কিছুক্ষন আগের ঘটনা-
আমি সোফায় শুয়ে শুয়ে নিউজ ফিড চেক করছিলাম। আমার বোন এসে টিভি অন করে "জি টিভি" দেখতে লাগলো। হিন্দি সিরিয়াল। সিরিয়ালের নাম আমি সঠিক জানি না। সুন্দরী ম্যাডামের কন্ঠ শুনে মোবাইলের থেকে চোখ উঠিয়ে টিভির দিকে মনোযোগী হলাম একটু। বাংলায় বর্ণনা করি দৃশ্যটা কি ছিলো-
ম্যাডাম: আজকে তোমাদের ছবি আঁকার দিন। তো শুরু করা যাক। যার ছবি সব থেকে ভালো হবে সে পরীক্ষায় A+ পাবে এবং তার ছবি আমাদের ক্লাস রুমে লাগানো হবে।
(৬-৮বছরের বাচ্চাগুলো সমস্বরে চেঁচিয়ে বললো "ইয়েস ম্যাম")
তারপরের দৃশ্য বাচ্চারা খুব মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকছে। একজনের একটা রঙ-এর প্রয়োজন হওয়ায় সে পাশের জনের কাছে রং চায়।
১ম বাচ্চা: তোমার কাছে এই রংটা হবে?
২য় বাচ্চা: না।
১ম বাচ্চা: ওহ নো। এখন? আমি ওর কাছে চাই।
২য় বাচ্চা: না, না। এ কাজ করো না।
১ম বাচ্চা: কেনো?
২য় বাচ্চা: কারন আমরা কেউ ওর সাথে কথা বলি না।
১ম বাচ্চা: কেনো কথা বলো না?
২য় বাচ্চা: কারন ওর আব্বু-আম্মু আলাদা থাকে।
আমি শেষের লাইনটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
এক্ষেত্রে অনেক আগের একটা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনের কথা মনে পরে যায় আমার। একটা মেয়ের মাথায় উকুন জন্যে কেউ তার সাথে কথা বলে না। কেউ তার সাথে খেলে না। এমনকি ছবি ও তুলতে চায় না।
আচ্ছা, সেই পিচ্চি বাচ্চাটা কি জানে আব্বু-আম্মু আলাদা থাকা মানে কি?
আমাদের দেশের বাচ্চারা "ডোরেমন" নামক কার্টুন দেখে হিন্দি শিখছে- এই বলে বন্ধ করা হলো বেশ কিছু কার্টুন চ্যানেল। সেই শিশুরা যারা ডোরেমনের অন্ধভক্ত ছিলো তারা এখন ডোরেমন না পেয়ে মা'য়েদের সাথে বসে হিন্দি সিরিয়াল গুলো গিলছে। তাহলে ডোরেমন বন্ধ করে কি লাভ হলো? উল্টা ক্ষতিই কি হলো না?
ধরুন, আপনি বিবাহিত। আজ সকালে আপনার কর্তা বা গিন্নির সাথে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। রাতে বসে উপরে বর্ণনাকৃত সিরিয়ালের সেই অংশ দেখলেন আপনার ৪-৮বছরের সন্তানটির সাথে। কৌতুহলবশত সে আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করেই বসে যে, আব্বু-আম্মু আলাদা থাকা মানে কি? জবাব কি দিবেন? আপনার সন্তান। যা মন চায় তাই শিখান। আমার কি?
আমি হলপ করে বলতে পারি, এমন দশটি পরিবার নিন যাদের বাসায় ডিস বা স্যাটেলাইট টিভি আছে এবং যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪। সেই ৪০জনের মধ্যে আপনি কমপক্ষে ২২জন পাবেন যারা এই হিন্দি যুক্তিহীন সিরিয়াল রোগে আক্রান্ত। আমার বাসাও এর ব্যতিক্রম না। ৪জন সদস্যের মধ্যে ৩জনরেই একই অবস্থা। মজার বিষয় হলো, তাদের ২জন ইন্ডিয়ান বাংলা সিরিয়ালে বিশ্বাসী।
যেই লোক সন্ধা ৭টায় টিভির সামনে বসতো চ্যানেল আই-এর খবর দেখার জন্য, সেই লোক এখনো সন্ধা ৭টায় টিভির সামনে বসে। তবে খবর দেখার জন্য না। বসে স্টার জলসা'য় "ইষ্টি কুটুম" নামক সিরিয়াল দেখার জন্য। যেই সিরিয়ালে কিনা শ্বশুরের দুই বউ, আবার জামাই এরো দুই বউ। এর কোনো মানে হয়?
আর সিরিয়ালগুলোর ভয়ংকরী নেশা এতই বেশি যে পুরাতন সিরিয়াল শেষ হয়ে নতুন সিরিয়াল আসলেও মানুষ হুমড়ি খেয়ে পরে সেগুলোর উপর।
আমার এক ভ্যাগাবন্ড বন্ধু একদিন আমার পাশে মুখখানা বাংলার পাঁচ করে বসেছিল। এটা দেখে আমি বললাম-
আমি: কি হইসে রে??
বন্ধু: আম্মুর সাথে টিভি দেখা নিয়ে ঝগড়া হইসে বা*!!
আমি: (হাসতে হাসতে) কেন?? কেমনে??
বন্ধু: আর কইস না। আমি তো এমনিতেই টিভি কম দেখি। তো আজকে ভাত খাওয়ার সময় একটু রিমোটটা নিলাম। আম্মু আইসা বলে সিরিয়াল দিতে। আমি কইলাম যে সিরিয়াল তো তুমি সব সময় দেখো। আমি তো টিভি সব সময় দেখি না। সে আমারে ইমোসোনালি ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো। রিমোট ফালায় দিয়া আইসা পরসি।
এই ঘটনা নতুন কিছু না।
এবার আসি হিন্দি চ্যানেলগুলার ভিউয়ারের হিসাবে। আপনি কি বলতে পারবেন আমাদের দেশে কতজন মানুষ হিন্দি চ্যানেল দেখে?? আমি সিওর ১০জন মানুষের মাঝে ৮জনেরই কোনো ধারনা নাই এ বিষয়ে। আমিও সেই ৮জনের একজন। তবে আমি এটা বলতে পারি ইন্ডিয়ায় কয়টা মানুষ বাংলাদেশের চ্যানেল দেখে। একজন ও না। আরে ভাই, ইন্ডিয়া সরকার বাংলাদেশের কোনো চ্যানেলই নিজেদের দেশে এলাও করে না (আমার জানা মতে)। কারন এতে তাদের নিজস্ব চ্যানেলের TRP কমে যাবে।
আমারাও ব্যবসায়ী ওরাও ব্যবসায়ী। আমরাও আমাদের দিকটা বুঝি ওরাও ওদের দিকটা বুঝে। তবে আমরা একটু কম ওরা একটু বেশি।
জয় হোক ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের।
জয় হোক ইন্ডিয়ান চ্যানেলের।