somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়ানক নৈসঙ্গের ভিতর পাওয়া কাব্যগুলি-২

২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা:
এমন হয় কখনো। সেদিনো আমাকে ভয়ানক নৈসঙ্গ পেয়ে বসেছিলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো ঘরের দেয়াল বুকে চেপে ধরি। সম্ভব হলো না। ঘোর এলো। নিজেকে পেলাম কোথাও কোনো মরুভূমির ভিতর। কবিতা লুকিয়ে ছিলো কোথাও। সহসা তাকে পেলাম। আমার প্রাণ এবং নৈসঙ্গ নিঃশব্দে তার কাছে সঁপে দিলাম।
সেদিন ছিলো ৩. মার্চ,২০১০। সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিট থেকে রাত ১১টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত কবিতার ভিতর। এই ১৩ ঘণ্টায় ৫০টা কবিতা এলো রক্ত এবং নৈসঙ্গ ছিঁড়ে। কিছু হলো কিনা জানি না।
কিন্তু একটা কিছু হতে না-পারার কষ্ট নিয়েই কোনো দিন চলে যাবো জানি।
-------------------------------------------------------------------------------

০১.
বাতাস একা গিট খুলে শঙ্খশাড়ির
উপকথার নেউল বিশদশরীরে দাঁড়ায়
দুপুর ভয়ানক বিভ্রম সূর্যের নৃত্যে
স্তব্ধ মৃত্যুর কুসুম উদ্গত চক্রমন
এরপর বালিঝড়ে ঝরে যায় ঝরে যায়
আঘাত আর প্রতিঘাত পরস্পর
মাঝখানে শূন্যতা
দুপুরগুলি ছাই ছাই উড়ে শঙ্খশাড়ি

০২.
একজনকে দেখা যায় ছিন্নঝুড়ি হাতে
একজন তার যকৃত ধরে আপন হাতে
এটা মন্দ নয়
এর রঙ নীলাভ কখনো দিগন্তরেখা
এটা তিতকুটে আর বিষাদ
এটা তারই ছিলো বুকের ডানপাশে
একটি নিষ্পালক খরগোশ পরিক্রমা
সূর্যাস্ত বিকেল
বাতাসের শরীরে বালিখেলা বালিকা

০৩.
চারপাশেই দূরে দেখা যায়
দিগন্তরেখা স্পষ্ট বোঝা যায়
ক্লান্তি ছিলো না
খুরধ্বনি ছিলো না কখনো
অশ্ব ছিলো ক্ষিপ্র সব ঘোড়া
তাদের কালো বসন আমারও
তাদের শাদা বসন আমারও
মাথায় র্ঝণার কারুকাজ
পথজুড়ে শেয়াল দাঁড়িয়ে

০৪.
এটা কোনো অনাথ আশ্রম নয়
পুরাতনকালেও ছিলো না
ছিলো না বিস্ময়
একটি পানশালা এখন কঙ্কাল
সরাইখানার রাত টিকটিকি সহবাস
কোমরে বাঁধা ঝড় এবং পানীয়
তার গন্তব্য দিগ্বিদিক
পায়ে লোহার জুতো ক্রমে ভারি
এটা কোনো অনাথ আশ্রম নয়

০৫.
প্রাচীন সমুদ্রের গন্ধ প্রতুলতা
তৃষ্ণাতুর বালিকণ্ঠে নামকীর্তন ক্ষয়
স্বপ্ন আছে সমুদ্রসঙ্গম
পরস্পর ভিন্ন বিভিন্ন
সে নুনসহ বয়ে যায় জলজ স্মৃতি
কেউ তার গন্ধ ধরে শুষ্ক বিস্মৃতি
কাঁটাগুল্ম হাসে কণ্টকলাবণ্য

