somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নির্বাক স্বপ্ন
চিন্তা প্রসবের বেদনা মগজব্যাপী স্থায়ী হওয়ার আগেই কলম ধরতে হতো। মাথার মধ্যে জমে থাকা ভয়ংকর সব চিন্তাগুলোকে পরিণতি দেয়া মত শব্দ কোনো কালেই ছিল না।তারপরও সেই সব গল্প লেখতেই হতো,যেগুলো লেখার পর শান্তিতে ঘুমানো যায়।

নির্বাকে রবীন্দ্র

০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
উচ্চবিত্ত আর নিন্মবিত্তের মাঝে একটু আকটু বিত্ত বৈভবের অধিকারী লোকজনদের খুব সম্ভবত মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলে।এই মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের মানসিকতা অদ্ভুত। তার অলীক কল্পনা করতে ভালোবাসে।যেটা কোন দিন সম্ভব না,সেটা বাস্তবায়ন করার দুঃসাহস দেখায়।যুক্তিহীন কিছু স্বপ্ন দেখে বসে,আবার সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য বহুবিধ পাগলামি করে।আমার মা এমনই এক পাগলাটে মহিলা।মা কে পাগল বলার অনেক কারন আমার কাছে আছে।তার মধ্যে মূখ্য একটা কারন হচ্ছে গিয়ে আমাকে কন্ঠশিল্পী বানানোর স্বপ্ন।রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।অপূরণ যোগ্য এক স্বপ্ন।শৈশবে তাঁতীবাজারে একঘরে থেকেছি।ক্লাশ ফাইভে ওঠে "ফ্লাট বাড়ি"তে আসি।তার আগে থেকেই মা তার ইচরে পাকা ছেলে কে শিল্পী বানানোর স্বপ্ন মনে গেঁথে ফেলেছে।কিন্তু ভদ্রমহিলার বিধি বাম,তার ছেলে নতুন বাড়িতে এসে পড়াশোনা কে টা টা বাই বাই বলে বদ ছেলেদের দলে নাম লেখিয়েছে।নিজস্ব কারিকুলামের বই পড়াত সময় পেতাম না,আর গান শেখার মতন এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস!!মা'র স্বপ্ন অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই বিনষ্ট হল।মা তার ছেলের মন বুঝতে গিয়ে হন্য হোন।ছেলের চঞল মন বুঝতে পারে না।"বড়টা তো এমন ছিল না,ওই এমন হল ক্যান"মা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
হ্যা।আসলেই আমি দাদার মতন ছিলাম না।নাম না জানা কোন আকাশ দেবতার বরে আমি ছিলাম জন্মগত বাচাল।বিরতিহীন ভাবে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে মানুষকে বিরক্ত করার বিরল গুন আমার ছিল।এখনো হয়তো আছে।মা যতই কম কথা বলার পরামর্শ দেন,আমি তো ই বাচাল হওয়ার ভালো দিক ব্যাখ্যা করি।
২।
দাদার ঘরে ছিল গল্পের বই আর মেডিক্যাল সায়েন্সের বই'য়ে সয়লাব।দাদার ঘর আমার কাছে অনেক আকষণীয় ছিল,ঈষনীয় ও ছিল।কারন তার ঘরে ছিল পেন্টিয়াম থ্রি ওলা সুদৃশ্য ডেস্কটপ কম্পিউটার।গেমস খেলার অভিপ্রায় নিয়ে দাদার ঘরে প্রবেশ করলে দাদা বেশীর ভাগ সময় অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে স্বস্তি অনুভব করতেন।আমি কিন্তু একা ছিলাম না, ফাস্ট কাজিন মনোজে'র ও আমার সাথে ঘাড়ে ধাক্কা খেয়ে অপমান, নীরবে হজম করার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।তখনো গল্পের বই পড়া শুরু করিনি।আমাদের বারান্দাতে একটা সময় চমৎকার বাতাস আসতো।বারান্দাতে দাঁড়ালে হুহু বাতাস এসে গালে চোখে লাগতো।কানে পাশে গান বাজতো"ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে/আমার নামটি লিখো/তোমার মনের মন্দিরে।"শ্রুতিমধুর শব্দমালা।যার অর্থ বের করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোন টাই আমার ছিল না।শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
৩।
