somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিমি মাছ ও মুরিদ উপাখ্যানঃ সাহিত্য আলোচনার পূর্বসূত্র

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু লিখে প্রকাশ করার পর "পাঠকের/ চিন্তাবিদ/ সমালোচকের মন্তব্য" এমন একটি বিষয় বস্তু যেটা গ্রহণ করার জন্য একজন লেখকের তিমি মাছ তুল্য গলধকরণ শক্তি সম্পন্ন স্টোমাকের অধিকারী হবার মানসিকতা থাকতে হবে। তিমি মাছ সাগরের যাবতীয় দ্রব্য মুখ হা করে গিলে নেয়, এবং পাকস্থলীর আগেই বেশ কিছু জালের ন্যায় ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ফেলে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পানি ও দ্রব্য ফোয়ারার মত করে বাহিরে ছুড়ে দেয়, যেন আবার সাগরেই গিয়ে পড়ে, অন্য মাছের খাবার হিসেবে যেন যায়। নষ্ট করার পরিবর্তে।
সমালোচনা লেখকের জন্য সেই উপাদান যা পড়াশোনার সমুদ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে। গিলে নেয়ার পর প্রয়োজনীয়টুকু পাকস্থলীতে চালান করে দেয়া শিখতে হবে। বুঝতে হবে আসলেই কতটুকু জরুরি এবং সেটা আপনার জন্যই কিনা? এমনও হতে পারে সেই সমালোচনা আপনার জন্য মোটেও নয়, অন্য কারো দরকার (উন্নতি করার জন্য) সে ক্ষেত্রে সেই সমালোচনাকে ছেঁকে সুন্দর মত আবার ফোয়ারা বানিয়ে সমুদ্রে ছেড়ে দিয়েছে আসা জানতে হবে। যেন অন্য মাছ (তথা লেখক) যেন সেটা খেতে পায়।
লেখা শেষেই যে লেখক যুদ্ধাংদেহী হয়ে বর্ম-বল্লমের আশ্রয়ে চলে যান এবং যে কোনো মন্তব্যকেই প্রথমে দুই ভাগে বিভক্ত করে নেন- মিত্র ও শত্রু; সে লেখকের লেখার চেয়ে ওকালতি বিদ্যায় দীক্ষা নেয়া অধিকতর শ্রেয়। কারণ লেখকের লেখা ও পাঠক/ সমালোচকের মন্তব্য এমন একটি মুক্ত প্রকৃয়া যেটা তৃতীয় পক্ষের চিন্তার রসদ যোগায়, এবং নতুন কিছু যুক্ত করতে আমন্ত্রণ জানায়। মন্তব্য মানেই আক্রমণ নয়, কিংবা প্রসংশা নয়। মন্তব্য মানে আমি কি চিন্তা করছি সেই দৃষ্টি ভঙ্গী। আদর্শিক সংঘাতের পূর্বে আদর্শিক আলাপের বিষয় থাকতে পারে। যে লেখক বা সমালোচক আলাপের অংশটুকু সম্পর্কে সর্বক্ষণ দ্বিধায় ভোগেন, তাদের আচরণ বরাবরই আক্রমণাত্মক থাকবে, এবং প্রতি ধাপে তারা নিজেদের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাবে অপর পক্ষকে প্রথমেই দোষী সাব্যস্ত করে।
এটা তাদের মুক্ত চিন্তার প্রধান বাঁধা। যদিও সেটার জন্য তাদের চিন্তার চেয়ে সাবজেক্ট কেন্দ্রিক চিন্তাই প্রধান হয়ে থাকে। যার কারণে বৃত্তের কেন্দ্রের চেয়ে পরিধির দিকে তাদের চিন্তার অবস্থান থাকে সব সময়।
আমি খুব কম লেখককেই/ সমালোচকেই গঠনমূলক চিন্তা করতে দেখেছি।
