুভাই, আরেক মহাজ্ঞানী গুনিজন রিকি আপা আর গুনী চিত্রশিল্পী ও টেড়িবেড়ি করলে নাক ফাটিয়ে দেওয়া উর্বী আপাকে আমার এই পোস্ট পরে, বোকার মত ভাবনা শেয়ার করা দেখে হাাসার জন্য আমন্ত্রন জানালাম।

হাসাহাসি শেষ হলে এই উদ্ভট মস্তিস্ক প্রসুত কল্পনা নিয়ে রচিত পোস্ট খানি মুছে দেবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০০
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×