-আচ্ছা, লাভ ম্যারেজেও কি বিচ্ছেদ, মানে ডিভোর্স হয়?
-অবশ্যই হয়! না হওয়ার কি আছে?
একবার কল্পনা করুন তো বিষয়গুলো (যারা মনে করেন যে তাদের ভালোবাসা ১০০ ভাগ খাঁটি, শুধু তারাই)।
আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে বৈধভাবে নিজের পাশে পেলেন। অর্থাৎ আপনারা বিয়ে করলেন।
সব কিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো। অমূল্য ধন হাতে পেয়ে তার প্রতি মানুষের যেভাবে আগ্রহ নষ্ট হতে শুরু করে, ঠিক সেই ঘটনাই আপনার সাথে ঘটতে শুরু করলো। আগ্রহ কমতে কমতে সব একদম শুন্যের কোঠায়!
এবার আপনার চোখে বিরক্তিকর এক প্রাণীতে, কেলাসে রুপান্তর হলো সেই মানুষটিই, একদিন যার হাত ধরে বলেছিলেন, "তুমিই তো আমার সব।" (!), একদিন যাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, "সব সময় পাশে থাকবো।" (!), একদিন যাকে নিয়েই ছন্দ একেঁছিলেন কাগজের নিঃস্বার্থ সাদা পাতায় (!), একদিন যার জন্য আপনি মরতেও যাচ্ছিলেন (!), সেই মানুষটিই।
বিরক্তি রুপ নিলো রাগে, ক্ষোভে, অপমানে! নাহ, আর সহ্য করা যায় না! একটা গুরুত্বপুর্ন স্বিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। আরো কষ্টদায়ক করি ঘটনাটাকে (সত্যি বলতে এত জলদি বিচ্ছেদ আমিও চাইছি না)। আপনাদের সাড়ে ৩ বছরের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আরো কয়েক মাস একে অন্যকে সহ্য করা। কয়েকটা মাস মিলে সময়টাকে বছরের রুপ দিলো। আপনাদের মেয়ে এখন টিনেজার। এবার আর সমস্যা নেই। সে বুঝতে পারবে সমস্যাটা। বেস! দুই মেরু, পরস্পরকে বিকর্ষন করে গোলকের দুই প্রান্তে। মাঝে মাঝে গোলকের আকস্মিক কম্পনে দুই মেরু কাছাকাছি আসলেও তা নিতান্তই বাধ্য হয়ে। আমাদের দেশে যদিও বাধ্য বাধকতা খুব একটা নেই। পুরুষগুলো সব কিছু ফেলে দিয়ে চলে যায়, একে বারেই। সবকিছুর মাঝে হয়তো মায়া নামক জিনিষটাও থাকে, আর নয়তো মায়া বলে আসলে কিচ্ছু নেই।
সাবেক প্রিয় মানুষটাকে সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের নেই। যাদের আছে তারা অবশ্যি মানুষ না।
এবার বলুন তো, আপনার সাথে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই বলবে, "আরে নাহ। অনেক ভালোবাসা তো আমাদের মাঝে।" যেই ৭ জন এই কথা বলবে তারা বাস্তবতার পক্ষপাতি নয়, তারা আসলে আবেগী। আর বাকি ৩ জন যারা অন্য কথা বলবে তারা আসলে বাস্তববাদী।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি! শতভাগ বাস্তববাদী কিংবা আবাগী হওয়া উচিৎ নয়। কারণ, বাস্তববাদী চিন্তা ভাবনা কখনোই আপনাকে আপনার প্রিয় মানুষের একদম কাছে যেতে দেবে না। অন্যদিকে আবেগী চিন্তা ভাবনা কখনোই আপনাকে শক্ত হয়ে চিন্তা করার সুযোগ দেবে না। যার ফলাফল সাধারনত হয় আরো ভয়ংকর। একটু বুঝিয়ে বলি বিষয়টা। আবেগী একটা মেয়ে, বিয়ের পর যখন তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর দ্বারা তিরকৃত হয় তখন তার মাথায় অনেক কিছু একসাথে জড় হয়। যার চাপ সেই মেয়ে নিতে না পেরে সহজ উপায় বের করে চাপ কমানোর। যার নাম "আত্মহনন"। একটা সময় আমি অবাক হতাম এই ভেবে যে, পৃথিবীতে এমন সাহসী মানুষও আছে যারা নিজের জীবনের মূল্য শুন্যের কোঠায় ধরে জীবনকে বিলিয়ে দেয় নিজ ইচ্ছায়!? এখন এটা ভেবে অবাক হই যে, পৃথিবীতে এত কষ্ট আসলেই আছে যার থেকে মুক্তির সবচে' সহজ পথ "আত্মহত্যা"।
তাই আমি বলি কি, শুধু আবেগ কিংবা বাস্তবতা চিন্তা না করে দুইটা একসাথে করে চিন্তা করেন। যাতে আবেগ ও বাস্তবতাবাদী চিন্তার অনুপাত হবে ২:৩। নিজেকে প্রশ্ন করুন, যার সাথে থাকার জন্য এখন সব কিছু করতে প্রস্তুত তাকে পাওয়ার পর ও সদা প্রস্তুত থাকবেন তো? তার সাথে মানিয়ে এক ঘরে থাকতে পারবেন তো? এখন তো শুধু দু' একটা পছন্দই মিলেছে , অপছন্দগুলো মেনে নিতে পারবেন তো? উত্তরগুলো যখন সত্যি সত্যি "হ্যাঁ" আসবে তারপর স্বিদ্ধান্ত নিন।
প্রিয় মানুষটির হাত ধরে তাকে আশ্বাস দিন। তাকে বলুন, "তুমিই আমার সব। সব সময় তোমার পাশে থাকতে চাই। সব সময় মানিয়ে নিয়েই পাশে থাকবো। ভালোবাসি তোমায়, সত্যিকারের ভালোবাসা!"