"আমার মা"
-নীরব চিৎকার
মাকে নিয়ে অনেক লিখেছি। অনেক লেখাই মাকে উৎসর্গ করেছি। কিন্তু কখনোই লেখাগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করিনি। এমনকি মাকেও দেখাইনি।
আমার জীবনের প্রথম কবিতা মাকে নিয়ে লেখা। সেই কবিতা পড়ে আমার মা আমাকে ধরে কেঁদেছিল। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো দিন মাকে কোনো লেখা পরতে দেইনি। আমার মায়ের চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না। মা কাঁদবে সেই ভয়েই হয়তো।
কবিতাটির নাম ছিলো "আমার মা"। কবিতাটির শেষ কিছু লাইন ছিলো-
ভালোবাসি কিনা জানি না!
তবে তোমার চোখের পানি,
আমার সহ্য হয় না।
আজ আমি যা, যতটুকুন সার্থক, সবটুকুই মায়ের অবদান। জীবনে এমন মায়ের কথা কারো কাছে শুনিনি। আমার মায়ের মত অন্য কোনো মা জীবনে এত কষ্ট করেছে কিনা তাও আমার জানা নেই। হয়তো সব মা-ই নিজের সন্তানের জন্য এত কষ্ট নির্দ্বিধায় সহ্য করে নিতে সব সময় রাজি থাকবেন।
এখনো আমার মা কষ্ট করে যাচ্ছেন। নিজের জন্য না। আমার জন্য। আমার ছোট্ট বোনটার জন্যে।
মা বিষয়টা আমার কাছে সব সময় বেশ আবেগপ্রবণ। তাই মাকে নিয়ে কারো সাথে খুব একটা কথা বলি না। তবে সবার কথাই মার সাথে করি।
আমার মা আমাকে শাসন করেন। জন্মের পর এতগুলো বছর পার করেছি তার পরও। তবে মজার বিষয় কি আমার কাছে কোনো দিনও খারাপ লাগেনি। স্ব-শরীরে শাসন করার অধিকার তো শুধু তারই আছে।
একটা ঘটনা বলি আপনাদের-
কলেজে যাবো। দেরি হয়ে গেছে।
-একটা রুটি খেয়ে নে।
-এখন না মা। পরে। এসে খাবো।
-এতক্ষন থাকবি কি করে? আয়! খাওয়ায় দেই।
মা আমার মুখে রুটি দেয়ার জন্য হাত বাড়ায়। আমি হাতটা সরিয়ে দেই। মায়ের হাত থেকে ডালে ভিজানো রুটির টুকরোটা পরে যায়। মা কিছু বললেন না। মাটি থেকে উঠিয়ে নিলেন রুটির টুকরোটা। বাসার থেকে বের হয়ে বুঝলাম খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছি। সেই সারাটা দিন কেটেছিলো আমার অপরাধবোধ এর সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে। বাসায় এসে সোজা মায়ের রুমে যাই। মা শুয়ে ছিলেন বিছানায়। মায়ের পা ধরে বিছানায় বসি আমি। আচমকা স্পর্শে চমকে উঠে বসেন তিনি। আমাকে দেখে আমার মাথায় হাত রাখেন।
-কিরে বাবা! কি হয়েছে?
-কিছু না মা।
মায়ের স্বভাবিক কথা-বার্তা শুনে আমি বেশ আশ্চর্য্য হই।
-তোর জন্য। তোর বাবার জন্য। তোর বোনের জন্য। তোদের জন্যই সব করি।
-আমি জানি মা! ক্ষমা করে দাও।
-ক্ষমা আমি তোকে তখনি করেছি গাধা! তুই যতই বড় হোস না কেনো আমার কাছে তো সেই ছোট্ট অমিত। আর ভুলতো ছোটরাই করে।
-Sorry মা। কখনো করবো না।
-হয়েছে! যা এবার গোসল সেরে আয়। আমি ভাত মাখাই তোর জন্য।
অনুভব করলাম চোখের কোনায় জল জমেছে আমার। অনেক কৌশলে চোখ মুছে একছুটে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।
এমনি আমার মা। বহুগুণে গুণান্বিত। জীবনে অনেক উত্থান-পতন ছিলো। সবাই জানে না সেই সব দিনের কথা। শুধু ২জন জানে। আমার মা। আর আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষিণী। তবে সেই সময় আমায় আগলেছ তুমি মা।
অনেক বার বলেছি তোমাকে। আবারো বলতে চাই। বারবার বলতে চাই।
অনেক ভালোবাসি তোমায় মা। তবে এতটাও না যতটা তুমি আমাদের ভালোবাসো। ভুল হলে তুমি ক্ষমা করো জানি। তবুও ক্ষমা করে দিও!
সবাইকে "মা" দিবসের শুভেচ্ছা। শব্দটির প্রতি অবহেলা করো না। এর ক্ষমতা অকল্পনীয়!
ভালোবাসি তোমায়!