আজ দুপুরবেলা আব্বু আম্মু সহিত মিরপুর ১৩তে আব্বুর মামার বাসায় বেড়ু করতে গেলাম। সারাদিনের পেরেশানিতে এমনিতেই ১১টার মধ্যে চোখ ঢুলু ঢুলু অবস্থা (এমনিতে ঘুমের দেখা পাইনা, আর ঈদের দিন ঘুম আমাকে ছাড়ে না

), তারউপর ওখানে সবার সাথে দেখা করে যখন দাদীর কাছে বসলাম মাত্র চ্যানেল নয়ন এ বাংলা ছিঃনেমা শুরু হইয়াছে।

দাদী তাহা দেখিতে ব্যস্ত এবং আমিও নিতান্তই ভদ্র মেয়ে তাই রিমোট নিয়ে গুঁতোগুতির ধারেও গেলাম না, গোগ্রাসে ছিঃনেমা গিলতে লাগিলাম। …………..
ছিঃনেমার নাম
"বন্ধু তুমি আমার"...প্রথমেই ছোটবেলার কাহিনী। গরিবের পোলার, বড়লোকের মেয়েরে মনে ধরছে সেই হাফ প্যান্ট পরার বয়সে।

একটু পরেই শুরু হল গান, "বন্ধু তুমি আমার আমার আমার, আর কারও না"। এই গান শুনেই মনে মনে উপলব্ধি করলাম কেন এখনকার আন্ডাপানের মনে এই বয়সে পিরিতের খায়েশ জাগে।….


এরপর যা হওয়ার তাই হল, আন্ডাপানের বিচ্ছেদ হইল মেয়ের বড়লোক বাবার কল্যাণে।……..এই পর্যন্ত দেখে আমার প্রায় তন্দ্রা টাইপ লাগছিল, হঠ্যাত্ তন্দ্রা ছুটে গেল একটা গানের টিউন শুনে,
"উড়ে যাচ্ছে বাতাস মাতাল মাতাল,
উড়ে যাচ্ছে পাখি এখান ওখান,
উড়ে যায় প্রজাপ্রতি এদিকে ওদিকে,
মোরা নাচব এইভাবেই তালে তালে।"…….
মনে হচ্ছিল কোথায় যেন গানটা শুনেছি, আরে এটাতো ম্যায় হু না এর গান চালে জ্যায়সে হাওয়ায়ে এর টিউনে করা! সাথে সাথে মাথাটা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল বাংলা গানের টিউনের এতই অভাব পড়ল যে হিন্দী গান থেকে তা ধার করতে হল?........



মেজাজের অবস্থা আরও খারাপ যখন দেখি এইগানের সাথে কতগুলো পাগলের সাথে নাচানাচি করছে নায়ক পিঁয়াজ। গান শেষ হল এবার নায়িকা না আসলে কি করে হয়? অতএব কাহিনীতে ঘোর অমাবস্যার সূত্রপাত ঘটল নায়িকা অমাবস্যার কল্যাণে। নায়ক নায়িকা কেউ কাউকে দেখতে পারে না। বাহ্, কি সুন্দর। ………..


একটু পর দুই আঁতেলের চেহারা টিভির পর্দায়।…

তারা প্রেমজাতীয় বস্তুর উপর উষ্ঠা খেয়ে নিজেদের ওজন বাড়াতে মোটা হইবার ওষুধ পান করিতেছে একই বোতল খেকে। যতটা না তাদের গলায় পড়ছে তার চেয়ে বেশি শার্টে।….



এই অবস্থা দেখিয়া হাসিতে হাসিতে খুন এবং এইবেলা ঘুমবাবা আমার চক্ষু হইতে বিদায় নিয়াছে।.....

একটুপর নায়কের বাবা জুলিয়াস বচ্চনের আবির্ভাব একটা হিমু ট্যাক্সি সহিত। বরাবরের মতই তার অবস্থা ফিরেছে। তিনি আর এখন সামান্য ড্রাইভার না বরং দু'দুটো ট্যাক্সির গর্বিত মালিক। ………. :-& :-&
এইবারের দৃশ্যে নায়ক পিঁয়াজ মাউথ অর্গান বাজাইতেছে, সুর সেই ছোটবেলারটাই আর চেন্জ হয়নাই। হঠ্যাত্ সেই সুর শুনে নায়িকা অমাবস্যা কেশবিন্যাসকে উড়াইয়া উড়াইয়া আসিলেন পিঁয়াজের নিকট। পিঁয়াজও চিনিতে পারিল এই তাহার পূর্ণিমাময় ছোটবেলার অমাবস্যা। (তবে অবাক হলাম, ট্রেডমার্ক বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নাচল না। হতাশ.......লুল

) এই জিনিস দূর থেকে দেখল নায়িকার বাবা। এবং অতঃপর নায়ক পিঁয়াজকে গুন্ডা দ্বারা বেদম মারধর করে আধমরা করার পরেও নায়ক পিঁয়াজ তার পিঁয়াজের ঝাল দেখাইয়া গুন্ডাদের শায়েস্তা করলেন। নায়িকা অমাবস্যার বাবা আর কি করিবেন পিঁয়াজের নিকট মেয়েকে সঁপে দিলেন এবং তাহারা সুখে শান্তিতে ঘরকন্যা করিতে লাগিল। ………
এডের সুনামি আর দফায় দফায় এই খবর সেই খবরের বন্যায়ও আমার এই ধরনের বাংলা ছিঃনেমা দেখার ধৈর্য্য দেখে নিজেই মুগ্ধ, বিমুগ্ধ বনে গেলাম আজ।

অনেকদিন পর এটা দেখাও হয়ত ধৈর্য্যে কুলাতো না যদি না মেহমান বাড়ি গিয়ে দেখা না হত। …………….


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৬