০৬.
বালিয়াড়ি পাড়ে নারীরা বৃত্তাকার
করজোড় চক্রমন ঘনায়মান
মধ্যে উলম্ব বৃক্ষ বালি দিয়ে গড়া
একা বৃক্ষ গাছ হতে চায়
বৃরে আকার শিশ্নের আদল
গল্পশেষে চোখে ডোরাকাটা শকুন
নখ আর আচারসহ পতন
নারীরা ছিন্ন বক্ষবন্ধনী সজ্জা
তলে লুকিয়ে রাখে মায়াবী আরক
তলপেটে শিশুদের কোলাহল

০৭.
শ্বাসকে গ্রহণ করি মৃত্যুর আগে
সোনাস্পর্শে জেগে ক্ষয় করি সূর্য
সূর্যচুলে ক্ষয় হয় হরিদাভ বাদক
বীণা দেহরেখা টেনে নিকট ভোর
বালিতে কাচের সকল সম্ভব দুপুর
দুপুর তপ্ত মরীচিকার শাড়িসুর

কেউ পিতামহের হাত ধরে কেকা
খচ্চরটি তাকে নিয়ে গেছে একা

০৮.
সে আগে আগুন ধরায় বৃত্তের বাহিরে
সারারাত জ্বলে সহমরণ পতঙ্গ
সারারাত তারা জ্বলে জ্বলে উল্কা
সারারাত চাঁদ জ্বলে জ্বলে জোছনা
সারারাত শিয়ালের চোখ জ্বলে ধূর্ত
শিয়াল আর সে নির্ঘুম ত্রস্ত
বুকের হাড়ে একটি ফুটো হয়
ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায় সুদীর্ঘ ভয়
ভোরবেলা হাওয়া ঘুরে আগুনের ছাইয়ে
শিয়াল আর সে পরস্পর বৃত্তের বাহিরে

০৯.
নির্জনছায়ার নৃত্য দেখে ফিরে গেছি পাথরে
পাথরে পায়ের ছাপ চিহ্নের অতীত
কে কাকে বয়ে বেড়ায় রাতভর দিনভর
কণ্টকের ফুলে কান্না আছে গীতগন্ধ সন্ধ্যার পাশ
বারংবার ফেরাফেরি ভিন্ন চূড়ায়
বিস্তারিত ছিলাম জন্মাবধি

আদিম সন্ধান ফিরে যাবে উল্টোরথে

১০.
একটি হাওয়া ছিন্ন করি নিঃশ্বাসের থেকে
একটি হাওয়া জুড়ে দিই চুলের অক্ষরে
বন্দনা ক্লান্তি দিলে কৌণিক রেখা
নির্বাস এসেছে পায়ের পাতা ধরে বহুদিন
ফিরে যাওয়ার পথ জানা নেই কিছু
গন্তব্যের মান সবসময়ই শূন্য

যে আমাকে শূন্য করে রেখেছে আকাশে
আমিও শূন্যতা এঁকে রাখি

১১.
কাউকে বুঝাই না না ঘৃণারতি
বিকেলের প্রান্তে শোধ
ভাঙো জাদু দুবেলা
ভাঙো নিঃশ্বাস
দুইপ্রস্থ বালিখাতা অনুবাদ করি
ভাবি হাহাকার জেনেছি
এ তারও দীর্ঘ
হিরন্ময় অসুখ
বিকেল আসে দুপুরের কাছে
চায় যৌবন

দুপুর গলে বিকেল হয়ে যায়

১২.
মাঝখানে অনুষঙ্গ ছিলো শাদা চাঁদের খুলি
খুলিতে মদ আর বিভ্রম একাকার
রূপকথা ভেবে আঙুলের নখে দেখি বন্দরের মুখ
বালিরেখা কেঁপে যায় গুহামূলের স্মৃতি
হলুদরঙ উদ্ভিদ শীতল স্পর্শ দিলে ভাবি তৃষ্ণা