বরাবরই যেখানেই এই ধরণের আলাপের সূত্রপাত হয়, সেখানে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকে কম, এবং গ্রহণের মানসিকতা থাকে আরো কম। এবং আশ্চর্য জনক হলেও সত্য, আমাদের এক শ্রেণির পাঠক তৈরি হয়েছে যারা রিভিউ কেন্দ্রিক পাঠোভ্যাসে গুরুত্ব দেন। অজুহাত একটাই, সময় এবং অর্থের অপচয় ঠেকানো। কিন্তু এটা যে তার বিচার বুদ্ধি, চিন্তা ভাবনার নিজস্বতাকে অন্যদিকে পরিচালিত করছে, এটা সম্পর্কে তারা বিন্দুমাত্র অবগত নন।
উদাহারণ সরূপ বলা যায়, একজন পাঠক বা সমালোচক খুব সংক্ষেপে একটি রিভিউয়ে বলে দিলেনঃ অমুক লেখকের বইয়ে খুবই আপত্তিকর শব্দের প্রয়োগ রয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পাঠক সম্প্রদায় থেকে রি রি মন্তব্য শোনা যাবে কিছুক্ষণ। এবং দেখা গেল পড়ার পূর্বেই তারা বইটি কেনা বা পড়ার ইচ্ছা থেকে বিরত হল।
এই বিরত হবার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু সে তার মুক্তবুদ্ধির দ্বার বন্ধ করে দিচ্ছেন। কারণ তিনি নিজস্ব জাজমেন্টের পরিবর্তে অন্যের চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। এতে নতুন ধরণের কোনো পাঠক বা চিন্তার সৃষ্টি হচ্ছে না, সৃষ্টি হচ্ছে এক শ্রেণীর সমালোচক ওর মুরিদ গোষ্ঠী। যেটা দুঃখজনক।
রিভিউ তথা সার সংক্ষেপ ও পাঠোপোলব্ধি এক দিক দিয়ে প্রভাববিস্তারকারি কার্যকর, অন্যদিকে আগ্রাসীরূপে পাঠক চিন্তা বিকলাঙ্গকারী রোগ সদৃশ।
লেখকের যেমন তিমি মাছ হওয়া জরুরি, একজন প্রকৃত পাঠকের উচিত চটি থেকে চর্যাপদ- সমস্ত ক্ষেত্র নিজ পায়ে হেঁটে বেড়ান। তাহলেই সে বলতে পারবে, কোন সাহিত্যে লাল পিপড়ের বিষ আছে, কিসে আছে সূর্যমূখীর ঝাঁঝালো মধু। আমাদের সময় এবং অর্থের অযুহাত নিতান্তই সাহিত্য খুনী ও লেখক হত্যাকারীর অপর নাম।
তাই মুক্ত চিন্তা করার পূর্বে আক্রমণ নয়, বন্ধুর মত আচরণ করতে শেখা প্রয়োজন প্রত্যেক লেখক সমালোচক ও পাঠককে। কারণ আপনি যা করছেন, তা ঘরের কোমল শিশুরা তাই শিখছে, তাই নতুন পাঠকদের জন্য গঠনমূলক সমালোচনা চর্চা জরুরি। এটা ভাবার অবকাশ দেয়। শব্দের বিন্যাস শেখায় খুব মার্জিত অথচ উদ্ধত আপত্তি কিংবা মুগ্ধতায় দেয়া প্রশংসার মাধ্যমে।
আমাদের বর্তমান হাঙ্গর ও নিজের অজান্তে মুরিদ পর্যায়ে চলে যাওয়াদের জেনে নেয়াটা দরকার এখনই। অর্থ আয়ের যেমন অসংখ্য ন্যায় অন্যায় উপায় রয়েছে, প্রত্যেক রাস্তাতেই অর্থ আসে শেষে গিয়ে। ন্যায় পন্থায় বহু রাস্তা যেমন আছে, অন্যায় পন্থা ছাড়াও। তেমনি লেখালেখি/ সমালোচনার ও চিন্তা ধারার বহুবিধ পথ রয়েছে। এটা ডিপ্লোমেসি নয়, এটা হিপোক্রেসিও নয়। এটা ডেমোক্রেসি। ডেমোক্রেসি অব লার্নিং।

- মোঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব
হালিশহর, চট্টগ্রাম
২৭ অগাস্ট, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×