আসুন আরিফের মুখ থেকে শোনা ঘটনাটি দেখি-
পরীবাগের ওভারব্রীজের রাস্তা দিয়ে মেইনরোডের দিকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলো। দিগন্ত নামের একটি বাড়ি আছে অই রোডে, সেটা পার হবার পর উল্টোদিক থেকে মেরুন কালারের একটি মাইক্রো এসে আস্তে ৫-৭ হাত সামনে থামে। একজন নেমেই আরিফকে উদ্দেশ্য করে বলে, "ঐ দাঁড়া!" আরিফ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে যায় কেন দাঁড়াতে বলেছে, এর মাঝে আরো চার জন নেমে এসেছে গাড়ি থেকে। জিজ্ঞাসা করতেই পিছন থেকে একটা আঘাত লাগে আরিফের মাথার পেছনে। সে বুঝে যায় ওরা তাকে মারতে এসেছে। তখন সামনের জনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আরিফ দৌড় দেয় মেইন রোডের দিকে। দৌড়ানোর মাঝেই মাথায় পেছন থেকে চার বার চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়া হয়। মেইন রোডের সাথে পেট্রল পাম্পটার ওখানে এসেই আরিফ সাধারণ মানুষের সাহায্য চায়, জনসমাগম দেখে পেছন থেকে আস্তে কেটে পড়ে দূর্বৃত্বরা। অনেকেই উপস্থিত থাকলেও পেট্রল পাম্পের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা দুজন হিজরা এগিয়ে এসে আরিফের মাথায় গামছা দিয়ে বেঁধে দেয়। এরপর আরিফ পরিচিতদের ফোন করে ও হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে যায়।
কিছু বিষয় এখানে নিশ্চিতভাবে বলা যায়-
☛ আরিফ কে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়েছে।
☛ আরিফের সাথে মোবাইল, টাকাপয়সা, ট্যাব ইত্যাদি কোনকিছুই নেয়ার চেষ্টা করা হয়নি।
☛ দূর্বৃত্বরা কোন কথা বা শব্দ উচ্চারণ করেনি, "দাঁড়া" বলা ছাড়া। যেটি তন্ময়ের ব্যাপারেও ঘটেছিলো।
☛ লাইট অফ করে গাড়ি নিয়ে উল্টোদিক থেকে আসা, যেটি তন্ময়ের ব্যাপারেও ঘটেছিলো।
☛ মাথায় আঘাত করা।
☛ যেহেতু ছিনতাই বা অপহরণের উদ্দেশ্যে নয়, সেহেতু আরিফের চলাচলের গতিবিধি লক্ষ্য করা বা গাড়ি নিয়ে ফলো করা।
☛ চাপাতি দিয়ে আঘাত করা, যেটা জামাত-শিবিরের বৈশিষ্ট্য।
☛ সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ বিষয়, দূর্বৃত্বরা আরিফের নামটাও জিজ্ঞাসা করেনি, তারমানে তারা আরিফের পরিচয় নিশ্চিত এবং সুনিশ্চিতভাবে জেনেই এসেছিলো কাকে তারা হত্যা করতে যাচ্ছে।
খুব পরিস্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম কর্মী এবং স্লোগানদাতা হিসেবে আরিফের পরিচয়ই এই হত্যাপ্রচেষ্টার অন্যতম অনুঘটক ছিলো। আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আরিফ গুরুতর আহত অবস্থায়ও স্বভাবসুলভ হেসে হেসে রসিকতা করার চেষ্টা করছিলো, ওর কোন শত্রু থাকতে পারে বলেও আমার বিশ্বাস হয় না।
এখন আমরা কি করতে পারি?
✒ ইমরান এইচ সরকারের পাঞ্জাবীর হিসাব চাইতে পারি।
✒ ছাগুদের সাথে তাল মিলিয়ে গণজাগরণ মঞ্চকে গালি দিতে পারি।
✒ আরিফ মোবাইল/ট্যাব কেনার টাকা কোথায় পেলো সেটা নিয়ে "গোপন" আলোচনা করতে পারি।
✒ গণজাগরণ মঞ্চের টাকা ভাগাভাগির গ্যাঞ্জামে আরিফকে কোপানো হয়েছে, এরকম সমীকরণ দাঁড় করাতে পারি।
✒ মরলে ওরা মরুগগা, এই ভেবে ফেসবুকে দুইটা জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দিয়ে "ল্যাপটপ বিপ্লব" করে ফেলে আত্মতুষ্টিতে ভুড়িতে হাত বোলাতে পারি।
কিংবা
✒ বিকাল ৫টায় গণজাগরণ মঞ্চের আরিফের উপর হামলার প্রতিবাদে "বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল" এ উপস্থিত হতে পারি।
শুধু এতোটুকু মনে করিয়ে দিতে চাই, আজ যদি দীপ, তন্ময়, আরিফ কোপ খেয়ে/নিজের জীবন দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠা করে যেতে চায়, সেটা আপনার জন্য। হ্যাঁ, আপনার জন্য এক সুন্দর, অসাম্প্রদায়িক, স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য।
তাই, এই মানুষগুলির পাশে থাকবেন কিনা সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।
জয় আমাদের হবেই।
জয় বাংলা!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