হলুদের নাম অপরূপা মেন্ডোলিন

১৩.
নিবিড় কুণ্ডলে শুয়ে থাকি
শুয়ে থাকি
দূরাগত অরণ্য মুখে ঝাপটা দেয় শীতল
শীতলতা গ্রামের নাম নেয় দুইবার
তারপর মাইল মাইল প্রস্থান
পানির বোতলে জমা হয় ঘাম
দুহাতে চিরে ফেলি বৈতাল দুপুর
আমি তখন ক্ষিপ্র সেন্টর

সূর্যে লক্ষ্যস্থির করি

১৪.
পাথরের ভাঁজে কখনো বৃষ্টির স্মৃতি
আমি আঙুলে খোদাই করি র্ঝণা
উষ্ণতা হরণ করি
ভাবি দূর বন
দূর সুর
দূর মাছ
আর প্রতারিত আষাঢ়

সে বন্দনা নিলে আমি সুর
সে ফিরিয়ে দিলে আমি তৃষ্ণাদুপুর

১৫.
নিজেকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছি
একটা ছক এঁকে নিয়েছি পরিক্রমা
বাঘবন্দী ছক

বহুদূরে একটি গাছের অসুখ
যেতে চাই অসুখের দেশে
অসুখ এমন আছে চোখের নিচে
ছক কেটে প্রলম্বিত করি পথ
রেখা হয় শুধু পথের রেখা
দড়ির উপর হেঁটে ক্ষয় চোখের ভ্রূন

পতন নিশ্চিত জানি
বাঘবন্দী ছকের ভিতর

১৬.
দেখি আকাশ রঙহীন উড়ছে গড়ুর
দেখি মাথার অনেক উপর দুলছে
মাটি নেই
চারপাশে দিগন্ত আছে একা
মাঝখানে একজন শূন্যতার সুর
আমার ছায়া আছে সন্ধ্যার আগে
তারপরও ছায়া বানাই ছায়ার জাদুকর
তারপর শরীর বুনি চিলের উড়াল

রাত জেগে ভুলে থাকি রাত

১৭.
রাত গাঢ় হলে পরে নেয় চুল
হাত থেকে খুলে রাখে শৈশব আর ফুল
পরে নেয় দুপাটি বুটিদার নাম
পথের পাখায় কদাকার আতরের দাগ
বাড়ন্ত কেশের মূলে মৃত কম্পন
লাল হতে গিয়ে কালো
জোছনার শব পড়ে থাকে বালির মাঠে
মাঠের কিনার ধরে বহে কলেপড়া গান

গান তোর যন্ত্রণা রঙিন

১৮.
পুনশ্চ পাতা উল্টালেই বেতাল শহর
শহরে তপ্ত বাতাস
বাতাসের নাম নেই রঙ অন্ধ
ঘুমোলেই ফুরিয়ে যায় অন্ধকার
নির্বাসে ঘুম রেখে বাতাবিনেবুর বন
ডানা মেলে বাতাস কখন
শহরের উজানে কেউ একজন
মাঝখানে দোটানায় একা একাকার

জরাসন্ধ প্রকার

১৯.
সরোজিনী ছাই হয়ে আছে সুর্মাদানি
তার চোখের পাড়ে কালির তৃষ্ণা আঁকা
ভুলের উদ্যান হতে ছিঁড়ে এনে বেনি
পাশের পাথরে মৃতফুলের পাশে অলক

সরোজিনী ছায়া ছিলো কিছুকাল আগে
এখনো তার নৃত্যছল চোখে লেগে আছে

২০.
অর্ধেক নেমে গেছে শাড়ি
অর্ধেক পেঁচিয়ে রেখেছে পোড়োবাড়ি
দুপুরের কাল ভুল মনে পড়ে
ভুলের গায়ে শামুকের রূপ
দিন এসে কড়া নাড়ে বন্ধ দরজায়
দরজার ওপারে তালা
শামুক দেখে দিনের চোখ নেই
শাড়ি নিজেকে গুটিয়ে দরজায় পাহারা
কেঊ আসবে না তারা

