"তারিখ: ২০ই অক্টোবর, ২০১২।
সময়: রাত ১টা ৯...
.
কম্পিউটারে চারটা গান বারবার বেজেই চলেছে। স্বার্থপর্, কষ্ট বেঁচে খাই, অন্ধকার ঘরে এবং ধরো কোনো সকাল বেলা। হুমায়ুন আহমেদের লেখা "তোমাদের এই নগরে" নামের বইটা নিয়ে বসেছিলাম। আগের মত ধৈর্য্য না থাকার দরুন তিন পাতা পড়েই সমাপ্তি টেনেছি। অনেক দিন পর এখন কম্পিউটারের কীবোর্ডের উপর অমানবিক অত্যাচার করতে বসলাম সস্তা কিছু সাহিত্য চর্চায় আশায়। দেখি এখানে কতটুকু ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে পারি...
.
এতটুকু লিখেই রাব্বী সাহেব হাল ছেঁড়ে দিলেন। নাহ! ধৈর্য্যে এখন আর একদমই কুলায় না। গল্পের সুন্দর কোনো প্লটও মাথায় আসছে না। খুব নিষিদ্ধ কিছু কাজ করতে ইচ্ছে করছে তার। নিষিদ্ধ কাজগুলো করতে হয় রাতের অন্ধকারে। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, মাঝরাতে। পৃথিবীর আদিম ইতিহাসের বেশীরভাগ নিষিদ্ধ কাজ এবং নিষিদ্ধ কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে মাঝরাতে। হিটলার তার কাজের পরিকল্পনা করতেন মাঝরাতে। হিটলার আত্যহত্মাও করেছিলেন মাঝরাতে। মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতার পরিকল্পনা করেছিলো মাঝরাতে। রাব্বী সাহেবও নিষিদ্ধ কিছুর পরিকল্পনা করছেন।
.
পাশের রুমে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রাব্বী সাহেবের অন্তঃসত্তা স্ত্রী- তিথি। রাব্বী সাহেব আর তিথির বিয়ের বয়স ৬ বছর। তাদের দু'জনের বয়েসের পার্থক্যও ৬ বছর। বহু চেষ্টার পর তাদের প্রথম সন্তান এখন মায়ের পেটে পরম মমতায় আচ্ছন্ন। ডাক্তারের ভাষ্যমতে সমস্যাটা রাব্বী সাহেবের-ই ছিলো।
.
বেলকনিতে রাখা চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিয়ে সিগারেট ধরালেন রাব্বী সাহেব। সিগারেটের নাম গোল্ড-লিফ লাইট। রাস্তার পাশে একপায়ে দাড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টটার নিচে একটা কুকুর বসে নিজের শরীর চাঁটছে। রাব্বী সাহেব নিজের অজান্তেই আস্তে করে বলে উঠলেন, "কুত্তার বাচ্চা"। তার হাতে থাকা আগুনের ফুলকিটা থেমে থেমে গাঢ় রঙের হয়ে জ্বলে উঠছে আর নামছে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে রাব্বী সাহেব চেয়ার ছেঁড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
.
নিথর একটা মৃতদেহ খাটের উপর পড়ে আছে। যেই অবস্থায় আছে সেটাকে শুয়ে থাকা বলে না, পড়ে থাকাই বলে। একটা চোখ অর্ধেক খোলা, অন্যটা পুরাটুকুই খোলা। বড়-বড় করে, ভয়ংকর ভাবে খোলা। শ্বাসনালীটা দুইটা অংশে ভাগ করা। ধারালো কিছুর সাহায্যে ভাগাভাগিটা করা হয়েছে। পেটের মাঝখানটায় একটা গহ্বর। অনুমান করা যায়, লম্বালম্বি করে কাঁটার ফলেই এই গহ্বরের সৃষ্টি। মৃতদেহটার পাশেই একটা ৩৩ সপ্তাহের নবজাতকের দেহ ৬ অংশে ভাগ করা। দুইটা হাত, দুইটা পা, একটা মাথা, আর দেহের বাকিটা। কি বীভৎস ব্যাপার-স্যাপার!
.
এখন রাত ৪টা ১৩। রাব্বী সাহেব বাথরুম থেকে বের হয়ে আবার বেলকনিতে এসে বসেছেন। সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে গিয়ে তিনি একটু অবাক হলেন। আজকেই তিনি জীবনে প্রথম সিগারেট টানলেন, এবং ইতিমধ্যে এক প্যাকেট খালাস ও করে ফেলেছেন। এখন তার হাতে প্যাকেটের শেষ সিগারেট। ভেজা হাত দিয়েই কষ্ট-মষ্ট করে ম্যাচ জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন রাব্বী সাহেব। ল্যাম্পপোস্টের নিচে থাকা কুকুরটা এখন করুণ সুর তুলে কাঁদছে। নিষিদ্ধ রাত্রির খবরগুলো এই বোবা প্রানীটি কিভাবে কিভাবে যেনো আগে-ভাগে পেয়ে যায়। খুব দ্রুত রাব্বী সাহেব তার হাতের সিগারেটটা শেষ করলেন। আরেকটা কাজ যে এখনো বাকি! বেলকনি থেকে তিথির শুঁকাতে দেয়া শাড়ি হাতে নিয়ে রাব্বী সাহেব শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। এমন সময় হটাৎ করে একটা চামচিকা বিকট শব্দ করতে করতে উড়ে চলে গেলো বেলকনির সামনে দিয়ে।"
- এতটুকু লেখা শেষ করে প্যাকেটের শেষ সিগারেটটা টানতে বেলকনিতে এসেছেন রাব্বী সাহেব। বেলকনির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে নিশ্চিন্ত এবং শান্ত মনে এখন নিজের সিগারেট টানছেন তিনি।
.
তিথির পাশে বসে আছেন রাব্বী সাহেব। তিথির কপালে ছোট করে একটা চুমু এঁকে দিতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু কোনো এক শক্তিশালী শক্তি তাকে এ কাজটি করতে দিচ্ছে না। রাব্বী সাহেব এক বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন তিথির দিকে। হটাৎ করেই রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে থাকা কুকুরটা করুন সুরে কেঁদে উঠলো।
.
২০১২ এর অক্টোবর মাসের ২১ তারিখের মোটামুটি সব পত্রিকায় একটা খবর ছাপানো হয়।
শিরোনাম: "রাজধানীর মহাখালিতে পরকীয়ার জন্য নিজ অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে খুন করে নিজে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্যহত্মা করলেন জনপ্রিয় লেখক রাব্বী আহমেদ"।
.
ভেতরের গল্প আমি বাদে আর কেউ জানে না। থাক! ভেতরের গল্প না হয় অন্যকোনো সময় বলবো... অন্যকোনো নিষিদ্ধ রাতে!
বি.দ্র: আমি যদি গল্পের শেষে লিখে দেই- "সত্য ঘটনা অবলম্বনে", তবে ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই... হলেও হতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