লন্ডনে বৈশাখী মেলা
২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লন্ডনের জন্য প্রচন্ড গরম। সব বাঙালীই খুশি ছিলেন-এবার বৈশাখী মেলা জমবে। হয়েছিলোও তাই। বৈশাখী মেলা খুব জমেছিল। এবারের বৈশাখী মেলা বিগত সব মেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। ধারণা করা হয়, ১১ মে'র মেলাতে প্রায় লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিলো উইভার্স ফিল্ড ও সংলগ্ন ব্রিকলেইনে। বৃটিশ মিডিয়াও গুরুত্ব সহকারে কাভারেজ করেছে।
সকাল এগারোটা ত্রিশ মিনিটে ব্রিকলেন থেকে ইলিশ-পান্তা ভোজন-পর্ব শেষ করে শুরু হয় বর্ণাঢ্য র্যালী। এ্যালেন গার্ডেন্স থেকে র্যালী যায় মেলার মূল কেন্দ্র উইভার্স ফিল্ডের দিকে। প্রায় ঘন্টা খানেকের প্রাণবন্ত র্যালি নজর কেড়েছে সকলের। নজরুল সেন্টার, সত্যেন সেন স্কুল অব পারফরমিং আর্টসসহ তৃতীয় প্রজন্মের কচি-কাঁচারা প্রতিনিধিত্ব করেছে বাঙালী সংস্কৃতির। বর-কনে, ময়ুর, বিশেষ যান্ত্রিক হাতিতে কমলা সুন্দরী, আউল-বাউল, কন্ঠশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, অনুরাগীদের পদচারণায় মেলার দিন ছিলো যেন বাংলার রূপ-রস-গন্ধ ভরা।
বাঙালীর মেলা এবার ব্রিটেইনের রাজনীতিতেও খানিক নাড়া দিয়েছে। নব-নির্বাচিত লন্ডন মেয়র বরিস জনসন মেলায় আসেননি। কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত এ-মেয়র অবশ্য প্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছিলেন ডেপুটি মেয়রকে । বিশাল সমাবেশে দাঁড়িয়ে ডেপুটি মেয়র বলেছেন, আগামী মেলায় লন্ডন মেয়র উপস্থিত থাকবেন। লেবার পার্টির কেন লিভিংস্টৌন এবারও মেয়র থাকলে তিনি-যে বাঙালীদের মেলাতে অবশ্যই আসতেন, তা বলাইবাহুল্য।
বেলা বারোটা বাজতে না বাজতে মানুষে-মানুষে উইভার্স ফিল্ড ভরে ওঠে কানায়-কানায়। কেউ ফ্রান্স থেকে এসেছেন। কেউ ইতালি থেকে। এ-রকম হাজার বাঙালী এসেছেন ইউরোপ থেকে। আর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কত হাজার বাঙালী এসেছেন, সে-হিসাব রাখার জো নেই।
অনেক কিছু আয়োজনের মধ্যে লন্ডনের কারী হাট বলে খ্যাত বাঙালীর ব্রিকলেনে সেদিন ছিলো কারীর মহোৎসব। তিল ধারনের ঠাঁই ছিলো না রেষ্টুরেন্টগুলোর ভেতরে-বাইরে। ওয়ান-টাইম প্লেইটে রাইস এ্যান্ড কারী উপভোগের বিষয়টি বুঝানো যাবে না। মেলার মূলকেন্দ্র্র উইভার্সফিল্ডে সকাল থেকেই মুখরিত ছিলো দোকানগুলো। সেখানে বসেছিলো কয়েক শত অনুমোদিত এবং অনেকগুলো ফ্লাইং ষ্টল। বাংলাদেশের কুটির ও মৃৎশিল্পের রকমারি পসরা, রূপচর্চা সামগ্রী, তাঁতের কাপড়, যুক্তরাজ্যের চেইন ট্রেড ব্যবসার ষ্টল, লন্ডনে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর ষ্টল এবং ছিলো চানা-পিঁয়াজো, ফুসকা, চটপটি, টিক্কা-মাসালা, চানাচুরের দোকান। অভূতপূর্ব ক্রেতা-সমাগমে দোকান মালিকরা তৃপ্তির হাসি নিয়েই বাড়ী ফিরেছেন।
মূল-মঞ্চে দর্শক মাতিয়েছেন অভিবাসী ও দেশ থেকে আসা কন্ঠ ও নৃত্য শিল্পীরা। বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী ইভা রহমান, রবি চৌধুরী ও নৃত্যশিল্পীদের পারফরমেন্স ভালো ছিলো। এটিএন তারকা ওয়াহিদ গানে-গানে দেশ মাতৃকার কথা ও স্মৃতিকে তুলে ধরেছেন। যথারীতি বৃটিশ-বাঙালীদের কন্ঠে ছিলো আবহমান বাংলার ফোক গান। মেলাতে বাঙালীরা ছাড়াও দেখা গেছে নানা জাতের নানা বর্ণের মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজন
মেলার দিনের ব্রিকলেইনের ব্রাডী সেন্টারে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ষষ্ঠ বৈশাখী উৎসব পালন করছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনের মধ্যে ছিলো নাচ, গান,খন্ড-নাটক, আবৃত্তি।
মেলার দিন খুব ভালো লেগেছে দলে-দলে আমার বয়সী উঠতি তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি। এদের সিংহভাগ হয়তো নানা কারণে নিয়মিত বাংলাদেশে যেতে পারে না। মেলার সুবাদে এরা কিছুটা হলেও পাচ্ছে বাঙালী সংস্কৃতির ছোঁয়া। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় মেলা শেষ হবে। বাস্তবে কিন্তু তা হয়নি। মঞ্চে নাচ-গান শেষ হলেও রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত উইভার্স ফীল্ড ছিলো আড্ডা মুখর।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ৯:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