২১.
পুষ্প পতঙ্গ হলে ভস্ম থেকে নীল
পতঙ্গ প্রজাপতি হলে পুষ্প বকুল
জড় আর অজড়ের সহবাস পরিণত
ভূত তার শরীর খুলে দাঁড়ায়
শরীরের দুইটি হাড়ে যন্ত্রণার চিহ্ন

প্রজাপতির সাথে বকুলের শীৎকার

২২.
হাওয়া আসছে হাওয়ার জমজ
কোন হাওয়া বোঝা যাচ্ছে না
আমি দিক নির্ণয় জানি না কখনো
জানলার ব্যাপার নেই
দেয়ালও নেই
দূরে অনেক দূরে শুয়ে থাকি
পাশে শুয়ে ক্লান্ত শিয়াল
আকাশে শুয়ে থাকে বৃহন্নলা চাঁদ

আমি তাকিয়ে দেখি না

২৩.
তিনি বললেন যুদ্ধের চিহ্ন আছে
আমি খুঁড়লাম চিহ্নের অতীত
অতি প্রাচীন শর ও বল্লমের হাড়
খুরের নৈরব ও মৃত্যু
দালিমের দানায় রঙের উৎসার
খেচরের ছায়াসংগঠন

তিনি বললেন প্রণয়ের চিহ্ন নেই
আমি না খুঁড়তেই পেলাম উপবন

২৪.
সে একজন একটি শকটে উপবিষ্ট
কাঠের চাকায় জরিদার পাড়
রাস্তায় বিদ্যুৎ আঁকে কাঠের চাকা
এশিরীয়রা এনে গড়িয়ে দিয়েছিলো
তার নাকছাবিতে ঝুলে সাইমুম
তার নাকছাবিতে উটের তিয়াস
তার বুকের দুইটি চিল উড্ডীন

সে প্রথমেই অস্বীকার করে আভরণ

২৫.
রাতে দূরে আগুন দেখা যায়
ছুটে গিয়ে কাছে গেলে কিছু নাই
বাতাসের ফিসফাস
কচ্ছপের প্রতিকৃত
জেব্রার পেটের নক্শা
তরমুজের বুকের অনলে গড়ায়
মদের নির্দিষ্ট কোনো রঙ নাই
চোখের নির্দিষ্ট কোনো রঙ নাই
তারপরও চোখ পান করি
দৃশ্য পান করি না

২৬.
টোটেম কথা বলে উঠে
ঘিয়ের গন্ধে ধসে পড়ে সূর্যস্বর
সূর্যের চোখ মলিন হিলিয়াম
পাথরের বনে একটি উদ্ভিদ
তিনি বেড়ে উঠেন
তার পায়ের আঙুল গাঢ় রাতুল

টোটেম হাত তোলে
তার হাতে সাতটি আঙুল

উদ্ভিদ ক্রমে উত্থিত তরঙ্গ

২৭.
আমি জ্বলতে থাকি
ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধে ভিজে আকাশ
একটি প্রাচীন বৃক্ষ ছুটে আসে
আমাকে ভিজিয়ে দেয়
ত্বক ভিজে শুধু
বৃষ্টির খেলা সূর্য সহ্য করে না

আমার হাসি পায়

২৮.
একজোড়া শকুন উড়ে
ঘুরে ঘুরে উড়ে দুইজনে একা
নিচে মৃতদেহ স্মৃতিহত
নিজের চোখের কোটরে পুরে দিই রোদ
বের করে আনি অন্ধকার

অন্ধকার শকুনের খাদ্য হোক

২৯.
সে উনুনের পাশে বালিতে গর্ত করে চারহাত
একটা ছুরি আর দুইটা কদবেল পুতে রাখে
তারপর সারা বিকেল কাঁদে
তার কান্না একটি নিঃসঙ্গ খেচর হয়ে যায়
তাকে সঙ্গ দেয় না
উড়ে চলে যায়
মৃত ঘোড়াটি পেছনে পড়ে থাকে
বাতাসে তখনো ইকো হয়ে ভাসে হ্রেসা
মৃত বোতলটি জলশূন্য
বাতাসে তখনো জলের গন্ধ হাহাকার
সে অদূরে ছুটে গিয়ে পান করে মায়ানদী

