'আমার বাবা অনেক সিগারেট খেতেন। একবার ডাক্তার বাবাকে বললেন, এরকম সিগারেট খেতে থাকলে আপনার ক্যান্সার হবে। বাড়িতে এসে বাবা আমাকে ডেকে বললেন, প্রতিজ্ঞা করো, জীবনে সিগারেট খাবে না। বাবাকে ওয়াদা দেওয়ার কারণেই জীবনে একটিবারও সিগারেট খাইনি। তবে আমার বন্ধু-বান্ধব অনেক চেষ্টা করেছে, তারা সিগারেট খাওয়াতে সফল হতে পারেনি। যারা সিগারেট খায় না, তাদের পুরস্কৃত করা উচিত।'
.
তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের এমন স্মৃতিচারণ আমাকেও স্মৃতিকাতর করে তুললো। ফিরে গেলাম বছর দশেক আগে। আমার বাবাও প্রচুর স্মোক করতেন। একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। একটু সুস্থ হলে ডাক্তার বলে দিলেন যেন আর কোনোদিন সিগারেট না খায়। তখন আমি উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে। বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক সিগারেট খেত, টেনশন কামানোর চেষ্টায়। খারাপ যাচ্ছিলো সময়টা। আমিও কাছে ছিলাম না। কেউ দেখে ফেললে মাকে বা আমাকে জানাতে নিষেধ করতো।
.
আমি একদিন ছুটিতে বাড়িতে এসে দেখি খাটের তোষকের নিচে, কাগজের বাক্সে, বিভিন্ন লুকানোর স্থানে সিগারেটের প্যাকেট লুকানো। খুব রাগ হলো। একদিন সব প্যাকেট একসাথে করে লুকিয়ে ফেললাম। বাবা এসে খুঁজে না পেয়ে আমাকে বকাঝকা করেছিলেন। সেই স্ট্রোকের পর মেজাজটাই খিটমিটে হয়ে গেলো তাঁর, সিগারেটের নেশা থেকে উঠে আসতে পারছিলেন না। আমি বাধ্য হয়েছিলাম ফিরিয়ে দিতে। আসলে প্রচুর স্ট্রাগলের ভরা জীবন ছিলো বাবার, শুধু সিগারেটের নিকোটিনের ধোয়ায় সেসব ভুলে থাকতে চাইতো।
.
সেই বছরই কয়েক মাস পরে যেকোনো কারণেই হোক প্রতিবেশীর বাসায় বাবা মারা গেলেন। জানি না সিগারেটটা কতটা প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু সেই থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনোদিন আমার ওষ্ঠের স্পর্শ পাবে না ঐ বস্তুটা। সিগারেট সেই থেকেই আমার শত্রু। কলেজ লাইফ, ভার্সিটি লাইফেও তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের মতো আমাকেও অনেকে ধূমপান করাতে চেয়েছে সঙ্গে নিয়ে, পারেনি। কোনোদিন ও বস্তু আমি টান দেইনি একটাও। এমনকি কোনো বন্ধুকে বাকি সব খাওয়ালেও কোনোদিন সিগারেট কিনে দেইনি। কারণ আমি চাইনা আমার মতো আমার কোনো বন্ধুর সন্তান অকালে বাবাহারা হোক।
.
বাবাকে আজকাল আগের মতো মনে পড়ে না। সময় যত যাচ্ছে, নতুন স্মৃতি মগজে জমা হয়, আর পুরাতন স্মৃতি একে একে মুছে যায়। তবে আজও বাবা মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখা দেয় আমার। কিন্তু ঘুম থেকে আমি আর কিছু মনে করতে পারি না।
.
বন্ধুরা,
ধূমপানকে ও সকল ধরণের নেশাকে 'না' বলুন। নিজে বাঁচুন, অন্যদেরকেও বাঁচতে দিন। সিগারেট খেলে টেনশন দূর হয় বা ব্রেইন ভালো কাজ করে অথবা স্মার্ট দেখায়-- এসব ভূয়া কথা। আমি নিজে এসব থেকে দূরে থেকেও দিব্যি ভালো আছি; চাকরি করছি, লেখালেখি করছি, সংসার সামলাচ্ছি, শত্রুদের মোকাবিলা করছি। প্রচন্ড ইচ্ছা, পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা থাকলে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। স্রষ্টা আপনাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছে, তার সদ্ব্যবহারই যথেষ্ট সাফল্য অর্জনের জন্য, নেশার হেল্প আপনার দরকার নেই। নিজের সামর্থ ও স্রষ্টার ইচ্ছার ওপর ভরসা রাখুন। সফল আপনি হবেনই।
লেখাঃ দেব দুলাল গুহ।