ডায়েরির ওপর হাতে লেখা “পুলিশের ওপর হামলার ডায়েরি”। এতে পুলিশের ওপর কখন হামলা করতে হবে; হামলায় ইটপাটকেলসহ কী কী সরঞ্জাম সঙ্গে রাখতে হবে ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। ডায়েরির প্রায় অর্ধেক পাতা লেখা রয়েছে। এতে পুলিশের ওপর হামলায় করণীয়সহ নানা রকম নির্দেশনা দেখা গেছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সিলেটে এ পর্যন্ত পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের যত হামলা হয়েছে, সবই ওই ডায়েরিতে সংক্ষিপ্তভাবে লেখা রয়েছে।
গতকাল ২৩ ডিসেম্বর ২০১২,রোববার,সন্ধ্যায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ ছাত্রাবাসের আটটি কক্ষ তল্লাশি করে এগুলো উদ্ধার করা হয়। আটটি কক্ষ থেকে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন সাংগঠনিক পুস্তিকাসহ প্রায় এক হাজার ৬০০ বই উদ্ধার করা হয়। এ বইগুলোর মধ্যে “পুলিশের ওপর হামলার ডায়েরি”-টি পুলিশ পায়।
দুর্ভাগ্য পুলিশের যে তারা তাদের অভিযান চলাকালে ঐ কক্ষগুলিতে অবস্থানরত ছাত্রদের টিকিটির দেখা পায় নি। পেলে অবশ্যই তাদের গ্রেফতার করত। আর এর বাইরে যাদের চিরুনী অভিযান চালিয়ে ধরা হচ্ছে, তারাও যে এক্কেবারে সাধু পুরুষ তা ভাববার কোন কারনই নেই। কেননা তারা যে দলের সাথে সম্পৃক্ত, সেই দলটির নাম জামাত। আর বাঙলাদেশের কে না জানে এই দলের অতীত কি! কি তাদের কীর্তি, বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সময়ে কি তাদের অবদান।
তাদের কীর্তি এমনই যে, তা মুখে বলার নয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়ে তারা নির্লজ্জ ভাবে পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করে গেছে। হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর সাথে মিলে নিরাপরাধ বাঙালীদের হত্যা করেছে। আর মুক্তিবাহিনীর কাউকে পেলে তো কথাই নেই, নির্মম অত্যাচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। এদের চোখে মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা ছিল ইসলামের শত্রু আর বাঙলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ঝান্ডা তুলে পাকি বাহিনীর পক্ষালম্বন ছিল তাদের জিহাদ।
এহেন একটি দলের অপরাধী মূল কয়েকজনকে এখন বিচার করা হচ্ছে। তাদের এই বিচারের দাবী এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবী। এই দাবী বাস্তবায়নের জন্য যে আন্তর্জাতিক বিচারালয় বিচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আজ এই পরাজিতের দল অত্যন্ত ক্ষিপ্ত। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে ইতিহাস বিজয়ীরাই লেখে, বিজিতের বিচার বিজয়ীরাই করে।
হয়েনা চরিত্রের সেই নরপিশাচদের বিরুদ্ধে যেখানে পুরো জাতি আজ একতাবদ্ধ, সেখানে গুটিকতক পথভ্রষ্ট্র নাগরিকের চাপে রাষ্ট্র কেন ন্যূজ্ব হবে? কেন রাষ্ট্র জনতার অভিমতের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই নরপিশাচদের বিচার শেষ করবে না? যদি এই বারে আমরা এই বিচার করতে ব্যর্থ হই, তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ আসলেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যাবে। আমাদের ভেতরে যাঁরাই “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙলাদেশের জন্ম হয়েছে” ধারণা লালন-পালন করি, তাদের এই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। আর না পালালে এই নর-পিশাচদের হাতে তিলে তিলে মৃত্যুবরন করতে হবে।
একাত্তরের পরাজিতদের হাতে কি আমরা আরেকটি বার নির্যাতিত হব? আরেকটি বার কি একাত্তরের ঘাতকরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তে ভেজা মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে রামদা-কিরিচ-ক্ষুর দিয়ে আঘাত করবে মধ্যযুগীয় কায়দায়? নিরাপরাধ লোকদের রগ কাটবে অবলীলায়? এদেশের মাটিতে কি সত্যের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার কেউই থাকবে না?
আজ সময় হয়েছে এই নরপিশাচদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবার। আজ জাতিকে বেছে নিতে হবে দুইটির ভেতরে একটিঃ বাঙলাদেশ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছে, অথবা জামাত যুদ্ধাপরাধ করে নাই।
সংবাদ সূত্রঃ Click This Link