তার ঠোঁট পুড়ে কয়লা

৩০.
ক্যাকটাস প্রকার ভেদে পাল তোলে সকণ্টক
হলুদ আর বেগুনি ফুল পড়ে থাকে
ফুলগুলি ছাই হলে জন্ম নেয় নতুন কাণ্ড
ফুলগুলি পরিণতির অপো
ক্যাকটাস উড়ে চলে
ক্যাকটাস ইথার ভিন্ন করতে পারে না
ফিরতেও পারে না

এমতাবস্থায় ঝুলে থাকে

৩১.
অবশেষে বালি অভিযোজন জানে
বালির প্রাণ নশ্বর নয়
একটি গোলাপ সহসা কাঁটাঝোপে ফোটে
গোলাপের রঙ শাদা
তিন টুকরো পাথর ক্রমশ এপিটাফ
একটি ঝড় আছে এখনো তেরোশো মাইল দূরে
একটি অন্ধকার ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে এখনো

গোলাপ রঙিন হয়

৩২.
লাল লেজের বাজপাখিটি ঝাপ দেয়
মার্চের তপ্ত হাওয়ায় কীসের গন্ধ
আমি লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যাই
আমার শ্যেনদৃষ্টিতে পরাহত সকাল
দিবসকে পরিমাপ করি
কুড়িয়ে আনি ক্যাঙগারুর নখ ও থলি

কোন দৃশ্যটিকে আমি অস্বীকার করি

৩৩.
তুমি আমাকে জানাতে চাইছো কিছু
চাইছো তোমাকে পিছমোড়া করে বাঁধি
চাইছো তোমার পায়ে পরাই শিকল
তুমি একটি বালিচর উটপাখি
তুমি কেনো আগুন দেখে ভয় পাবে
তার চেয়ে তোমার দুডানা কেটে দিই
ডানা তো তোমার ভার
তোমাকে উড়াতে পারে না
কেনো বহন করছো তাদের

৩৪.
কে বললো মরুভূমি কাঁদে দুবেলা নীল
নদীভ্রম আছে একটু দূরে দূরে
পাখিগুলি উড়ে মানে অদূরে সমুদ্র
পাখির আকার দেখে দূরত্বের পরিমাপ
হরিণের তৃষ্ণা সমুদ্র করে না বারণ
তারপর এসো আমরা তৃষ্ণা মেঠাই
কলেপড়া হরিণের রক্ত ও স্বেদ আছে

৩৫.
বৃষ্টি না পেয়ে তুমি ঈশ্বরের কাছে গেলে
হাহ্ তোমার ঝুলিতে একতাল সোনা
পাথরের ভার নিয়ে ঘুরো
তোর আনন্দ দূরত্ব মাপে
ঈশ্বর এক প্রকার সব্জির কথা বললেন
শাদা লম্বা এবং গোলাকার
তোর খুরে লেগে আছে উদ্যানের কালি

কালিকে সহসা রঙিন মনে হলো তোমার

৩৬.
ইহা স্বর্গ আর নরকের মাঝামাঝি কিছু
হতে পারে
গুনে গুনে ফুল উঠে
গুনে গুনে পাখি উড়ে দূরে
উদ্ভিদের ভিতর কষ আছে পতঙ্গভুক
কদাকার রোদের বিপরীতে তপ্তরাত
জল নেই আছে জলের ইশারা

কে তোকে এইখানে বপন করে

৩৭.
চোখের সামনে দস্যুদল ডাকাতি হয়ে যায়
উট ছেড়ে দেয় তার জমানো সমস্ত জল
জলে ছিলো না কোনো কুয়োর স্মৃতি
শুষে নিলো বালি
আমি পরপর তেরোটি পাথরকে অনুবাদ করি
ছুঁড়ে দিই আকাশে
কুকুরের ডাকে ভোর
জ্বলন্ত দিগন্তে হেঁটে হেঁটে দিবস হনন

