somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রত্যাশিত একটুকরো আনন্দ

২৬ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে হঠাৎ কিছু আনন্দময় মুহূর্ত আসে যা সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিত।
সাম্প্রতিক সময়ে আমার নিজের ক্ষেত্রেও এমন এক অভাবনীয় মুহূর্ত এসেছিল, যা আমার কাছে সারাজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে....

এবারের বইমেলায় সামহোয়ারইন ব্লগের ব্লগারদের লেখা বেশ কয়েকটা বই প্রকাশিত হয়েছে, সেই সাথে সম্মিলিত ব্লগারদের বই অপরবাস্তব-৪ তো রয়েছেই। দুরপরবাসে অবস্থানের কারনে ভীষন ইচ্ছে থাকা সত্বেও বইমেলায় যাওয়া হয়না বেশ ক'বছর ধরেই।

ব্লগে আমি নিয়মিত না...দিনের সবটুকু সময়ই বাইরে থাকতে হয় কাজে।
বাসায় ফিরে তিনজনের এক কম্পু দখল নিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ এবং অবধারিত ভাবেই সেই যুদ্ধে জয়ী হোন ছোট সদস্যটি, তিনি কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন ধরনের কম্পুগেমের খোঁজ পেয়েছেন কিনা... সামান্য সময়ের জন্য আমি বসলেও, তৎক্ষনাৎ একজনের গেম আরেকজনের পেপার পড়ার কথা মনে পরে। ব্লগে আসলে বেশীরভাগ সময় যেটা হয় লেখাগুলো পড়তেই সময় বয়ে যায়, অনেকসময় মন্তব্যও করা হয়ে উঠে না...

ফেব্রুয়ারী মাসে ব্লগ পড়বার সময় চোখের সামনে যে'কটা বইয়ের নাম, লেখক আর প্রকাশনীর নাম পেয়েছিলাম টুকে রেখে ভাইকে বলেছিলাম সংগ্রহ করতে। তার মধ্যে আছে "অপরবাস্তব-৪", সাজি আপুর "অপ্রকাশিত চিঠি", মুহম্মদ জায়েদুল আলমের "গ্রহচারী", মনজুরুল হকের "আ লিটল ফাইটার স্লিপিং উইথ আর্মস" আর আমার "উনি" একটা বই কিনতে বলেছেন, আমি অবশ্য জানতাম না। একদিন জানতে চাইলাম বইটার নাম কি? বলে "নির্বাসিতের আপনজন" আরে এটাতো আমাদের ব্লগেরই বই, তুমিতো ব্লগ পড়ো না, এই বইয়ের খোঁজ পেলে কিভাবে!!!..."আমাদের ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ের লেখা বই, অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে"। ভালোই হলো বইটার কথা আমার মনেই ছিলোনা...


সপ্তাহ দুই আগে ঘরের মানুষটা দেশে যাবার সময় বলে দিলাম...আসবার সময় বইগুলো নিয়ে এসো। বই পড়ার ক্ষেত্রে আমি সবর্বভূক মানে সব ধরনের বই পড়ি, কোনো বাছবিচার নেই...একসময় "তিন গোয়েন্দা" থেকে শুরু করে সমরেশের "মানবজমিন", শীর্ষেন্দুর "দূরবীন", হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের "সায়েন্স ফিকশান" সব ধরনের বই পড়া হতো...একবার একটা বই পড়া শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি ছিলোনা, নাওয়া-খাওয়ার কথাও বেমালুম ভুলে বইএর মধ্যেই ডুবে থাকতাম...তেমন করে বই পড়া হয়না ব-হু-উ-ৎ দিন।

দিনদশেক পরে দেশ থেকে ফিরে এলেন "তিনি"। সাথে করে নিয়ে এলেন মায়ের হাতের কিছু রান্না করা খাবার আর ব্লগারদের সেই কয়েকটি বই।
অনেকদিন পরে মায়ের হাতের তিল ভর্তা, কুরবানির গরুর মাংস আর ছোট মাছ চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খেলাম পরম তৃপ্তি করে...আহা!! কতদিন পরে এমন শান্তি করে ভাত খেলাম...খেতে খেতেই চোখটা আদ্র হয়ে উঠলো।

