somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোক পাঁচালি - পর্ব -১

২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর বনাম ১৭৫০ বর্গফুট

লোকে বলে বলেরে
ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার
কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যেরও মাঝার।।
ভালা কইরা ঘর বানাইয়া
কয়দিন থাকমু আর
আয়না দিয়া চাইয়া দেখি
পাকনা চুল আমার।।
এ ভাবিয়া হাসন রাজা
ঘর-দুয়ার না বান্ধে
কোথায় নিয়া রাখব আল্লায়
তাই ভাবিয়া কান্দে।।
জানত যদি হাসন রাজা
বাঁচব কতদিন
বানাইত দালান-কোঠা
করিয়া রঙিন।।
---- দেওয়ান হাছন রাজা



চাকরিসূত্রে আমার বর্তমান আবাসস্থল ঢাকার অভিজাত এলাকার একটি কবরস্থানের পাশে নির্মিত সুউচ্চ ভবনে । বাসার প্রায় তিন দিক ঘিরেই কবরস্থান - জানালা , বারান্দা যেখানেই দাঁড়াই না কেন চোখে পড়ে নীচের সারি সারি ছোট ঘরগুলো । বাসায় ওঠার আগে বেশ ভয় ভয় লাগলেও ধীরে ধীরে সয়ে গেছে । আর এখনতো রীতিমত রুটিন করে সকাল - দুপুর - রাত নিজে থেকেই কবরগুলোর খোঁজ-খবর নিই । মাঝে মাঝে বারান্দায় বসে ভাবি আমি যেমন কবরগুলো নিয়ে উৎসুক , কবরে শায়িত মানুষগুলোও কি আমাকে দ্যাখে - কেমন আছে তারা সেখানে - আমার এই বালখিল্য দেখে কি হাসে অথবা এখানকার প্রাণপ্রাচুর্যে ঈর্ষান্বিত হয় , আমার ঘর থেকে ভেসে যাওয়া পরিচিত গানের সুর , রান্নার সুঘ্রাণে তারা কি আর উদ্বেলিত হয় ? এই সুউচ্চ ভবন যেমন জীবনের কোলাহলে মুখর - পাশের কবরস্থান ঠিক তার বিপরীত শান্ত-স্নিগ্ধ শ্যামলিমায় শায়িত মানুষগুলো জীবনের সব হিসাব -নিকাশ মিটিয়ে মনে হয় পরম শান্তিতেই ঘুমিয়ে আছে ।

বারান্দায় বসে মাঝে-মাঝে দেখি দাফনের আনুষ্ঠানিকতা । যদিও বলা হয়ে থাকে মৃত্যুর পর সবাই এক - কবরের মাপ এক ,আনুষ্ঠানিকতা এক , সবাই আসে সাদা কাপড়ে । তারপরও জনসমাগম , কবরের সাজসজ্জা দেখে বোঝা যায় এখানেও রয়েছে বিভেদ । মাঝে -মাঝে বিশেষ ব্যক্তিদের দাফনের সময় দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা । তখন শান্ত - নিস্তব্ধ কবরস্থান সেনা সদস্যদের বুটের ভারে সরব হয়ে ওঠে । দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে তাদের মহড়া ।অত:পর শবযাত্রীগণ পৌঁছালে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা । কবরস্থানের শান্তি বিঘ্ন করে তোপ ধ্বনির মাধ্যমে জানানো হয় সশ্রদ্ধ সালাম ( মনে প্রশ্ন জাগে কবরস্থানে এর যৌক্তিকতা কতটুকু ,পবিত্র কবরস্থানের শান্তি ভঙ্গ করার অধিকার কি তাদের আছে ? এই আনুষ্ঠানিকতাতো অন্য যে কোন খোলা প্রাঙ্গণেই সেরে ফেলা যায় ) ।

মৃত্যুর পর মানুষ এই সাড়ে তিন হাত মাটির আবাসই মেনে নেয় । জীবনের আর কোন প্রাচুর্যের কোন অবকাশ সেখানে থাকেনা । অথচ জীবদ্দশায় ১৭৫০ বর্গফুটেও তার প্রাচুর্যকে ধরে রাখতে পারেনা - অপর্যাপ্ত মনে হয়। নিজেদের শৌখিন জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজিয়ে সরকারী আসবাবপত্র ফেলে রাখে খোলা জায়গায় ! আমাদের শুধু চাই আর চাই - আমাদের উচ্চাশার সাথে পাল্লা দিয়ে উল্লম্বিক ভাবে বেড়েই চলেছে সুউচ্চ ভবনের সংখ্যা । একটু কষ্ট করে নীচে তাকালেই চোখে পড়ে - আনুভূমিকভাবে ভাবে বেড়ে চলা ছোট ঘরগুলোও কিন্তু থেমে নেই ওখানেও ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ছেই !
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×