১।
পৃথিবীর মানচিত্রের সমুদ্রগুলোর মতো মানুষের ভেতর ও এমন সমুদ্র থাকে
যে সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়ে মানুষ বহু দূর যায়,
কখনো কখনো কয়েক আলোকবর্ষ দূর...
মাঝে মাঝে সেখানে ঝড় ওঠে
কখনো বা জ্বলোচ্ছাসে ভেসে যায় সবটা উপকূল।
ভেতরের সমুদ্র শুকিয়ে গেলে অশ্রু ফুরায়,
(ভুলে থাকা শোক কেই দুঃখ বলে)
তখন সেই শূন্য সমুদ্রখাদে মাঝেমাঝে বাতাসের শব্দ শোনা যায়!
২।
ঐখানে ঘাটছিলো -সওদাগরি নৌকা, কুলিদের তোড়জোড়, লন্ঠনের আলো,
ঐখানে এখন বুক সমান পানি,
ওখানেই ছিলো বেহুলার লোহার বাসর ঘর...
বলতে বলতেই নদীটা হেঁটে গেলো,
ভেসে গেলো ভিটে-মাটি সাপেকাঁটা লখিন্দর।
৩।
থেমে যাওয়া উৎসব থেকে ফিরেছে মানুষ
গভীর হচ্ছে রাত, নিঃশব্দ হচ্ছে সময়,
নৈঃশব্দ্যের ভেতর থেকে উঠে আসছে
বাতাসের কথা, পাতার সরসর শব্দ,
পাতাঝরা বনে এখন বিগত মরকের গল্প
হারিয়ে যাচ্ছে আর্তনাদ, নশ্বরতা যত,
ঐশ্বরিক হচ্ছে রাত,
শুন্যতাকে বাঁধিয়ে রাখছে সময়।
৪।
এভাবে নয়, নিজের কাছে আর একটু ছোট হতে চাই
আর একটু বিনীত, নত,
সমুদ্রের কাছে শঙ্খ যেভাবে ধুয়ে নেয় দেহ- ক্লান্তির শাদা সব হাড়,
সেভাবে সব শিরোণাস্ত্র বর্ম খুলে
দুপায়ের ক্ষত দুহাতের হতশ্রী আকাঙ্ক্ষা সমগ্র
যতটুকু ফেলে দিতে হয় এপথে এগোতে
যতটুকু হতে হয় নিরঅহংকারবাদী...।
নিজেতে ফিরতে চাই মাত্র,
তাকে কি প্রবেশাধিকার দেয়া যায় যে চিরকাল পলায়নরত?
৫।
মানুষের একটা মুখোশ খুলে নিলে আর একটা বেরবে,
তারপর আরো একটা... এভাবে চলতেই থাকবে..
মুখোশ ছাড়া মানুষ হয় না।
তুমিও তোমার ভেতর দেখবে হাজারটা তুমি,
একটা না একটা মুখোশ পরেই তোমাকে বেরতে হবে
নিজেকে খুঁজতে গেলে তোমাকে প্রতারিত করবে তোমারই কোন না কোন মুখোশ,
নিজেকে কেউ খুঁজে পায় না কখনো।
৬।
ভবিষ্যত খুঁজছি না, বর্তমানে দাঁড়িয়ে ছুঁয়েছি অতীত
নিশ্চুপ থেকেছে সময়
চুপচাপ শিশিরে ভিজে গেছে ছাদের কার্নিশ
স্পর্শ এড়িয়ে জানালার বাইরে দূরের আকাশ
কেউ বলেনি যেওনা ওদিকে,
ফেলে যাওয়া পথটা নির্জন সব সময়।
৭।
থমথমে মেঘ, ভেজা পাথরের বুক,
নেমে পড়েছি জলে,
হেঁটে যাচ্ছি
জল ডিঙিয়ে জলের সমান্তরালে।
লুকিয়ে শিকারী চোখ
জানা নেই বনের মাপজোখ,
হেঁটে যাচ্ছি
পেরিয়ে ডাহুক মায়া হিরণের চোখ অরণ্য সবুজ,
জানে ওরা জানে কখন সবটা অন্ধকার নামে,
ঘাসের গন্ধ মেখে কোথায় পথটা থামে।
থমথমে মেঘ, ভেজা পাথরের বুক,
লুকিয়ে শিকারী চোখ, চারপাশ টা নিশ্চুপ,
হেঁটে যাচ্ছি
কাঁধে পুরনো জংধরা বন্দুক!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২২