ঈদের দিন। সি এন জি নিয়ে যাচ্ছি আমরা তিন বন্ধু মিলে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে । রাস্তা পুরো ফাকা, মনে হচ্ছে আজ হরতাল, কারন ঈদের সময় ঢাকার ৯০ ভাগ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যায়।
আজ অমিতের ফেসবুকে প্রেম হওয়া সদ্য প্রেমিকা আসবে লন্ডন থেকে। টেনশনে অমিতের মুখে কোন কথা নেই। যদি মেয়ে ওকে পছন্দ না করে তাহলে কি হবে? চুপচাপ বসে আছে।
আমি আর রাহি কথা বলেই যাচ্ছি। কোন দিকেই আমদের কোন খেয়াল নেই। আমাদের আলোচনার বিষয় বস্তু ঈদের ড্রেস চুড়ি এইসব , আর মাঝে মাঝে অমিতকে খোঁচা দিয়ে কথা বলা।
রাহি অমিতের চিবুকধরে একবার ডানে একবার বামে ঘুরিয়ে বললও কিরে এত ভয় নিয়ে প্রেম করলা কেমনে দোস্ত?
অমিত এক ঝটকায় রাহির হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল একদম ফাজলামো করবিনা।
আমি অমিতকে শান্তনা দিয়ে বললাম আরে তোরতো চেহারা টেনশনে বাংলা ৫ এর মত হয়ে আছে, এই ৫ মারকা চেহারা কোন মেয়েই পছন্দ করবেনা, দোস্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাথা উঁচু করে মেয়ের সামনে গিয়ে দাড়া , দেখবি তোর চেহারা ফেহারা মেয়েটা আর দেখবেনা।
একটা মেয়ের কাছে একটা ছেলের আত্মবিশ্বাসটা খুবই ইম্পরট্যান্ট।
হঠাৎ মনে হল আমদের সি এন জি টা একটা ধাক্কা খেয়ে কোন উঁচু জায়গায়ঁ উঠে গিয়েই আবার নেমে গেল, আমি কিছুই বুঝলাম না, আমার পাশথেকে রাহি চীৎকার করে উঠল ও মাই গড বলে, অমিতের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল, ওরা দুজনই পেছনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিও তাকালাম পেছনে দেখলাম একটা লোক রাস্তায় পড়ে আছে , আর তার সাইকেল তার পাশে পড়ে আছে, আমি তখন বুঝতে পারলাম আমাদের সি এন জি ওয়ালা সাইকেল আরোহীকে চাঁপা দিয়ে চলে এসেছে। লোকটার বয়স হয়ত ৫০ বা ৫৫ হবে , আমার বাবার বয়সি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখে এসেছি আমার বাবাও ওই লোকটার মত সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে আছে।
প্রচণ্ড কষ্টে আমার আমার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। আমি চীৎকার করছি , সি এন জি থামাও সি এন জি থামাও, লোকটাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, লোকটা মরে যাচ্ছে প্লিজ সি এন জি থামাও, সিএন জি ওয়ালা ঝড়ের বেগে সি এন জি চালিয়ে লোকটাকে চোখের আড়াল করে দিল, অমিত অনবরত সি এন জি ওয়ালাকে গালাগালি করে যাচ্ছে । কুত্তার বাচ্চা , দেখতে পা্স না ? মদ খাইছিশ নাকি হারামজাদা, পুরো রাস্তা খালি তুই কোন হিসেবে সাইকেলের উপর উঠতে গেলি? লাত্থি মেরে তোর দাঁত ফেলে দেব শুওরের বাচ্চা, থামা সি এন জি ।
সি এন জি ওয়ালা কাকুতি মিনতি করে অমিত কে বলল, স্যার, স্যার আপনের দুইটা পায়ে ধড়ি, আমারে সি এন জি থামাইতে কইয়েন না , এহন পাবলিক আমারে পাইলে মাইরা ফালাইব স্যার , কাইল সারারাইত সি এন জি চালাইছি , ঘুমাইতে পারিনায় রাইতে , তাই চোখ দুইটা লাইগা গেসিল, আমি দেহি নাই স্যার , আমারে মাফ কইরা দেন। অমিত চুপ হয়ে গেল।
কোন অস্বাভাবিক কিছু দেখলে বা মানসিক কোন কষ্ট পেলে আমার কাপুনি উঠে জায়, আমি ঠক ঠক করে কাঁপছি , আমার ঠোট শাদা হয়ে গেছে।
অমিতকে বললাম অমিত এটা অন্যায় অনেক বড় অপরাধ। অমিত বলল
প্লিজ তুই একটু শান্ত হ, বোঝার চেষ্টা কর, ওই লোকটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে জানিনা, যদি মরে গিয়ে থাকে আমাদের আর কিছু করার নেই, কিন্তু এখন সি এন জি থামালে এই হারামজাদাকেও পাবলিক মেরে ফেলবে।কি লাভ হবে আরও একটা জীবন শেষ হবে।
আমি শান্ত হলাম।
কিনতু আমার বিবেক আমাকে শান্ত থাকতে দিলনা । আমাকে সে শুধু তাড়িয়ে বেড়ায় , বার বার শুধু প্রশ্ন করে, ওই লোকটা যদি তোমার বাবা হতো তুমিকি তোমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত সি এন জি থেকে লাফিয়ে পড়তে না???
তুমি কি প্রাণপণ চেষ্টা করতেনা তাকে বাঁচানোর???????????
তুমি স্বার্থপর ভীষণ স্বার্থপর।
তুমি অপরাধী , তুমি অপরাধী ,তুমি অপরাধী...............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৪