এভাবে নাকি সূর্যকে অতিক্রম করা যায়

৩৮.
নৃত্যরত বালি তপ্ত এটা সহজবোধ্য
আমার ছিলো নৃত্যের স্মৃতি
হাওয়ার মুদ্রা মেনে নেচে যায় বালি
একবার দেখে চোখ বুজে তাকিয়ে থাকি
বুকের ভিতর অরণ্য ছুঁয়ে যায়
উষ্ণ ঝর্ণা ঠেলে খুঁজে নিই ললিত জল

আমি চোখ বুজেই থাকি

৩৯.
সূর্যাস্তের বিপরীতে কল্পনা ভাঁজ করি
দিবাস্বপ্নগুলি ভাঁজ করে রাখি
ক্যাকটাসের ঝাড়ে হাওয়া শীতলতা
ছায়াগুলি শিয়ালকণ্ঠে ডাকে
ছায়াগুলি কুকুরকণ্ঠে ডাকে
ছায়াগুলি আমার কণ্ঠে ডাকে
নিজের শরীরটাকে খুঁজি

পাই না কোথাও

৪০.
একটি উপত্যকা আছে দৃশ্যবতী
ছিলো না কোনোদিন ম্যাপলপাতায় লেখা
এটা দেখতে একটি প্রাচীন মুদ্রা
প্রাচীর মুদ্রার আকার ভেবে নিলাম
মুদ্রার গায়ে ইতিহাস জীবাশ্ম
অচেনা পুষ্পের দূরাগত গন্ধ চুম্বন
চোখের পাতা কেঁপে গেলে পেছন ফিরি
বালি খুঁড়ে বের করে আনি প্রশ্রবন
প্রশ্রবনে জলের প্রকার দুই

৪১.
বালিকে বালিকা ভেবে দূরত্ব ক্ষয়
ভয়ানক রাতে দাঁড়িয়ে থাকে রাত
পদচিহ্নের গোর খুঁজে চলে পা
পায়ের পাখায় স্বপ্নের স্রোত সমুখগামী
সে আর সে তারা দুইজন
একটা সাপ আর গিরগিটি আসে
রোদের চেয়ারে বসে থাকিয়ে থাকে
তাদের জিবেও কাঁদে তৃষ্ণা এবং লোল

জানা যায় বালিকা বিবসন সত্য

৪২.
কোথাও বড় গাছ আর বৃরো লুকিয়ে আছে
সে জানে সপ্তবর্ণ অষ্টবর্ণ ডালপালার বিস্তার
কতোটা নিচে
কতোটা বালিতে ডুব দিলে পাওয়া যায় নিঝুম গাছবন
একটি কোমল আঙুলের ছায়া
সে সাঁতরে ডুব দেয় অলিখিত অর
দুই চোখ খুলে রেখে যায় গোধূলির গ্লাসে

৪৩.
একটি নারী এখানে সূর্যকে গিলে খেতে পারে
হতে পারে ঝর্ণা ও ছায়াময় সে ভাবে

সে প্রার্থনা করে
সে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভাষা

একটি নারীর সাথে তার দেখা হয়
হাতে তার একটি নাশপাতি বক্ষলগ্ন অসুখ
এবং তার ত্বক দগ্ধ আর কদাকার

সে পুনরায় প্রার্থনায় নত হয়

৪৪.
যে সাথে থাকে সে সত্য অর্থে থাকে না
খসে পড়ে সন্ধ্যা উষ্ণ
কোনোদিন ছুটে ছুটে ঋদ্ধ কুকুর
অদূরে শায়িত চিরযাচিত উদ্যান
তিনটি হলুদ প্রজাপতি তার ব্যাপক পাখা
দুইটি মৌচাক দুলে টসটসে লাল
যারা গিয়েছিলো যারা যায় কেউ ফেরে না
সন্ধ্যার ভিতর ডাকে প্রজাপতি ফুল
মৌমাছি পাহারা দেয় মধু আর মোম