সেদিন ছুটিরদিন ছিলো, খাওয়া দাওয়া করে বসলাম বইগুলো নিয়ে। বই হাতে নিয়েই মনটা কেমন আনন্দে ভরে উঠলো....একটা থেকে আরেকটা বই দেখছি...সবগুলোর প্রচ্ছদ দেখছি, কি যে ভালো লাগছে!!!!!!!!!
আমার সেই কিশোরবেলার দিনগুলো যেনো ছুঁয়ে যাচ্ছি...
কোন বইটা আগে পড়বো, অপরবাস্তব না সাজি আপুর অপ্রকাশিত চিঠি, কোনটা রেখে কোনটা পড়বো!!!!!
ব্লগে কতশত লেখাইতো পড়ি, কিন্তু কাগজের বই হাতে নিয়ে পড়ার মতো এমন আনন্দতো কখনো পাইনি।
এমন বই আছে যেটা হাতে নিলেই মনটা ভালোলাগায় ভরে উঠে, তেমন একটা বই "নির্বাসিতের আপনজন"....প্রচ্ছদটা খুবই চমৎকার সেই সাথে বইটার ছাপা এবং কাগজটাও অনেক ভালো। আর লেখার কথা কি বলবো!!!!! সেটা বলাও আমার সাজে না। শুধু এটুকুই বলবো, জাহিদ ভাই অনেক অনেক ভালো লিখেন...এই বইটার প্রতিটা লেখাই অসাধারন- মন ছুঁয়ে যাওয়া। উৎসর্গটুকুও মন কেড়ে নিয়েছে...

প্রথম লেখাটা "গুরু প্রণাম" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্মরণ করেছেন। লেখাটা পড়ে আমার কান্নার সাথে সাথে বেশ গর্বেরও একটা অনুভূতি হয়েছে। "একটি প্রেমের কাহিনী" এই লেখাটাও খুব মজার করে লিখেছেন। পড়তে পড়তে আমারও দম বন্ধ হয়ে আসছিলো, উনাদের প্রজেক্টা সফল হবেতো!!!!!! দু'তিনটে লেখা পড়েই মনে হলো দেখিতো মনজুরুল ভাইয়ার বইটা কেমন হলো!!! "আ লিটল ফাইটার স্লিপিং উইথ আর্মস"এই একটা বই যেটা প্রকাশিত হবার আগেই ব্লগে পড়েছিলাম ...ডিসেম্বর থেকে সিরিজ আকারে লেখা শুরু করেছিলেন "এক কিশোরের চোখে অমলিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা" ঠিক এইটা না হলেও এইরকমই শিরোনামটা ছিলো যদ্দুর মনে পড়ে...অনেকদিন ব্লগে আসা হয়নি, এত খানিক লেখার পরে সেই সিরিজটার নাম আমার প্রিয় পোষ্টে খুজতে গিয়ে দেখি একটাও লেখা নেই...খুব দুঃখ পেলাম!!!

এই সিরিজটাই সেইসময় নিয়মিত পড়া হোত...মনজুরুল ভাই সাধারনত রাতে লিখতেন বারোটা/একটার দিকে ব্লগে প্রকাশ করতেন...আমার এখানে তখন রাত তিনটে বেজে যেতো...একপর্ব পড়ে দম আটকে বসে থাকতে হতো পরের পর্বের জন্য, এমনও হয়েছে এই লেখা সেই লেখা পড়তে পড়তে তিনটে বেজে যেতো সিরিজের আরেক পর্বও চলে আসতো, পড়ে এমন হতভম্ব অবস্থা হতো যে অনেক সময় কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারতাম না..যেমন অনেক ঘুরাঘুরির পরে কোনো ঠিকানা ছাড়া উনার বাবাকে যেদিন খুজে পেলেন, সেই মুহূর্তটা যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো....পড়তে পড়তে বার চোখটা ভিজে যাচ্ছে আর সেই আল্লারাখার ডাব খেতে না পারার কষ্টটাও ভীষন পীড়া দিচ্ছিল....সব পর্বগুলো পড়া হয়েছিলো, কিন্তু অনেক পর্বেই হয়তো মন্তব্যও করা হয়নি...

তো সেই দিন বইটা হাতে নিয়ে দেখছি, আর ভাবছি বই এর লেখাগুলো আগেই পড়া তবুও এমন বই বার বার পড়তে ইচ্ছে করে...ভুমিকাটা পড়লাম...তারপরে দেখি "আমার কথা ; কেন লিখলাম" এমন একটা পর্ব সেটা পড়তে পড়তে পরের পৃষ্ঠায় এসে দেখি বিভিন্ন ব্লগারদের মন্তব্য... কয়েকজনের নাম দেখে বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে...হঠাৎ দেখি ব্লগের আমার "নিকটা" সেই সাথে "মন্তব্যটুকুও" আছে। এমন একটা কালজয়ী সিরিজ পড়তে পারাটাও বিরাট এক সৌভাগ্যের ব্যাপার, সেখানে পাঠক হিসাবে মনজুরুল ভাই বইতেও স্থান দিয়েছেন তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই পাওয়াটুকু ছিলো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত...বইটা হাতে না পেলে হয়তো জানাই হতোনা।

এই হঠাৎ পাওয়া একটুকরো আনন্দ আমার চিরটাকাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে।




সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৪৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×