somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতারণা

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা তখন ২০০৮ সাল।
তারিখটা আজ আর ঠিক মনে নেই। বছরের
মাঝামাঝি সময়। চরম ক্রান্তিকাল চলছিলো আমার, অর্থনৈতিক টানোপোড়ন।
সংসারের অবস্হা খুব খারাপ যাচ্ছিলো।
পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছিলাম।

আমি টিউশন করতামনা, বাসা থেকে অল্পবিস্তর যা পেতাম, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতাম। পরিচিতরা জানেন. আমার খরচের হাত কতটা প্রসারিত,
ছোটবেলা থেকেই যখন যা চেয়েছি, সাথে সাথেই
পেয়েছি। এখন মানষিকতটাই এমন
হয়ে গেছে, চাইলেও
হিসেব করে চলতে পারিনা।
হোষ্টেলে দুবেলা খাবার, নাস্তার ব্যাবস্হা নেই। নাস্তা দোকান থেকে কিনে খেতে হয়।

মাসের শেষ দিকের
ঘটনা, হাতে কোন টাকা নেই, বাসা থেকেও
লজ্জায় চাইতে পারছিনা।
একসপ্তাহ হয়ে গেছে শুধুমাত্র বিস্কিটের মিনেপ্যাক দিয়েই নাস্তা সাড়ছি।

একদিন বিকেল বেলা। দুপুড়ে ঘুম থেকে উঠেছি।
প্রাইভেট এলাকা, চারিদিকে নিরব,নিস্তব্ধ।
মনটা কেমন যেন হু
হু করে উঠলো। খুব
মনে পড়লো আম্মুর
কথা,আমি কতদূর।
আম্মু এখন কি করছে? শান্ত কোলাহল শুন্য
শহরে আমার মনে প্রচন্ড ঝড় উঠলো। মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে গেলো।
ঘুম থেকে উঠলে এমন লাগে কেন?

আমি এখন উদ্দেশ্যহীনভাবে রাস্তায় হাটছি। মন খারাপ
থাকলে একাজটা করি। কেন করি জানিনা। কেউ যখন পথ চলে, দৃষ্টি থাকে সম্মুখপানে। গন্তব্যের দিকে। আমি শ্যোন
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, নির্দিষ্ট কোন লক্ষ নেই।
এলোমেলো পদক্ষেপ, প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার ব্যার্থ প্রচেষ্ঠা। হঠাৎ কেউ
আমাকে পিছু থেকে ডাকলো, এইযে ভাই!

কে ডাকছে?
কাকে ডাকছে?
আমাকে নিশ্চয়
না।আমাকে ডাকবে কেন?
এটা আমার এলাকা না, পরিচিত কেউ নেই। অতএব আমাকে ডাকার
প্রশ্নই আসেনা।

আবার ডাক আসলো।
কি যন্ত্রণা, শান্তি তে হাটাও যায়না। ডাকে ডাকুক ।
আমি তাকাবোনা। মুরব্বীরা বলেন চলার পথে পিছু ফিরতে নেই।
আমি চলতে লাগলাম।

চারপাশে সুনসান নিরবতা। সবাই ঘুমিয়ে। আবার ডাকলো, এইযে ভাই। আমি আশপাশ
তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। এবার না তাকিয়ে পারা যায়না। একপাশে ঘুড়ে তাকালাম। ভদ্র পোশাক পরণে নিরীহদর্শন
মাঝবয়সী একজন লোক দাড়িয়ে, সুশ্রী চেহারা। বয়স কত আর হবে, ত্রিশ
পয়ত্রিশ? নাহ,দেখে ভালো মানুষই মনে হচ্ছে। ভালোভাবে যাচাই করার
চেষ্ঠা করলাম, কি উদ্দেশ্য
হতে পারে আমাকে ডাকার। দেখে চোর
সিনতাইকারী মনে হচ্ছেনা। ভাই,আমাকে ডাকছেন?

:জ্বী ভাই।
:কি দরকার?
:ভাইয়া একটা জরুরী কথা ছিলো,কোথাও
যদি একটু বসতেন..

সাথে সাথে সতর্ক হয়ে গেলাম। অচেনা একজন
লোক, আমার সাথে তার
কি জরুরী কথা থাকতে পারে? কিন্তু মুখে বললাম,
আচ্ছা কি বলবেন বলুন, আমার আবার জরুরী কাজ আছে। জরুরী কাজটা কি সেটা বলার
প্রয়োজনবোধ করলাম না।
আসলে তাকে কাটাতে চাইছি।এখন আমি হাটবো।নিরুদ্দেশভাবে হাটলে মন হবে। এটাই জরুরী কাজ।