সে ধীরে ছত্রাক

৪৫.
সে তন্দ্রার ভিতর পাশ ফিরে শোয়
পাশে মৃত কুকুরটি পাশ ফিরে না
একদল লোক ঘিরে আসে কবন্ধ
প্রত্যেকের হাতে দুগ্ধপূর্ণ স্তন
তার প্রবল তৃষ্ণা জাগে
তার তৃষ্ণা ফুরিয়ে যায়
তারপর সে কবন্ধের মুখোশ বানায়
কবন্ধের দল তাকে দুগ্ধস্নানে আবিষ্ট করে
তার তন্দ্রা ছুসে গেলে দেখে কুকুর হাসছে

৪৬.
মৃত্যুচেতনার বাহিরে কিছু থাকে নাকি
পাশে নন্দন ঢেউ ভাঙে
বালিঢেউ বালুময়
তাকে কুরে কুরে খায়
যে চেতনার ভিতর ডুব দিয়ে ডুমো মাছি
যে চেতনার ভিতরে হয়ে গেছে হাতপাখা
সে নিজের কাছে কিভাবে ফিরে
একটা সুরের যন্ত্রণা তাকে পোড়ায়
ছিঁড়ে খুঁড়ে একাকার করে
সে মৃত্যুচেতনার বাহিরে দেখে চাঁদের স্খলন

৪৭.
দশহাত হেঁটে এগারো হাত পেছনে আসে
তার অতীত তাকে টেনে নিয়ে যেতে চায়
তার শিকড় তাকে ছাড়ে না
প্রতি একহাত সে হিশেব করে
দশমাইল গেলে সে দাঁড়ায়
সে মনে করার চেষ্টা করে দৌড় এবং উল্লম্ফন
সে পদাহত পাথর বুকপকেটে নেয়
তারপর ছুঁড়ে ফেলে
তার সব মনে পড়ে যায়

৪৮.
মৃত আর অমৃত একই কঙ্কালের জমজ
ছায়া ঘুরে উঠে সূর্যের নিচে
ফণিমনসার অহঙ্কার কাঁপে উত্তাপে
একটা প্রাণী আসে
ঘোঁত ঘোঁত শব্দে ডোরাকাটা করে প্রতিবেশ
সে অমৃত পান করে
কঙ্কালের গায়ে পরিয়ে দেয় ত্বকমাংস
কঙ্কাল প্রাণ পায় এবং তাকে অস্বীকার করে

৪৯.
তীরে যেতে যেতে হারিয়ে যায় পেছনের পথ
সমুদ্রের চিৎকারে উড়ে যায় মেটেরঙ কাক
কাক কার উত্তরাধিকার
বেলপাতা মনে পড়ে সবুজগন্ধের বন
একটি সুতির চাদর
তিনটি হলুদ চোখ তাকে গ্রাস করে নির্বিষ
পাথরের পাহাড়ে পঞ্চমুখ ফাটল

তাকে বলে দেয় পূর্বজন্ম

৫০.
অনেক রেখা দৃশ্য হয়ে আছে
অনেক রেখা দৃশ্যের অতীত
পরস্পর অতিক্রান্ত কোণ
তার কৌণিক আকার
বুকে হেঁটে ভাগ হয় ধরন
পরস্পর ভিন্ন পরস্পর
সমান্তরাল পা আমলকীর রূপ

অনেক রেখা শেষে দৃশ্যের অতীত


-----------------------------------------------------------
ভয়ানক নৈসঙ্গের ভিতর পাওয়া কাব্যগুলি-১
Click This Link

উৎসর্গপত্রিকা:
আমাদের সময়ের দুইজন শক্তিমান সম্ভাবনাময় কবি অমিত চক্রবর্তী এবং শিরীষ, কল্যাণীয়েষু।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৫৮
৪২টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×