ক্লাশ নাইনে বাংলা পড়াতেন হাফিজ স্যার।স্যার রবীন্দ্রনাথের"ছুটি"গল্প পড়ানো শুরু করলেন।স্যারের "ছুটি"গল্প পড়ানোর ছুতায় সিল্টন আকাশের সাথে "মেয়েদের পটানোর নানা উপায়"শীর্ষক আলোচনা শুরু করে দিলাম।স্যার আমাদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হয়তো বা আচ করতে পেরেছিলেন আমার ভলগার কিছু নিয়ে আলোচনা করছি।তাই তিনি কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে মনের সুখে বেত্রাঘাত করলেন। স্যারের হাতে মার খেয়ে আমরা তিন বন্ধু এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম"আজ কে আমাদের এই অবস্থার জন্য রবীন্দ্রনাথ ই দায়ী।"।
৪।
রবীন্দ্রনাথ তার জীবনে ৯৫টার মত ছোট গল্প লেখেছেন।তার বেশীর ভাগই আমার পড়া আছে। কিন্তু এখন যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে বসে"বলেন তো অমুক চরিত্রটা কোন গল্পে ছিল?"আমি তাহলে বিপদে পড়ে যাবো।ছুটি,মাল্যদান,সমাপ্তি,মানভঞ্জন,হৈমন্তী,মুসলমানির গল্প,স্ত্রীর পত্র,কাবলিওয়ালা ছাড়া আর অন্য কোন গল্পের নাম মনে পড়ছে না।আর"নষ্টনীড়" কে মনে হয় ছোট গল্পের চেয়ে অধিক কিছু মনে হয়।সত্যজিৎ রায় নষ্টনীড় ছোটগল্প অবলম্বনে"চারুলতা"নামে অসাধারণ একটা মুভি আমাদের কে উপহার দিয়েছেন।আমার কাছে সেরা ছোট গল্পকার হিসেবে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পরেই রবীন্দ্রনাথের স্থান।
৫।
রবীন্দ্রনাথের লেখা সবগুলো গান ই গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত।রবীন্দ্রনাথ ১৯১৫টি গান লেখেছেন।তার মধ্যে আমার আয়ত্বে আছে বড় ৫০টা গান বা কয়েকটা বেশী হলেও হতে পারে,আয়ত্বে বলে বুঝাতে চাচ্ছি, মুখস্থ আছে।আমার মনে হয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের আপিল কোন দিনও শেষ হয়ে যাবে না।অন্তত যত দিন যাবত বাংলা ভাষা টিকে আছে।কঠিন কিছু সত্য যা অপ্রকাশিত ছিল তা রবি ঠাকুর তার গানে খুব সহজ ভাষায় বলে দিয়েছেন।রবীন্দ্রনাথের গানে উপনিষদ,লালন সাইজি বাউল গানের দর্শন ব্যাপক ভাবে খেয়াল করা যায়।তিনি সব সময় জীবন দেবতার আরাধনা করেছেন।গন্ধ-রূপ-রস ভরা ধরণীর মধ্যে অসীমের সন্ধান করেছেন,আরাধনা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি ছিলেন।অন্তত তিনি নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে বেশী কম্ফোট ফিল করতেন।তার বহু লেখাতে তিনি নিজেকে কবি বলে পরিচয় দিয়েছেন।রবীন্দনাথ ঠাকুরের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।রবীন্দ্রনাথের প্রথম দিকের কবিতাগুলোতে কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রভাব ব্যাপক ভাবে লক্ষ করা যায়।১৯২৫সালে লেখা"পূরবী"কাব্যগ্রন্থে একটা মজার ট্যুইস্ট আছে।ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর' সাথে শেষ বয়সের মনস্তাত্ত্বিক প্রেম আর চিঠি চালাচালির সফল ফসল ছিল এই কাব্যগ্রন্থ।
৬।
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে এত বড় লেখা না দিলেও হত।আমার চিন্তার একটা জায়গাতে রবীন্দ্রনাথের বাস।চিরস্থায়ী ভাবে।আমার জীবনে রবীন্দ্রপ্রভাব হয়তো এতো টা ব্যাপক নয়,কিন্তু যত টা আছে তা অসামান্য।মা আর দাদার কাছ থেকে রবীন্দ্রচর্চা শুরু করেছিলাম রবীন্দ্র পাঠ শুরু করেছিলাম।ধন্যবাদ মা।ধন্যবাদ দাদা।শুভ জন্মদিন কবি।

২৫শে' বৈশাখ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চমৎকার একটা গান মনে পড়ে গেল-
হে নূতন,
দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ ।।
তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন
সূর্যের মতন ।
রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন ।
ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,
ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময় ।
উদয়দিগন্তে শঙ্খ বাজে, মোর চিত্তমাঝে
চিরনূতনেরে দিল ডাক
পঁচিশে বৈশাখ ।।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×