পাশেই এক ছোট্র
পার্কের ব্যাঞ্চিতে দুজনে বসে পড়লাম। অনেক্ষণ
রোদে হেটে পার্কের গাছের ছায়ায় খুব ভালো লাগছে। নাম না জানা কোন
বসন্তের পাখি ডাকছে।
পা ছড়িয়ে ঘুমোতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এখন
ঘুমুনো যাবেনা। পাশে একজন বসে আছে ।
সে আমাকে কিছু একটা বলবে। খুব কৌতুহল
হচ্ছে কি বলে শুনতে।
আমি কৌতুহল দমন
করার চেষ্ঠা করলাম। এটা সবাই পারেনা। আমি পারলাম, কারণ এতক্ষণে কিছুটা অনুমান করে ফেলেছি মাঝদুপুরে রাস্তা থেকে ধরে এনে সে কি বলতে চায়। লোকটাক একদম পাত্তা দিলাম না ।

আরামদায়ক উঞ্চ আবহাওয়া, চোখ
ভেঙ্গে ঘুম আসছে। পাশের
লোকটা কোন কথা বলছেনা। চোখ সরু
করে আমাকে যাচাই করছে। করুক। লোকটাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চোখ বন্ধ করে ঝিমুতে লাগলাম। সতর্ক
হওয়া দরকার, যেকোন সময় পকেট কাটিং হতে পারে। অবশ্যি পকেটে বিশ
ত্রিশ টাকার বেশী থাকার
সম্ভাবননা নেই। আরো কম থাকতে পারে, আমি কখনো টাকা গুণে রাখিনা, এতে বরকত নস্ট
হয়। পকেট থেকে বের করি আর খরচ করি। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। অতএব নিশ্চিন্ত
হয়ে রেষ্ট নেওয়ার
বন্দোবস্ত করলাম।
এমন সময় পাশের লোকটা গলা খাকারি দিয়ে বললো,"ভাই",
আমি চোখ না খুলেই
বললাম 'হু'

:ভাই আমার নাম
আব্দুল মুনীম।

একথার কি জবাব
হতে পারে?
মেয়ে হলে বলা যেত
বাহঃ খুব সুইট
নামতো তোমার।
কিন্তু কোন
ছেলেকে একথা বলা যায়না।
এখনকি আমিও
আমার নাম বলবো?
সেতো আমার নাম
জানতে চায়নি। কথার পিঠে কথাতো বলতেই হবে,তাই বললাম,আমার নাম এনকে মানসুর । আপনি আমাকে মানসুর
ভাই বলে ডাকতে পারেন।

:মাশাআল্লাহ,কি সুন্দর
নাম, চেহারার
সাথে একেবারে মানিয়ে গেছে ।
নাইস টু মিট ইউ।
তা ভাই আপনার
দেশের বাড়ী কোথায়?
আমি একটু বিরক্ত হলাম।
খেজুড়ে আলাপ করার জন্য নিশ্চয় ডেকে আনেনি পার্কে?
লোকটি বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি বললো: ভাই,আপনাকে দেখে খুব
ভালো লেগেছে, ধার্মিক ধার্মিক লাগছে। তাই কিছু
কথা বলতে চাই।

:কি বলবেন বলুন।
:ভাই,কি বলবো,বলতে লজ্জা লাগছে,আসলে আমি একটা মারাত্বক
বিপদে পড়েছি।
:কি বিপদ?
:আসলে আমি দুবাই
থাকি,ছুটিতে দেশে এসেছি।
আবার চলে যাবো।
১৫দিন পর ফ্লাইট,এখানে এসেছিলাম একটা কাজে,কিন্তু পথিমধ্যে মোবাইল টাকা সব
চুরি গেছে। সিলেটে বাড়ি, এখন আর ফিরতে পারছিনা। টাকার
অভাবে দুপুরে না খেয়ে আছি।আপনাকে খুব
ধার্মিক মনে হচ্ছিলো,
দেখে খুবি ভালো লাগছে,
তাই এসব বলা।

প্রসংসা কার না ভালো লাগে? তার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালাম।
কি সুন্দর, সারল্যমাখা তার দৃষ্টি, সেখানে নেই
কোন কপটতা,নেই চাতুর্য।
একে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। ফ্রেন্ড
থেকে ধার করে ২হাজার
টাকা দিলাম। টাকা ফিরে পাওয়ার আশা করিনা, তাও একটা জুয়া খেলবো। মানুষ চেনার জুয়া। মানুষ চিনতে ভালোবাসি। দেখবো টাকা ফিরত দিতে আসে কিনা।

নিজে না খেয়ে আমার খাবারটা তাকে খাওয়ালাম। অনেক কথা হলো। সে আমার ঠিকানা ফোন নাম্বার নিলো। বললো বাসায় ফিরেই কল দেবে, টাকা পাঠাবে। আমাকে তার খুব ভালো লেগেছে। আমাকে দুবাই নিয়ে যেতে চায়। আমি হাসলাম ।

উপসংহারঃ এখন ২০১৪ সাল।আব্দুল মুনীম নামে কেউ টাকা ফিরিয়ে দিতে আসেনি।পরে জেনেছি এটা একধরণের প্রতারণামূলক ব্যাবসা। আমি তার চেহারা দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম।ভদ্র চেহারা আর ভদ্র আচার আচরণ কখনো সার্টিফিকেট হতে পারেনা ।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×